‘এই, বললে না তো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে!’... ড্রইং রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে পৃথা। গাঢ় নীল রঙের লম্বা প্রায় পায়ের গোছ অবধি ঝোলা কুর্তি পরনে। কুর্তির বুকের কাছে কমলা সুতোর কাজ করা, সামনে তিনটে বোতাম, যার মধ্যে দুটো খোলা রয়েছে, যেখান দিয়ে শরীরের ফর্সা চামড়ার খানিকটা উঁকি মারছে আর তার সাথে গলায় ঝুলতে থাকা সরু সোনার একটা চেন চিকচিক করছে ঘরের আলোয়... চেনের অংশটা গলার দুই পাশ থেকে বাঁক খেয়ে নেমে হারিয়ে গিয়েছে পরনের কুর্তির বুকের আড়ালে। পুরুষ্টু পায়ের সাথে চেপে বসে আছে কুর্তির বুকের ওপরে থাকা নক্সার রঙের সাথে মেলানো কমলা লেগিংস। অবাধ্য চুলগুলোকে একটা ক্লিপ দিয়ে পেছনে আটকানো... প্রসাধন যতসামান্যই... যতটুকু না করলে নয়... ঠোঁটের ওপরে হাল্কা লিপস্টিকের পরশ, আর কপালের ওপরে দুই ভুরু মাঝে ছোট্ট একটা কমলা রঙের টিপ... এতেই যেন কোন এক মোহিনীর মত ড্রইংরুমের মধ্যে ঢুকলো সে... মুগ্ধ দৃষ্টিতে পৃথার দিকে তাকিয়ে থাকে অর্নব... কে বলবে মেয়েটা আজ সকালেও এত অসুস্থ ছিল!
‘ভালো...’ ছোট্ট করে উত্তর দেয় অর্নব।
গলার স্বরে পৃথা বোঝে এখন অর্নব সোফায় বসে তার দিকেই নিশ্চয় তাকিয়ে রয়েছে... ওকে দেখছে ভেবে মনে মনে খুশি হয় সে। কিন্তু অর্নবের উত্তরে মোটেও খুশি হয় না পৃথা, ঠোঁট ওল্টায়... ‘শুধু ভালো? ব্যস?’ মনে মনে আরো কিছু শোনার অপেক্ষা করে সে।
‘সুন্দরীকে যতই প্রশংসা করো না কেন, সে প্রশংসা কুলায় না... সেটা জানো না?’ মৃদু গলায় বলে অর্নব।
‘ইশ... সুন্দরী না ছাই... আমাকে তো পেত্নী বলেছিলে সকালে, ভুলে গেছ?’ গাল ফুলে ওঠে তার।
‘আমি?’ আশ্চর্য হয় অর্নব... ‘আমি আবার কখন তোমায় পেত্নী বললাম? এত সাহস আমার আছে নাকি?’ অর্নবের স্বরে মজা মেখে থাকে।
‘বলোনি? তখন বাথরুমের আমাকে চান করাবার সময় বললেনা আমি পেত্নী? এখন কথা ঘোরানো হচ্ছে না?’ বলতে বলতে এগিয়ে যায় সোফার দিকে... হাত বাড়িয়ে খপ করে হাতের মুঠোয় ধরে নেয় অর্নবের গালের ওপরে থাকা লম্বা দাড়ির খানিকটা... নিয়েই টান মারে একটু... ‘আ...আ...আ...’ ব্যথায় কোঁকিয়ে ওঠে অর্নব... দাড়ি ছেড়ে দিয়ে কোমরে হাত রেখে দাঁড়ায় পৃথা।
‘উফ... কি ডাকাত মেয়ে রে বাবা... এই রকম স্যাডিস্ট জানলে...’ বলতে গিয়ে থমকায় অর্নব।
‘কি? আমি স্যাডিস্ট? বোলতে পারলে?’ অভিমানে গাল ভারী হয় পৃথার।
‘এটাকে স্যাডিসিজম্ ছাড়া আর কি বলবো? হ্যা? এই ভাবে কেউ দাড়ি টানে?’ নিজের গালে হাত বোলাতে বোলাতে উত্তর দেয় অর্নব।
‘বেশ করবো... আমার অর্নবকে নিয়ে আমি যা খুশি তাই করতে পারি... বুঝেছ?’ কোমরে হাত রেখে বাচ্ছা মেয়ের মত শরীর দোলায় সে।
‘তাহলে আমিও বেশ করেছি পেত্নী বলেছি... পেত্নী কে পেত্নী বলবো না তো কি অপ্সরা বলতে হবে?’ রাগায় অর্নব পৃথাকে।
‘ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি... ভূত একটা...’ বলে আবার মুখটা আন্দাজ করে হাত বাড়াতে যায় সে...
তাড়াতাড়ি করে ওর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে ধরে ফেলে অর্নব... ‘এই আর নয়... খুব লেগেছে...’ বলে ওকে একটু টান দেয় সামনের পানে হাতটা ধরেই।
নিজের শরীরটাকে নির্দিধায় এগিয়ে দেয় পৃথা... সোফার আরো কাছে এগিয়ে গিয়ে অর্নবের মাথাটাকে ধরে নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে... বলে, ‘ইশ... সরি সোনা... খুব লেগেছে না...’
পৃথার নরম বুকের ছোয়া পেতেই অর্নব নিজেকে তাড়াতাড়ি ওর বুকের ওপর থেকে সরিয়ে নেয় মাথাটা। পৃথাকে টেনে পাশে সোফায় বসায় ও হাতের মুঠোয় তখন শক্ত করে ধরে রাখে ওর হাতটাকে নিজের হাতের মধ্যে। শরীর এলিয়ে দিয়ে অর্নবের অদৃশ্য কাঁধের ওপরে মাথা রাখে পৃথা... ‘আদর খেতে ইচ্ছা করছে ভিষন...’ ফিসফিসিয়ে বলে অর্নবের কানের মধ্যে।
‘সেটা তো সব সময়ই করে চলেছে... কখন করে না? শুনি?’ হেসে উত্তর দেয় অর্নব।
‘উমমম্, ইচ্ছা করলে আমি কি করবো?’ আদুরে গলার জবাব আসে পৃথার কাছ থেকে।
‘হুম... সে তো বুঝলাম... কিন্তু একটু পরেই তো তোমার কলিগ আসবে ওর বৌকে নিয়ে, তখন?’ হাতটাকে পৃথার পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে টেনে নেয় ওকে নিজের বুকের ওপরে... একটু একটু করে নিজের ওপর থেকে সেল্ফ কন্ট্রোলটা যে অর্নব হারিয়ে ফেলছে তাতে বোঝার বাকি থাকে না আর।
অর্নবের বুকের মধ্যে আরো সেঁদিয়ে যায় পৃথা, গুনগুনিয়ে বলে, ‘আসুক না, যখন আসবে তখন দেখা যাবে...’ আলতো করে মুখটাকে কাত করে রাখে বুকের ওপরে... কানে শোনে না দেখা শরীরের হৃদ্ স্পন্দন... বুকের লোমগুলো আঙুলের ফাঁকে আলতো করে পাকাতে পাকাতে প্রশ্ন করে পৃথা, ‘একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? কিছু মনে করবে না?’
‘কি কথা? আমি জীবিত না মৃত? সেটা?’ মৃদু হেসে প্রশ্ন করে অর্নব ফিরিয়ে।
অর্নবের হাসি অনুভব করে পৃথা, লজ্জা পায় সে, ‘ইশ্, তুমি বুঝলে কি করে আমি কি জিজ্ঞাসা করতে চাইছিলাম?’ বুকের ওপরে আঁচড় কাটতে কাটতে প্রশ্ন করে সে।
‘এত কাছে রয়েছে ছুঁয়ে, আর সেটা বুঝবো না?’ ফের হাসে অর্নব।
‘ইশ্, সব বুঝতে পারে যেন আমার কথা...’ পৃথার গলার স্বরে আদর মিশে যায় আরো... ‘বুঝতেই যদি পারো, তাহলে আরো আগে কেন আমার কাছে ধরা দাও নি? এতদিন একা রেখেছ কেন আমাকে? হুম?’
‘ধরা তো আমি কোনদিনই দিতে চাই নি... তুমি তো জোর করে আমাকে ধরে ফেললে...’ অর্নবেরও যেন গলার স্বর ভারী হয়ে আসে।
‘ইশ্, ধরা না দিয়ে কোথায় যাবে মশাই... এই তিতিরকে না ভালোবেসে থাকতে পারতে?’ আরো যেন ঢুকে যেতে যায় পৃথা অর্নবের বুকের মাঝে।
‘সেই জন্যই তো যখন ওই ভাবে ডাকলে, আর থাকতে পারি নি সরে, এগিয়ে গিয়ে ধরেছিলাম তোমার হাতটা...’ হাতের বেড় আরো ঘন হয় পৃথার কাঁধের ওপরে।
অর্নবের বুকের ওপর থেকে হাতটা তুলে তার গালের ওপরে রাখে পৃথা, আলতো করে হাত বোলায় অর্নবের গালের ওপরে থাকা নরম লম্বা দাড়ির ওপরে, ‘কই, বললে না তো তুমি...’ পৃথার কথা শেষ হবার আগেই দরজায় বেলের শব্দ হয়... চকিতে দুজনে সোজা হয়ে বসে।
‘যাও... তোমার কলিগ এসেছে বোধহয়... আমিও উঠি...’ বলে ওঠার চেষ্টা করে অর্নব।
তাড়াতাড়ি করে অর্নবের বুকের ওপরে হাত রাখে পৃথা, ‘না... না... তুমি যাবে না... এখানেই থাকবে... আমার পাশে...’
‘আরে পাগলী... আমি তো অন্য ঘরেই থাকবো...’ বোঝাবার চেষ্টা করে অর্নব।
‘না... তুমি অন্য ঘরে নয়... এই ঘরেই থাকবে, আমার কাছে...’ আবদার করে পৃথা।
ফের বেল বাজে দরজায়।
‘আরে যাও... ও বেচারা বাইরে অপেক্ষা করছে, দরজাটা খুলে দাও...’ বলে ওঠে অর্নব।
‘আগে তুমি বলো, এই খানেই আমার পাশে থাকবে... যাবে না...’ ফের আবদার করে ওঠে পৃথা।
হাসে অর্নব... ‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা... আমি তোমার পাশেই থাকবো... হয়েছে? এবার তো যাও, দরজাটা খুলে দাও...’
‘না, শুধু পাশে নয়... সারাটা’খন আমাকে ছুঁয়ে থাকবে... বলো থাকবে...’ আদুরে গলায় বলে পৃথা।
‘আচ্ছা, তাই হবে... আমি তোমাকে ছুঁয়েই থাকবো... হয়েছে? এবার তো দরজাটা খোলো...’ হাসে অর্নব পৃথার ছেলেমানুষী দেখে।
অর্নবের অদৃশ্য গলাটা জড়িয়ে ধরে পৃথা, না দেখা দাড়ি ভরা গালটায় চুমু খেয়ে হেসে বলে, ‘সোনা আমার...’ বলে উঠে যায় দরজার দিকে... হাত তুলে এতক্ষন অর্নবের বুকের ওপরে মাথাটা ঘসার ফলে ক্লিপের থেকে বেরিয়ে আসা অবাধ্য খুলে আসা চুলগুলোকে ঠিক করতে করতে... অর্নব সোফায় বসে অপলক তাকিয়ে থাকে পৃথার হেঁটে যাওয়ার দিকে, তাকিয়ে তাকে নির্নিমেশ গাঢ় কুর্তির আড়াল থেকে সুস্পষ্ট ফুটে ওঠা উত্তাল নিতম্বের দোলদুলিয়মান ছন্দের পানে... আজ দুপুরেই বাথরুমের চান করার সময় যে ভাবে উদ্দাম হয়ে উঠেছিল মেয়েটা, রাতের বিছানায় কি ঝড় তুলবে সেটা ভাবতেই রক্তচাপ বেড়ে ওঠে অর্নবের।
.
.
Continued in Part 26 (খ)
0 Comments