খবরের কাগজে প্রথম পাতায় দুটো সংবাদ বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে।একটা খবর ঋষির মোটামুটি জানাছিল কিন্তু দিব্যেন্দুদার খবরটা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল।দিব্যেন্দুদা কাউকে খুন করতে পারে স্বপ্নেও ভাবেনি।
দিব্যেন্দুদা বলেছে মেয়েটির বহু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল।মহিলা দিব্যেন্দুদার স্ত্রী নয় পুলিশ বের করেছে।দিব্যেন্দুদা স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা সে কথাও লিখেছে।কি বিচ্ছিরি ব্যাপার।কঙ্কাদির কি অবস্থা কে জানে?কুন্তি চা দিয়ে গেল।
প্রথিতযশা অস্ত্র চিকিৎসক ড.এমা খিন ঘটনাকে দুঃখ জনক বলে বর্ণ্না কররেছেন।ঋষি হাসলো এমা ভাগ্যিস বাংলা পড়তে পারেনা।
এই ঘটনায় ম্যাটাডোরের ড্রাইভারকে পুলিশ আটক করেছে।পুলিশের ধারণা এই ম্যাটাডরেই ধর্ষন করেছে দুষ্কৃতিরা।সংখ্যায় তারা ছিল তিনজন।পুলিশ তাদের অনুসন্ধান করছে।
ইউনিভার্সিটির ক্যাণ্টিনেও অনেকে সংবাদদুটির বীভৎসতা নিয়ে আলোচনা করছে।ঋষি দুটি ঘটনার কাছাকাছি কেউ জানে না।কল্পনার সঙ্গে দেখা হতেই কদিন কি কি ঘটেছে বিস্তারিত বলতে থাকে।সন্দীপ ওর বাবার কথা মত মুকুন্দবাবুকে বাড়ীতে নিয়ে গেছিল।তখনও কিছু জানতো না বাবা।সুখেন্দুবাবুর কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে বাবা নাকি কেদে ফেলেছিল,সন্দীপের কাছে শোনা।হবু শাশুড়ি খুব আদর যত্ন করেছে বাবাকে।
–তাহলে তো মিটেই গেল।ঋষি বলল।
–সন্দীপ বলছে এ্যাবরশন করতে,জেনে বুঝে একটা জলজ্যান্ত প্রাণ বলুন তাই করা যায়?
ঋষির মন অন্য জগতে এমা একা একা অতদুর যাবে ভেবে স্বস্তি পাচ্ছিল না।কল্যাণী কি এখানে হালিশহর ছাড়িয়ে যেতে হয়।অতদূর যাওয়ার দরকার কি?অনেক টাকা দেবে।এমার কি টাকার খুব লোভ?
–কিছু বললেন নাতো?কল্পনা বলল।
ঋষি বলতে যাবে পর্ণাকে দেখে কল্পনা বলল এখন থাক।পরে কথা হবে।
পর্ণা আসতে কল্পনা উঠে দাড়ালো।পর্ণা জিজ্ঞেস করে,আমি এলাম বলে চলে যাচ্ছো?
–তা নয় আমার ক্লাস আছে।তোমরা কথা বলো।কল্পনা চলে গেল।
পর্ণা বসতে বসতে হেসে বলল,তোমার ক্লাস নেই তো?
–আছে তবে যাবো না।ঋষি হেসে বলল।
বেয়ারাকে ডেকে দুটো চা বলল পর্ণা।ঋষি ঘড়ি দেখছে মনের মধ্যে অস্থিরভাব।
–আজকের কাগজ দেখেছো?পাশবিক ব্যাপার!!
ঋষি বুঝতে পারে দিব্যেন্দুদার কথা বলছে।বেয়ারা চা দিয়ে গেল।পর্ণা বলল,কাগজে যা ঘটে তার সিকিভাগ বেরোয়।মহিলার কিছু দোষ না থাকলে খালি খালি কেউ অমন করে?
–হয়তো আছে সেটা পাশবিকতার সাফাই হতে পারে না।
–তুমি মেয়েদের ব্যাপারে একটূ সফট।সেই মেয়েটি খুব লাকি।
–কোন মেয়ে?
–ওই যে সেদিন বললে এমা না কি নাম?
ঋষি হাসল পর্ণা মনে রেখেছে নামটা।প্রসঙ্গ এড়াতে জিজ্ঞেস করে,তোমার বন্ধু রজত আজ আসেনি?
–এসেছে।এখানেই আসার কথা।ইণ্টারেস্টিং কাগজে ড.এমার বক্তব্য দিয়েছে দেখেছো?
ঋষি উঠবে কিনা ভাবছে পর্ণা হাসতে হাসতে বলল,তোমার এমাই এই ডাক্তার এমা নয়তো?
ঋষি বলল,আমাকে উঠতে হবে।
–এই রাগ করলে?বোসো-বোসো আমি মজা করলাম।ড.এমা একজন বড় ডাক্তার আমি জানি।তোমার সঙ্গে একটু ঠাট্টাও করা যাবে না?
–রাগ করিনি।জরুরী কাজে যেতে হচ্ছে।দুরে রজতকে আসতে দেখে বলল,ঐতো এসে গেছে আসি?
ঋষি মনে মনে ভাবে যদি বলতো ড.এমাই তার প্রেমিকা তাহলে তাকে পাগল ভাবতো।
সময় হয়ে গেছে এমা প্রস্তুত।সমুকে নিয়ে একটা প্লান ছিল।মনে মনে বাতিল করে দিল।আরেকদিন করা যাবে।নীচে দেখল ট্রাস্টির উকিল মি.নন্দা দাঁড়িয়ে চোখাচুখি হতে হাসলেন।
ড.এমা জিজ্ঞেস করলেন,আপনি?
–হাইকোর্ট হতে আসছি।মি.মাইতির জরুরী তলব।আজ আবার চেয়ার পারসন আসছেন।
ড.এমা হেসে কিছুটা গিয়ে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করেন,আচ্ছা মি.নন্দা রেজিস্ট্রি বিয়ের পর বহুকাল যোগাযোগ নেই তা হলেও বিয়ের দাবী করা যায়?
–দেখুন ম্যাম আমি ক্রিমিন্যাল প্রাক্টিশ করি।তবে যতদুর জানি ছ-মাস বিচ্ছিন্ন থাকলে বিয়ে আপনা হতেই অসিদ্ধ।এমন কি সন্তানের প্রতিও দাবী করতে–।
–না না একদিনের জন্য কনজুগ্যাল লাইফ কাটায়নি।সন্তান দুরের কথা।
–তাহলে তো প্রশ্নই আসছে না।তবু আপনি সিভিল লইয়ারের কথা বোলে নেবেন।
— থ্যাঙ্ক ইউ মি.নন্দা।
ড.এমা দেখলেন গাড়ীর বাইরে রোহন থাপা তার জন্য অপেক্ষা করছেন।গাড়ীর কাছে যেতে রোহনজী পিছনের দরজা খুলে দিলেন।মাথা নীচু করে ঢুকতে গিয়ে চমকে কোনোমতে নিজেকে সামলে ভিতরে ঢুকে বসলেন।বা-দিকের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে
আছেন।গাড়ী চলতে শুরু করল।আস্তে হাত বাড়িয়ে এমার ডান হাতটা কোলে তুলে নিল ঋষি।
মুখ না ঘুরিয়ে এমা জিজ্ঞেস করেন,ক্লাস শেষ হয়ে গেছে?
এমার আঙুল ফোটাতে ফোটাতে বলল ঋষি,ক্লাস না করে চলে এসেছি।
–চলে এলে ক্ষতি হবে না?
–একা একা অতদুর থেকে ফিরবে কিছু হলে ক্ষতি তো আমারই হবে তাই না?
এমা মুখ টিপে হাসে কথার ওস্তাদ।কাল রাতের কথা মনে পড়তে ভাবে কথা কেন সবেতেই ওস্তাদ।রাস্তা ফাকা পেয়ে রোহনথাপা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল।জানলা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া আসে।বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঋষির চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে।এমার নজরে পড়ে জানলা ঘেষে বসে ইশারায় নিজের কোল দেখালো।ঋষি হেসে এমার কোলে মাথা রেখে শরীর এলিয়ে দিল।পিছন দিয়ে হাত ঢুকিয়ে এমার কোমর জড়িয়ে ধরে যাতে পড়ে না যায়।
পর্ণা দেখলে অবাক হয়ে যেতো।মায়ের কথা মনে পড়ল ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোটো ছিল। মা দিদির আদরে বড় হয়েছে।মা মারা যাবার পর বড়দির আশ্রয়ে পরগাছার মত কেটেছে জীবন।পুরানো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল ঋষি।
গাড়ী তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে।
কল্যানী শহরের কাছাকাছি আসতে রাস্তার দু-ধারে নজরে পড়ল দোকান পাঠ।একসময় হেলথ কিয়োর নার্সিং হোমের নীচে গাড়ী থামল।ঋষিকে ঠেলে ঘুম থেকে তুলে গাড়ী থেকে নেমে রোহন থাপাকে বললেন,আপনি চলে যান আর আসার দরকার নেই।
একটা বাই পাস সার্জারি ছিল।পেশেণ্টের ইচ্ছে অনুযায়ী ড.এমাকে ডাকা হয়েছে।ঘণ্টা দুয়েক পর নার্সিং হোম হতে বেরলো ওরা।তারপর রাস্তা ধরে হাটতে থাকে।ঋষি জিজ্ঞেস করল,হেটে যাবে নাকি?
সে কথার উত্তর না দিয়ে এমা জিজ্ঞেস করে,তোমার ছোড়দির গায়ের রঙ তোমার মতো?
–কে ছোড়দি?ছোড়দি আমার চেয়ে ফরসা গ্রামে থাকে বোঝা যায়না।
এমা হাত বাড়িয়ে বলল,এরকম?
–ঝা তোমার মত নয়।
ওরা একটা শাড়ীর দোকানে ঢুকল।দুটো ঢাকাই জামদানী শাড়ি পছন্দ করে এমা ব্যাগে ভরে টাকা মিটিয়ে বলল,এবার স্টেশন চলো।
ঋষির বিস্ময়ের ঘোর কাটে না।নীরবে অনুসরণ করে এমাকে।সারা রাস্তা এমার কোলে শুয়ে এসেছে।তারপর অপারেশন করল এত পরিশ্রমের পরও চনমনে।হালি শহর আসতে নেমে পড়ল।স্টেশন হতে বেরিয়ে একটা মিষ্টির দোকান হতে একহাড়ী রসগোল্লা কিনল ঋষি হাত বাড়িয়ে নিতেই দিয়ে এমা বলল,তুমি পারবে না আমাকে দাও।
ঋষির মেজাজ গরম হয়ে যায় সব সময় গার্জেনগিরি উষ্ণস্বরে বলল,কেন পারবো না?
ঋষির চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল এমা পরমুহূর্তে মুখে হাসি টেনে বলল,ওকে।এটাও নেও।হাতের এ্যাটাচি হাতে দিয়ে কাধের ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে দিল।ঋষি কিছু বলল না।
ঋষি অটো স্ট্যণ্ডের দিকে যাচ্ছিল পিছন থেকে ডেকে এমা একটা ভ্যান রিক্সা
দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে,এটা যাবে না?
ঋষির কান্না পেয়ে যায় কাকে নিয়ে এসেছে?এখন ভয় হচ্ছে ছোড়দির বাড়ি গিয়ে আবার কি করে বসে।একহাতে মিষ্টির হাড়ি অন্য হাতে এ্যাটাচি কাধে ঝুলছে লেডিস ব্যাগ ঋষিকে দেখে মনে মনে খুব মজা পায়। দুজনে ভ্যান রিক্সায় উঠতে ঋষি বলল, চারজনের ভাড়া দেব চলো।
সান্ধ্যের একটু আগে প্লেন ল্যাণ্ড করল,লেট করেনি।যাত্রীদের বহির্গমন পথের দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ত্রিদিবেশবাবু।ম্যাডাম খিনের সঙ্গে চোখাচুখি হতে হাত নাড়লেন।
বাইরে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করেন,ডাক্তার ম্যাম আসেনি?
–ওর জরুরী অপারেশন আছে।
ত্রিদিবেশবাবু ফোন করে থাপাকে ডাকলেন।পার্কিং-এ অপেক্ষা করছিল থাপা।গাড়ি এসে থামতেই থাপাকে দেখে ম্যাডাম খিন জিজ্ঞেস করেন,গাড়ি নিয়ে যায়নি?
–থাপা পৌছে দিয়ে চলে এসেছে।
–হোয়াট? মোমো একা আসবে?
–মি.সোম সঙ্গে আছেন হি ইজ ভেরি রেস্পন্সিবল।
গাড়িতে উঠে বসতে রোহন স্টার্ট করল।
দ্যাট বাঙালি বয়।মনে মনে ভাবেন ম্যাডাম খিন।মেয়েটা বড় জিদ্দি ওর গ্রাণ্ডমমের মত।
তাদের প্রপার্টি মমই বাড়িরেছে।মমই অনেক হিসেব করে রাজের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছে।
রাজ আর যাইহোক ভায়লেণ্ট নয়।এমনিতে খারাপ নয় সেক্সুয়ালি একটু উইক আর লোভী টাইপ।অবশ্য প্যাটেল ছেলেটাও খুব লোভী।এখন লণ্ডনে আছে শুনেছে এফআরসিএস করেনি।সুযোগ দিলে দেশে ফিরে আসবে বলছিল।মোমো রাজি হবে না জানে।
বিদিশা ছেলেকে নিয়ে শুয়ে আছে।সুবি স্কুলে গেছে ডাক্তার কোথায় গেছে কে জানে?ছেলেটার বৃদ্ধি হচ্ছে নাআ।সব সময় ঘুমায়। সময় হয়ে গেছে এখুনি ফিরবে সবাই।উঠি-উঠি করছে এমন সময় বাইরে থেকে মনে হল কে যেন “ছোড়দি-ছোড়দি” বলে
ডাকছে।মেয়েলি গলায় তাকে ছোড়দি বলে কে ডাকবে?বাইরে বেরিয়ে এমাকে দেখে অবাক।চীনেদের মত দেখতে অথচ পরিষ্কার বাংলা বলছে।
–ছোড়দি আমাকে চিনতে পারোনি কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে পেরেছে।
চিনতে না পারলেও মেয়েটিকে ভাল লাগে কি সুন্দর হাসি,রূপোর মত ঝকঝকে দাতের সারি।ঋষিকে আসতে দেখে স্বস্তি বোধ করল বিদিশা।ঋষি মিষ্টির হাড়ি নামিয়ে রেখে বলল,ছোড়দি এর নাম এমা।তোকে পরে সব বলব।এক গেলাস জল দে।
দুটো মোড়া নিয়ে দুজনে বসল।এমা জামরুল গাছের দিকে তাকিয়ে দেখল সাদা থোকা থোকা জামরুল ঝুলছে।বিদিশা দু-গ্লাস জল এনে দিয়ে বলল,জামরুল খেতে বেশ সুন্দর।ওর জামাইবাবু আসুক পেড়ে দিচ্ছি।ভাই তুই ভিতরে আয়।
বিদিশার সঙ্গে ঋষিও ভিতরে ঢুকে গেল।কিছুক্ষন পর সুদেব সেন ছেলেকে নিয়ে ফিরে বারান্দায় এমাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে।মনে মনে ভাবে কোথায় দেখেছি মহিলাকে?
দমদম স্টেশনে পড়ে গিয়ে একজন হকার ট্রেন থেকে পড়ে কোমরে লেগেছিল কয়েকজন তাকে একটা নার্সিং হোমে নিয়ে যায় তারমধ্যে সুদেবও ছিল।সেখানে ড.ঝা চিকিৎসা করেছিল।মনে পড়েছে এই মহিলা ড.এমা কিন্তু এখানে কেন?সুদেব ঘরে ঢূকে গেল কিন্তু সুবি বই রেখে এমার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,তুমি কে?
–আমি এমা।তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
–ক্লাস ফাইভ।
–এটা কি গাছ?
–জামরুল গাছ।তুমি জামরুল খাও?
–কোথায়?
–দাড়াও দিচ্ছি।সুবি জামরুল গাছে উঠে গেল।
এমা নীচে দাঁড়িয়ে উপর দিকে তাকিয়ে থাকে।সুবি জামরুল ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে থাকে আর এমা নীচে দাঁড়িয়ে লুফতে থাকে।
সুদেব ভিতরে গিয়ে ঋষিকে জিজ্ঞেস করে,বাইরে বসে উনি ড.এমা?
ঋষি বলল,হ্যা তুমি কি করে চিনলে?
সবাই বাইরে এসে কাণ্ড দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ল।বিদিশা ভাইকে বলল,এ মেয়ে তোকে সামলাতে পারবে।
–এখানে এরকম নার্সিং হোমে একেবারে অন্যরকম।বিশ্বাসই হবে না দুজনে এক।ঋষিও বেশ অবাক হয়েছে এমাকে এভাবে দেখে।
–উনি তোমাকে বিয়ে করবেন?সুদেব জিজ্ঞেস করে।
–বলছে তো তাই।ঋষি হেসে বলল।
একটা পাত্র নিয়ে এমার কাছ থেকে জামরুল্গুলো নিয়ে নিল বিদিশা।জলে ধুয়ে একটা বাটিতে এমার হাতে দিয়ে বলল,খেয়ে দেখো কেমন লাগে।
–ছোড়দি আমাকে তোমার কেমন লাগল?
বিদিশা হেসে উঠে বলল,তুমি খুব সুন্দর।
–পছন্দ হয়েছে?
–খুউব পছন্দ হয়েছে।
–আমি কে কোথায় থাকি কি করি জানতে ইচ্ছে হয়না?
–তুমি এমা তোমার মুখে কোনো মালিন্য মুক্তোঝরা হাসি আর কি চাই?
এমার মুখ রক্তিম হয় বলল,ছোড়দি তুমিও খুব ভালো।
–ঘরে এসো প্রথম এলে একটূ মিষ্টিমুখ কোরে যাও।বিদিশা ঘরে নিয়ে বসালো এমাকে।
এমা বিছানায় শায়িত বাচ্চাকে মন দিয়ে দেখতে থাকে।বিদিশা বলল,খেতে চায়না খালি ঘুমায়।
এমা এ্যাটাচি খুলে প্যাড বের করে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বলল,খাইয়ে দেখো।
তারপর ব্যাগ খুলে দুটো শাড়ি বের করে জিজ্ঞেস করে,কোনটা তোমার পছন্দ?
বিদিশা হাত দিয়ে বুঝতে পারে বেশ দামী শাড়ী বলল,দুটোই সুন্দর।
–একটা তোমাকে দিলাম।আর একটা আমাকে পরিয়ে দাও।
বিদিশা দরজা বন্ধ করে এমাকে শাড়ী পরাতে থাকে এমা গভীরভাবে লক্ষ্য করে কিভাবে শাড়ী পরতে হয়।শাড়ি পরে খুব খুশি দরজা খুলে বাইরে এসে দাড়ালো।ঋষি কাছে গিয়ে বলল,রাতে এখানে থাকবে নাকি?তোমার মম আসার কথা না?
(চলবে)
দিব্যেন্দুদা বলেছে মেয়েটির বহু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল।মহিলা দিব্যেন্দুদার স্ত্রী নয় পুলিশ বের করেছে।দিব্যেন্দুদা স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা সে কথাও লিখেছে।কি বিচ্ছিরি ব্যাপার।কঙ্কাদির কি অবস্থা কে জানে?কুন্তি চা দিয়ে গেল।
প্রথিতযশা অস্ত্র চিকিৎসক ড.এমা খিন ঘটনাকে দুঃখ জনক বলে বর্ণ্না কররেছেন।ঋষি হাসলো এমা ভাগ্যিস বাংলা পড়তে পারেনা।
এই ঘটনায় ম্যাটাডোরের ড্রাইভারকে পুলিশ আটক করেছে।পুলিশের ধারণা এই ম্যাটাডরেই ধর্ষন করেছে দুষ্কৃতিরা।সংখ্যায় তারা ছিল তিনজন।পুলিশ তাদের অনুসন্ধান করছে।
ইউনিভার্সিটির ক্যাণ্টিনেও অনেকে সংবাদদুটির বীভৎসতা নিয়ে আলোচনা করছে।ঋষি দুটি ঘটনার কাছাকাছি কেউ জানে না।কল্পনার সঙ্গে দেখা হতেই কদিন কি কি ঘটেছে বিস্তারিত বলতে থাকে।সন্দীপ ওর বাবার কথা মত মুকুন্দবাবুকে বাড়ীতে নিয়ে গেছিল।তখনও কিছু জানতো না বাবা।সুখেন্দুবাবুর কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে বাবা নাকি কেদে ফেলেছিল,সন্দীপের কাছে শোনা।হবু শাশুড়ি খুব আদর যত্ন করেছে বাবাকে।
–তাহলে তো মিটেই গেল।ঋষি বলল।
–সন্দীপ বলছে এ্যাবরশন করতে,জেনে বুঝে একটা জলজ্যান্ত প্রাণ বলুন তাই করা যায়?
ঋষির মন অন্য জগতে এমা একা একা অতদুর যাবে ভেবে স্বস্তি পাচ্ছিল না।কল্যাণী কি এখানে হালিশহর ছাড়িয়ে যেতে হয়।অতদূর যাওয়ার দরকার কি?অনেক টাকা দেবে।এমার কি টাকার খুব লোভ?
–কিছু বললেন নাতো?কল্পনা বলল।
ঋষি বলতে যাবে পর্ণাকে দেখে কল্পনা বলল এখন থাক।পরে কথা হবে।
পর্ণা আসতে কল্পনা উঠে দাড়ালো।পর্ণা জিজ্ঞেস করে,আমি এলাম বলে চলে যাচ্ছো?
–তা নয় আমার ক্লাস আছে।তোমরা কথা বলো।কল্পনা চলে গেল।
পর্ণা বসতে বসতে হেসে বলল,তোমার ক্লাস নেই তো?
–আছে তবে যাবো না।ঋষি হেসে বলল।
বেয়ারাকে ডেকে দুটো চা বলল পর্ণা।ঋষি ঘড়ি দেখছে মনের মধ্যে অস্থিরভাব।
–আজকের কাগজ দেখেছো?পাশবিক ব্যাপার!!
ঋষি বুঝতে পারে দিব্যেন্দুদার কথা বলছে।বেয়ারা চা দিয়ে গেল।পর্ণা বলল,কাগজে যা ঘটে তার সিকিভাগ বেরোয়।মহিলার কিছু দোষ না থাকলে খালি খালি কেউ অমন করে?
–হয়তো আছে সেটা পাশবিকতার সাফাই হতে পারে না।
–তুমি মেয়েদের ব্যাপারে একটূ সফট।সেই মেয়েটি খুব লাকি।
–কোন মেয়ে?
–ওই যে সেদিন বললে এমা না কি নাম?
ঋষি হাসল পর্ণা মনে রেখেছে নামটা।প্রসঙ্গ এড়াতে জিজ্ঞেস করে,তোমার বন্ধু রজত আজ আসেনি?
–এসেছে।এখানেই আসার কথা।ইণ্টারেস্টিং কাগজে ড.এমার বক্তব্য দিয়েছে দেখেছো?
ঋষি উঠবে কিনা ভাবছে পর্ণা হাসতে হাসতে বলল,তোমার এমাই এই ডাক্তার এমা নয়তো?
ঋষি বলল,আমাকে উঠতে হবে।
–এই রাগ করলে?বোসো-বোসো আমি মজা করলাম।ড.এমা একজন বড় ডাক্তার আমি জানি।তোমার সঙ্গে একটু ঠাট্টাও করা যাবে না?
–রাগ করিনি।জরুরী কাজে যেতে হচ্ছে।দুরে রজতকে আসতে দেখে বলল,ঐতো এসে গেছে আসি?
ঋষি মনে মনে ভাবে যদি বলতো ড.এমাই তার প্রেমিকা তাহলে তাকে পাগল ভাবতো।
সময় হয়ে গেছে এমা প্রস্তুত।সমুকে নিয়ে একটা প্লান ছিল।মনে মনে বাতিল করে দিল।আরেকদিন করা যাবে।নীচে দেখল ট্রাস্টির উকিল মি.নন্দা দাঁড়িয়ে চোখাচুখি হতে হাসলেন।
ড.এমা জিজ্ঞেস করলেন,আপনি?
–হাইকোর্ট হতে আসছি।মি.মাইতির জরুরী তলব।আজ আবার চেয়ার পারসন আসছেন।
ড.এমা হেসে কিছুটা গিয়ে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করেন,আচ্ছা মি.নন্দা রেজিস্ট্রি বিয়ের পর বহুকাল যোগাযোগ নেই তা হলেও বিয়ের দাবী করা যায়?
–দেখুন ম্যাম আমি ক্রিমিন্যাল প্রাক্টিশ করি।তবে যতদুর জানি ছ-মাস বিচ্ছিন্ন থাকলে বিয়ে আপনা হতেই অসিদ্ধ।এমন কি সন্তানের প্রতিও দাবী করতে–।
–না না একদিনের জন্য কনজুগ্যাল লাইফ কাটায়নি।সন্তান দুরের কথা।
–তাহলে তো প্রশ্নই আসছে না।তবু আপনি সিভিল লইয়ারের কথা বোলে নেবেন।
— থ্যাঙ্ক ইউ মি.নন্দা।
ড.এমা দেখলেন গাড়ীর বাইরে রোহন থাপা তার জন্য অপেক্ষা করছেন।গাড়ীর কাছে যেতে রোহনজী পিছনের দরজা খুলে দিলেন।মাথা নীচু করে ঢুকতে গিয়ে চমকে কোনোমতে নিজেকে সামলে ভিতরে ঢুকে বসলেন।বা-দিকের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে
আছেন।গাড়ী চলতে শুরু করল।আস্তে হাত বাড়িয়ে এমার ডান হাতটা কোলে তুলে নিল ঋষি।
মুখ না ঘুরিয়ে এমা জিজ্ঞেস করেন,ক্লাস শেষ হয়ে গেছে?
এমার আঙুল ফোটাতে ফোটাতে বলল ঋষি,ক্লাস না করে চলে এসেছি।
–চলে এলে ক্ষতি হবে না?
–একা একা অতদুর থেকে ফিরবে কিছু হলে ক্ষতি তো আমারই হবে তাই না?
এমা মুখ টিপে হাসে কথার ওস্তাদ।কাল রাতের কথা মনে পড়তে ভাবে কথা কেন সবেতেই ওস্তাদ।রাস্তা ফাকা পেয়ে রোহনথাপা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল।জানলা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া আসে।বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঋষির চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে।এমার নজরে পড়ে জানলা ঘেষে বসে ইশারায় নিজের কোল দেখালো।ঋষি হেসে এমার কোলে মাথা রেখে শরীর এলিয়ে দিল।পিছন দিয়ে হাত ঢুকিয়ে এমার কোমর জড়িয়ে ধরে যাতে পড়ে না যায়।
পর্ণা দেখলে অবাক হয়ে যেতো।মায়ের কথা মনে পড়ল ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোটো ছিল। মা দিদির আদরে বড় হয়েছে।মা মারা যাবার পর বড়দির আশ্রয়ে পরগাছার মত কেটেছে জীবন।পুরানো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল ঋষি।
গাড়ী তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে।
কল্যানী শহরের কাছাকাছি আসতে রাস্তার দু-ধারে নজরে পড়ল দোকান পাঠ।একসময় হেলথ কিয়োর নার্সিং হোমের নীচে গাড়ী থামল।ঋষিকে ঠেলে ঘুম থেকে তুলে গাড়ী থেকে নেমে রোহন থাপাকে বললেন,আপনি চলে যান আর আসার দরকার নেই।
একটা বাই পাস সার্জারি ছিল।পেশেণ্টের ইচ্ছে অনুযায়ী ড.এমাকে ডাকা হয়েছে।ঘণ্টা দুয়েক পর নার্সিং হোম হতে বেরলো ওরা।তারপর রাস্তা ধরে হাটতে থাকে।ঋষি জিজ্ঞেস করল,হেটে যাবে নাকি?
সে কথার উত্তর না দিয়ে এমা জিজ্ঞেস করে,তোমার ছোড়দির গায়ের রঙ তোমার মতো?
–কে ছোড়দি?ছোড়দি আমার চেয়ে ফরসা গ্রামে থাকে বোঝা যায়না।
এমা হাত বাড়িয়ে বলল,এরকম?
–ঝা তোমার মত নয়।
ওরা একটা শাড়ীর দোকানে ঢুকল।দুটো ঢাকাই জামদানী শাড়ি পছন্দ করে এমা ব্যাগে ভরে টাকা মিটিয়ে বলল,এবার স্টেশন চলো।
ঋষির বিস্ময়ের ঘোর কাটে না।নীরবে অনুসরণ করে এমাকে।সারা রাস্তা এমার কোলে শুয়ে এসেছে।তারপর অপারেশন করল এত পরিশ্রমের পরও চনমনে।হালি শহর আসতে নেমে পড়ল।স্টেশন হতে বেরিয়ে একটা মিষ্টির দোকান হতে একহাড়ী রসগোল্লা কিনল ঋষি হাত বাড়িয়ে নিতেই দিয়ে এমা বলল,তুমি পারবে না আমাকে দাও।
ঋষির মেজাজ গরম হয়ে যায় সব সময় গার্জেনগিরি উষ্ণস্বরে বলল,কেন পারবো না?
ঋষির চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল এমা পরমুহূর্তে মুখে হাসি টেনে বলল,ওকে।এটাও নেও।হাতের এ্যাটাচি হাতে দিয়ে কাধের ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে দিল।ঋষি কিছু বলল না।
ঋষি অটো স্ট্যণ্ডের দিকে যাচ্ছিল পিছন থেকে ডেকে এমা একটা ভ্যান রিক্সা
দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে,এটা যাবে না?
ঋষির কান্না পেয়ে যায় কাকে নিয়ে এসেছে?এখন ভয় হচ্ছে ছোড়দির বাড়ি গিয়ে আবার কি করে বসে।একহাতে মিষ্টির হাড়ি অন্য হাতে এ্যাটাচি কাধে ঝুলছে লেডিস ব্যাগ ঋষিকে দেখে মনে মনে খুব মজা পায়। দুজনে ভ্যান রিক্সায় উঠতে ঋষি বলল, চারজনের ভাড়া দেব চলো।
সান্ধ্যের একটু আগে প্লেন ল্যাণ্ড করল,লেট করেনি।যাত্রীদের বহির্গমন পথের দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ত্রিদিবেশবাবু।ম্যাডাম খিনের সঙ্গে চোখাচুখি হতে হাত নাড়লেন।
বাইরে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করেন,ডাক্তার ম্যাম আসেনি?
–ওর জরুরী অপারেশন আছে।
ত্রিদিবেশবাবু ফোন করে থাপাকে ডাকলেন।পার্কিং-এ অপেক্ষা করছিল থাপা।গাড়ি এসে থামতেই থাপাকে দেখে ম্যাডাম খিন জিজ্ঞেস করেন,গাড়ি নিয়ে যায়নি?
–থাপা পৌছে দিয়ে চলে এসেছে।
–হোয়াট? মোমো একা আসবে?
–মি.সোম সঙ্গে আছেন হি ইজ ভেরি রেস্পন্সিবল।
গাড়িতে উঠে বসতে রোহন স্টার্ট করল।
দ্যাট বাঙালি বয়।মনে মনে ভাবেন ম্যাডাম খিন।মেয়েটা বড় জিদ্দি ওর গ্রাণ্ডমমের মত।
তাদের প্রপার্টি মমই বাড়িরেছে।মমই অনেক হিসেব করে রাজের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছে।
রাজ আর যাইহোক ভায়লেণ্ট নয়।এমনিতে খারাপ নয় সেক্সুয়ালি একটু উইক আর লোভী টাইপ।অবশ্য প্যাটেল ছেলেটাও খুব লোভী।এখন লণ্ডনে আছে শুনেছে এফআরসিএস করেনি।সুযোগ দিলে দেশে ফিরে আসবে বলছিল।মোমো রাজি হবে না জানে।
বিদিশা ছেলেকে নিয়ে শুয়ে আছে।সুবি স্কুলে গেছে ডাক্তার কোথায় গেছে কে জানে?ছেলেটার বৃদ্ধি হচ্ছে নাআ।সব সময় ঘুমায়। সময় হয়ে গেছে এখুনি ফিরবে সবাই।উঠি-উঠি করছে এমন সময় বাইরে থেকে মনে হল কে যেন “ছোড়দি-ছোড়দি” বলে
ডাকছে।মেয়েলি গলায় তাকে ছোড়দি বলে কে ডাকবে?বাইরে বেরিয়ে এমাকে দেখে অবাক।চীনেদের মত দেখতে অথচ পরিষ্কার বাংলা বলছে।
–ছোড়দি আমাকে চিনতে পারোনি কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে পেরেছে।
চিনতে না পারলেও মেয়েটিকে ভাল লাগে কি সুন্দর হাসি,রূপোর মত ঝকঝকে দাতের সারি।ঋষিকে আসতে দেখে স্বস্তি বোধ করল বিদিশা।ঋষি মিষ্টির হাড়ি নামিয়ে রেখে বলল,ছোড়দি এর নাম এমা।তোকে পরে সব বলব।এক গেলাস জল দে।
দুটো মোড়া নিয়ে দুজনে বসল।এমা জামরুল গাছের দিকে তাকিয়ে দেখল সাদা থোকা থোকা জামরুল ঝুলছে।বিদিশা দু-গ্লাস জল এনে দিয়ে বলল,জামরুল খেতে বেশ সুন্দর।ওর জামাইবাবু আসুক পেড়ে দিচ্ছি।ভাই তুই ভিতরে আয়।
বিদিশার সঙ্গে ঋষিও ভিতরে ঢুকে গেল।কিছুক্ষন পর সুদেব সেন ছেলেকে নিয়ে ফিরে বারান্দায় এমাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে।মনে মনে ভাবে কোথায় দেখেছি মহিলাকে?
দমদম স্টেশনে পড়ে গিয়ে একজন হকার ট্রেন থেকে পড়ে কোমরে লেগেছিল কয়েকজন তাকে একটা নার্সিং হোমে নিয়ে যায় তারমধ্যে সুদেবও ছিল।সেখানে ড.ঝা চিকিৎসা করেছিল।মনে পড়েছে এই মহিলা ড.এমা কিন্তু এখানে কেন?সুদেব ঘরে ঢূকে গেল কিন্তু সুবি বই রেখে এমার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,তুমি কে?
–আমি এমা।তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
–ক্লাস ফাইভ।
–এটা কি গাছ?
–জামরুল গাছ।তুমি জামরুল খাও?
–কোথায়?
–দাড়াও দিচ্ছি।সুবি জামরুল গাছে উঠে গেল।
এমা নীচে দাঁড়িয়ে উপর দিকে তাকিয়ে থাকে।সুবি জামরুল ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে থাকে আর এমা নীচে দাঁড়িয়ে লুফতে থাকে।
সুদেব ভিতরে গিয়ে ঋষিকে জিজ্ঞেস করে,বাইরে বসে উনি ড.এমা?
ঋষি বলল,হ্যা তুমি কি করে চিনলে?
সবাই বাইরে এসে কাণ্ড দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ল।বিদিশা ভাইকে বলল,এ মেয়ে তোকে সামলাতে পারবে।
–এখানে এরকম নার্সিং হোমে একেবারে অন্যরকম।বিশ্বাসই হবে না দুজনে এক।ঋষিও বেশ অবাক হয়েছে এমাকে এভাবে দেখে।
–উনি তোমাকে বিয়ে করবেন?সুদেব জিজ্ঞেস করে।
–বলছে তো তাই।ঋষি হেসে বলল।
একটা পাত্র নিয়ে এমার কাছ থেকে জামরুল্গুলো নিয়ে নিল বিদিশা।জলে ধুয়ে একটা বাটিতে এমার হাতে দিয়ে বলল,খেয়ে দেখো কেমন লাগে।
–ছোড়দি আমাকে তোমার কেমন লাগল?
বিদিশা হেসে উঠে বলল,তুমি খুব সুন্দর।
–পছন্দ হয়েছে?
–খুউব পছন্দ হয়েছে।
–আমি কে কোথায় থাকি কি করি জানতে ইচ্ছে হয়না?
–তুমি এমা তোমার মুখে কোনো মালিন্য মুক্তোঝরা হাসি আর কি চাই?
এমার মুখ রক্তিম হয় বলল,ছোড়দি তুমিও খুব ভালো।
–ঘরে এসো প্রথম এলে একটূ মিষ্টিমুখ কোরে যাও।বিদিশা ঘরে নিয়ে বসালো এমাকে।
এমা বিছানায় শায়িত বাচ্চাকে মন দিয়ে দেখতে থাকে।বিদিশা বলল,খেতে চায়না খালি ঘুমায়।
এমা এ্যাটাচি খুলে প্যাড বের করে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বলল,খাইয়ে দেখো।
তারপর ব্যাগ খুলে দুটো শাড়ি বের করে জিজ্ঞেস করে,কোনটা তোমার পছন্দ?
বিদিশা হাত দিয়ে বুঝতে পারে বেশ দামী শাড়ী বলল,দুটোই সুন্দর।
–একটা তোমাকে দিলাম।আর একটা আমাকে পরিয়ে দাও।
বিদিশা দরজা বন্ধ করে এমাকে শাড়ী পরাতে থাকে এমা গভীরভাবে লক্ষ্য করে কিভাবে শাড়ী পরতে হয়।শাড়ি পরে খুব খুশি দরজা খুলে বাইরে এসে দাড়ালো।ঋষি কাছে গিয়ে বলল,রাতে এখানে থাকবে নাকি?তোমার মম আসার কথা না?
(চলবে)
0 Comments