শ্রাদ্ধ নিয়ম ভঙ্গ সব একই দিনে হল। দিবাকর একাই সব খরচ করেছে। নেমন্তন্ন যা করার দাদাই করেছে। বেশি লোকজনকে বলা হয়নি। বিজুদা এসেছিল,বেলাবৌদিকে বলা হলেও আসেনি। রত্নাকরের বন্ধুদের মধ্যে উমানাথ ছাড়া আর কাউকে বলা হয়নি। রত্নাকর নীরব দর্শক। বাবুলাল প্রোমোটার সব সময়ে ছিল। কটাদিন গমগম করছিল শূণ্য বাড়িতে আবার রত্নাকর একা। পেনশন বন্ধ,হাতে টাকা যা ছিল কলেজে ভর্তি হতেই সব প্রায় শেষ। যেন অকুল পাথারে পড়েছে রত্নাকর। অসীম শূণ্যতার মাঝে দাঁড়িয়ে রত্নাকর উপলব্ধি করল,মা তার জীবনে কতখানি জায়গা জুড়ে ছিল। কলেজ থেকে বাসায় ফিরে খা-খা ঘরের দিকে তাকিয়ে বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে।
নীচে দুটো দোকান ছিল একদিন দেখল তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। দেখার আরও বাকী ছিল। একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখল বাড়ি ভাঙ্গা হচ্ছে। সেকি তার মালপত্তর?চোখে জল এসে গেল। মুন্না সিং এসে বলল,ভাইয়া কই ফিকর নেহি। আপকা সমান জায়গা মত আছে।
–জায়গামত মানে?আমার বই-পত্তর অনেক জরুরী কাগজ–।
–সব আছে আপনি উঠেন। মুন্না সিং বাইকে উঠতে বলল।
রত্নাকর দেখল আশেপাশে কেউ নেই। অসহায় চোখে বাইকের পিছনে চেপে বসে। তার সারটিফিকেট কাগজ পত্র কোথায় নিয়ে গেছে এরা?বাইক ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে। পাড়া ছাড়িয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা পর একটা নির্মীয়মান চারতলা ফ্লাটের নীচে বাইক থামল। মিস্ত্রি মজুররা কাজ করছে। সিড়ি দিয়ে উঠে দেখল, দোতলায় একটা ঘরের দরজায় তালা ঝোলানো। তালা খুলে ঘরে ঢুকে দেখল অসম্পুর্ন মেঝতে পড়ে আছে তার টিনের স্যুটকেস। ঘরের এক কোনে গাদা দেওয়া তার বিছানা।
–ঘর পরসন্দ হইসে?মুন্না জিজ্ঞেস করল।
কি বলবে রত্নাকর?খাট আলমারি কিছুই নেই। জানলায় পাল্লা নেই,বাথরুমই বা কোথায়?
মুন্না সিং আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,যতদিন ঐ ফ্লাট শেষ না হবে আপনি নিশ্চিন্তে এখানে থাকবেন। ঘরের একদিকে দরজা খুলে বলল,এইটা বাথ্রুম আছে। একেবারে এটাচ।
–খাট আলমারি?
–দেববাবু আপনার দাদার কাছে আছে। ইখানে অত জায়গা নেই।
চাবি হাতে দিয়ে মুন্না সিং চলে গেল। রত্নাকর দরজা বন্ধ করে স্যুটকেস খুলে বসে। বালাজোড়া ঠিক জায়গায় আছে। জিনিস পত্র গোছাতে গিয়ে একটা কার্ড হাতে পেল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে মনে পড়ল বাসের সেই মহিলা কার্ডটা দিয়েছিল।
The Relief Society,huge income part time service, hale & healthy 20 to 40 male/female Contact. সেই মহিলার মুখটা মনে করার চেষ্টা করে। কবেকার কথা সেকি মনে থাকে?রঞ্জা ম্যাডাম কি যেন নাম বলেছিল?কার্ডটা স্যুটকেসে রেখে ঘরের একপাশে বিছানা করে। কলেজ পাড়ার থেকে যতদুরে এখান থেকে ততটাই কি একটু কম দূরে হবে। চেনাজানা পরিবেশ থেকে দূরে ভালই হল। কি খাচ্ছে কি না খাচ্ছে কেউ দেখতে আসবে না। করুণা করে আহা-উহু করবে সে বড় অসহ্য। জানলার নীচে দুটো বোতল কিছুটা জল আছে। রত্নাকর জল ফেলে দিয়ে বাথরুমে গিয়ে জল ভরতে গিয়েও ভরল না। দরজায় তালা দিয়ে নীচে নেমে এল। একজন মহিলাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, খাবার জল কোথায় আছে?
মহিলাটি আরেকজন মহিলাকে ডাকল,এ ময়না দেখত বাবু কি বুইলছে?
ময়না এসে জিজ্ঞেস করে,পানি লাগবে?দে আমাকে লিয়ে আসছি।
–তুমি আমাকে দেখিয়ে দাও আমি নিয়ে নিতে পারব।
অন্য এক মহিলা একটু দূর থেকে বলল,ময়না তু দেখাই দে ক্যানে,বাবু বুতল ছাড়বেক নাই। সবাই খলবলিয়ে হেসে ঊঠল।
বেশ মজায় আছে এরা। রত্নাকর ময়নার পিছন পিছন হাটতে থাকে। ময়না জিজ্ঞেস করে,তু ইখানে থাইকবি?
–হ্যা কেন?
— ইকটা বিটা ছ্যইলা থাকলে মনে জুর থাকে। তুর কেউ নাই?
প্রশ্নটা শুনে রত্নাকরের মন উদাস হয়। নিজেকে জিজ্ঞেস করে,তার কেউ কি আছে?থাকার মধ্যে ছিল এক মা। দাদা নামে মাত্র দাদা। রত্নাকর বলল,মা ছিল,মারা গেছে।
–কুনো চিন্তা করবিনা,আমরা আছি।
এই অবস্থায় ময়নার আশ্বাস বেশ ভাল লাগে। উপর থেকে একজন মিস্ত্রি হাক পাড়ে এই ময়না গপ্পো করলে চলবে?
–হুই দেখ নল,আমরা উখানকার পানি খাই। পাড়ার লুকেরাও উখান থিকে পানি লিয়ে যায়।
ময়না দ্রুত চলে গেল। কি সুন্দর ফিগার রত্নাকর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। সারাদিন কিইবা খায় অথচ শরীর যেন শিল্পীর ছেনিতে সযত্নে খোদাই করা। সস্তার শাড়ি জড়ানো তাতেই কি চমৎকার দেখতে লাগছে। মটর বাইকের শব্দ হতে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল। বাবুয়া এসেছে,তাকে দেখে এগিয়ে এল। পার্স থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,এখুন এটা রাখুন।
রত্নাকর টাকা নিতে অস্বীকার করে। বাবুয়া কিছুটা অপ্রস্তুত। টাকাটা ব্যাগে ভরে জিজ্ঞেস করল,দেববাবু আপনার আপনা ভাই আছে না?
–হ্যা আমরা এক মায়ের পেটের ভাই।
বাবুলাল অবাক হয় কেমন দাদা আর তার কেমন ভাই!বাবুলাল হাক পাড়ে,এই মানিজার।
ওপাশ থেকে একজন বাঙালী ভদ্রলোক এগিয়ে এল। বাবুয়া বলল,আমার ভাই আছে কিছু দরকার হলে বন্দোবস্ত করে দিবেন। মিট্যি তেল আছে তো?রত্নাকরের দিকে তাকিয়ে বলল,অসুবিধা হলে ওকে বলবেন। ফটফটিয়ে চলে গেল বাবুয়া। আমাকে বলল ভাই। রত্নাকরের লোকটাকে খারাপ লাগেনা। শুনেছে লোকটা এক সময় খুন খারাপি করত। দেখে মনে হল বেশ নরম মনের মানুষ। বাবুয়া চলে যেতে মিস্ত্রিদের মধ্যে গুমোটভাবটা কেটে গেল।
সন্ধ্যে হতে হাত মুখ ধুয়ে মিস্ত্রিরা একে একে চলে গেল। পঞ্চাদার দোকানে গিয়ে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট হবে না। ঘরে বসে পড়াশুনা লেখালিখি করা যাবে। কিছুক্ষন পরে লক্ষ্য করে জানলা দিয়ে ধোয়া ঢুকছে। নীচে নেমে দেখল ওরা রান্না চাপিয়েছে। রত্নাকরকে দেখে ময়না জিজ্ঞেস করে,হেই বাবু তুই রাতে খাইবেক নাই?
রত্নাকরের ভাল লাগে ওদের কথা বুঝতে অসুবিধে হয়না। তাকে দেখাশোনার লোকের অভাব হবেনা। অহঙ্কার নেই একে অপরকে ছাপিয়ে যাবার ইচ্ছে নেই এককথায় মুখোসহীন কতকগুলো মানুষ। রত্নাকর বলল,আরেকটু রাত হোক তারপর হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসব।
সবাই হো-হো করে হেসে উঠল। রত্নাকর কারণ বুঝতে পারেনা। ময়না বলল,হোটেলে তুকে ঠকায়ে সব পয়সা লিয়ে লিবে। ময়না হাত দিয়ে দেখায়,একটুস টুকু ভাত দিল দশ টাকা লিল।
রত্নাকর বুঝতে পারে এদের কাছে স্বাদের চেয়ে পরিমাণের গুরুত্ব অনেক বেশি। নীচু হয়ে দেখে কি রান্না করছে?ময়না বলল,আমার কাছে খাবি?পাঁচ টাকা লাগবেক।
ধন্দ্বে পড়ে যায় রত্নাকর। কেমন খেতে হবে কে জানে। রাজি হয়ে যদি শেষে খেতে না পারে ওদের অসম্মান করা হবে।
এড়াবার জন্য বলল,আরেক দিন খাবো।
–আজকে এতটুস খা পয়সা লাগবেক নাই। ময়না গম্ভীরভাবে বলল।
–ঠিক আছে রান্না হয়ে গেলে আমাকে বলবে। আমি উপরে আছি।
নিজের ঘরে চলে এল রত্নাকর। হ্যারিকেনের আলোয় কার্ডটা দেখে,রিলিফ মানে ত্রান।
হিউজ ইনকামের দরকার নেই মাস গেলে চার-পাচশো যথেষ্ট। কিন্তু কাজটা কি হতে পারে? কোথাও বন্যা-টন্যা হলে যদি যেতে হয় তার পক্ষে কলেজ কামাই করে কিভাবে সম্ভব?আবার বলছে পার্ট টাইম,তাহলে?কতদিন আগে দিয়েছিল এখনো কি কাজ খালি আছে? একবার ফোন করে দেখলে হয়। গেলেই তাকে কাজ দেবে বা কাজ দিলেই তাকে করতে হবে তাতো নয়।
দরজায় হাসি মুখে এক থালা ভাত নিয়ে দাঁড়িয়ে ময়না। ভালই হল খেতে না পারলে ফেলে দেবে। রত্নাকর উঠে ময়নার হাত থেকে থালাটা নিয়ে বলল,তুমি যাও সকালে থালা দিয়ে আসব।
–খেয়ে লিবি,ফ্যালাই দিস না।
রত্নাকর চমকে ওঠে,মনের ভাষা পড়তে পারে নাকি? কোমর দুলিয়ে চলে গেল ময়না। কি সুন্দর তেল চকচকে চামড়া। সারাদিনের ধুলো কাদার মালিন্য এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি। বেশ লাগে চেয়ে চেয়ে দেখতে। সভ্যতার কামনা লোলুপ দৃষ্টি ওদের মনে কোনো দাগ ফেলতে পারেনা।
খেতে খারাপ লাগছে না। অবশ্য ক্ষিধের মুখে সবই ভাল লাগে। হিউজ ইনকামের কথা ঘুরে ফিরে আসছে মনে।
সকাল হতেই মিস্ত্রী মজুরের হাকাহাকিতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। কাল রাতের কথা ভেবে হাসি পেল। এদের মধ্যেই জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যায়। ফ্লাটের কাজ শেষ হলেই অন্যত্র চলে যাবে এরা।
মনিটরে নজরে পড়ল সিকদারবাবু আসছে। পুলিশি পোশাকে নয় সাদা পোশাকে। আন্নামা অফিসে এসে বসলেন। অফিসের পাশেই আন্নামার বিশ্রাম ঘর। সেখানে বসে মনিটরে সারা বাড়ীর কোথায় কি হচ্ছে বসে বসে নজর রাখেন। মিনিট পাচেক কথা হয় সিকদার বাবুর সঙ্গে। বারবার এসপি সাহেবের কথা বলছিল আন্নামা জিজ্ঞেস করেন,কৌন কাহাকে রহনেওয়ালা?সিকদারবাবু সব খবর জোগাড় করতে পারেনি বলল,এ হারামী বাধাকপি আছে।
আম্মাজী হেসে অভয় দিলেন,বাধাকপি ফুলকপি সব তিনি ম্যানেজ করে ফেলবেন। কাহা কাহা তক পোউছ হ্যায় তার ইঙ্গিত দিলেন।
সিকদার অবিশ্বাস করেনা। আম্মাজী অত্যন্ত প্রভাবশালী তার পরিচয় আগে পেয়েছে। তার আগে যে ওসি ছিল এখন নাকি কোন ভাগাড়ে বসে চালাকি করার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করছে। সিকদার বসে উস্খুশ করে।
ফোন বেজে উঠতে রিসিভার কানে লাগিয়ে আম্মাজী ‘হ্যালো স্যার’ বলে চোখের ইশারায় সিকদারকে চলে যেতে বললেন। সিকদার বেরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল,অফিসের দরজায় লালবাতি জ্বলছে। তার মানে এখন প্রবেশ নিষেধ। মাঝে মাঝেই এরকম ফোন আসে। এরা কারা অনেকভাবে চেষ্টা করেও জানতে পারেনি। আম্মাজী জানতে পারলে মূল্য দিতে হতে পারে ভেবে বেশিদুর এগোবার ভরসা হয়নি। আম্মাজী শুনেছে দক্ষিন ভারতীয় কিন্তু চমৎকার বাংলা বলেন। উজ্জ্বল চোখজোড়া ছাড়া কিছুই দেখা যায়না,বয়স অনুমান করা কঠিন। নানা অলৌকিক বিদ্যা জানেন সবাই বলাবলি করে। সিকদারবাবু সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলেন।
কলেজে বেরোবার আগে নম্বর দেখে ফোন করল রত্নাকর। ওপাশ থেকে মহিলা কণ্ঠে আওয়াজ এলো,হ্যালো?
–রিলিফ সোসাইটি?
–আপনি নম্বর কোথায় পেলেন?
এরকম প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলনা রত্নাকর। কি বলবে?যা সত্যি তাই বলল,না মানে এক ভদ্রমহিলা রাস্তায় আমাকে একটা কার্ড দিয়েছিলেন–।
–কি জানতে চান বলুন?
–আমার কাজের খুব দরকার। মানে আমাকে কি করতে হবে?
–এক মিনিট। কিছুক্ষন পর ওপাশ থেকে বলল,কাম এ্যাট ফোর পিএম।
সঙ্গে থাকুন …
নীচে দুটো দোকান ছিল একদিন দেখল তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। দেখার আরও বাকী ছিল। একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখল বাড়ি ভাঙ্গা হচ্ছে। সেকি তার মালপত্তর?চোখে জল এসে গেল। মুন্না সিং এসে বলল,ভাইয়া কই ফিকর নেহি। আপকা সমান জায়গা মত আছে।
–জায়গামত মানে?আমার বই-পত্তর অনেক জরুরী কাগজ–।
–সব আছে আপনি উঠেন। মুন্না সিং বাইকে উঠতে বলল।
রত্নাকর দেখল আশেপাশে কেউ নেই। অসহায় চোখে বাইকের পিছনে চেপে বসে। তার সারটিফিকেট কাগজ পত্র কোথায় নিয়ে গেছে এরা?বাইক ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে। পাড়া ছাড়িয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা পর একটা নির্মীয়মান চারতলা ফ্লাটের নীচে বাইক থামল। মিস্ত্রি মজুররা কাজ করছে। সিড়ি দিয়ে উঠে দেখল, দোতলায় একটা ঘরের দরজায় তালা ঝোলানো। তালা খুলে ঘরে ঢুকে দেখল অসম্পুর্ন মেঝতে পড়ে আছে তার টিনের স্যুটকেস। ঘরের এক কোনে গাদা দেওয়া তার বিছানা।
–ঘর পরসন্দ হইসে?মুন্না জিজ্ঞেস করল।
কি বলবে রত্নাকর?খাট আলমারি কিছুই নেই। জানলায় পাল্লা নেই,বাথরুমই বা কোথায়?
মুন্না সিং আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,যতদিন ঐ ফ্লাট শেষ না হবে আপনি নিশ্চিন্তে এখানে থাকবেন। ঘরের একদিকে দরজা খুলে বলল,এইটা বাথ্রুম আছে। একেবারে এটাচ।
–খাট আলমারি?
–দেববাবু আপনার দাদার কাছে আছে। ইখানে অত জায়গা নেই।
চাবি হাতে দিয়ে মুন্না সিং চলে গেল। রত্নাকর দরজা বন্ধ করে স্যুটকেস খুলে বসে। বালাজোড়া ঠিক জায়গায় আছে। জিনিস পত্র গোছাতে গিয়ে একটা কার্ড হাতে পেল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে মনে পড়ল বাসের সেই মহিলা কার্ডটা দিয়েছিল।
The Relief Society,huge income part time service, hale & healthy 20 to 40 male/female Contact. সেই মহিলার মুখটা মনে করার চেষ্টা করে। কবেকার কথা সেকি মনে থাকে?রঞ্জা ম্যাডাম কি যেন নাম বলেছিল?কার্ডটা স্যুটকেসে রেখে ঘরের একপাশে বিছানা করে। কলেজ পাড়ার থেকে যতদুরে এখান থেকে ততটাই কি একটু কম দূরে হবে। চেনাজানা পরিবেশ থেকে দূরে ভালই হল। কি খাচ্ছে কি না খাচ্ছে কেউ দেখতে আসবে না। করুণা করে আহা-উহু করবে সে বড় অসহ্য। জানলার নীচে দুটো বোতল কিছুটা জল আছে। রত্নাকর জল ফেলে দিয়ে বাথরুমে গিয়ে জল ভরতে গিয়েও ভরল না। দরজায় তালা দিয়ে নীচে নেমে এল। একজন মহিলাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, খাবার জল কোথায় আছে?
মহিলাটি আরেকজন মহিলাকে ডাকল,এ ময়না দেখত বাবু কি বুইলছে?
ময়না এসে জিজ্ঞেস করে,পানি লাগবে?দে আমাকে লিয়ে আসছি।
–তুমি আমাকে দেখিয়ে দাও আমি নিয়ে নিতে পারব।
অন্য এক মহিলা একটু দূর থেকে বলল,ময়না তু দেখাই দে ক্যানে,বাবু বুতল ছাড়বেক নাই। সবাই খলবলিয়ে হেসে ঊঠল।
বেশ মজায় আছে এরা। রত্নাকর ময়নার পিছন পিছন হাটতে থাকে। ময়না জিজ্ঞেস করে,তু ইখানে থাইকবি?
–হ্যা কেন?
— ইকটা বিটা ছ্যইলা থাকলে মনে জুর থাকে। তুর কেউ নাই?
প্রশ্নটা শুনে রত্নাকরের মন উদাস হয়। নিজেকে জিজ্ঞেস করে,তার কেউ কি আছে?থাকার মধ্যে ছিল এক মা। দাদা নামে মাত্র দাদা। রত্নাকর বলল,মা ছিল,মারা গেছে।
–কুনো চিন্তা করবিনা,আমরা আছি।
এই অবস্থায় ময়নার আশ্বাস বেশ ভাল লাগে। উপর থেকে একজন মিস্ত্রি হাক পাড়ে এই ময়না গপ্পো করলে চলবে?
–হুই দেখ নল,আমরা উখানকার পানি খাই। পাড়ার লুকেরাও উখান থিকে পানি লিয়ে যায়।
ময়না দ্রুত চলে গেল। কি সুন্দর ফিগার রত্নাকর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। সারাদিন কিইবা খায় অথচ শরীর যেন শিল্পীর ছেনিতে সযত্নে খোদাই করা। সস্তার শাড়ি জড়ানো তাতেই কি চমৎকার দেখতে লাগছে। মটর বাইকের শব্দ হতে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল। বাবুয়া এসেছে,তাকে দেখে এগিয়ে এল। পার্স থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,এখুন এটা রাখুন।
রত্নাকর টাকা নিতে অস্বীকার করে। বাবুয়া কিছুটা অপ্রস্তুত। টাকাটা ব্যাগে ভরে জিজ্ঞেস করল,দেববাবু আপনার আপনা ভাই আছে না?
–হ্যা আমরা এক মায়ের পেটের ভাই।
বাবুলাল অবাক হয় কেমন দাদা আর তার কেমন ভাই!বাবুলাল হাক পাড়ে,এই মানিজার।
ওপাশ থেকে একজন বাঙালী ভদ্রলোক এগিয়ে এল। বাবুয়া বলল,আমার ভাই আছে কিছু দরকার হলে বন্দোবস্ত করে দিবেন। মিট্যি তেল আছে তো?রত্নাকরের দিকে তাকিয়ে বলল,অসুবিধা হলে ওকে বলবেন। ফটফটিয়ে চলে গেল বাবুয়া। আমাকে বলল ভাই। রত্নাকরের লোকটাকে খারাপ লাগেনা। শুনেছে লোকটা এক সময় খুন খারাপি করত। দেখে মনে হল বেশ নরম মনের মানুষ। বাবুয়া চলে যেতে মিস্ত্রিদের মধ্যে গুমোটভাবটা কেটে গেল।
সন্ধ্যে হতে হাত মুখ ধুয়ে মিস্ত্রিরা একে একে চলে গেল। পঞ্চাদার দোকানে গিয়ে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট হবে না। ঘরে বসে পড়াশুনা লেখালিখি করা যাবে। কিছুক্ষন পরে লক্ষ্য করে জানলা দিয়ে ধোয়া ঢুকছে। নীচে নেমে দেখল ওরা রান্না চাপিয়েছে। রত্নাকরকে দেখে ময়না জিজ্ঞেস করে,হেই বাবু তুই রাতে খাইবেক নাই?
রত্নাকরের ভাল লাগে ওদের কথা বুঝতে অসুবিধে হয়না। তাকে দেখাশোনার লোকের অভাব হবেনা। অহঙ্কার নেই একে অপরকে ছাপিয়ে যাবার ইচ্ছে নেই এককথায় মুখোসহীন কতকগুলো মানুষ। রত্নাকর বলল,আরেকটু রাত হোক তারপর হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসব।
সবাই হো-হো করে হেসে উঠল। রত্নাকর কারণ বুঝতে পারেনা। ময়না বলল,হোটেলে তুকে ঠকায়ে সব পয়সা লিয়ে লিবে। ময়না হাত দিয়ে দেখায়,একটুস টুকু ভাত দিল দশ টাকা লিল।
রত্নাকর বুঝতে পারে এদের কাছে স্বাদের চেয়ে পরিমাণের গুরুত্ব অনেক বেশি। নীচু হয়ে দেখে কি রান্না করছে?ময়না বলল,আমার কাছে খাবি?পাঁচ টাকা লাগবেক।
ধন্দ্বে পড়ে যায় রত্নাকর। কেমন খেতে হবে কে জানে। রাজি হয়ে যদি শেষে খেতে না পারে ওদের অসম্মান করা হবে।
এড়াবার জন্য বলল,আরেক দিন খাবো।
–আজকে এতটুস খা পয়সা লাগবেক নাই। ময়না গম্ভীরভাবে বলল।
–ঠিক আছে রান্না হয়ে গেলে আমাকে বলবে। আমি উপরে আছি।
নিজের ঘরে চলে এল রত্নাকর। হ্যারিকেনের আলোয় কার্ডটা দেখে,রিলিফ মানে ত্রান।
হিউজ ইনকামের দরকার নেই মাস গেলে চার-পাচশো যথেষ্ট। কিন্তু কাজটা কি হতে পারে? কোথাও বন্যা-টন্যা হলে যদি যেতে হয় তার পক্ষে কলেজ কামাই করে কিভাবে সম্ভব?আবার বলছে পার্ট টাইম,তাহলে?কতদিন আগে দিয়েছিল এখনো কি কাজ খালি আছে? একবার ফোন করে দেখলে হয়। গেলেই তাকে কাজ দেবে বা কাজ দিলেই তাকে করতে হবে তাতো নয়।
দরজায় হাসি মুখে এক থালা ভাত নিয়ে দাঁড়িয়ে ময়না। ভালই হল খেতে না পারলে ফেলে দেবে। রত্নাকর উঠে ময়নার হাত থেকে থালাটা নিয়ে বলল,তুমি যাও সকালে থালা দিয়ে আসব।
–খেয়ে লিবি,ফ্যালাই দিস না।
রত্নাকর চমকে ওঠে,মনের ভাষা পড়তে পারে নাকি? কোমর দুলিয়ে চলে গেল ময়না। কি সুন্দর তেল চকচকে চামড়া। সারাদিনের ধুলো কাদার মালিন্য এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি। বেশ লাগে চেয়ে চেয়ে দেখতে। সভ্যতার কামনা লোলুপ দৃষ্টি ওদের মনে কোনো দাগ ফেলতে পারেনা।
খেতে খারাপ লাগছে না। অবশ্য ক্ষিধের মুখে সবই ভাল লাগে। হিউজ ইনকামের কথা ঘুরে ফিরে আসছে মনে।
সকাল হতেই মিস্ত্রী মজুরের হাকাহাকিতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। কাল রাতের কথা ভেবে হাসি পেল। এদের মধ্যেই জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যায়। ফ্লাটের কাজ শেষ হলেই অন্যত্র চলে যাবে এরা।
মনিটরে নজরে পড়ল সিকদারবাবু আসছে। পুলিশি পোশাকে নয় সাদা পোশাকে। আন্নামা অফিসে এসে বসলেন। অফিসের পাশেই আন্নামার বিশ্রাম ঘর। সেখানে বসে মনিটরে সারা বাড়ীর কোথায় কি হচ্ছে বসে বসে নজর রাখেন। মিনিট পাচেক কথা হয় সিকদার বাবুর সঙ্গে। বারবার এসপি সাহেবের কথা বলছিল আন্নামা জিজ্ঞেস করেন,কৌন কাহাকে রহনেওয়ালা?সিকদারবাবু সব খবর জোগাড় করতে পারেনি বলল,এ হারামী বাধাকপি আছে।
আম্মাজী হেসে অভয় দিলেন,বাধাকপি ফুলকপি সব তিনি ম্যানেজ করে ফেলবেন। কাহা কাহা তক পোউছ হ্যায় তার ইঙ্গিত দিলেন।
সিকদার অবিশ্বাস করেনা। আম্মাজী অত্যন্ত প্রভাবশালী তার পরিচয় আগে পেয়েছে। তার আগে যে ওসি ছিল এখন নাকি কোন ভাগাড়ে বসে চালাকি করার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করছে। সিকদার বসে উস্খুশ করে।
ফোন বেজে উঠতে রিসিভার কানে লাগিয়ে আম্মাজী ‘হ্যালো স্যার’ বলে চোখের ইশারায় সিকদারকে চলে যেতে বললেন। সিকদার বেরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল,অফিসের দরজায় লালবাতি জ্বলছে। তার মানে এখন প্রবেশ নিষেধ। মাঝে মাঝেই এরকম ফোন আসে। এরা কারা অনেকভাবে চেষ্টা করেও জানতে পারেনি। আম্মাজী জানতে পারলে মূল্য দিতে হতে পারে ভেবে বেশিদুর এগোবার ভরসা হয়নি। আম্মাজী শুনেছে দক্ষিন ভারতীয় কিন্তু চমৎকার বাংলা বলেন। উজ্জ্বল চোখজোড়া ছাড়া কিছুই দেখা যায়না,বয়স অনুমান করা কঠিন। নানা অলৌকিক বিদ্যা জানেন সবাই বলাবলি করে। সিকদারবাবু সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলেন।
কলেজে বেরোবার আগে নম্বর দেখে ফোন করল রত্নাকর। ওপাশ থেকে মহিলা কণ্ঠে আওয়াজ এলো,হ্যালো?
–রিলিফ সোসাইটি?
–আপনি নম্বর কোথায় পেলেন?
এরকম প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলনা রত্নাকর। কি বলবে?যা সত্যি তাই বলল,না মানে এক ভদ্রমহিলা রাস্তায় আমাকে একটা কার্ড দিয়েছিলেন–।
–কি জানতে চান বলুন?
–আমার কাজের খুব দরকার। মানে আমাকে কি করতে হবে?
–এক মিনিট। কিছুক্ষন পর ওপাশ থেকে বলল,কাম এ্যাট ফোর পিএম।
সঙ্গে থাকুন …
0 Comments