রত্নাকর আশপাশে চেয়ে দেখল দুটো ছেলে গারদের এককোনে ঘুমিয়ে পড়েছে। পেচ্ছাপের গন্ধে নাক জ্বালা করছে। এরমধ্যে কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে দেখে অবাক হয়। হাজতে কি খেতেটেতে দেয়না?তালা খোলার শব্দ পেয়ে রত্নাকর দেখল খালিহাত একজন সিপাই। প্রথমে মনে হয়েছিল বুঝি খাবার নিয়ে এসেছে।
–এই নিকালো।
রত্নাকর এদিক-ওদিক দেখে। সিপাই আবার ধমক দিল,সমঝা নেহি? নিকালো।
রত্নাকর বুঝতে পারে তাকেই বলছে। ধীরে ধীরে উঠে দাড়াতে গিয়ে বুঝতে সারা গা-হাত-পা বেশ ব্যথা। ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে হাজত থেকে বেরোতে ওসি ডাকল,এই এদিকে আয়।
রত্নাকরের কান্না পেয়ে যায় আবার মারবে নাকি?ওসির কাছে যেতে টেবিলে রাখা জিনিস পত্তর দেখিয়ে বলল,এগুলো নিয়ে যা।
স্বস্তির শ্বাস ফেলে রত্নাকর। টাকা পয়সা মোবাইল তুলে পকেটে ভরে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। নিত্যানন্দ ঘোষ সেদিকে তাকিয়ে ভাবে তার অবস্থা শাখের করাতের মত। এই এস পি শুনেছে হেভি হারামী। আরেক দিকে আম্মাজী। ভেবেছিল সকালে মালটাকে নিয়ে আম্মাজীর কাছে হাজির করবে,এখন কি মুখ নিয়ে আম্মাজীর কাছে দাড়াবে?যা সত্যি তাই বলবে তাছাড়া উপায় কি?কপালে যা আছে তাই হবে।
রাস্তায় এসে দাড়াল রত্নাকর। মাথার উপর নক্ষত্র খচিত বিশাল আকাশ। কোথায় নিয়ে আসা হয়েছে তাকে চিনতে পারেনা। এতরাতে যাবে কোথায়?গাড়ী ঘোড়ার দেখা নেই, দোকান পাটও বন্ধ। কাছাকাছি কোনো পার্ক থাকলে সেখানে শুয়ে রাতটা কাটিয়ে দেওয়া যেত। রাস্তার ধার ঘেষে ধীর পায়ে এগোতে লাগল। হাজতবাস বাকী ছিল সেটাও হয়ে গেল।
সারাদিনের ঘটনা মনে মনে ভাবার চেষ্টা করে। উমাদা কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি বউয়ের সঙ্গে গল্প করছে রাত জেগে। সামনে গিয়ে দাড়াবার মুখ নেই।
পিছনে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের জীপ। উধম সিং চুপচাপ লক্ষ্য করছে স্যারকে। কোন গড়বড় হল নাকি?স্যারকে কখনো এভাবে দেখেনি। শালে ওসি কুছু বলেছে? নানা প্রশ্ন মনে উকিঝুকি দিলেও জিজ্ঞেস করার সাহস হয়না। এসপি সাহেব রুমাল বের করে চোখ মুছলেন।
–সিংজি?
–জ্বি সাব?
–আপনার দেশ কোথায়?
–বিহারে আরা জিলা।
–কে আছে সেখানে?
উধম সিং ইতস্তত করে,এত বড় অফসার তার ব্যাপারে খোজ খবর নিচ্ছেন।
–কেউ নেই?
–জি স্যার আমার আউরত আছে একটা বেটা আছে।
–আপনার চিন্তা হয়না?
–জি চিন্তা হয়। কিন্তু জমিন জায়দাদ না থাকলে কলকাত্তা নিয়ে আসতাম।
উধম সিং-র স্যারকে আজ অন্য রকম মনে হয়।
এস পি সাহেব গাড়ীতে স্টার্ট দিয়ে বললেন,ঐ যে ছেলেটা যাচ্ছে ওকে জীপে তুলে নেবেন।
–স্যার ওহি আদমী থানায় ছিল। উধম সিং-র কথা শেষ হতে না হতেই জীপ রত্নাকরের গা ঘেষে ব্রেক করে। উধম শিং লাফিয়ে নেমে রত্নাকরকে জীপে তুলে নিল। হা-করে সিপাইজিকে দেখে রত্নাকর। ভয়ডর কিছুই বোধ করেনা। রত্নাকরের মনের অবস্থা সমুদ্রে পেতেছি শয্যা শিশিরে কিবা ভয়।
এস পি বাংলোর কাছে জীপ থামতে কৌর ম্যাম ভিতরে ঢুকে গেল। রত্নাকরের একটা ঘরে আশ্রয় জুটলো সেটা জিম,ব্যায়ামের সরঞ্জাম ভর্তি। এখানে তাকে কেন আনা হল,তার অপরাধ কি তার সদুত্তর না পেলেও রাতে মাথার উপর একটা ছাদ জুটেছে ভেবে ভাল লাগল। মেঝেতে এক জায়গায় শোবার আয়োজন করছিল এমন সময় এক মহিলা এসে একটা প্লেটে রুটী তরকা দিয়ে গেল। ক্ষিধেতে নাড়ি ছিড়ে যাবার জোগাড় তাহলেও তার পক্ষে নির্বিকার থাকা আর সম্ভব হচ্ছেনা। সেই মহিলা আবার যখন শতরঞ্চি বালিশ দিতে এল রত্নাকর জিজ্ঞেস করল,দিদি এইসব আমাকে কেন দিচ্ছেন?
–জানিনা ছ্যার বললেন তাই দিলাম। খেয়ে শুয়ে পড়েন। মহিলা চলে গেল।
উধম সিং গেস্টরুমে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেই ঘুমায় বরাবর।
ক্ষিধের মুখে তরকা রুটি আচার বেশ ভালই লাগল। কপালে যা আছে তাই হবে তা নিয়ে রত্নাকরের চিন্তা নেই। যা হয়েছে তার চেয়ে বেশি আর কিইবা হতে পারে।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। কাল রাতের কথা মনে পড়ল। নজরে পড়ল একটু দূরে ট্রেডমিলে পিছন ফিরে হাটছে একজন। পরনে শর্টস গায়ে কালো টি-শার্ট কাধে সাদা তোয়ালে। ঘাড় অবধি চুল,পিছন থেকে দেখেও বোঝা যায় মহিলা। একসময় মহিলা ট্রেডমিল হতে নেমে তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছে তার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,ঘুম হয়েছে?
রত্নাকর মহিলাকে দেখতে দেখতে অতীত হাতড়ায়। একসময় চিনতে পেরে লজ্জায় মাথা ঝুকে পড়ে।
–সারারাত বাইরে কাটালি আণ্টি চিন্তা করবেন না?
রত্নাকর মাথা তোলেনা চুপ করে থাকে। মহিলা কাছে এসে বলল,উত্তর দিচ্ছিস না। দেবো থার্ড ডিগ্রি?
–মা নেই,মারা গেছে। গোজ হয়ে বলল রত্নাকর।
–আণ্টি মারা গেছে?আমার বাপুও নেই। খুশবন্ত কি যেন ভাবেন তারপর বললেন,এই জন্য তোর এই অধঃপতন। এতদিন পর তোকে এভাবে দেখব ভাবিনি।
–তোমার ভাবনা মত দুনিয়া চলবে এরকম ভাবলে কি করে?খুশিদি আমি এখন যাচ্ছি?
–যাবি। এখন বাথরুমে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে আমার ঘরে আয়। তোর ঠোটে কি হয়েছে দেখি-দেখি?খুশবন্ত হাত বাড়িয়ে দেখতে গেল।
–আমি নোংরা,আমার গায়ে হাত দেবেনা। রত্নাকর এক ঝটকায় হাত ঠেলে সরিয়ে দিল।
খুশবন্ত ঠাস করে এক চড় মেরে বলল,অন্যায় করে আবার তেজ দেখানো হচ্ছে?
রত্নাকর গাল চেপে ধরে কেদে ফেলে বলল,তুমি আমাকে মারলে?
–বেশ করেছি আবার মারব। যা ফ্রেশ হয়ে আমার ঘরে আয়,কথা আছে।
খুশবন্ত নিজের ঘরে এসে নিজেকে আয়নায় দেখল। অতবড় ছেলেকে মারা ঠিক হয়নি। কিন্তু এমন রাগ হয়ে গেল। একটা লুঙ্গি পরে ঘামে ভেজা টি-শার্ট খুলে জামা গায় দেয়।
ঘোষবাবু রাতে খুব মেরেছে তবু নাকি টু-শব্দটি করেনি,চুপচাপ সহ্য করেছে। আর এখন একচড়ে কেদে ফেলল? আঘাত সম্ভবত গালে নয় লেগেছে আরও গভীরে।
রত্নাকর এল,মুখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। খুশি তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে বলল,মুছে ফেল।
–তোকে কেন মারলাম বলতো?
রত্নাকর মুখ থেকে তোয়ালে সরিয়ে তাকালো। খুশবন্ত বলল,মনে আছে তুই একদিন বলেছিলি তুমি টাচ করলে সব মালিন্য ধুয়ে মুছে যায়?
কতদিন আগের কথা খুশিদি ঠিক মনে রেখেছে,ফিক করে হাসল রত্নাকর।
–হাসলি যে?
কাজের মহিলা একটা ট্রেতে ডিমটোস্ট আর চা দিয়ে গেল। রত্নাকর তুলে খেতে থাকে।
–কিরে বললি নাতো হাসলি কেন?
–তুমি কি ভাববে।
–ভাববো না তুই বল।
রত্নাকর গম্ভীর হয়ে যায়। তারপর দ্বিধা জড়িত স্বরে বলল,খুশিদি তুমি যদি পাড়ায় থাকতে তাহলে আমার এমন হতনা।
খুশবন্ত অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চায়ে চুমুক দিল। বুকের মধ্যে হু-হু করে উঠল। একসময় খুশবন্ত বলল,পাড়ার খবর বল।
–উমাদাকে মনে আছে?
–উমানাথ?সবাইকে মনে আছে। কেমন আছে উমানাথ?
–কাল উমাদার বউভাত ছিল।
–আর তুই সারারাত হাজতে ছিলি?ঠিক আছে স্নান করে বিশ্রাম কর। আমি একটূ ঘুরে আসি,একসঙ্গে খাবো। পরে শুনবো তোর সব কথা।
দ্রুত পোশাক পরে তৈরী হয়ে নিল। উচু গলায় ডাকল,জানকি।
সেই মহিলা আসতে খুশবন্ত বলল,একে দেখা শোনা কোরো। স্নান করার সময় ওকে আমার একটা লুঙ্গি দিও। বাইরে বেরোতে দেবেনা।
–খুশিদি আমি এখানে থাকবো না বাসায় যাব,দেরী হয়ে যাচ্ছে।
খুশবন্ত চোখ পাকাতে রত্নাকর বিমর্ষ হয়ে চুপ করে গেল। খুশবন্ত বলল,একদম বাইরে বেরোবি না।
পুলিশি পোশাকে দারুন দেখতে লাগছে খুশিদিকে। প্রায় তার সমান লম্বা ছিপছিপে শরীরের গড়ন। দরজায় দাঁড়িয়ে উধমশিং হাতে রাইফেল।
সোসাইটিতে গোছগাছ শুরু হয়ে গেছে। আম্মাজী নিজের অফিসে বসে এখানে ওখানে ফোন করছেন। ঘোষবাবু এসেছে শুনে ভিতরে আসতে বললেন। ঘোষবাবু দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে বলল,প্রণাম আম্মাজী।
–বসুন। কি গল্প শোনাবেন শুরু করুণ।
নিত্যানন্দ ঘোষ মাথা নীচু করে বসে থাকে।
–কে আসামীর জামীন করিয়েছে?
–এস পি সাহেব বলল একা একা কিভাবে সেক্স করল?
–অন্য কেস দিতে পারতেন। কি নাম এস পির?
–আপনাকে আগেও বলেছি,খুশবন্ত কৌর।
–বিয়ে করেনি?ঠিক আছে যান। আনন্দ কোথায় গেছে জানেন?
–মনে হয় বাড়ী চলে গেছে।
–রাবিশ। মনে হয় কি?কনফার্ম খবর চাই। শুনুন সিকদার ওর বাসা চেনে ওর সঙ্গে কথা বলুন।
একটা নাগাদ খুশবন্ত ফিরে এল। ঘরে ঢুকে দেখল স্নান করে তার লুঙ্গি পরে ঘুমে অচেতন। সারা মুখে নির্মল প্রশান্তি জড়ানো। এমন ছেলে কিভাবে এরকম একটা নোংরা ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ল ভেবে অবাক হয়। হঠাৎ নজরে পড়ে লুঙ্গি সরে ল্যাওড়া বেরিয়ে আছে। খুশবন্তের মুখে হাসি ফোটে,এই জন্য ওর এত চাহিদা। লুঙ্গি টেনে ঢেকে দিয়ে ডাকল,রতি?
রত্নাকর চোখ মেলে তাকিয়ে খুশবন্তকে দেখে লাজুক হেসে বলল,ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
–আমি স্নান করে আসছি। খুশবন্ত বাথরুমে ঢুকে গেল।
রত্নাকর বুঝতে পারেনা কেন খুশিদি তাকে আটকে রেখেছে?এমনি নাকি কোন কারণ আছে? মোবাইল বেজে উঠল। সোসাইটি থেকে ফোন এসেছে। ছুটে বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে বলল,খুশিদি সোসাইটী থেকে ফোন করেছে।
–ধরবি না বাজুক। বাথরুম থেকে খুশবন্ত বলল।
রত্নাকরের মনে পড়ল শিবানন্দের কথা। তাকে একেবারে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর খোজ নেই। খশবন্ত বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল জানকি টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছে। দুজনে একসঙ্গে খেতে বসল। খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় দুজনে মুখোমুখি বসল। রতিকে অনেকদিন চেনে,সব কিছুর গভীরে যাবার প্রবণতা বরাবর। মেয়েদের প্রতি ছিল নিবিড় শ্রদ্ধাবোধ। সেই রতিকে এভাবে দেখবে কল্পনাও করতে পারেনি। হাজতে যখন মুখ গুজে বসেছিল তার চোখে জল এসে গেছিল। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করে,এবার সত্যি করে বলতো কিভাবে তুই এই চক্রে পড়লি?
রত্নাকর আদ্যোপ্যান্ত সমস্ত ঘটনা একের পর এক বলে গেল।
–তোকে কোনো প্রশ্ন করল না ব্লাড টেস্ট করল তখন কোনো সন্দেহ হল না?
–খুশিদি তুমি আম্মাজীকে দেখোনি,অদ্ভুত ক্ষমতা আমার সম্পর্কে সব গড়্গড় করে বলে দিল–।
–সে তো আমিও বলতে পারি।
–আহা তুমি আমাকে জানো তাই।
–আম্মাজি লোক দিয়ে খবর নিয়ে জানতে পারেনা?
–তাছাড়া আম্মাজীর–না না সে তোমাকে বলতে পারবো না,আমি কেমন সম্মোহিত হয়ে গেলাম,যা যা বলছিল করে গেলাম।
খুশবন্ত রতির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। রত্নাকরের অবাক লাগে জিজ্ঞেস করে,তুমি ভাবছো বানিয়ে বলছি?
–শোন রতি আমি একটা সাধুকে দেখেছিলাম,এক গেলাস দুধে পেনিস ডুবিয়ে দুধ টেনে গেলাস ফাকা করে দিল। আর এক বুজ্রুক আউরতের যোণী থেকে চন্দনের সুবাস বেরোচ্ছিল।
–তুমি বলছো বুজ্রুকি?
–সত্যি না নিথ্যে জানিনা?তোকে দিয়ে কাজ হাসিল করে নিল এটাই আসল সত্যি। তুই গ্রাজুয়েশন করেছিস?
–হ্যা।
–আর লেখালিখি?
–একটা উপন্যাস লিখেছি।
–কোথায় দেখি।
–আমি সঙ্গে নিয়ে ঘুরছি নাকি? সরদার পাড়ায় আছে যেখানে থাকি।
খুশবন্তের মন অতীতে হারিয়ে যায়। আসার দিন রতির সঙ্গে দেখা করতে গেছিল। ইচ্ছে ছিল রতিকে নিজের ঠিকানা দিয়ে যোগাযোগ রাখতে বলবে কিন্তু দেখা হয়নি। রতি বিশাল এক চক্রে জড়িয়ে পড়েছে সহজে ওরা ওকে ছেড়ে দেবেনা।
–তোকে একটা কথা বলব,রাখবি?
–তোমার কথা আমি শুনিনা বলো?
–ঠিক আছে। তুই তোর মালপত্তর সব এখানে নিয়ে আয়।
প্রস্তাবটা রত্নাকরের মনোপুত হয়না সে ঘুরিয়ে বলল,খুশদি আমি মাঝে মাঝে এসে তোমার সঙ্গে দেখা করবো?
খুশবন্ত বুঝতে পারে ওর আত্মসম্মানে লাগছে। কিন্তু একা ছাড়লে আবার ওদের খপ্পরে গিয়ে পড়বে। খুসবন্ত খাট থেকে নেমে দরজা বন্ধ করে দিল। রত্নাকর ঘাবড়ে যায়।
–আম্মাজীর কথা ভুলতে পারছিস না?ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল খুশবন্ত।
রত্নাকর মাথা নীচু করে বসে থাকে,কোনো উত্তর দেয়না।
–আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি। খুব নেশা ধরে গেছে তাই না?
–কিসের নেশা?
–জানিস না কিসের নেশা?মেয়েগুলো তোকে ফোন করে কেন?
–আমার কোনো নেশা নেই। যা করেছি টাকার জন্য। গোয়ারের মত বলল রত্নাকর।
আচমকা খুশবন্ত দ্রুত জামা খুলে বলল,ঠিক আছে আমিও টাকা দেবো। আয় আমাকেও খুশী কর।
রত্নাকরের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়তে থাকে। খুশবন্ত বলল,কিরে আয়।
রত্নাকর মাথা নীচু করে গাট হয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকে।
–কিরে আমি কি আম্মাজীর থেকে খারাপ?
রত্নাকর আড়চোখে তাকাতে চোখের দৃষ্টি যেন ঝলসে গেল।
খুশবন্ত বলল,ঠিক আছে আমি তাহলে সোসাইটীতে গিয়ে নাহয়–।
কথা শেষ হতে না-হতেই রত্নাকর খাট থেকে নেমে খুশিদির পা জড়িয়ে ধরে বলল,না না তুমি ওখানে যাবেনা,খুশিদি সোসাইটি নোংরা জায়গা তুমি যাবেনা।
–পা ছাড়–পা ছাড়। ন্যাকামো করতে হবেনা।
–না তুমি বলো তুমি ওখানে যাবে না।
–তোর কথা কেন শুনব তুই আমার কথা শুনিস?
–শুনব সব কথা শুনব। বলো তুমি ওখানে যাবেনা?
খুশবন্ত বুঝতে পারে কাজ হয়েছে। গলার স্বর বদলে বলল,আচ্ছা যাবো না। তুই আজই মালপত্তর নিয়ে চলে আয়। আমি তোর ভাল চাই।
–ঠিক আছে। তুমি কথা দিয়েছো ওখানে যাবেনা?রত্নাকরের মুখে এক চিলতে হাসি।
–তুইও কিন্তু কথা দিয়েছিস। খেলাপ করলে বুঝেছিস পুলিশকে ফাকি দেওয়া সহজ নয়।
দেখি তোর মোবাইলটা আমাকে দে। আসলে ফেরৎ দেবো।
খুশবন্ত তোয়ালে দিয়ে রতির চোখ মুছে দিল। রত্নাকর মনে মনে হাসে,খুশিদি ভেবেছে মোবাইল রাখলে আমি ফিরে আসবো। জানে না ঐ রকম আরেকটা মোবাইল সে আবার কিনতে পারে।
(চলবে)
0 Comments