বজ্রাঘাত পর্ব ৬ (collected)



‘আজকের মাংসটা কিন্তু দারুন রান্না করেছ পৃথাদি... তোমার থেকে রেসিপিটা কিন্তু আমার চাই...’ কলকল করতে করতে বলে ওঠে মৌসুমী... সুশান্তর ভাবী বউ।

ছোট্ট হাসি হেসে উত্তর দেয় পৃথা, ‘বেশ তো... এ আর এমন কি, আমি হোয়াটস্‌আপ করে দেব’খন...’।

এর মাঝে বেশ কিছুদিন কেটে গিয়েছে... তেমন কিছু ঘটনা ঘটেনি পৃথার জীবনে এই ক’টা দিনের মধ্যে... প্রতিদিন কার যথারীতি রোজনামচা চলেছে... সকালে ওঠা... রেডি হওয়া... অফিস যাওয়া... অফিসে কাজ সারাদিন... আর সন্ধ্যেবেলায় ফিরে আসা। গতানুগতিক একটা সপ্তাহ কেটে গিয়েছে।

আজ, শনিবার ছিল বলে রাতে, ডিনারে ওদের দুজনকে ইনভাইট করেছিল পৃথা। কথা প্রসঙ্গে সুশান্তই বলেছিল ওকে যে ওর বাড়ি থেকে নাকি বিয়ের ঠিক করে ফেলেছে। শুনে ওকে কঙ্গ্রাচুলেট করে বলেছিল, ‘বাহ... এতো দারুন খবর... যাক... তাহলে কোলকাতায় এসে একটা বিয়ে খাওয়া যাবে, কি বলো?’ খবরটা বলে সুশান্ত বোধহয় ওর এতটা আগ্রহ দেখবে, সেটা ঠিক আশা করে নি, উত্তরে সুশান্ত বলেছিল, ‘তোমার খারাপ লাগছে না শুনে?’

অবাক হয় পৃথা... ‘খারাপ লাগবে? এ বাবা... কেন?’

‘না মানে...’ আমতা আমতা করে সুশান্ত।

‘আরে বাবা, খারাপ লাগবে কি, শুনে ভিষন ভালো লাগছে... তোমার মত একজন বন্ধু পেয়েছি, আর তার বিয়ে হবে, উফফফফ... দারুন এঞ্জয় করবো... কি বলো? আমি কিন্তু তোমার বিয়ের শুরু থেকেই থাকব... সে তুমি নেমতন্ন করো আর না করো... আগেই বলে দিলাম কিন্তু...’ সাদা মনে হইহই করে বলে উঠেছিল পৃথা।

আর কিছু উত্তর দেয় নি সুশান্ত। চুপ করে গিয়েছিল। সেও ব্যাপারটা নিয়ে আর এগোয়নি, হটাৎ করে একটা কাজ এসে যাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল পৃথা।

কিন্তু মনের মধ্যে ছিল, যে একদিন ওদের দুজনকে ডেকে খাওয়াবে সে, খবরটা শুনে সত্যিই খুব খুশি হয়েছিল পৃথা। তাই আজ শনিবার ছিল বলে এই দিনটাই ঠিক করে বলে দিয়েছিল সুশান্তকে। সুশান্তর যে খুব একটা ইচ্ছা ছিল না মৌসুমীকে নিয়ে আসার, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় নি পৃথার, কিন্তু সেই একটু জোর দিয়েছিল সুশান্তকে, যাতে ও মৌসুমীকে সাথে করেই আসে।

আলাপ হবার পর খারাপ লাগেনি মেয়েটিকে, বয়সে তার থেকে যথেষ্টই ছোট... সবে কলেজে ঢুকেছে... বাড়ির থেকেই নাকি ওদের দেখা শোনা করে বিয়ের ঠিক হয়েছে... সারাক্ষন সময়টা জুড়ে কলকল করে বকে গিয়েছে তার সাথে। ছোট্টখাট্ট শরীরের একদম বাচ্ছা মেয়ে... রোগা পাতলা... বুক পাছা এখনও সেই ভাবে তৈরী হয়নি... তবে বিয়ের জল লাগলে ফুলে ফেঁপে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই... গড়নটা সেই রকমেরই। গায়ের রঙটা একটু চাপা... তার মত সুন্দরীও নয়, কিন্তু তাতে কি? দেখতে খারাপ মোটেও নয়... একটা কেমন ছেলেমানুষি ব্যাপার আছে মেয়েটার মধ্যে। তবে বড্ড বকে... বকবক করে মাথা ধরিয়ে দেবার জোগাড়... পৃথাকে নিয়ে তার যেন বিস্ময়ের শেষ নেই... সে একা একটা মেয়ে বাড়ির সবাইকে ছেড়ে এত দূরে এসে চাকরী করছে, থাকছে একা একটা ফ্ল্যাটে এই ভাবে, ভাবতেই নাকি তার শিহরণ হচ্ছে... আবার যখন শুনেছে যে পৃথা ক্যারাটে জানে... শুনে সে কি ভিষন আপ্লুত... এই কয়’এক ঘন্টায় পৃথাকে প্রায় সুপার হিরোইন বানিয়ে ফেলেছে যেন। পৃথার নাকি সবই দারুন... বোঝ ঠেলা।

রাত বাড়তে সুশান্তরা বেরিয়ে পড়ে। হাউসকোটটা গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলে এগিয়ে দেয় পৃথা, নীচ অবধি... তারপর ফিরে আসার সময় আবার দেখা অলোকবাবুর সাথে... ‘বন্ধু বোধহয়?’ দেঁতো হাসির সাথে প্রশ্ন আসে।

‘হুম... অফিস কলিগ...’ মাথা হেলিয়ে উত্তর দেয় পৃথা... ‘ইনভাইট করেছিলাম... আমার ফ্ল্যাটে... সন্ধ্যেটা এঞ্জয় করার জন্য... বেশ কাটলো, জানেন...’ দাঁত বের করে হেসে বলে সে অলোকবাবুকে... ‘রাত তো অনেক হল, এখনও ঘুমান নি? পাহারা দিচ্ছিলেন?’ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে সে। ‘কাকিমা এখনও জেগে?’

‘কাকিমা’ কথাটা শুনেই যেন মনে হল অলোকবাবুর উৎসাহে কেউ জল ঢেলে দিল, মিইয়ে গিয়ে বলে উঠলেন, ‘ও... হ্যা... এই তো... এবার ঘুমাতে যাবো... আচ্ছা... ঠিক আছে... যাই... কেমন?’ বলে ঘরে ঢুকে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দেন অলোকবাবু।

ওনার অবস্থা দেখে হেসে ফেলে পৃথা... মাথা নেড়ে হাসতে হাসতে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
(চলবে)

Post a Comment

0 Comments