অবদমিত মনের কথা – ৪৮ (কামদেব)

ঘরে এসে চেঞ্জ করল খুশবন্ত কৌর। ড্রয়ার টেনে বালাজোড়া রেখে খাতাটা নিয়ে বালিশে বুক দিয়ে পড়তে শুরু করল। পড়তে পড়তে পুরানো পাড়ার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অঞ্চলের বিখ্যাত ডাক্তার সমর মুখার্জির একমাত্র মেয়ে শুচিস্মিতা ওরফে সুচিকে ভালবাসে দেবাঞ্জন পাল। দেবাঞ্জন নিম্নবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ যুবক। সুচি কলেজ যায় আসে তার নজরে পড়ে দেব তাকে সর্বত্র ছায়ার মত অনুসরণ করছে। সুচি বাড়ীর ব্যালকনিতে দাড়ালে নজরে পড়ে দূরে দাঁড়িয়ে চাতকের মত তাকিয়ে আছে দেব। রাস্তায় ফুচকাওলাকে দাড় করিয়ে নীচে নেমে এল। আশা দেব হয়তো এই সুযোগে ফুচকা খাবার অজুহাতে তার পাশে এসে কিছু বলতে পারে। সুচীর ফুচকা খাওয়া শেষ হয় ঘাড় ঘুরিয়ে দেবের দিকে তাকাতে দেখল অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কি যেন দেখছে। সুচীর রাগ হয় দপদপিয়ে বাড়ীতে ঢূকে যায়।
একদিন কলেজ যাবার সময় একটা কাগজে বড় বড় করে লিখল “কিছু বলার থাকলে বলুন” তারপর ভাজ করে বইয়ের ভাজে রেখে কলেজ যাবার জন্য বের হল। লক্ষ্য করল পিছনে পিছনে আসছে দেব। একবার পিছন ফিরে তাকালো। নিরীহ মুখ করে অন্য দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করছিল কাছে গিয়ে আচ্ছা করে শুনিয়ে দেয়। কিছু যদি নাই বলবি পিছন পিছন ঘুরছিস কেন?কৌশলে বইয়ের ভিতর থেকে কাগজটা ফেলে দিল। কিছু পড়ে গেছে যেন বুঝতে পারেনি। কিছুটা যেতে দেব ছুটতে ছুটতে এসে সামনে দাড়ালো। সুচি বুঝতে পারে এতদিনে কাজ হয়েছে। সুচি অবাক হবার ভান করে জিজ্ঞেস করল,কিছু বলবেন?
দেব একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল,এটা পড়ে গেছিল।
–ওটা কি দেখেন নি?
–না ভাবলাম কোনো দরকারী কোনো কিছু হবে–তাই?
–আর কিছু বলবেন?
–না ঐটা দিতে এলাম।
সুচি কাগজটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে হন হন করে কলেজের দিকে হাটতে থাকে। চোখ ফেটে জল আসার জোগাড়। মাসের পর মাস গেল বছরের পর বছর। এক ঋতু যায় আর এক ঋতু আসে কিন্তু দেবের কোনো পরিবর্তন নেই। মেয়ে বড় হয়েছে ডা.মুখার্জি বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তারই এক বন্ধুর ছেলে,জয়ন্ত সবে ডাক্তারী পাস করেছে। ডা.মুখার্জি এফ আর সি এস করার জন্য তাকে বিলেত পাঠাবার দায়িত্ব নিলেন। জয়ন্ত সুচির নামে কার্ড ছাপা হল। পাড়ার ছেলে দেবও আমন্ত্রিত ছিল বিয়েতে। পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করছে। ঘোমটার ফাক দিয়ে লক্ষ্য করে বাথরুম যাবার প্যাসেজে দাঁড়িয়ে জুলজুল তাকিয়ে আছে। বিয়ে শেষ হতে বাথরুম যাবার নাম করে দেবের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল,এদিকে এসো।
আড়ালে নিয়ে সুচি জিজ্ঞেস করে,সত্যি করে বলতো কেন পিছন পিছন ঘুর ঘুর করো?
–আর করব না।
–তুমি কি আমায় ভালবাসো?
দেব মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। সুচি অবাক হয়ে বলল,তাহলে বলোনি কেন?না বললে কি করে বুঝব?
–না মানে–।
সুচির ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় বলল,না মানে কি?
–তোমরা কত বড়লোক তোমার বাবা কতবড় ডাক্তার আবার ব্রাহ্মণ।
–এত বোঝো তাহলে পিছন পিছন ঘুর ঘুর করছিলে কেন?
–তোমাকে একটু দেখব বলে।
হায় ভগবান,শুধু একটু দেখা আর কিছু নয়?জিজ্ঞেস করল,আমার বিয়ে হয়ে গেল। এখনো ভালবাসো?
দেব ম্লান হাসল। সুচি ব্যঙ্গ করে বলল,ভালোবাসা ভ্যানিস?
দেব বলল,”রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে। ”
ফুপিয়ে কেদে ফেলে শুচিস্মিতা তারপর দ্রুত বাথরুমে ঢুকে গেল।
চারশো পাতার উপন্যাসের এই সংক্ষিপ্তসার। পিকনিক পুজো অনেক কিছু আছে। খুশবন্ত লুঙ্গি দিয়ে চোখ মুছে হাসল। এই সুচিস্মিতাটা কে? ড.ব্যানার্জির মেয়ে সোমলতা নয়তো?
মনের মধ্যে কেমন একটা উশখুশ ভাব অনুভব করে। রতিকে আসতে বলেছিল এলনা কেন?রতির লেখার স্টাইলটা বেশ,শব্দ চয়ন উপমা অলঙ্কার সমৃদ্ধ। সন্ধ্যেবেলা একবার ভাবছে বেরোবে। পুজো এসে গেল,যদি কোনো পুজো সংখ্যায় লেখাটা প্রকাশ করা যায়। এটার ব্যবস্থা করে মহীয়সী আম্মাজীর একটা ব্যবস্থা করবে। শালি রেণ্ডি মাগী।
রত্নাকর একবার উকি দিয়েছিল,দরজা বন্ধ দেখে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। খুশবন্ত উকি দিয়ে দেখল ঘুমিয়ে পড়েছে রতি। পোশাক পরে বেরোবার জন্য তৈরী হয়। জানকি এসে জিজ্ঞেস করল,ম্যাডম খাবার করব?
–না এসে খাবো।
সীতারাম ঘোষ স্ট্রীটে সন্দীপন পত্রিকা দপ্তরে ব্যস্ত বাদলবাবু। এখনো কয়েকটা লেখা আসেনি। প্রথম প্রথম দপ্তরে এসে বসে থাকত একটু নাম হলেই টিকিটা পর্যন্ত দেখা যায়না। বিশেষ করে পুজো সংখ্যার লেখা জোগাড় করতে ঘাম ছুটে যায়। সম্পাদক মশাই ওকে করেই দায়িত্ব শেষ,হ্যাপা সামলাতে হয় ম্যানেজার বাদল বোসকে।
–বাদলদাদা কেমন আছেন?
বাদলবাবু চশমাটা নাকের ডগায় তুলে তাকিয়ে একগাল হেসে বললেন,আরে পথ ভুলে নাকি?
–কেন আসতে নেই নাকি?
লম্বা জিভ কেটে বাদলবাবু বললেন,আপনাদের আসায় বাধা দেবে কার সাধ্য?তবে কি না খাকি আর লেখালিখি–হে-হে-হে।
–খাকি বাদ দিয়ে গোয়েন্দা উপন্যাস হয় নাকি?
–কি ব্যাপার বলুন তো?আপনি আবার গোয়েন্দা উপন্যাস লিখছেন নাকি?
–না রোমান্স।
–বলেন কি?দাড়ান-দাড়ান একটু দম নিতে দিন। চা খাবেন তো?চেয়ার থেকে উঠে জানলা দিয়ে মুখ বের করে,এ্যাই কেষ্ট উপরে দু-কাপ চা পাঠা। নিজের জায়গায় এসে বললেন,হ্যা বলুন অনেকদিন পর কি মনে করে?
খুশবন্ত কৌর একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন,একটু পড়ে দেখবেন।
বাদল বাবু ফাইল খুলে দেখলেন মোটা করে লেখা-যে কথা হয়নি বলা/ রত্নাকর সোম।
বাদলবাবুর কপালে ভাজ পড়ে,নামটা কেমন চেনা মনে হচ্ছে।
–রত্নাকর সোম কে?
–আমার বিশেষ বন্ধু।
–হ্যা মনে পড়েছে। এর লেখা আমাদের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। হঠাৎ কোথায় ডুব দিলেন। আপনি যখন দিলেন নিশ্চয়ই দেখব।
কেষ্ট চা দিয়ে গেল। বাদলবাবু চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,দেখি সুকেশ আচার্য পাস করে দিলে শারদীয়াতেই বের করে দেবো। দরজায় দরজায় ঘোরা আর পোষায় না।
–সুকেশ আচারিয়া কে?
–উনি এবারের শারদীয়ার সম্পাদনার দায়িত্বে। শুনুন ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলি। লেখার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই,ভুল বুঝবেন না।
–বুঝেছি বিজ্ঞাপন তো?
–হা-হা-হা। ঘর কাপিয়ে হাসলেন বাদলবাবু। একেই বলে সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে।
–আমার দপ্তরে কটা ফর্ম পাঠিয়ে দেবেন।
–রত্নাকর ছেলেটার লেখার হাত ভাল। একটু বেশি সেণ্টমেণ্টাল। দেখা যাক এখন সম্পাদকের মর্জি।
–বাদলদা লেখাটার কোনো কপি নেই,একটু সাবধানে রাখবেন।
–কোনো চিন্তা করবেন না আপনার নম্বর আমার কাছে আছে। বাদলবাবু আশ্বস্থ করলেন।
খুশবন্ত কৌর নমস্কার করে পত্রিকা দপ্তর হতে নীচে নেমে এল। বাদলবাবু লোকটা মহা ধড়িবাজ। লেখা মনোনীত হলে তবে বিজ্ঞাপন। প্রেমচাদ বড়াল স্ট্রীটে একবার তার খপ্পরে পড়েছিল। বয়স্ক লোক বিয়ে-থা করেন নি আবার পত্রিকার সঙ্গে আছেন জেনে ছেড়ে দিয়েছিল।
হাতের কাজ রেখে বাদলবাবু লেখাটায় চোখ বোলাতে লাগলেন। লেখার স্টাইল খারাপ নয়। সুকেশবাবু লোকটা পাগলাটে ধরণের কখন কি মর্জি হয়,টাকা পয়সা যোগাড় করা লেখা সময়মত ছাপা–সব বাদলবাবুকে করতে হয়। ওর বাবাও একসময় সচিব পদে ছিলেন শুনেছেন। শিখ হলেও বাংলা বলা শুধু নয় পড়তেও পারে। সাহিত্যের নিরাপত্তার স্বার্থে এদের সাহায্যও দরকার বাদলবাবু জানেন। হাড়কাটায় পারুলের ঘরে একবার এর খপ্পরে পড়েছিল,হাজতে ভরে দিলে লজ্জায় পড়তে হত। পরিচয় পেয়ে ভদ্রমহিলা সেদিন ছেড়ে দিয়েছিলেন।
ঘুম থেকে উঠে রত্নাকর খুশীদিকে দেখতে না পেয়ে জানকিমাসীর কাছে খোজ নিয়ে জানতে পারে বেরিয়েছে। একবার বলল বেরোবে না আবার বেরিয়ে গেল?
–সংসার না থাকলে ঘরে মন টেকেনা। জানকি মাসীর সহজ সমাধান।
জানকিমাসীর কথায় গুরুত্ব না দিলেও রত্নাকরের মনে হয় খুশীদি একটু চাপা স্বভাবের। মনের মধ্যে ভাঙচুর চললেও বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। সব সময় হাসিখুশী। খুশী নামটা সার্থক। ভীষণ জিদ্দি বরাবর,বাবার আপত্তি সত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল। হঠাৎ বাংলা শেখার ঝোক চাপতেই সেই বাংলা শিখে ছাড়ল। রত্নাকরের মানূষের ভিতরটা সম্পর্কে বেশি আগ্রহ কিন্তু খুশীদিকে আজও ভাল করে চিনতে পারল না।
আজ একটা ফয়শলা করতে হবে। এখানে কতদিন থাকবে আর কেনই বা থাকবে,আম্মাজীর ওখানে যাবেনা তাহলে কি চিরজীবন খুশীদির অনুগ্রহের পাত্র হিসেবে থাকতে হবে?খুশীদির বিয়ে হলে সব কিছু খুশীদির মর্জি মত হবেনা। খুসীদির স্বামী তাকে পছন্দ নাও করতে পারে। সময় থাকতে থাকতে আত্মসম্মান বাচিয়ে এখান থেকে সরে পড়াই ভাল। খুশীদি উপন্যাসটা পড়তে নিয়েছে,পড়েছে কিনা জানা হয়নি। দেখা হলে জিজ্ঞেস করবে কেমন লাগল?একজন মহিলার মতামত এক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ।
সন্ধ্যে হয়ে এসেছে এবার বাসায় ফেরা যাক। খুশবন্তের ভাল লেগেছে গল্পটা কিন্তু সব সময় গল্প বিবেচিত হয়না গল্পকারকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছে দেরীতে হলেও প্রতিভা একদিন তার স্বীকৃতি আদায় করে নেবে।
বাংলোর সামনে গাড়ী থামতেই জানকি গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে দিল। তরকারি হয়ে গেছে পুর ভরে লেচি করে রেখেছে ম্যাডম এলেই ভাজতে শুরু করবে।
খুশবন্ত ঘরে ঢুকে চেঞ্জ করল। লুঙ্গির উপর পাতলা কুর্তা। দরজায় রতিকে দেখে ডাকল, ভিতরে আয়।
রত্নাকর বিছানার একপাশে বসে ভাবে কিভাবে কথাটা শুরু করবে?খুশবন্ত বলল, শোন রতি তোকে একটা কথা স্পষ্ট বলে দিতে চাই,মন দিয়ে শোন।
ভালই হল খুশীদিই শুরু করেছে। রতি মাথা নীচু করে শুনতে থাকে। খুশবন্ত বলল, এখানে থাকতে হলে শুয়ে বসে কাটালে চলবে না। তোকে কাজ করতে হবে।
–কি কাজ বলো?
–জানকি কাজ করছে আমি করছি। চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা করছি,তুই বসে বসে লিখবি।
–আমি বিছানায় বসে লিখতে পারি।
–কিভাবে লিখবি তোর ব্যাপার তবে লিখতে হবে। বছরে অন্তত দুটো বড় লেখা চাই। হাসছিস কেন? আমি কি তোর সঙ্গে মজা করছি?
–মজা করছো না কিন্তু মজার কথা বলছো।
জানকি দু-প্লেট কচুরি নিয়ে ঢুকল। খুশবন্ত একটা প্লেট নিয়ে কচুরি খেতে লাগল।
–জানকি দারুন করেছে তাই না?খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল।
রত্নাকর জবাব দিল না। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল,মজার কথা কি বললাম শুনি?
–শোনো খুশীদি ফরমাস করে তুমি জানকিমাসীকে দিয়ে ভাল কচুরি করাতে পারো কিন্তু সাহিত্য হয়না।
–তাহলে কিভাবে হয় শুনি?
–লেখা ব্যাপারটা মুডের ব্যাপার।
–হ্যা তুই টো-টো করে ঘুরে বেড়াবি আর যখন মুড আসবে লিখবি?এসব ফাকিবাজি চলবে না। তুই প্রতিদিন অন্তত পনেরো–না দশ পৃষ্ঠা করে লিখবি। যা মনে আসে খালি লিখে যাবি, পছন্দ নাহলে ছিড়ে ফেলবি।
–এটা মন্দ নয়। কিন্তু এতো আমার কাজ তোমার কাজ কি বললে নাতো?
–খুব তোমার-আমার শিখে গেছিস?তুই তো এরকম ছিলি না। আমি তোদের সবার জন্য কাজ করছি জানকি আমাদের সবার জন্য কাজ করছে। কাজ হচ্ছে কাজ, আমার-তোমার কিরে?
–এবার আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
–ক্ষেপিয়ে দেবার মত কিছু বললে ভাল হবে না কিন্তু–।
রত্নাকর এবার খুশীদির গলায় মেয়েলি সুর শুনতে পেল। মেয়েলিপনাকে সব সময় চেপে রাখার চেষ্টা করে। রত্নাকর জিজ্ঞেস করল,তুমি লেখাটা নিলে পড়েছো?
জানকি চা দিয়ে গেল। খুশীদি চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে,শোন রতি সত্যি করে বলবি। ঐ যে সঞ্চিতা মেয়েটা কে?
–শুচিস্মিতা।
–হ্যা সুচি। ওকি ডাক্তারবাবুর মেয়ে?
–ওর বাবা ডাক্তার।
–কথা ঘোরাবি না। কি যেন নাম?সোমলতা হ্যা সোমলতাই কি সুচি?
–এরপর জিজ্ঞেস করবে দেবাঞ্জন আমি কিনা?
–তুই আমাকে বলেছিলি জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে লেখকের লেখায় পারিপার্শ্বিক এসে যাবেই।
–খুশীদি আশপাশের চরিত্র লেখার মধ্যে আসে। একজনের মধ্যে একাধিক চরিত্রের মিশ্রণ থাকতে পারে। আবার ব্যক্তি না এসে ভাবও আসতে পারে। যেমন দেবাঞ্জন আভিজাত্যের বেড়া পেরিয়ে মুখ ফুটে মনের কথা বলতে পারেনি। এর বিপরীতও হতে পারত। তোমাকে আজ একটা সত্যি কথা বলছি,সবাই সোমলতাকে জড়িয়ে আমাকে ঠাট্টা করত সেজন্য আমার মনে হয়তো দুর্বলতা জন্মে থাকতে পারে তার মানে এই নয় আমি সোমলতাকে ভালবাসি। বিজ্ঞান বলছে পদার্থের যা শক্তি আছে তার সামান্য অংশ আমরা দেখতে পাই তেমনি মানুষকে আমরা যেভাবে দেখি তারও বাইরে আছে অন্য মানুষ। কখনো কোনো কারণে সেদিকটা প্রকট হয় আবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেদিকটা উন্মোচিত নাও হতে পারে।
খুশবন্ত সব কথা না বুঝলেও রতির কথা শুনতে ভাল লাগে। রতির মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,তুই কি সত্যিই কাউকে ভালবাসিস নি?
–আগেই বলেছি নিজের মন ঠিক কি চায় মানুষ সব সময় বুঝতে পারেনা। ইচ্ছে কারো মনে নানা কারণে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে তখন সেই ইচ্ছেকে সনাক্ত করা যায়না। সাধারণভাবে আমার মনে হয় বেলাবৌদি মনীষাবৌদি পারমিতা তুমি–সবাইকে আমি ভালবাসি। কিন্তু সব ভালবাসাকে যদি এক পংক্তিতে ফেলে বিচার করি তা ভুল হবে। ভালবাসার নানা চরিত্র আছে–প্রেম প্রীতি শ্রদ্ধা স্নেহ বাৎসল্য ইত্যাদি।
–তোর কথা শুনতে শুনতে মাথা ধরে গেল। রাত হয়েছে ওঠ। আর মনে রাখবি রোজ দশ পৃষ্ঠা–। সবাই আমাকে বলে হারামী অফিসার।

(চলবে)

Post a Comment

0 Comments