পরভৃত by কামদেব – ৩৩

পুরানো জরাজীর্ণ তিনতলা বাড়ী।কোথাও কোথাও পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে রয়েছে।ইটের ফাক দিয়ে বেরিয়েছে বটের চারা।একতলায় সারি সারি দোকান সাজানো গোছানো।অটো থেকে নেমে হতাশ হল কঙ্কা।নজরে পড়ল দুটো দোকানের ফাক দিয়ে উপরে ওঠার সিড়ি।চোখ তুলে ঋষির দিকে তাকালো ভাবখানা কিরে যাবি?ঋষি বলল,চলো এতদুর এসেছি যখন শেষটাই বা বাকি থাকে কেন?কঙ্কা হাসল।
একটা গাড়ী এসে দাড়ালো।ড্রাইভার দরজা খুলে দিতে মধ্য বয়সী একজন মহিলা গাড়ী থেকে নেমে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।ঋষির সঙ্গে চোখাচুখি করে কঙ্কা সিড়ির দিকে এগিয়ে গেল।দোতলায় উঠে বিস্ময়ের সীমা থাকে না।বিশাল ঘর মাথার উপর পাখা ঘুরছে।দেওয়ালে বড় বড় পেণ্টিং।জনা কুড়ি মহিলা পুরুষ বসে আছে।পরস্পরের সঙ্গে নীচু গলায় আলাপ করছে।
ঋষি বলল তুমি বোসো।আমি একটু ঘুরে দেখি।
আসলে ঋষির বাথরুম যাবার দরকার।একজন গেরুয়া বসন মহিলাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,টয়লেট কোথায়।
মহিলা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল।অটোতেই বেগ পেয়েছিল,একেবারে ফুলে ঢোল হয়ে আছে।বাথরুমে ঢূকেই বাড়া বের করে দিল।আঃ-আআআ কি শান্তি!
জয়াআম্মা মনিটরে দেখে ঘণ্টা বাজালেন।সঙ্গে সঙ্গে গেরুয়া বসন এক মহিলা ঢুকতে জয়াআম্মা মনিটরে দেখিয়ে ব্বলল,ডিটেলস চাই।মহিলা চলে গেল।
কঙ্কা বসতেই প্রায় তারই বয়সী একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল,আজ প্রথম?
–হ্যা।কঙ্কা হেসে বলল।
–সঙ্গে স্বামী এসেছে?
–না একজন পরিচিতকে এনেছি।আপনি কি স্বামীর সঙ্গে এসেছেন?
–পাগল?ওকে আনি?
–কেন ওর সঙ্গে গোলমাল?কঙ্কা বুঝতে চায় মহিলা কেন এসেছে?
–আমাদের দুজনেরই অবস্থা এক।
–কি নিয়ে গোলমাল?বাইরের কোনো মেয়ে নেইতো? 
–আপনারও তাই?
–ওকেও একেবারে সাধুপুরুষ বলা যায় না।
–উনি কি করেন?
–ব্যাঙ্কে চাকরি করে।
একজন মহিলাকে সাধ্বীজয়ার ঘর থেকে বেরোতে দেখে মহিলা তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল,কিছু মনে করবেন না,কি রকম মনে হল?বুজ্রুকি নয়তো?
ভদ্রমহিলা বিরক্ত হয়ে বললেন,অত যদি সন্দেহ তা হলে এসেছেন কেন?
–রাগ করছেন কেন?নতুন এসেছি আচ্ছা যা জিজ্ঞেস করলেন সব ঠিক ঠিক বোলে দিলেন?
–জিজ্ঞেস করার আগেই সব বলে দিচ্ছেন।সাধে কি দিব্যজ্ঞানী বলে?আচ্ছা আসি ভাই।
কঙ্কা ওদের কথাবার্তা শুনে অবাক হয়।রেণুদি ভুল বলেনি।জিজ্ঞেস করতে হবে ভুত কবে নামবে।পাশের মহিলাকে জিজ্ঞেস করল,কবে সমস্যা হতে মুক্তি পাবো উনি বলতে পারবেন?
–বলে দেবেন।উনি নিজেও মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেন।
ঋষি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে।মনোরম পরিবেশ চন্দন ধুপের গন্ধ ম-ম করছে।এদিক ওদিক ঘুরছে আচমকা একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল আপনি কি মাতাজীর কাছে এসেছেন?
–আমি একজনের সঙ্গে এসেছি।আমার কোনো সমস্যা নেই।
মহিলা হাসল,কম বয়সীরা এসবে বিশ্বাস করে না।কিছু মনে করবেন না আপনি কি করেন?
–এবার বিএ পরীক্ষা দিয়েছি।
কঙ্কা হাত নেড়ে এই ঋষি বলে ডাকলো।মহিলা বলল,ঋষি?বেশ নাম।
কঙ্কা বলল,ওর নাম ঋষভ সোম।ছোটো করে ঋষি বলে ডাকি।ঋষি কাছে আসতে দুজনে ফিসফিস করে কিছুক্ষন কথা বলল।ঋষি বলল,ওনারও হয়তো স্বামীর সঙ্গে গোলমাল।
কঙ্কা বলল,আস্তে শুনতে পাবে।তুই ঐ মহিলার সঙ্গে কি কথা বলছিলি?
–নানা কথা হচ্ছিল কি করি কেন এসেছি?
–কেন বিয়ের পাত্র খুজছে নাকি?
–বাবা মা নেই দিদির আশ্রয়ে আছি শুনেই হাল ছেড়ে দিয়েছে।কঙ্কা তোমাকে কখন ডাকবে?
–নাড়ি নক্ষত্র ওকে বলার দরকার কি?কঙ্কা সাবধান করে দিল।
পাশের মহিলা বলল,সেটা শুনেছি মাতাজীর মর্জি।
কঙ্কা ভাবে মহিলা বকতে পারে।যতক্ষন বসে আছে বকেই চলেছে।দিব্যেন্দুর সম্পর্কে অত কথা না বললেই পারতো।
চন্দ্রিমা লাহিড়ী। নাম ডাকতেই সেই গাড়িওলা মহিলা ভিতরে ঢুকে গেল।দেখে বেশ অবস্থাপন্ন  মনে হয়।এর কি সমস্যা থাকতে পারে?মানুষের সমস্যার অন্ত নেই কঙ্কা বসে বসে ভাবে।
বিশাল তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসে  সাধ্বি জয়া।পিছনে ভয়াল দর্শন কালিকার ছবি।পাশে ল্যাপ্টপ।চন্দ্রিমা ঢুকেই জয়াআম্মার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।
–বোস বেটি।কন্টেস্ট করার ইচ্ছে আছে?
চন্দ্রিমা বসে হেসে বলল,আপনার কৃপা।
–কোষ্ঠী এনেছিস?
চন্দ্রিমা ব্যাগ থেকে কুষ্ঠি বের করে দিল।কুষ্টি দেখে জয়াজী ল্যাপটপ ঘাটাঘাটি করতে করতে বলল,বিরুদ্ধে আগের ক্যাণ্ডিডেট?
–এবার শুনছি ওর ওয়াইফ দাঁড়াবে।
–হুউম।
–মাতাজী আপনি কি দেখছেন?রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে চন্দ্রিমা।
ল্যাপটপ ঘাটাঘাটি করতে করতে জয়াআম্মা বললেন,আনন্দ কর। জনতা জনার্দন তোর পাশে থাকবে।
চন্দ্রিমা উঠে দাঁড়িয়ে আম্মাজীর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করল।
চন্দ্রিমা লাহিড়ি বেরোতে কঙ্কার ডাক পড়ল।ঋষি ঢুকতে গেলে বাধা পায়।অগত্যা কঙ্কা একাই ঢুকে হাতজোড় করে নমস্কার করল।কঙ্কাকে বসতে বলল।কঙ্কা লক্ষ্য করে মাতাজীর বয়স খুব বেশি নয় খুব বেশি হলে পঞ্চাশের কাছাকাছি।
–সংসারে অশান্তি?জয়া বললেন।
–ব্যাঙ্কে কাজ করে বেতন খারাপ নয়।রাহু ওকে ধরেছে।
কঙ্কা বুঝতে পারে না এসব কি করে বলছে?
–কিন্তু সুবিধে করতে পারবে না।তোর সঙ্গে বৃহস্পতি আছে।
–আমাদের ডিভোর্স হবে কি?
জয়া আম্মা চোখ তুলে তাকিয়ে হেসে বললেন,কাউকে ঠিক করেছিস?সময় হয়ে গেছে ওর কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবি।তোর বাবা পুলিশে আছে না এত চিন্তা কি?
–রিটায়ার করেছেন।
–আমি জানি কিন্তু ডিপার্ট্মেণ্টে এখনো জানাশোনা আছে।
কঙ্কার মুখে কথা সরেনা।সেকি ম্যাজিক দেখছে?
–কিছু বলবি?
–না না মাতাজী ডিভোর্স হতে আন্দাজ কত সময় লাগবে?
–এ বছরেই হয়ে যাবে।
–আসি মাতাজী?
নমস্কার করে বেরিয়ে এল।বাইরে বেরিয়ে ঋষির খোজ করল।একজন মহিলা এসে বলল,উনি ভিতরে গেছে আপনি বসুন।
ঋষি অবাক সে টাকা জমা দেয়নি তাকে কেন ডাকলো?এইসব বুজ্রুকিতে তার বিশ্বাস নেই।কঙ্কা বলল বলেই এসেছে।
–বোস বেটা।
–আমি কিছু জানতে আসিনি।
–জানি তুই এইসব বুজ্রুকি বিশ্বাস করিস না।
ঋষি চমকে উঠল।চেয়ারে বসে বলল,আমি কি বুজ্রুকি বলেছি?
–বলিস নি আমি বুঝতে পারি।তোর কামদণ্ড নয় ইঞ্চি আছে আমি দেখেছি?হি-হি-হি।
–তোর পরীক্ষা কেমন হল?
–মোটামুটি।
–পাস করে যাবি।ভাল্ভাবে পাস করে যাবি।তুই খুব দুখী আছিস।বাপ মা না থাকলে সব জায়গায় স্নেহ মমতা খুজে বেড়ায়।
ঋষির বিস্ময়ের সীমা থাকে না।জয়াজী বলল,তোর ভিতরে শক্তি আছে দুখের দিন খতম হয়ে যাবে।কিন্তু মনে ময়লা জমে শক্তির প্রকাশে বাধা পাচ্ছে।
ঋষি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।জয়াজী বললেন,মনের ময়লা দূর করতে মলশুদ্ধি অনুষ্ঠান জরুরী।
–কিভাবে করব?
–একদিন সন্ধ্যেবেলা আসতে হবে।
–কিন্তু আমার টাকা নেই।
–হি-হি-হি ওরে বেটা টাকা দিয়ে সব হয়না।উপরদিকে হাত দেখিয়ে জয়াজী বলল,সব তার মেহেরবানি।এত লোক ছিল তোকে কেন ডাকলাম?আদেশ পেলাম তাই ডাকলাম।
কিসব বলছে ঋষি বুঝতে পারেনা বলল,সন্ধ্যেবেলা আসা সম্ভব নয়।
–মন না চায় আসবি না।এই নে এইটা রেখে দে কাউকে দেখাবি না।
ঋষি দেখল একটা ফোন নম্বর।জয়াজী বললেন, মন চাইলে ফোন করে আসবি। আসন বানাতে হবে।যা ভাগ কঙ্কা  দাঁড়িয়ে আছে।
ঘেমে নেয়ে ঋষি বেরিয়ে এল।মুহূর্তে মনের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল।এরা এভাবেই মানুষকে বশ করে।কঙ্কা জিজ্ঞেস করল,তুই কোথায় গেছিলি?তোর মুখ চোখ অমন লাগছে কেন?
ঋষি বলল,বলছি চলো আগে নীচে চলো।
দুজনে নীচে নেমে এল।সামনে অটো দেখে চেপে বসে বুল,বাসস্টান্ড।
কঙ্কা অবাক হয়ে ঋষিকে দেখছে।বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি হল?মাতাজীর সঙ্গে কোনো গোলমাল করেনি তো?এবার কঙ্কা ভয় পেয়ে যায়।এরা নানা তুকতাক জানে অনেক কিছুই করতে পারে।বাসস্ট্যাণ্ডে এসে দেখল একটা কয়েকজন মোটে বসে আছে।একটা সিটে কঙ্কা ঋষি পাশাপাশি বসল।কঙ্কা জিজ্ঞেস করল,ওদের সঙ্গে কোনো গোলমাল করিস নি তো?
ঋষি হাসল।রুমাল বের করে মুখ মুছে বলল,তোমার কিমনে হয় ঋষি খালি গোলমাল করে? 
–তোকে নিয়ে আমার ভীষণ ভয়।এদের নানা বিদ্যে জানা আছে এদের সঙ্গে গোলমালে যাওয়ার দরকার কি?
–আমার মাথায় কি ভুত চেপেছে যে ঐ বুজরুগদের সঙ্গে খামোখা গোলমাল করতে যাবো?
–ভুতকে ভয় পাইনা আমার ভয় পেত্নীকে।
ঋষি খিল খিল করে হেসে উঠল।বাস ছেড়ে দিল।কঙ্কাকে এখনই সব কথা বলবে না পরে রয়ে সয়ে বলা যাবে।শালা ঐটার মাপ বলল কি করে?ঋষি দেখল কঙ্কা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।এমন কিছু বলেছে কঙ্কাকে সেইসব কথা ভাবছে হয়তো।
–কি ভাবছো মাতাজীর কথা?
কঙ্কা মুখ ঘুরিয়ে হেসে বলল,আজ আবার ঝামেলা হতে পারে।বাসায় ফিরে যখন দেখবে আমি নেই সন্দেহের সাপ ফনা তুলবে।
–তোমার গায়ে হাত দেয়না তো?
–সেই সাহস হবেনা।গায়ে হাত দিলে সঙ্গে সঙ্গে বের করে দেবো।
–তুমি পারবে?ঋষি মজা পায়।
–আমাকে কি মনে করিস বলতো?অবলা নারী?
–আমার সঙ্গে পারবে?
–তোকে কোলে তুলিনি?
ঋষির এইজন্য কঙ্কাকে ভাল লাগে।ফুলের ঘায়ে মুর্ছা যায় এরকম মেয়ে ভাল লাগেনা।
দেখতে দেখতে বাস ভরে গেছে যাত্রীতে।এখন লোকের কান এড়িয়ে কথা বলা যাবেনা।
কঙ্কা বুঝতে পেরে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।
(চলবে)

Post a Comment

0 Comments