পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গল কল্পনার।সন্দীপ তখনো ঘুমিয়ে,ওকে ডেকে তুলে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এল।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে বেরোতে হবে।যতক্ষন বাড়ি পৌছাতে না পারছে শান্তি নেই।
দীপুকে তাগাদা দিল,কিহল বসে আছো কেন?বাথরুম গেলে যাও।সন্দীপ বাথরুমে চলে গেল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে।বেয়েরা চা দিয়ে গেল।কল্পনা বলল,তাড়াতাড়ি বের হও চা দিয়ে গেছে।নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে গিয়ে নজর পড়ল পাছার নীচে শাড়ীতে রক্তের দাগ।
দরজা বন্ধ করে শাড়ী খুলে অন্য রকমভাবে পরল।এখন রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে নাআ।কল্পনা অবাক হল তার তো সময় হয়নি এখনো? বিছানার চাদরে রক্তের দাগ দেখে কল্পনা দ্রুত বালিশ চাপা দিয়ে ঢেকে দিল।
রিসেপশনে বিল মেটাতে গেল সন্দীপ।পাশে দাঁড়িয়ে কল্পনা।বিল দেখে সন্দীপ বলল,ওয়াশিং চার্জ এত?
–হাইমেন ফ্রাকচার হয়েছে বিছানা পুরো চেঞ্জ করতে হবে।
–হাইমেন ফ্রাকচার?আমরা তো কিছুই ভাঙ্গিনি।
কল্পনা বলল,কথা বলে যা চাইছে দিয়ে দাও।
কল্পনা এতক্ষনে বুঝতে পারে শাড়িতে কিসের রক্ত?বেয়ারাটা চা দিতে এসে সম্ভবত দেখে গেছে।
সকালের কাগজে খবরটা পড়ে ঋষির ভাল লাগে।আদালত সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।পুলিশের আর কোনো ভুমিকা থাকলো না।এবার আশা করা যায় সি আই ডি প্রকৃত ঘটনা খুজে বের করবে।প্রকৃত ঘটনা সামনে এলে বাবুয়া নির্দোষ তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।বিকেলে গিয়ে কোহিনূরকে নিয়ে আসবে।আজ ওর নাম লেখানো আছে।বাবুয়া বেরিয়ে এলে তার দায়িত্ব শেষ।
ঋষির মন হঠাৎ বিষন্ন হয়।ছোড়দি কেমন আছে টুকুন কেমন পড়াশুনা করছে কঙ্কার সঙ্গে দিবুদার সম্পর্ক কোনো পরিবর্তন হল কি না কোহিনূর ফার্মেসী চালু করা বাবুয়াকে কি ভাবে বের করে আনা যায়?হাজার চিন্তা মাঝে নিজের জন্য ভাবার একটু ফাক নেই।তার লেখাপড়া এখানেই কি শেষ?খিন কিল নার্সিং হোমেই তার যাত্রা শেষ?
কিশোর বেলায় ফিরে যায় মন।শিলু ডাগর চোখ দাত ঈষৎ উচু তাদের বাড়ির কয়েকটা বাড়ীর পর শিলুদের বাড়ী।যাতায়াতের পথে দেখা হত প্রায়।ওদের বাড়ী পেরোবার সময় একপলক দেখার জন্য মনটা কেমন করতো।কারণে অকারণে দিশাদি-দিশাদি করতে করতে ঋষিদের বাড়ি আসতো।
বুঝতে পারত ওর চোখ কাকে খুজে বেড়াচ্ছে।বড়দির সঙ্গে যেদিন কলকাতায় এল ওর চোখে দেখেছিল থমকে আছে বেদনা।কলকাতার পরিবেশে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলল শিলুর সেই ম্লান মুখ।তখন বয়স ছিল কম। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় জাহ্নবীর সঙ্গে আলাপ হল।বড়লোকের মেয়ে টিফিনে সন্দেশ আনতো।রোজ ভাগ দিত টিফিনের।
সবাই সেজন্য হিংসা করত ঋষিকে।অনেকে মুখরোচক গল্প বানালেও বুকের মধ্যে জমে থাকা কথা শেষ অবধি বলা হয়ে ওঠেনি।পরীক্ষার পর হারিয়ে গেল জাহ্নবী।কিছুদিন মনের মধ্যে জাহ্নবীর উপস্থিতি টের পেলেও কলেজে ভর্তি হবার কিছুদিন পর সেই জায়গা নিল পর্ণা।আলাপ হয়নি কেবল দেখা হত ক্লাসে।মনে হত কি যেন বলতে চায় ঋষিকে।
প্রতি মুহূর্ত অপেক্ষা করত পর্ণা বুঝি কিছু বলবে।কিন্তু বলেনি।পরীক্ষার ফিজ দিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসায় ফিরছে সামনে দেখল পর্ণাকে।ভাল লাগে মনে মনে ভাবে এই পথ যেন শেষ না হয়।পর্ণার পিছু পিছু চলবে সারা জীবন। হঠাৎ পর্ণা দাঁড়িয়ে পড়ল।
ঢিপঢিপ কোরে উঠল বুক।কাছে যেতে জিজ্ঞেস করল,কিছু বলবেন?থতমত খেয়ে বলল,কই নাতো।তারপর হারিয়ে গেল পর্ণাও।জাহ্নবী আর পর্ণাকে নিয়ে একটু অন্যরকম ভাবনা উকি দিত মনের কোনে।কিভাবে কঙ্কার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল বুঝতেই পারেনি।বয়সে অনেক বড় বলে অন্যকিছু ভাবার কথা মনে হয়নি।
ভাল লাগলেও লায়লীর ক্ষেত্রেও তাই।ভাসতে ভাসতে এখানে এসে ড.এমাকে দেখল।ভাল লাগলেও কত বড় ডাক্তার সব সময় চেষ্টা করেছে যাতে পুষ্ট না হয়। সব ভাল লাগা সব ইচ্ছে কি প্রকাশ করা যায়?এইসব ভাল লাগা সঞ্চয় করতে করতে হয়তো একদিন হবে যাত্রাবসান।
হঠাৎ খেয়াল হয় ভজা এসে দাঁড়িয়ে আছে।ভজা জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছো বস?মন খারাপ?
ঋষি হেসে বলল,তুমি কতক্ষন?বাইরে বিশুবাবুকে দেখে জিজ্ঞেস করল,ড্রাগ লাইসেন্স?
–হয়েছে,অনেক ফালতু টাকা দিতে হল।
ঋষি বলল,ওকে ডাকো চলো ক্যাণ্টিনে গিয়ে বসি।
–তোমার সামনে আসতে ভয় পাচ্ছে।এই বিশুবাবু বস ডাকছে।
তিন জনে ক্যাণ্টিনে গিয়ে বসল।ভজা বলল,কালকের কথা শুনেছো?
–কাগজে পড়লাম।
–বস গুরুর তো খালাস হলনা ফালতু একগাদা টাকা গেল।
–অত ব্যস্ত হচ্ছো কেন?তদন্ত হতে দাও।
–আমিও এই কথা বলছিলাম।বিশুবাবু বলল।শুনেছি সিআইডি শান্তিদার বাড়ীর আশপাশে খবরাখবর নেওয়া শুরু করেছে।
ঋষি বলল,কটা দিন যাক।তারপর বোঝা যাবে।
বিশুবাবু বলল,দোকানটা ভাল জায়গায় হয়েছে।অনেকে জিজ্ঞেস করছিল কবে চালু হবে?
–তোমরা এখন যাও।কোহিনূরকে বলবে রেডি হয়ে থাকতে।আমি বিকেলে গিয়ে নিয়ে আসব।
ঋষিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ভজা জিজ্ঞেস করল,বস ভাবীর খারাপ কিছু হয়েছে?
ভজার মুখ দেখে অবাক লাগে।কোহিনূরের সঙ্গে ভজার রক্তের সম্পর্ক দুরের কথা
কোনো রকম সম্পর্ক নেই।বাবুয়ার সঙ্গে একটা সম্পর্ক আছে ঠিকই।ভজার মনে কোহিনূর সম্পর্কে এই উদবেগ ঋষিকে এক নতুন শিক্ষা দিল যেন।ঋষি হেসে বলল,এখন কাউকে বলবে না।কোহিনূর মা হতে চলেছে।ভজা হুর-রে বলতে গিয়ে থেমে গিয়ে দুখী গলায় বলল,গুরুর লাকটাই খারাপ বস।
খাটে আধশোয়া হয়ে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছিল বিদিশা।টুকুনকে নিয়ে বড়দি ঢুকতে চমকে উঠে বসে বলল,বড়দি তুই?
–ঋষিকে দেখছি না।ও কোথায়?মনীষা জিজ্ঞেস করল।
–ওতো এখনও আসেনি।দেখ হয়তো রাস্তায় ওর দেবুদার সঙ্গে দেখা হয়েছে গল্প করতে করতে আসছে।টুকুনসোনা কত বড় হয়ে গেছে।বিদিশা টুকুনকে আদর করে।বড়দি বোস দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?
–বসতে আসিনি।ঋষির খোজে এসেছি।
বিদিশা অবাক হয়ে বলল,মানে?ঋষি তোর সঙ্গে আসেনি?
–ঋষি তোর এখানে থাকে না?মনীষা তীব্র দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
–তুই কিবলছিস আমি মাথামুণ্ডূ কিছুই বুঝতে পারছিনা।অসহায়ভাবে বলল বিদিশা।
মনীষা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।চৌকিতে বসে পড়ল।বিদিশা বলল,বড়দি কি হয়েছে আমাকে সত্যি করে বল?
–আমাকে এক গেলাস জল দে।
বিদিশা দ্রুত কলসী হতে জল এনে মনীষার হাতে দিল।
ঋষি ফিরতে রাত হবে বলে বেরিয়েছে।তারপর থেকে আর ফেরেনি।ভাবলাম রেজাল্ট খারাপ হয়েছে খবর নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাস করেছে।তোর জামাইবাবুকে তো জানিস কি করব কিছু বুঝতে পারছিনা।এমন সময় একটা ছেলে এসে বলে গেল ঋষি হালিশহর গেছে।শুনে নিশ্চিন্ত হলাম।কিন্তু তোর এখানে এতদিন কি করছে?দিশারে একটা মাত্রভাই আমার কোথায় খুজি বলতো?
বিদিশা চোখের জল দমন করে বড়দিকে জড়িয়ে ধরে বলল,বড়দি কাদিস না।এখন মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতে হবে।ডাক্তারটা এখন কোথায় গেল?
স্কুল ছুটি হয়ে গেছে।সুবিনয় বাড়ি ফিরে চৌকির উপর মনীষাকে দেখে থমকে দাড়ায়।মনীষা জিজ্ঞেস করল,স্কুল ছুটি হয়ে গেল?এসো আমার কাছে এসো।
সুবিনয় সঙ্কুচিতভাবে কাছে যেতে ব্যাগ থেকে বের করে সন্দেশের বাক্স হাতে দিল।বিদিশা বলল,দ্যাখ তো ডাক্তার কোথায় গেল?
সুবিনয় সন্দেশের বাক্স মায়ের হাতে দিয়ে ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেল।মনীষা বিছানায় শায়িত বিদিশার ছেলেকে কোলে নিয়ে বলল,ভেবেছিলাম এবার মেয়ে হবে।
–সুবিও তো বোন বোন করছিল।যা চাওয়া যায় তাই কি পাওয়া যায়?
মনীষা ব্যাগ খুলে একটা পাচশো টাকার নোট বোনের হাতে দিয়ে বলল,তোর ছেলেকে দিলাম।
সুদেব ঢুকে মনীষার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে সুবিও প্রণাম করল।বিদিশা বলল,কোথায় গেছিলে তুমি বড়দি এসে বসে আছে।
–একটা কলে গেছিলাম।মিস্টির প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,সুবি বলল মাসী এসেছে।
দিদির জন্য এনেছি।
বিদিশা মিস্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে অন্য ঘরে চলে গেল।
মনীষার কাছে গিয়ে সুবি জিজ্ঞেস করল,মামু আসেনি?
–বাবা তোমার মামু রাগ করে চলে গেছে।
বিদিশা একটা প্লেটে মিস্টি নিয়ে ঢুকে বলল,বড়দি কিসব পাগলের মত বলছিস?এই শুনেছো ঋষির কথা?
সুদেব অবাক হয়ে ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করল।মনীষা বলল,গুণ্ডা বদমাশদের সঙ্গে মিশে ছেলেটা বয়ে গেছে।
–কি সব বলছেন বড়দি?সুদেব প্রতিবাদ করল্।ঋষিকে ভাই হতে পারে কিন্তু ওকে চেনেন নি।কোনো অসৎ কাজ ওর দ্বারা হবে না। কি হয়েছে আমাকে বলুন তো?
মনীষা সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত বলল।সুদেব জিজ্ঞেস করল,ছেলেটা কি বলেছিল ছোড়দির বাড়ী গেছে?
–তাছাড়া আর কি?হালিশহরে দিশা ছাড়া ওর আর কে আছে?
সুদেব হাসল বলল,ঠিক আছে বড়দি আপনি বিশ্রাম করুন।ঋষি বাচ্চা ছেলে নয়।ও আসুক তখন সব জানা যাবে।আমি একটু বাজার ঘুরে আসি।
–আমি এখন উঠব।টুকুনের বাবার ফেরার আগেই আমাকে ফিরতে হবে।
বিদিশার কানে কথাটা যেতে ঘরে ঢুকে বলল,তাহলে তুই আসলি কেন?
সুদেব বউকে থামায়,ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করো।
–সারা জীবন ধরে বুঝেছি আর বোঝার দরকার নেই।
মনীষার চোখ ছল ছল করে উঠল।সুদেব বলল,তুমি দিদিকে কাদালে তো?
–অন্যের চোখে জল দেখতে পাও আমার চোখের জল তোমার নজরে পড়ে না?বিদিশা চলে গেল।
সুদেব বলল,বড়দি আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।
মনীষা আঁচলের খুটে চোখ মুছে হেসে বলল,ঐ পাগলী আমাকে কত ভালবাসে আমি জানিনা?বিধাতা আমাকে যে জীবন দিয়েছে তার বাইরে যাই কি করে বলো?
সুদেব ঘড়ি দেখে বলল,রেডি হয়ে নিন এখন একটা গাড়ী আছে।
দিশা ফিরে এল মুখে হাসি নিয়ে বলল,বড়দি ঋষি ফিরলেই আমাকে খবর দিবি।
ঋষি দেখল কোহিনূর সেজেগুজে প্রস্তুত।রিক্সা নিয়ে রওনা হল।ঋষী বলল,আপনাকে নাম জিজ্ঞেস করলে বলবেন,কোহিনূর বেগম।ডাক্তার ম্যাডাম খুব ভাল মানুষ একদম ভয় পাবেন না।
কোহিনূর মনে মনে হাসে।বসের বুদ্ধি থাকলে কি হবে একেবারে ছেলে মানুষ।ভাব কোরে সব মন দিয়ে শুনছে।নার্সিং হোমের সামনে নেমে কোহিনূরকে ভিজিটরস রুমে বসিয়ে ঋষি বলল,নাম ডাকলে আপনি যাবেন।নটা নাগাদ আপনাকে ডাকবে ,কোহিনূর হাসল।
লেবুবাগান হতে আসার পর কোহিনূরের সাজপোশাক হাবভাব একেবারে বদলে গেছে।মাথায় সব সময় ঘোমটা।সাধারণ আর পাঁচজন হতে আলাদা করা যায়না।অবস্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কেমন বদলে যায় দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল
ঋষি।কোহিনূর বেগমের নাম ডাকতে ঋষি বলতে যাবে তার আগেই কোহিনূর উঠে চারদিক দেখে ভিতরে ঢুকে গেল।
কোহিনূর ভিতরে যেতে একজন নার্স এগিয়ে এসে ওজন নিল।তারপর ড.এমার সামনে বসিয়ে দিল।মৃদু স্বরে দুজনের মধ্যে কিছু কথা হবার পর ড.এমা নোট করে সামনের টেবিলে শুয়ে পড়তে বলল।একজন নার্স শায়িত কোহিনূরের প্রেশার নিল।ড.এমা কোমরের বাধন আলগা করে হাত দিয়ে তলপেটে চাপ দিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করল,কি করেন?
–বিজনেস।
–অসুবিধে না থাকলে বলবেন কিসের বিজনেস?
–মেডিসিন শপ।
–এইবার প্রথম?
কোহিনূর ইতস্তত করে।ড.এমা জিজ্ঞেস করে,আগে এ্যাবর্শন করিয়েছিলেন?
–জী।
–কেন?
–অসুবিধা ছিল।
–এবার সন্তান চান?হেসে জিজ্ঞেস করল ড.এমা।ঠিক আছে সঙ্গে কে এসেছে ডাকুন।
কোহিনূর বেরিয়ে বস বস করে ডাকতে থাকে।ঋষি উপায়ন্তর নেই দেখে কোহিনূরের সঙ্গে ভিতরে ঢুকল।ড.এমা ঋষিকে দেখে চমকে উঠল।মাথা নীচু ওষুধ লিখতে লিখতে বলতে থাকে ম্যাচুয়ের বেবি এ্যাবরশন করতে গেলে অপারেশন করতে হবে।ওষুধ লিখে দিলাম।নেক্সট?
ওরা বেরিয়ে যেতে ড.এমা কেমন অসুস্থ বোধ করে।নার্স এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম আর ইউ ওকে?
ড.এমা চোখ না তুলে জিজ্ঞেস করল আর কজন আছে?
ড.এমার চোখমুখ লাল নার্স বলল,দুজন ম্যাডাম।ক্যন্সেল কোরে দেবো?
ড.এমা হেসে বলল,এ্যাম ওকে।নেক্সটকে ডাকুন।
কথাটা মুহূর্তে সারা হাসপাতালে ছড়িয়ে যায়।ঋষি কোহিনূরকে পৌছে দিতে গেছে।কাঞ্চা চেম্বারে ঢুকে পড়ে জিজ্ঞেস করল,মেমসাব শরীর খারাপ লাগছে?
–তুমি আমাকে একটু চা খাওয়াও।
কাঞ্চা চা আনতে চলে গেল।রোগী দেখা শেষ করে ড.এমা বলল,আজ আর ওয়ার্ড ভিজিট করব না।কাঞ্চা চা নিয়ে আসতে ড.এমা বলল,উপরে নিয়ে চলো।
ত্রিদিবেশবাবু হন্তদন্ত হয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,ম্যাডাম এনি প্রবলেম?
ড.এমা বলল,খাওয়া দাওয়ার গোলমাল হয়ে থাকবে।
(চলবে)
দীপুকে তাগাদা দিল,কিহল বসে আছো কেন?বাথরুম গেলে যাও।সন্দীপ বাথরুমে চলে গেল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে।বেয়েরা চা দিয়ে গেল।কল্পনা বলল,তাড়াতাড়ি বের হও চা দিয়ে গেছে।নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে গিয়ে নজর পড়ল পাছার নীচে শাড়ীতে রক্তের দাগ।
দরজা বন্ধ করে শাড়ী খুলে অন্য রকমভাবে পরল।এখন রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে নাআ।কল্পনা অবাক হল তার তো সময় হয়নি এখনো? বিছানার চাদরে রক্তের দাগ দেখে কল্পনা দ্রুত বালিশ চাপা দিয়ে ঢেকে দিল।
রিসেপশনে বিল মেটাতে গেল সন্দীপ।পাশে দাঁড়িয়ে কল্পনা।বিল দেখে সন্দীপ বলল,ওয়াশিং চার্জ এত?
–হাইমেন ফ্রাকচার হয়েছে বিছানা পুরো চেঞ্জ করতে হবে।
–হাইমেন ফ্রাকচার?আমরা তো কিছুই ভাঙ্গিনি।
কল্পনা বলল,কথা বলে যা চাইছে দিয়ে দাও।
কল্পনা এতক্ষনে বুঝতে পারে শাড়িতে কিসের রক্ত?বেয়ারাটা চা দিতে এসে সম্ভবত দেখে গেছে।
সকালের কাগজে খবরটা পড়ে ঋষির ভাল লাগে।আদালত সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।পুলিশের আর কোনো ভুমিকা থাকলো না।এবার আশা করা যায় সি আই ডি প্রকৃত ঘটনা খুজে বের করবে।প্রকৃত ঘটনা সামনে এলে বাবুয়া নির্দোষ তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।বিকেলে গিয়ে কোহিনূরকে নিয়ে আসবে।আজ ওর নাম লেখানো আছে।বাবুয়া বেরিয়ে এলে তার দায়িত্ব শেষ।
ঋষির মন হঠাৎ বিষন্ন হয়।ছোড়দি কেমন আছে টুকুন কেমন পড়াশুনা করছে কঙ্কার সঙ্গে দিবুদার সম্পর্ক কোনো পরিবর্তন হল কি না কোহিনূর ফার্মেসী চালু করা বাবুয়াকে কি ভাবে বের করে আনা যায়?হাজার চিন্তা মাঝে নিজের জন্য ভাবার একটু ফাক নেই।তার লেখাপড়া এখানেই কি শেষ?খিন কিল নার্সিং হোমেই তার যাত্রা শেষ?
কিশোর বেলায় ফিরে যায় মন।শিলু ডাগর চোখ দাত ঈষৎ উচু তাদের বাড়ির কয়েকটা বাড়ীর পর শিলুদের বাড়ী।যাতায়াতের পথে দেখা হত প্রায়।ওদের বাড়ী পেরোবার সময় একপলক দেখার জন্য মনটা কেমন করতো।কারণে অকারণে দিশাদি-দিশাদি করতে করতে ঋষিদের বাড়ি আসতো।
বুঝতে পারত ওর চোখ কাকে খুজে বেড়াচ্ছে।বড়দির সঙ্গে যেদিন কলকাতায় এল ওর চোখে দেখেছিল থমকে আছে বেদনা।কলকাতার পরিবেশে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলল শিলুর সেই ম্লান মুখ।তখন বয়স ছিল কম। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় জাহ্নবীর সঙ্গে আলাপ হল।বড়লোকের মেয়ে টিফিনে সন্দেশ আনতো।রোজ ভাগ দিত টিফিনের।
সবাই সেজন্য হিংসা করত ঋষিকে।অনেকে মুখরোচক গল্প বানালেও বুকের মধ্যে জমে থাকা কথা শেষ অবধি বলা হয়ে ওঠেনি।পরীক্ষার পর হারিয়ে গেল জাহ্নবী।কিছুদিন মনের মধ্যে জাহ্নবীর উপস্থিতি টের পেলেও কলেজে ভর্তি হবার কিছুদিন পর সেই জায়গা নিল পর্ণা।আলাপ হয়নি কেবল দেখা হত ক্লাসে।মনে হত কি যেন বলতে চায় ঋষিকে।
প্রতি মুহূর্ত অপেক্ষা করত পর্ণা বুঝি কিছু বলবে।কিন্তু বলেনি।পরীক্ষার ফিজ দিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসায় ফিরছে সামনে দেখল পর্ণাকে।ভাল লাগে মনে মনে ভাবে এই পথ যেন শেষ না হয়।পর্ণার পিছু পিছু চলবে সারা জীবন। হঠাৎ পর্ণা দাঁড়িয়ে পড়ল।
ঢিপঢিপ কোরে উঠল বুক।কাছে যেতে জিজ্ঞেস করল,কিছু বলবেন?থতমত খেয়ে বলল,কই নাতো।তারপর হারিয়ে গেল পর্ণাও।জাহ্নবী আর পর্ণাকে নিয়ে একটু অন্যরকম ভাবনা উকি দিত মনের কোনে।কিভাবে কঙ্কার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল বুঝতেই পারেনি।বয়সে অনেক বড় বলে অন্যকিছু ভাবার কথা মনে হয়নি।
ভাল লাগলেও লায়লীর ক্ষেত্রেও তাই।ভাসতে ভাসতে এখানে এসে ড.এমাকে দেখল।ভাল লাগলেও কত বড় ডাক্তার সব সময় চেষ্টা করেছে যাতে পুষ্ট না হয়। সব ভাল লাগা সব ইচ্ছে কি প্রকাশ করা যায়?এইসব ভাল লাগা সঞ্চয় করতে করতে হয়তো একদিন হবে যাত্রাবসান।
হঠাৎ খেয়াল হয় ভজা এসে দাঁড়িয়ে আছে।ভজা জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছো বস?মন খারাপ?
ঋষি হেসে বলল,তুমি কতক্ষন?বাইরে বিশুবাবুকে দেখে জিজ্ঞেস করল,ড্রাগ লাইসেন্স?
–হয়েছে,অনেক ফালতু টাকা দিতে হল।
ঋষি বলল,ওকে ডাকো চলো ক্যাণ্টিনে গিয়ে বসি।
–তোমার সামনে আসতে ভয় পাচ্ছে।এই বিশুবাবু বস ডাকছে।
তিন জনে ক্যাণ্টিনে গিয়ে বসল।ভজা বলল,কালকের কথা শুনেছো?
–কাগজে পড়লাম।
–বস গুরুর তো খালাস হলনা ফালতু একগাদা টাকা গেল।
–অত ব্যস্ত হচ্ছো কেন?তদন্ত হতে দাও।
–আমিও এই কথা বলছিলাম।বিশুবাবু বলল।শুনেছি সিআইডি শান্তিদার বাড়ীর আশপাশে খবরাখবর নেওয়া শুরু করেছে।
ঋষি বলল,কটা দিন যাক।তারপর বোঝা যাবে।
বিশুবাবু বলল,দোকানটা ভাল জায়গায় হয়েছে।অনেকে জিজ্ঞেস করছিল কবে চালু হবে?
–তোমরা এখন যাও।কোহিনূরকে বলবে রেডি হয়ে থাকতে।আমি বিকেলে গিয়ে নিয়ে আসব।
ঋষিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ভজা জিজ্ঞেস করল,বস ভাবীর খারাপ কিছু হয়েছে?
ভজার মুখ দেখে অবাক লাগে।কোহিনূরের সঙ্গে ভজার রক্তের সম্পর্ক দুরের কথা
কোনো রকম সম্পর্ক নেই।বাবুয়ার সঙ্গে একটা সম্পর্ক আছে ঠিকই।ভজার মনে কোহিনূর সম্পর্কে এই উদবেগ ঋষিকে এক নতুন শিক্ষা দিল যেন।ঋষি হেসে বলল,এখন কাউকে বলবে না।কোহিনূর মা হতে চলেছে।ভজা হুর-রে বলতে গিয়ে থেমে গিয়ে দুখী গলায় বলল,গুরুর লাকটাই খারাপ বস।
খাটে আধশোয়া হয়ে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছিল বিদিশা।টুকুনকে নিয়ে বড়দি ঢুকতে চমকে উঠে বসে বলল,বড়দি তুই?
–ঋষিকে দেখছি না।ও কোথায়?মনীষা জিজ্ঞেস করল।
–ওতো এখনও আসেনি।দেখ হয়তো রাস্তায় ওর দেবুদার সঙ্গে দেখা হয়েছে গল্প করতে করতে আসছে।টুকুনসোনা কত বড় হয়ে গেছে।বিদিশা টুকুনকে আদর করে।বড়দি বোস দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?
–বসতে আসিনি।ঋষির খোজে এসেছি।
বিদিশা অবাক হয়ে বলল,মানে?ঋষি তোর সঙ্গে আসেনি?
–ঋষি তোর এখানে থাকে না?মনীষা তীব্র দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
–তুই কিবলছিস আমি মাথামুণ্ডূ কিছুই বুঝতে পারছিনা।অসহায়ভাবে বলল বিদিশা।
মনীষা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।চৌকিতে বসে পড়ল।বিদিশা বলল,বড়দি কি হয়েছে আমাকে সত্যি করে বল?
–আমাকে এক গেলাস জল দে।
বিদিশা দ্রুত কলসী হতে জল এনে মনীষার হাতে দিল।
ঋষি ফিরতে রাত হবে বলে বেরিয়েছে।তারপর থেকে আর ফেরেনি।ভাবলাম রেজাল্ট খারাপ হয়েছে খবর নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাস করেছে।তোর জামাইবাবুকে তো জানিস কি করব কিছু বুঝতে পারছিনা।এমন সময় একটা ছেলে এসে বলে গেল ঋষি হালিশহর গেছে।শুনে নিশ্চিন্ত হলাম।কিন্তু তোর এখানে এতদিন কি করছে?দিশারে একটা মাত্রভাই আমার কোথায় খুজি বলতো?
বিদিশা চোখের জল দমন করে বড়দিকে জড়িয়ে ধরে বলল,বড়দি কাদিস না।এখন মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতে হবে।ডাক্তারটা এখন কোথায় গেল?
স্কুল ছুটি হয়ে গেছে।সুবিনয় বাড়ি ফিরে চৌকির উপর মনীষাকে দেখে থমকে দাড়ায়।মনীষা জিজ্ঞেস করল,স্কুল ছুটি হয়ে গেল?এসো আমার কাছে এসো।
সুবিনয় সঙ্কুচিতভাবে কাছে যেতে ব্যাগ থেকে বের করে সন্দেশের বাক্স হাতে দিল।বিদিশা বলল,দ্যাখ তো ডাক্তার কোথায় গেল?
সুবিনয় সন্দেশের বাক্স মায়ের হাতে দিয়ে ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেল।মনীষা বিছানায় শায়িত বিদিশার ছেলেকে কোলে নিয়ে বলল,ভেবেছিলাম এবার মেয়ে হবে।
–সুবিও তো বোন বোন করছিল।যা চাওয়া যায় তাই কি পাওয়া যায়?
মনীষা ব্যাগ খুলে একটা পাচশো টাকার নোট বোনের হাতে দিয়ে বলল,তোর ছেলেকে দিলাম।
সুদেব ঢুকে মনীষার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে সুবিও প্রণাম করল।বিদিশা বলল,কোথায় গেছিলে তুমি বড়দি এসে বসে আছে।
–একটা কলে গেছিলাম।মিস্টির প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,সুবি বলল মাসী এসেছে।
দিদির জন্য এনেছি।
বিদিশা মিস্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে অন্য ঘরে চলে গেল।
মনীষার কাছে গিয়ে সুবি জিজ্ঞেস করল,মামু আসেনি?
–বাবা তোমার মামু রাগ করে চলে গেছে।
বিদিশা একটা প্লেটে মিস্টি নিয়ে ঢুকে বলল,বড়দি কিসব পাগলের মত বলছিস?এই শুনেছো ঋষির কথা?
সুদেব অবাক হয়ে ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করল।মনীষা বলল,গুণ্ডা বদমাশদের সঙ্গে মিশে ছেলেটা বয়ে গেছে।
–কি সব বলছেন বড়দি?সুদেব প্রতিবাদ করল্।ঋষিকে ভাই হতে পারে কিন্তু ওকে চেনেন নি।কোনো অসৎ কাজ ওর দ্বারা হবে না। কি হয়েছে আমাকে বলুন তো?
মনীষা সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত বলল।সুদেব জিজ্ঞেস করল,ছেলেটা কি বলেছিল ছোড়দির বাড়ী গেছে?
–তাছাড়া আর কি?হালিশহরে দিশা ছাড়া ওর আর কে আছে?
সুদেব হাসল বলল,ঠিক আছে বড়দি আপনি বিশ্রাম করুন।ঋষি বাচ্চা ছেলে নয়।ও আসুক তখন সব জানা যাবে।আমি একটু বাজার ঘুরে আসি।
–আমি এখন উঠব।টুকুনের বাবার ফেরার আগেই আমাকে ফিরতে হবে।
বিদিশার কানে কথাটা যেতে ঘরে ঢুকে বলল,তাহলে তুই আসলি কেন?
সুদেব বউকে থামায়,ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করো।
–সারা জীবন ধরে বুঝেছি আর বোঝার দরকার নেই।
মনীষার চোখ ছল ছল করে উঠল।সুদেব বলল,তুমি দিদিকে কাদালে তো?
–অন্যের চোখে জল দেখতে পাও আমার চোখের জল তোমার নজরে পড়ে না?বিদিশা চলে গেল।
সুদেব বলল,বড়দি আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।
মনীষা আঁচলের খুটে চোখ মুছে হেসে বলল,ঐ পাগলী আমাকে কত ভালবাসে আমি জানিনা?বিধাতা আমাকে যে জীবন দিয়েছে তার বাইরে যাই কি করে বলো?
সুদেব ঘড়ি দেখে বলল,রেডি হয়ে নিন এখন একটা গাড়ী আছে।
দিশা ফিরে এল মুখে হাসি নিয়ে বলল,বড়দি ঋষি ফিরলেই আমাকে খবর দিবি।
ঋষি দেখল কোহিনূর সেজেগুজে প্রস্তুত।রিক্সা নিয়ে রওনা হল।ঋষী বলল,আপনাকে নাম জিজ্ঞেস করলে বলবেন,কোহিনূর বেগম।ডাক্তার ম্যাডাম খুব ভাল মানুষ একদম ভয় পাবেন না।
কোহিনূর মনে মনে হাসে।বসের বুদ্ধি থাকলে কি হবে একেবারে ছেলে মানুষ।ভাব কোরে সব মন দিয়ে শুনছে।নার্সিং হোমের সামনে নেমে কোহিনূরকে ভিজিটরস রুমে বসিয়ে ঋষি বলল,নাম ডাকলে আপনি যাবেন।নটা নাগাদ আপনাকে ডাকবে ,কোহিনূর হাসল।
লেবুবাগান হতে আসার পর কোহিনূরের সাজপোশাক হাবভাব একেবারে বদলে গেছে।মাথায় সব সময় ঘোমটা।সাধারণ আর পাঁচজন হতে আলাদা করা যায়না।অবস্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কেমন বদলে যায় দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল
ঋষি।কোহিনূর বেগমের নাম ডাকতে ঋষি বলতে যাবে তার আগেই কোহিনূর উঠে চারদিক দেখে ভিতরে ঢুকে গেল।
কোহিনূর ভিতরে যেতে একজন নার্স এগিয়ে এসে ওজন নিল।তারপর ড.এমার সামনে বসিয়ে দিল।মৃদু স্বরে দুজনের মধ্যে কিছু কথা হবার পর ড.এমা নোট করে সামনের টেবিলে শুয়ে পড়তে বলল।একজন নার্স শায়িত কোহিনূরের প্রেশার নিল।ড.এমা কোমরের বাধন আলগা করে হাত দিয়ে তলপেটে চাপ দিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করল,কি করেন?
–বিজনেস।
–অসুবিধে না থাকলে বলবেন কিসের বিজনেস?
–মেডিসিন শপ।
–এইবার প্রথম?
কোহিনূর ইতস্তত করে।ড.এমা জিজ্ঞেস করে,আগে এ্যাবর্শন করিয়েছিলেন?
–জী।
–কেন?
–অসুবিধা ছিল।
–এবার সন্তান চান?হেসে জিজ্ঞেস করল ড.এমা।ঠিক আছে সঙ্গে কে এসেছে ডাকুন।
কোহিনূর বেরিয়ে বস বস করে ডাকতে থাকে।ঋষি উপায়ন্তর নেই দেখে কোহিনূরের সঙ্গে ভিতরে ঢুকল।ড.এমা ঋষিকে দেখে চমকে উঠল।মাথা নীচু ওষুধ লিখতে লিখতে বলতে থাকে ম্যাচুয়ের বেবি এ্যাবরশন করতে গেলে অপারেশন করতে হবে।ওষুধ লিখে দিলাম।নেক্সট?
ওরা বেরিয়ে যেতে ড.এমা কেমন অসুস্থ বোধ করে।নার্স এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম আর ইউ ওকে?
ড.এমা চোখ না তুলে জিজ্ঞেস করল আর কজন আছে?
ড.এমার চোখমুখ লাল নার্স বলল,দুজন ম্যাডাম।ক্যন্সেল কোরে দেবো?
ড.এমা হেসে বলল,এ্যাম ওকে।নেক্সটকে ডাকুন।
কথাটা মুহূর্তে সারা হাসপাতালে ছড়িয়ে যায়।ঋষি কোহিনূরকে পৌছে দিতে গেছে।কাঞ্চা চেম্বারে ঢুকে পড়ে জিজ্ঞেস করল,মেমসাব শরীর খারাপ লাগছে?
–তুমি আমাকে একটু চা খাওয়াও।
কাঞ্চা চা আনতে চলে গেল।রোগী দেখা শেষ করে ড.এমা বলল,আজ আর ওয়ার্ড ভিজিট করব না।কাঞ্চা চা নিয়ে আসতে ড.এমা বলল,উপরে নিয়ে চলো।
ত্রিদিবেশবাবু হন্তদন্ত হয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,ম্যাডাম এনি প্রবলেম?
ড.এমা বলল,খাওয়া দাওয়ার গোলমাল হয়ে থাকবে।
(চলবে)
0 Comments