খাওয়া দাওয়ার পর বেরোবার আগে মনে হল এমার সঙ্গে দেখা কোরে যাই।এমার কাছে যেতে ঋষিকে জড়িয়ে ধরে বলল,মনে আছে তো আজকেই ফিরবে।আমি বসে থাকবো।
ঋষি ভাবলো যাবার আগে সাধুর মোড় ঘুরে যাই।যদি কেউ থাকে বাইকে পৌছে দিতে পারে।
বাবুয়া শুয়ে আছে কোহিনূর রান্না করছে।ঋষিকে দেখে বাবুয়া উঠে বসে বলল,এসো বস।
কোহিনূর চা এগিয়ে দিল।ঋষি বলল,আবার চা?এইমাত্র ভাত খেয়ে বেরোলাম।
–কোথাও যাচ্ছো?বাবুয়া জিজ্ঞেস করল।
–ছোড়দির ওখান থেকে ঘুরে আসি।
–আজকেই ফিরবে?
–কেন?আজকেই ফিরতে হবে উপরওলার হুকুম।
–বেগম ভাত দে।চলো বস আমিও ঘুরে আসি।
–তুমি?এতকাল পর কোহিনূরের সঙ্গে দেখা হল?
কোহিনূর বলল,যাক বস অনেকদিন আটকা ছিল।এদিক ওদিক ঘুরলে ভাল লাগবে।
বিস্মিত ঋষি কোহিনূরকে দেখে।লেখাপড়া মাধ্যমিক কিন্তু ভাবনা চিন্তায় এত গভীরতা ঋষি কল্পনাও করেনি।
বাবুয়া খেতে বসেছে।চৌকিতে বসে ঋষির মনে পড়ে অনেক কথা।কয়েকমাস আগে ছিল বারবণিতা।বারোজনের মনোরঞ্জন ছিল পেশা।আজ এক পুরুষের জন্য মনপ্রাণ সমর্পিত।নিজ স্বার্থ নিরাপত্তার চেয়ে স্বামীর সুখ ভাল মন্দের চিন্তা জুড়ে আছে সারা মন।
বন্দনাদির মুখে সব সময় প্রোমোটারের গল্প।অফ পিরিয়ডে কঙ্কাকে পেলেই শোনাবে সেদিন কি হয়েছে? বয়স হলেও বন্দনাদির চ্যাংড়ামী গেলনা।কঙ্কা বলল,সত্যি বন্দনাদি তুমি পারো।
ভোরবেলা বাথরুম সেরে চিলেকোঠায় এসে দরজা ভেজিয়ে চেঞ্জ করে চা করতে বসে।বাইরে ছাদে বাবু সরকার হাত-পা ছুড়ে শরীর চর্চায় ব্যস্ত।ভদ্রতার খাতিরে বন্দনাদিকে বলতে হয়,চা খাবেন? বাবু সরকার যেন এইজন্যই অপেক্ষা করছিল।গোটানো লুঙ্গি নামিয়ে ঘরে ঢুকে বসে।
চেঞ্জ করা হলেও শাড়ি টেনে ঠিক করা মাথায় চিরুণী বোলানো বাবুর সামনেই করতে হয়।
আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বন্দনাদিকে লক্ষ্য করে।ধীরে ধীরে এইটাই রুটিন হয়ে যায়।সকালের চা বন্দনাদির ঘরেই সারে বাবু।দিলখোলা মানুষ কথা বলতে ভালবাসে।প্রথম প্রথম অস্বস্তি হলেও একাকী নিঃসঙ্গ জীবনে এইরকম একজন বয়স্ক সঙ্গী খারাপ লাগেনা। বন্দনাদি ঘর থেকে বেরোলে বাবু ঘরে তালা দিয়ে বন্দনাদিকে চাবি দিয়ে দেয়।বন্দনাদি আসছি বলে সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে যায়।
একদিন আচমকা জিজ্ঞেস করল,দিদিমণি আপনার চাকরি আর কতদিন?
প্রশ্ন শুনে হোচট খেলেও বন্দনাদি চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,বছর আষ্টেক আছে এখনো।
বাবু মনে মনে কি হিসেব করল।তারপর বলল,আপনি তো আমারই সমবয়সী।যাই বলুন দিদিমণি এই বয়সে আপনার ফিগার আচ্ছা আচ্ছা মেয়েদের টক্কর দিতে পারবে।
বন্দনা আঁচল টেনে বুক ঢাকল।বাবুর কথায় বুকের মধ্যে ক্ষীন বেদনার স্রোত বয়ে গেল।আক্ষেপের সুরে বলল,রূপ না থাকলে ফিগার দিয়ে কি হবে?ছেলেরা আগে রূপ দেখে।
–রাখুন তো ওসব কথা।রূপ ধুয়ে কি জল খাবি?ফিগারেই আসল সুখ।বাবুর মুখে অশ্লীল হাসি চুইয়ে পড়ে।
বন্দনা মুচকি হেসে বলল,আপনি কি ফিগার দেখে বিয়ে করেছিলেন?
বাবু সরকারের মুখ কালো হয় বলল,দিদিমনি আমার কথা বলবেন না।সুগন্ধাকে আপনি আগে দেখেন নি।আমার কপাল কি যে রোগ হল কে জানতো এই ঘাটেরমড়া নিয়ে জীবন কাটাতে হবে?
–বৌদির নাম বুঝি সুগন্ধা? চেহারাটা একেবারে শুকিয়ে গেছে।
–এখন ওর কাছে যাওয়া যায়না দুর্গন্ধে বমি এসে যায়।ওষুধে মাথার চুল উঠে পেত্নীর মত দেখতে হয়েছে।
–কি হয়েছে ওনার?
–শরীরে পচন ধরেছে–ক্যান্সার।ক্যান্সার হবার জায়গা পেলনা একেবারে আসল জায়গায়।
–চিকিৎসা করান নি?
–করিনি আবার?ইউটেরাস না কি বলে কেটে বাদ দেওয়া হল। কতটাকা খরচ হয়েছে জানেন? অপারেশন হল কেমো দেওয়া হল।ভাবলাম বুঝি ঝামেলা মিটলো।আবার চাগাড় দিয়ে উঠেছে।
–আহা উনি কি ইচ্ছে করে করেছেন?এ আপনার ভারী অন্যায়।
–দিদিমণি বুঝিতো সব।কিন্তু আমার অবস্থাটা ভাবুন যখন ফুর্তি করার সময় ঠিক তখনই, কি ভাবে কাটাই আমিই জানি। আমিও তো মানুষ?
বন্দনার কান লাল হয়।অন্যদিকে ফিরে হাসল।বাবু সরকার বলল,আচ্ছা দিদিমণি আপনি শিক্ষিত মানুষ আপনি বলতে পারবেন।বেশি বয়স পর্যন্ত সেক্স থাকে কাদের ছেলেদের না মেয়েদের?
লাজুক হেসে বলল বন্দনা,আহা আমি কি করে বলব?আমার তো বিয়েই হয়নি।
–আপনার যা ফিগার এখনো বিয়ে করতে পারেন।
–ধ্যেৎ আপনার খালি ইয়ার্কি।
–ইয়ার্কি না সত্যি ঘাটের মড়াটা না থাকলে আমিই বিয়ে করতাম।
বন্দনার বুকের মধ্যে শিরশির করে উঠল।আড়চোখে বাবুকে দেখল কানের কাছে কয়েক গাছা রূপোলি চুল।গোঁফ কালো কুচকুচ করছে সম্ভবত কালার করেছে।
তিনরাস্তার মোড়ে কয়েকটা অটো দাড়িয়ে,বাবুয়া দমদমের দিকে মোড় নিতে যাবে মনে হল কে যেন ডাকল,গুরু-গুরু।
বাইক থামিয়ে পিছন ফিরে দেখল রমেশ।কাছে এসে বলল,গুরু তুমি এদিকে আসোনা।খুব ঝামেলার মধ্যে আছি।
–তোর কেস মেটেনি?
–কেস হয়নি তো।থানায় ধরে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,মুন্নাকে কোথায় নামিয়ে দিয়েছি কে কে ছিল এইসব।যা জানতাম বলেছি।কল্পনাকে ছুইও নি।
–তাহলে কিসের ঝামেলা?
–কটা ভোলা খুব ঝামেলা করছে।
মুন্না গেছে এখন কটাভোলা।আসন শূণ্য থাকেনা। বাবুয়া শুনেছে বিড়ালচোখো ছেলেটা এখন বরেনবোসের ডানহাত।তর্জনীতে বাইকের চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,তুই সেকেরেটারি বরেনদাকে বল।
রমেশের মুখ শুকিয়ে যায়।বাবুয়া বলল,বরেনদাকে বলেছিস?
—বরেনদা কি জানে না ভেবেছ?
অন্যান্য অটোওলারা এসে বাবুয়াকে ঘিরে ধরে শুনতে লাগল কথাবার্তা।সকলেই আলোচনায় অংশ নেয়। একটু তফাতে গাছের ছায়ায় অপেক্ষা কোরে ঋষি।
ছুটির পর হাটতে হাটতে বন্দনাদি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল,আচ্ছা কঙ্কা ছেলেদের না মেয়েদের বেশি বয়স পর্যন্ত সেক্স থাকে?
কঙ্কা ভাবল হঠাৎ কি হল?বন্দনাদির মুখে এ কেমন প্রশ্ন?কঙ্কা বলল,আমি কি সেক্স বিশেষজ্ঞ?আমার মনে হয় কোনো ক্ষেত্রে ছেলেদের আবার কখনো মেয়েদের।কেন তোমার সেক্স কি চলে যাচ্ছে?
–কি করে বুঝবো?স্বামী-টামি থাকলে না হয় বুঝতে পারতাম।
গাছতলায় ছেলেটাকে দেখে চমকে উঠল কঙ্কা।ঋষি মনে হচ্ছে?গাছের নীচে গিয়ে জিজ্ঞেস করল্,কিরে তুই এখানে?
কিছুটা দূরে বাবুয়াকে দেখিয়ে ঋষি বলল,ওর বাইকে যাচ্ছিলাম।
বন্দনা একটু দূরে দাড়িয়েও চিনতে পারে মনুই তো।চোখে আশার আলো কঙ্কা বোধহয় ব্যবস্থা করছে।
–হঠাৎ কোথায় উধাও হলি বলতো?
–সে অনেক কথা পরে বলব।কঙ্কাদি তুমি কেমন আছো?
–দিব্যেন্দু চলে গেছে।এখন স্কুলের সময়টুকূ ছাড়া প্রাকৃতিক জীবন যাপন।
ঋষি বুঝতে পারে প্রাকৃতিক জীবন কি?কঙ্কাদি অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে নাতো?ঋষি চাপা গলায় বলল,কঙ্কাদি তোমায় একটা কথা বলবো?
–আচ্ছা তুই আমাকে কঙ্কাদি-কঙ্কাদি বলছিস কেন?
ঋষি ঠোটে ঠোট চেপে অন্যদিকে তাকায়।কঙ্কা বলল,আচ্ছা ঠিক আছে কি বলছিলি বল?
–তুমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসো।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা।কঙ্কা কি ঠিক শুনছে?জিজ্ঞেস করল,কি বললি স্বাভাবিক জীবন?তুই তো বলেছিলি এটাই স্বাভাবিক জীবন যাপন?
–বলেছিলাম একসময় স্বাভাবিক জীবন যাপন এরকমই ছিল।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব বদলায় কঙ্কাদি।তুমি চব্বিশ ঘণ্টা ঐভাবে থাকতে পারছো?কিছু মনে কোরনা।আদিম যুগে মানুষ যতটুকু প্রয়োজন কাচা মাংস ফলমূল খেয়ে জীবন ধারন করতো।সঞ্চয় করতো না।তুমি কি পারবে হুবহু সেই জীবনে ফিরে যেতে?পারবে না।আমরা ভীষণ চতুর সমগ্র থেকে নিজের স্বার্থে পছন্দমত খামচে কিছুটা গ্রহণ করি–।
–স্বার্থ মানে?কঙ্কা জিজ্ঞেস করল।
–নিজেকে জিজ্ঞেস করো।ঋষি বলল।
কঙ্কা দেখল আশপাশ থেকে অটোওলারা দেখছে।এখানে বেশিক্ষন কথা বলা ঠিক হবে না।ব্যঙ্গের সুরে জিজ্ঞেস করল,তুই নতুন কাউকে গ্রহন করেছিস মনে হচ্ছে?
–কঙ্কাদি তুমি রেগে আছো।গ্রহণ-বর্জন যাই বলো,ভাসতে ভাসতে চলেছিলাম মনে হচ্ছে ডাঙ্গার সন্ধান পেয়েছি।
বাবুয়াদের ইঙ্গিত কোরে বলল,এরাই তোকে সেই ডাঙ্গার সন্ধান দিয়েছে?কঙ্কা ক্ষেপে গিয়ে জিজ্ঞেস করে।
অটোওলাদের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে বাবুয়া এসে বলল,চলো বস।বাইক স্টার্ট করল্।ঋষি পিছনে বসে হেসে বলল,আসি কঙ্কাদি?
বন্দনাদি কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,কবে আসবে কিছু বলল?
–কে কবে আসবে?
–ছেলেটা মনু না?বন্দনাদি চোখে মুখে গদ্গদভাব।
কঙ্কা নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করে,তার সঙ্গে বন্দনাদির কোনো পার্থক্য নেই?নিছক যৌনক্ষুধা চরিতার্থ করার জন্য ভড়ং?
কিছুক্ষন অটো বন্ধ থাকায় ভীড় জমে গেছিল।একে একে ছাড়তে শুরু করল।কঙ্কার মনে হল মিথ্যে দিয়ে আড়াল করে কি হবে?বন্দনাদিকে বলল,ওর নাম ঋষি।মনে হল আসবে না।
অটো হতে নেমে কঙ্কা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে ফ্লাটের দরজা খুলল।অন্যান্য দিনের মত শাড়ী জামা খুলে ফেলল।তলপেটের নীচে বালের জঙ্গলে হাত বোলালো কঙ্কা।কতকাল সেভ করা হয়না।অন্যদিনের মত খাবার গরম করে এককাপ চা নিয়ে সোফায় বসল।মন জুড়ে রয়েছে ঋষির কথাগুলো।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসো।কোথায় থাকে পড়াশুনা করছে কিনা কিছুই জিজ্ঞেস করা হয়নি।রাস্তায় দাঁড়িয়ে এত কথা হয়না কি?অন্যদের থেকে নিজেকে মিথ্যেই আলাদা ভেবে এসেছে?বা-হাত যোনীর উপর রাখল।এই শরীর ছুয়ে শুয়ে থেকেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই যোনীতে মুখ দিয়ে চুষেছে ভিতরে বীর্যপাত করেছে কতবার।সেই স্মৃতি একেবারে বিস্মৃত হয়ে গেল ঋষি?
কাঁচি সেভার নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো কঙ্কা।বস্তিদেশ বগলের চুল কাঁচি দিয়ে কেটে তারপর সেভার দিয়ে একেবারে চেছে ফেলল।সারা গায়ে সাবান মেখে স্নান করল।তোয়ালে দিয়ে গা-মুছে বেরিয়ে আলমারি খুলে একটা নাইটি বের করল।নাইটি ব্যবহার করে না কতকাল মুখে বিষন্ন হাসি খেলে গেল।গায়ে নাইটি গলিয়ে খেতে বসল।
অটো ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাবুয়ার কানে গেছিল মাস্টারনীর উত্তেজিত কথাবার্তা।কিন্তু বসকে জিজ্ঞেস করতে ভরসা হল না।বাইক জমা দিয়ে টিকিট কেটে প্লাটফরমে উঠতে দেখল শান্তিপুর লোক্যাল দাঁড়িয়ে আছে।দুজনে উঠে জানলার ধারে বসল।বসকে কেমন গম্ভীর মনে হল।ট্রেন ছুটে চলল।কতক্ষন চুপচাপ বসে থাকা যায়? বাবুয়া জিজ্ঞেস করল,বস সেই রাতে হালিশহরে তুমি কতরাতে পৌছেছিলে?
–সেই রাতে যাওয়া হয়নি।এক্সপ্রেস ওয়েতে একটা গাড়ীর ধাক্কায় জ্ঞান হারিয়েছিলাম।
–এ্যা?আতকে উঠল বাবুয়া।বেগম তাহলে ঠিকই বলেছিল।
ঋষি হেসে জিজ্ঞেস করল,কি বলেছিল কোহিনূর?
–চৌকিতে উঠতে গিয়ে আবার নেমে মেঝতে জায়নমাজ পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছিল।জিজ্ঞেস করলাম,কি করছিস?বলল,বসের জন্য মনটা কেমন করে উঠল।
ঋষি স্থির দৃষ্টিতে বাবুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।বাবুয়ার অস্বস্তি হয়।
ঋষি বলল,বাবুয়া তুমি ভাগ্যবান। এমন একটা মানুষ তোমার জীবনে এসেছে যে নিজের জন্য নয় কেবল অন্যের মঙ্গল কামনা করে।দেখো তার অমর্যাদা কোর না।
–বস বেগম আমার খুব যত্ন করে।কখনো মনে হয় বুঝি আমার মা।
বাবুয়া লেখাপড়া বেশি জানে না,মারদাঙ্গা করে বেড়িয়েছে।কিন্তু ওর মনটা সংবেদনশীল।এমন সূক্ষ্মঅনুভুতি ছাড়া কেউ এভাবে কথা বলতে পারেনা ঋষির মনে হল।
ট্রেনে যেতে ঋষি সব কথা বলল।কিভাবে খিন কিল নার্সিং হোমে ঠাই হল ড.এমার সঙ্গে পরিচয়–সব।বাবুয়ার মনে প্রশ্ন থেকে যায় বেগমের কথাটা বুকের কাছে এসে আটকে থাকে মুখ ফুটে বলা হয়না।
বিদিশা আর ধৈর্য রাখতে না পেরে ডাক্তারকে একরকম ঠেলে বড়দির ওখানে পাঠিয়েছে।
ছেলেকোলে বসে আছে ডাক্তারের ফেরার অপেক্ষায় উদ্গ্রীব মন।বাইরে সুবির গলা পেয়ে বেরিয়ে এসে মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়।ভুল দেখছে না তো?কয়েক মুহূর্ত তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে ঘরে ঢুকে গেল।
সুবি মায়ের আচরণে হতবাক।ঋষির হাত ধরে বলল,চলো মামু ভিতরে চলো।
বাবুয়াকে দেখিয়ে ঋষি বলল,এই মামুটার জন্য একটা মোড়া নিয়ে এসো।
সুবি মোড়া আনতে ভিতরে গেলে পিছন পিছন ঋষি ঢুকে ছোটদির কাছে গেলে বিদিশা বলল,দুর হ আমার চোখের সামনে থেকে।তোর লজ্জা করেনা বেহায়া কোথাকার?
বিদিশার কোল থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে ঋষি আদর করতে করতে জিজ্ঞেস করল, ছোড়দি ও কাদে না?
–কাদবে না কেন,ক্ষিধে পেলেই কাদে।
ঋষি ভাগনেকে কোলে নিয়ে উঠোনে চলে আসে।বিদিশা দু-কাপ চা নিয়ে এসে বলল,ঋষি তোর কি বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না?ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিবি তো?বাবুয়ার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,নিন দাদা চা খান।
–ছোড়দি দেবুদাকে দেখছি না কোথায় গেছে?
–তাহলে আর বলছি কি?বড়দির ওখানে পাঠিয়েছি খবরটা নিয়ে চলে এসো।গেছে তো গেছেই এখনো ফেরার নাম নেই।
সুবি এসে বলল,বাবা আসছে।
বলতে না বলতে সুদেব মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ঢূকলো।বিদিশা বলল,আচ্ছা তুমি সেই সকালে বেরিয়েছো এতক্ষনে আসার সময় হল?ওরা সেই কখন থেকে বসে আছে?
–আমরা একসঙ্গে এসেছি।ঋষির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,তোমরা শান্তিপুরে আসোনি?
ঋষি অবাক হয়ে বলল,দেবুদা তুমি দেখেছো?তাহলে ডাকোনি কেন?
–গাড়ি থেকে নামতে দেখে ভাবলাম বাড়ীতে কুটুম এসেছে কিছু একটা তো দিতে হবে।তা ছাড়া বাড়ী গেলে দেখা হবে।
–থাক অনেক হয়েছে।এবার চা খেয়ে বাজার থেকে ঘুরে এসো।কিরে ঋষি তোরা জামা কাপড় ছাড়বি না?
–নারে ছোড়দি আমাকে আজই ফিরতে হবে কাজ আছে।
–বড়দির কাছে শুনলাম তোমার ভাই এখন নার্সের কাজ করে।সুদেব মজা করে বলল।
অন্য সময় হলে এই ঠাট্টায় হেসে ফেলতো কিন্তু বিদিশার মুখ ম্লান হয়ে গেল।সুদেব দেখল বাবুয়া ভাইবোনের মাঝে অস্বাস্তি বোধ করছে।বাবুয়াকে সুদেব বলল,এসো ভাই আমার চেম্বার দেখে যাও।বাবুয়া হাফ ছেড়ে বাচলো।বিদিশার চোখ ছল ছল করে বলল,ভাই তুই আর পড়বি না?
ঋষি হেসে বলল,ছোড়দি মন খারাপ করিস না। তোর ইচ্ছে অপুর্ণ রাখবো না।
–কবে পড়বি বুড়ো হয়ে গেলে?তোর টাকার দরকার হলে বল?
–আমি ভর্তি হয়েছি।
–বড়দি টাকা দিয়েছে?
–সে অনেক কথা আরেকদিন এসে বলব।ঋষি বিষয়টা খুলে বলতে চায়না এখনি।
–তোর ভাগ্নের গা-ছুয়ে বল তুই ভর্তি হয়েছিস?
–এ তুই কি বলছিস?ছোড়দি তোকে আমি কোনোদিন মিথ্যে বলেছি?
বিদিশা হেসে ফেলল বলল, আমার সোনাভাই।তোর বন্ধুকে ডাক।দেখি ডাক্তার কি কিনে এনেছে?তোরা তো আবার এখনই চলে যাবি।
(চলবে)
ঋষি ভাবলো যাবার আগে সাধুর মোড় ঘুরে যাই।যদি কেউ থাকে বাইকে পৌছে দিতে পারে।
বাবুয়া শুয়ে আছে কোহিনূর রান্না করছে।ঋষিকে দেখে বাবুয়া উঠে বসে বলল,এসো বস।
কোহিনূর চা এগিয়ে দিল।ঋষি বলল,আবার চা?এইমাত্র ভাত খেয়ে বেরোলাম।
–কোথাও যাচ্ছো?বাবুয়া জিজ্ঞেস করল।
–ছোড়দির ওখান থেকে ঘুরে আসি।
–আজকেই ফিরবে?
–কেন?আজকেই ফিরতে হবে উপরওলার হুকুম।
–বেগম ভাত দে।চলো বস আমিও ঘুরে আসি।
–তুমি?এতকাল পর কোহিনূরের সঙ্গে দেখা হল?
কোহিনূর বলল,যাক বস অনেকদিন আটকা ছিল।এদিক ওদিক ঘুরলে ভাল লাগবে।
বিস্মিত ঋষি কোহিনূরকে দেখে।লেখাপড়া মাধ্যমিক কিন্তু ভাবনা চিন্তায় এত গভীরতা ঋষি কল্পনাও করেনি।
বাবুয়া খেতে বসেছে।চৌকিতে বসে ঋষির মনে পড়ে অনেক কথা।কয়েকমাস আগে ছিল বারবণিতা।বারোজনের মনোরঞ্জন ছিল পেশা।আজ এক পুরুষের জন্য মনপ্রাণ সমর্পিত।নিজ স্বার্থ নিরাপত্তার চেয়ে স্বামীর সুখ ভাল মন্দের চিন্তা জুড়ে আছে সারা মন।
বন্দনাদির মুখে সব সময় প্রোমোটারের গল্প।অফ পিরিয়ডে কঙ্কাকে পেলেই শোনাবে সেদিন কি হয়েছে? বয়স হলেও বন্দনাদির চ্যাংড়ামী গেলনা।কঙ্কা বলল,সত্যি বন্দনাদি তুমি পারো।
ভোরবেলা বাথরুম সেরে চিলেকোঠায় এসে দরজা ভেজিয়ে চেঞ্জ করে চা করতে বসে।বাইরে ছাদে বাবু সরকার হাত-পা ছুড়ে শরীর চর্চায় ব্যস্ত।ভদ্রতার খাতিরে বন্দনাদিকে বলতে হয়,চা খাবেন? বাবু সরকার যেন এইজন্যই অপেক্ষা করছিল।গোটানো লুঙ্গি নামিয়ে ঘরে ঢুকে বসে।
চেঞ্জ করা হলেও শাড়ি টেনে ঠিক করা মাথায় চিরুণী বোলানো বাবুর সামনেই করতে হয়।
আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বন্দনাদিকে লক্ষ্য করে।ধীরে ধীরে এইটাই রুটিন হয়ে যায়।সকালের চা বন্দনাদির ঘরেই সারে বাবু।দিলখোলা মানুষ কথা বলতে ভালবাসে।প্রথম প্রথম অস্বস্তি হলেও একাকী নিঃসঙ্গ জীবনে এইরকম একজন বয়স্ক সঙ্গী খারাপ লাগেনা। বন্দনাদি ঘর থেকে বেরোলে বাবু ঘরে তালা দিয়ে বন্দনাদিকে চাবি দিয়ে দেয়।বন্দনাদি আসছি বলে সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে যায়।
একদিন আচমকা জিজ্ঞেস করল,দিদিমণি আপনার চাকরি আর কতদিন?
প্রশ্ন শুনে হোচট খেলেও বন্দনাদি চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,বছর আষ্টেক আছে এখনো।
বাবু মনে মনে কি হিসেব করল।তারপর বলল,আপনি তো আমারই সমবয়সী।যাই বলুন দিদিমণি এই বয়সে আপনার ফিগার আচ্ছা আচ্ছা মেয়েদের টক্কর দিতে পারবে।
বন্দনা আঁচল টেনে বুক ঢাকল।বাবুর কথায় বুকের মধ্যে ক্ষীন বেদনার স্রোত বয়ে গেল।আক্ষেপের সুরে বলল,রূপ না থাকলে ফিগার দিয়ে কি হবে?ছেলেরা আগে রূপ দেখে।
–রাখুন তো ওসব কথা।রূপ ধুয়ে কি জল খাবি?ফিগারেই আসল সুখ।বাবুর মুখে অশ্লীল হাসি চুইয়ে পড়ে।
বন্দনা মুচকি হেসে বলল,আপনি কি ফিগার দেখে বিয়ে করেছিলেন?
বাবু সরকারের মুখ কালো হয় বলল,দিদিমনি আমার কথা বলবেন না।সুগন্ধাকে আপনি আগে দেখেন নি।আমার কপাল কি যে রোগ হল কে জানতো এই ঘাটেরমড়া নিয়ে জীবন কাটাতে হবে?
–বৌদির নাম বুঝি সুগন্ধা? চেহারাটা একেবারে শুকিয়ে গেছে।
–এখন ওর কাছে যাওয়া যায়না দুর্গন্ধে বমি এসে যায়।ওষুধে মাথার চুল উঠে পেত্নীর মত দেখতে হয়েছে।
–কি হয়েছে ওনার?
–শরীরে পচন ধরেছে–ক্যান্সার।ক্যান্সার হবার জায়গা পেলনা একেবারে আসল জায়গায়।
–চিকিৎসা করান নি?
–করিনি আবার?ইউটেরাস না কি বলে কেটে বাদ দেওয়া হল। কতটাকা খরচ হয়েছে জানেন? অপারেশন হল কেমো দেওয়া হল।ভাবলাম বুঝি ঝামেলা মিটলো।আবার চাগাড় দিয়ে উঠেছে।
–আহা উনি কি ইচ্ছে করে করেছেন?এ আপনার ভারী অন্যায়।
–দিদিমণি বুঝিতো সব।কিন্তু আমার অবস্থাটা ভাবুন যখন ফুর্তি করার সময় ঠিক তখনই, কি ভাবে কাটাই আমিই জানি। আমিও তো মানুষ?
বন্দনার কান লাল হয়।অন্যদিকে ফিরে হাসল।বাবু সরকার বলল,আচ্ছা দিদিমণি আপনি শিক্ষিত মানুষ আপনি বলতে পারবেন।বেশি বয়স পর্যন্ত সেক্স থাকে কাদের ছেলেদের না মেয়েদের?
লাজুক হেসে বলল বন্দনা,আহা আমি কি করে বলব?আমার তো বিয়েই হয়নি।
–আপনার যা ফিগার এখনো বিয়ে করতে পারেন।
–ধ্যেৎ আপনার খালি ইয়ার্কি।
–ইয়ার্কি না সত্যি ঘাটের মড়াটা না থাকলে আমিই বিয়ে করতাম।
বন্দনার বুকের মধ্যে শিরশির করে উঠল।আড়চোখে বাবুকে দেখল কানের কাছে কয়েক গাছা রূপোলি চুল।গোঁফ কালো কুচকুচ করছে সম্ভবত কালার করেছে।
তিনরাস্তার মোড়ে কয়েকটা অটো দাড়িয়ে,বাবুয়া দমদমের দিকে মোড় নিতে যাবে মনে হল কে যেন ডাকল,গুরু-গুরু।
বাইক থামিয়ে পিছন ফিরে দেখল রমেশ।কাছে এসে বলল,গুরু তুমি এদিকে আসোনা।খুব ঝামেলার মধ্যে আছি।
–তোর কেস মেটেনি?
–কেস হয়নি তো।থানায় ধরে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,মুন্নাকে কোথায় নামিয়ে দিয়েছি কে কে ছিল এইসব।যা জানতাম বলেছি।কল্পনাকে ছুইও নি।
–তাহলে কিসের ঝামেলা?
–কটা ভোলা খুব ঝামেলা করছে।
মুন্না গেছে এখন কটাভোলা।আসন শূণ্য থাকেনা। বাবুয়া শুনেছে বিড়ালচোখো ছেলেটা এখন বরেনবোসের ডানহাত।তর্জনীতে বাইকের চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,তুই সেকেরেটারি বরেনদাকে বল।
রমেশের মুখ শুকিয়ে যায়।বাবুয়া বলল,বরেনদাকে বলেছিস?
—বরেনদা কি জানে না ভেবেছ?
অন্যান্য অটোওলারা এসে বাবুয়াকে ঘিরে ধরে শুনতে লাগল কথাবার্তা।সকলেই আলোচনায় অংশ নেয়। একটু তফাতে গাছের ছায়ায় অপেক্ষা কোরে ঋষি।
ছুটির পর হাটতে হাটতে বন্দনাদি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল,আচ্ছা কঙ্কা ছেলেদের না মেয়েদের বেশি বয়স পর্যন্ত সেক্স থাকে?
কঙ্কা ভাবল হঠাৎ কি হল?বন্দনাদির মুখে এ কেমন প্রশ্ন?কঙ্কা বলল,আমি কি সেক্স বিশেষজ্ঞ?আমার মনে হয় কোনো ক্ষেত্রে ছেলেদের আবার কখনো মেয়েদের।কেন তোমার সেক্স কি চলে যাচ্ছে?
–কি করে বুঝবো?স্বামী-টামি থাকলে না হয় বুঝতে পারতাম।
গাছতলায় ছেলেটাকে দেখে চমকে উঠল কঙ্কা।ঋষি মনে হচ্ছে?গাছের নীচে গিয়ে জিজ্ঞেস করল্,কিরে তুই এখানে?
কিছুটা দূরে বাবুয়াকে দেখিয়ে ঋষি বলল,ওর বাইকে যাচ্ছিলাম।
বন্দনা একটু দূরে দাড়িয়েও চিনতে পারে মনুই তো।চোখে আশার আলো কঙ্কা বোধহয় ব্যবস্থা করছে।
–হঠাৎ কোথায় উধাও হলি বলতো?
–সে অনেক কথা পরে বলব।কঙ্কাদি তুমি কেমন আছো?
–দিব্যেন্দু চলে গেছে।এখন স্কুলের সময়টুকূ ছাড়া প্রাকৃতিক জীবন যাপন।
ঋষি বুঝতে পারে প্রাকৃতিক জীবন কি?কঙ্কাদি অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে নাতো?ঋষি চাপা গলায় বলল,কঙ্কাদি তোমায় একটা কথা বলবো?
–আচ্ছা তুই আমাকে কঙ্কাদি-কঙ্কাদি বলছিস কেন?
ঋষি ঠোটে ঠোট চেপে অন্যদিকে তাকায়।কঙ্কা বলল,আচ্ছা ঠিক আছে কি বলছিলি বল?
–তুমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসো।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা।কঙ্কা কি ঠিক শুনছে?জিজ্ঞেস করল,কি বললি স্বাভাবিক জীবন?তুই তো বলেছিলি এটাই স্বাভাবিক জীবন যাপন?
–বলেছিলাম একসময় স্বাভাবিক জীবন যাপন এরকমই ছিল।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব বদলায় কঙ্কাদি।তুমি চব্বিশ ঘণ্টা ঐভাবে থাকতে পারছো?কিছু মনে কোরনা।আদিম যুগে মানুষ যতটুকু প্রয়োজন কাচা মাংস ফলমূল খেয়ে জীবন ধারন করতো।সঞ্চয় করতো না।তুমি কি পারবে হুবহু সেই জীবনে ফিরে যেতে?পারবে না।আমরা ভীষণ চতুর সমগ্র থেকে নিজের স্বার্থে পছন্দমত খামচে কিছুটা গ্রহণ করি–।
–স্বার্থ মানে?কঙ্কা জিজ্ঞেস করল।
–নিজেকে জিজ্ঞেস করো।ঋষি বলল।
কঙ্কা দেখল আশপাশ থেকে অটোওলারা দেখছে।এখানে বেশিক্ষন কথা বলা ঠিক হবে না।ব্যঙ্গের সুরে জিজ্ঞেস করল,তুই নতুন কাউকে গ্রহন করেছিস মনে হচ্ছে?
–কঙ্কাদি তুমি রেগে আছো।গ্রহণ-বর্জন যাই বলো,ভাসতে ভাসতে চলেছিলাম মনে হচ্ছে ডাঙ্গার সন্ধান পেয়েছি।
বাবুয়াদের ইঙ্গিত কোরে বলল,এরাই তোকে সেই ডাঙ্গার সন্ধান দিয়েছে?কঙ্কা ক্ষেপে গিয়ে জিজ্ঞেস করে।
অটোওলাদের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে বাবুয়া এসে বলল,চলো বস।বাইক স্টার্ট করল্।ঋষি পিছনে বসে হেসে বলল,আসি কঙ্কাদি?
বন্দনাদি কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,কবে আসবে কিছু বলল?
–কে কবে আসবে?
–ছেলেটা মনু না?বন্দনাদি চোখে মুখে গদ্গদভাব।
কঙ্কা নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করে,তার সঙ্গে বন্দনাদির কোনো পার্থক্য নেই?নিছক যৌনক্ষুধা চরিতার্থ করার জন্য ভড়ং?
কিছুক্ষন অটো বন্ধ থাকায় ভীড় জমে গেছিল।একে একে ছাড়তে শুরু করল।কঙ্কার মনে হল মিথ্যে দিয়ে আড়াল করে কি হবে?বন্দনাদিকে বলল,ওর নাম ঋষি।মনে হল আসবে না।
অটো হতে নেমে কঙ্কা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে ফ্লাটের দরজা খুলল।অন্যান্য দিনের মত শাড়ী জামা খুলে ফেলল।তলপেটের নীচে বালের জঙ্গলে হাত বোলালো কঙ্কা।কতকাল সেভ করা হয়না।অন্যদিনের মত খাবার গরম করে এককাপ চা নিয়ে সোফায় বসল।মন জুড়ে রয়েছে ঋষির কথাগুলো।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসো।কোথায় থাকে পড়াশুনা করছে কিনা কিছুই জিজ্ঞেস করা হয়নি।রাস্তায় দাঁড়িয়ে এত কথা হয়না কি?অন্যদের থেকে নিজেকে মিথ্যেই আলাদা ভেবে এসেছে?বা-হাত যোনীর উপর রাখল।এই শরীর ছুয়ে শুয়ে থেকেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই যোনীতে মুখ দিয়ে চুষেছে ভিতরে বীর্যপাত করেছে কতবার।সেই স্মৃতি একেবারে বিস্মৃত হয়ে গেল ঋষি?
কাঁচি সেভার নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো কঙ্কা।বস্তিদেশ বগলের চুল কাঁচি দিয়ে কেটে তারপর সেভার দিয়ে একেবারে চেছে ফেলল।সারা গায়ে সাবান মেখে স্নান করল।তোয়ালে দিয়ে গা-মুছে বেরিয়ে আলমারি খুলে একটা নাইটি বের করল।নাইটি ব্যবহার করে না কতকাল মুখে বিষন্ন হাসি খেলে গেল।গায়ে নাইটি গলিয়ে খেতে বসল।
অটো ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাবুয়ার কানে গেছিল মাস্টারনীর উত্তেজিত কথাবার্তা।কিন্তু বসকে জিজ্ঞেস করতে ভরসা হল না।বাইক জমা দিয়ে টিকিট কেটে প্লাটফরমে উঠতে দেখল শান্তিপুর লোক্যাল দাঁড়িয়ে আছে।দুজনে উঠে জানলার ধারে বসল।বসকে কেমন গম্ভীর মনে হল।ট্রেন ছুটে চলল।কতক্ষন চুপচাপ বসে থাকা যায়? বাবুয়া জিজ্ঞেস করল,বস সেই রাতে হালিশহরে তুমি কতরাতে পৌছেছিলে?
–সেই রাতে যাওয়া হয়নি।এক্সপ্রেস ওয়েতে একটা গাড়ীর ধাক্কায় জ্ঞান হারিয়েছিলাম।
–এ্যা?আতকে উঠল বাবুয়া।বেগম তাহলে ঠিকই বলেছিল।
ঋষি হেসে জিজ্ঞেস করল,কি বলেছিল কোহিনূর?
–চৌকিতে উঠতে গিয়ে আবার নেমে মেঝতে জায়নমাজ পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছিল।জিজ্ঞেস করলাম,কি করছিস?বলল,বসের জন্য মনটা কেমন করে উঠল।
ঋষি স্থির দৃষ্টিতে বাবুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।বাবুয়ার অস্বস্তি হয়।
ঋষি বলল,বাবুয়া তুমি ভাগ্যবান। এমন একটা মানুষ তোমার জীবনে এসেছে যে নিজের জন্য নয় কেবল অন্যের মঙ্গল কামনা করে।দেখো তার অমর্যাদা কোর না।
–বস বেগম আমার খুব যত্ন করে।কখনো মনে হয় বুঝি আমার মা।
বাবুয়া লেখাপড়া বেশি জানে না,মারদাঙ্গা করে বেড়িয়েছে।কিন্তু ওর মনটা সংবেদনশীল।এমন সূক্ষ্মঅনুভুতি ছাড়া কেউ এভাবে কথা বলতে পারেনা ঋষির মনে হল।
ট্রেনে যেতে ঋষি সব কথা বলল।কিভাবে খিন কিল নার্সিং হোমে ঠাই হল ড.এমার সঙ্গে পরিচয়–সব।বাবুয়ার মনে প্রশ্ন থেকে যায় বেগমের কথাটা বুকের কাছে এসে আটকে থাকে মুখ ফুটে বলা হয়না।
বিদিশা আর ধৈর্য রাখতে না পেরে ডাক্তারকে একরকম ঠেলে বড়দির ওখানে পাঠিয়েছে।
ছেলেকোলে বসে আছে ডাক্তারের ফেরার অপেক্ষায় উদ্গ্রীব মন।বাইরে সুবির গলা পেয়ে বেরিয়ে এসে মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়।ভুল দেখছে না তো?কয়েক মুহূর্ত তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে ঘরে ঢুকে গেল।
সুবি মায়ের আচরণে হতবাক।ঋষির হাত ধরে বলল,চলো মামু ভিতরে চলো।
বাবুয়াকে দেখিয়ে ঋষি বলল,এই মামুটার জন্য একটা মোড়া নিয়ে এসো।
সুবি মোড়া আনতে ভিতরে গেলে পিছন পিছন ঋষি ঢুকে ছোটদির কাছে গেলে বিদিশা বলল,দুর হ আমার চোখের সামনে থেকে।তোর লজ্জা করেনা বেহায়া কোথাকার?
বিদিশার কোল থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে ঋষি আদর করতে করতে জিজ্ঞেস করল, ছোড়দি ও কাদে না?
–কাদবে না কেন,ক্ষিধে পেলেই কাদে।
ঋষি ভাগনেকে কোলে নিয়ে উঠোনে চলে আসে।বিদিশা দু-কাপ চা নিয়ে এসে বলল,ঋষি তোর কি বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না?ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিবি তো?বাবুয়ার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,নিন দাদা চা খান।
–ছোড়দি দেবুদাকে দেখছি না কোথায় গেছে?
–তাহলে আর বলছি কি?বড়দির ওখানে পাঠিয়েছি খবরটা নিয়ে চলে এসো।গেছে তো গেছেই এখনো ফেরার নাম নেই।
সুবি এসে বলল,বাবা আসছে।
বলতে না বলতে সুদেব মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ঢূকলো।বিদিশা বলল,আচ্ছা তুমি সেই সকালে বেরিয়েছো এতক্ষনে আসার সময় হল?ওরা সেই কখন থেকে বসে আছে?
–আমরা একসঙ্গে এসেছি।ঋষির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,তোমরা শান্তিপুরে আসোনি?
ঋষি অবাক হয়ে বলল,দেবুদা তুমি দেখেছো?তাহলে ডাকোনি কেন?
–গাড়ি থেকে নামতে দেখে ভাবলাম বাড়ীতে কুটুম এসেছে কিছু একটা তো দিতে হবে।তা ছাড়া বাড়ী গেলে দেখা হবে।
–থাক অনেক হয়েছে।এবার চা খেয়ে বাজার থেকে ঘুরে এসো।কিরে ঋষি তোরা জামা কাপড় ছাড়বি না?
–নারে ছোড়দি আমাকে আজই ফিরতে হবে কাজ আছে।
–বড়দির কাছে শুনলাম তোমার ভাই এখন নার্সের কাজ করে।সুদেব মজা করে বলল।
অন্য সময় হলে এই ঠাট্টায় হেসে ফেলতো কিন্তু বিদিশার মুখ ম্লান হয়ে গেল।সুদেব দেখল বাবুয়া ভাইবোনের মাঝে অস্বাস্তি বোধ করছে।বাবুয়াকে সুদেব বলল,এসো ভাই আমার চেম্বার দেখে যাও।বাবুয়া হাফ ছেড়ে বাচলো।বিদিশার চোখ ছল ছল করে বলল,ভাই তুই আর পড়বি না?
ঋষি হেসে বলল,ছোড়দি মন খারাপ করিস না। তোর ইচ্ছে অপুর্ণ রাখবো না।
–কবে পড়বি বুড়ো হয়ে গেলে?তোর টাকার দরকার হলে বল?
–আমি ভর্তি হয়েছি।
–বড়দি টাকা দিয়েছে?
–সে অনেক কথা আরেকদিন এসে বলব।ঋষি বিষয়টা খুলে বলতে চায়না এখনি।
–তোর ভাগ্নের গা-ছুয়ে বল তুই ভর্তি হয়েছিস?
–এ তুই কি বলছিস?ছোড়দি তোকে আমি কোনোদিন মিথ্যে বলেছি?
বিদিশা হেসে ফেলল বলল, আমার সোনাভাই।তোর বন্ধুকে ডাক।দেখি ডাক্তার কি কিনে এনেছে?তোরা তো আবার এখনই চলে যাবি।
(চলবে)
0 Comments