জীবনের সুখের জন্য - পর্ব ৮৩ (Jiboner Sukher Jonno - Part 83)

গাড়ি আবার চালু হোল। এইবার নিকিতা আর বিদিশা সামনের দুটো সিটে বসল আমি আর চিত্ত পিছনে। এখনো প্রায় তিন ঘণ্টা যেতে হবে। একটু ঘুম দিলে কেমন হয়? আমি বডিটা স্ট্রেচ করে পিছনের সিটে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করলাম।
বিদিশা আর নিকিতা জানলা দিয়ে বাইরে দেখতে দেখতে আর নিজেদের মধ্যে গল্প করতে থাকলো। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না, চোখ খুলে দেখলাম আমরা প্রায় পুরীর কাছাকাছি এসে গেছি। আমি বাইরে দেখে ড্রাইভারকে বললাম, ‘হ্যালো ভাইসাব, মেফেয়ার হোটেল মে লে জানা। মালুম হ্যাঁয় না?’
ড্রাইভার উত্তর দিলো, ‘জী সাব মালুম হ্যাঁয় আর পাতা ভি হ্যাঁয় আপলোগ ওহি জায়েঙ্গে।‘
কিছুটা চলার পর হোটেল এসে গেল। পেল্লায় হোটেল। বিরাট বড়। নিকিতা আর বিদিশা উচ্ছ্বসিত হোটেল দেখে।
বিদিশা বলে উঠলো, ‘উড়ে ব্বাস কি বিরাট হোটেল গো গৌতম। ওই দ্যাখ নিকি সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। খুব ভালো লাগছে।‘
গাড়িটা হোটেলের প্রবেশ দ্বারে এসে থামল। বেয়ারা গাড়ীর দরজা খুলে স্যালুট মেরে দাঁড়ালো। আমরা একে একে নেমে এলাম। সবশেষে চিত্ত। ও মাথা উঁচু করে চারিদিক দেখছে। দেখে তারপর মন্তব্য করলো, ‘ওই হোটেলটার থেকে অনেক ভালো এটা।‘
বেয়ারা আরেকজনকে ডেকে আমাদের মালপত্তর উঠিয়ে নিয়ে গেল রিশেপশনে। সেখানেও একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। চোস্ত ইংরাজিতে বলল, ‘welcome to our hotel sir. Your room is already booked and we hope you will like the room.’
আমি জবাব দিলাম, ‘oh thanks madam for taking the pain. This is our first visit to this hotel and I hope we will enjoy our stay at your hotel.’
মেয়েটা জবাব দিলো, ‘thank you sir. Your room is booked for one day sir. Will you like to overstay?’
আমি উত্তর করলাম, ‘not yet decided. I will tell you later. Now if you permit can we go?’
মেয়েটা আবার উত্তর দিল, ‘oh certainly sir. Sorry for keeping you stuck. And sir let me inform you the breakfast is complimentary. You can have it at your room or at the dining hall.’
আমরা ‘thank you’ বলে চলে এলাম বেয়ারগুলোর সাথে যারা মাদের মাল নিয়ে এসেছিলো। ঘরে ঢুকতেই হোটেলের ক্লাস চোখে পড়লো। নিখুঁত চেষ্টায় সাজানো হয়েছে রুমটা। যেখানে ঠিক জেতি থাকার দরকার সেখানেই আছে সব। বেয়ারগুলোকে টিপস দিতেই ওরা সালাম করে চলে গেল আমাদের একা ছেড়ে। দরজা বন্ধ করে ভিতরে এসে দেখলাম ওরা সব বারান্দায়।
বিদিশা আমাকে ডাকছে, ‘গৌতম শিগগির এসো। ওয়াও, কি সুন্দর।‘ বিদিশা হাততালি দিয়ে উঠলো।
আমি জানি ওরা কেন ডাকছে আমাকে। বারান্দা দিয়ে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে সেটাই দেখাবার জন্য আমাকে ডেকেছে। আমি ধীর পায়ে ওদের দিকে এগিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। সমুদ্র দেখা যাবে জানা থাকলেও এতো সুন্দর লাগবে এটা ভাবা ছিল না। বারান্দায় আসতেই সমুদ্রের গর্জন ভেসে এলো কানে। দেখলাম বিশাল ঢেউ সমুদ্রের তীরে এসে কেমন ভাবে ভেঙে পড়ছে। দেখলাম দূর থেকে সমুদ্রের জল কেমন ফুলে ফেঁপে উঠছে, তারপর ঢেউয়ের আকার ধারন করে এগিয়ে আসছে তীরের দিকে। দেখলাম কতজন এই বিকেলে সমুদ্রে স্নান করছে। মুগ্ধ করে দেবার মতো দৃশ্য।
আমি বললাম, আমরা দেরি করছি কেন? কেন আমরা দৌড়ে নিচে যাচ্ছি না আর সমুদ্রের কাছে গিয়ে ওর শোভা দেখছি না।‘
আগুনে যেন ঘি পড়লো। নিকিতা আর বিদিশা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে জামা কাপড় খুলে প্যান্টি আর ব্রা পড়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে লাগলো। দুজনে দুটো শর্ট আর টপ পড়ে নিলো। আমিও প্যান্ট আর জামা ছেড়ে শর্ট আর টি শার্ট পড়ে নিলাম। চিত্ত ওর জামা কাপড় ছেড়ে তৈরি হয়ে নিলো। আমরা হুড়মুড় করে দরজা বন্ধ করে নিচে নেমে দৌড় লাগালাম সমুদ্রের দিকে। বালিতে পা দিয়ে শান্ত হলাম।
বালিতে পা দিয়েই আমরা চটি খুলে নিলাম হাতে। খালি পা বালির উপর পরতেই কেমন একটা ঠাণ্ডা ভাব সারা শরীর দিয়ে বয়ে গেল। বিকেলের বালই কিছুটা আগে গরম ছিল ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হতে শুরু করেছে। বিদিশা আর নিকিতা আমার আর চিত্তর সামনে হেঁটে যাচ্ছে। ওদের সুডৌল গোল পাছা হাঁটার তালে তালে উঠছে নামছে। খুব ভালো লাগছে ওদেরকে ওই ভাবে। যেন দুজন মোহময়ী হেঁটে চলছে সামনে।
এদিক ওদিক দুচারজন প্রেমিক প্রেমিকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে গল্প করছে। দুজন বিদেশিনীকে দেখলাম ব্রা আর প্যান্টি পড়ে বসে থাকতে। অবাক হলাম পুরীর মতো জায়গায় এটা কি করে সম্ভব? এটাও ভাবলাম এই দুজন যেকোনো মুহূর্তে রেপ হতে পারে আরেক্তু অন্ধকার হলে। আমি একটু ভালো করে দেখে এগিয়ে চললাম আমার দুই প্রেরনার দিকে যারা পাছায় সমুদ্রের ঢেউ খেলিয়ে আগে আগে চলেছে।
ওরা সমুদ্রের কাছে যেতেই চিত্ত এক ছুটে ওদের কাছে গিয়ে পৌঁছুল। চিত্তকে বিশ্বাস নেই, এই ভোর সন্ধ্যেতে হয়তো সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে দিলো। এমনিতে ভয় নেই, গ্রামের ছেলে। কিন্তু হঠাৎ নতুন জলে জ্বর হয়ে যেতে পারে। তখন এক নতুন বিপত্তি।
আমি পিছন থেকে চেঁচিয়ে বললাম, ‘তোমরা কেউ কিন্তু জলে নেবো না। সন্ধ্যে বেলা, জ্বর হতে পারে।‘
ওরা কেবার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে আরও এগিয়ে গেল। পায়ের পাতা সমুদ্রের জলে ডুবে গেছে ওদের। আরও এগোল। এখন সমুদ্র ওদের হাঁটুর কাছে। ঢেউগুলো ওদের হাঁটুর কাছে এসে ভেঙে যাচ্ছে আর ওরা খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। ওদের কাছে এটা মজার। ছিল একসময় আমার কাছেও। কিন্তু খুব বেশি সমুদ্র দেখায়, গোয়া, কেরালা। গনপতিফুলে আমার কাছে ওতটা আর আকর্ষণীয় নয়।
হঠাৎ একটা বিশাল ঢেউ আসতে দেখলাম। বেশ দূর থেকে ফুলে ধেয়ে আসছে বিদিশাদের দিকে। ওরা দেখছে বটে কিন্তু জানে না এটা কি বিপত্তি করতে পারে ওদের। আমি চেঁচিয়ে সাবধান করার আগেই ঢেউ এসে গেল ওদের কাছে।
ওরা বিপদ বোঝার আগেই ওদের মাথার উপর দিয়ে চলে গেল ঢেউ। বিশাল ফেনার মতো জলরাশিতে ওরা হারিয়ে গেল। একটা চিৎকার শুনেছি। কিন্তু ওটা নিকিতা না বিদিশা বুঝলাম না। আমি দৌড় লাগালাম ওদের দিকে। ঢেউ পার হয়ে যাবার পর ওদের দেখতে পেলাম। খকখক করে কাশতে কাশতে উঠে দাঁড়াচ্ছে ওরা। ভিজে একশা। শর্ট আর টপ চেপে বসেছে গায়ে। ব্রা আর প্যান্টির আভা দেখা যাচ্ছে।
আমি ওদের কাছে দাঁড়ালাম আর বললাম, ‘হোল তো। জানো না যখন তখন অত দূরে গিয়েছিলে কেন? বললাম গা ভিজিয়ো না। সেই ভিজল।‘
বিদিশা তখনো কাশতে কাশতে বলল, ‘খুব অসভ্য ঢেউ। কিভাবে চান করিয়ে দিল দ্যাখো। ছিঃ।‘
আমি হেসে বললাম, ‘আর ছিঃ বলে কি হবে। যা হবার হয়ে গেছে। এসো বেড়িয়ে এসো ওখান থেকে। তাছাড়া তোমাদের অনেকক্ষণ ধরে দেখছিল ঢেউগুলো। দুটো সুন্দরীর মাই আর পোঁদের স্পর্শ পেতে তো ওদেরও ইচ্ছে করে।‘
নিকিতা জল থেকে বেড়িয়ে আসতে আসতে বলল, ‘তাই না? খুব মজা পেলে তুমি আমরা ভিজলাম বলে?’
আমি হাসলাম আর বললাম, ‘পেলাম তো বটেই। ভিজলে বলেই তো এখন তোমাদের উত্তঙ্গ মাই আর ভরাট পাছা দেখতে পারছি।‘
নিকিতা জলের একধারে দাঁড়িয়ে আমাকে জিভ কেটে বলল, ‘হ্যাঁ মনের সুখে তাই দেখ।‘
ওরা সব মিলে দূর থেকে সমুদ্রের শোভা নিতে থাকলো। আমি পকেট থেকে মোবাইল বেড় করে মিতাকে ফোন করলাম। রিং বাজার মিতা তুলল ফোন, জিজ্ঞেস করলো, ‘পুরী পৌঁছে গেছ?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, কিছুক্ষণ আগে পৌছুলাম। রুম থেকে এখন বিচে ঘুরছি। ভালো লাগছে সমুদ্র।‘
মিতা শুধু বলল, ‘তাই? ভালো।‘
ওর গলার স্বর শুনে আমার কেমন যেন মনে হোল। যে উচ্ছ্বাসে ও আমাকে পুরী এসে হোটেলের খোঁজ নিতে বলেছিল এখন সেই উচ্ছ্বাস গলায় পেলাম না। কেমন যেন ভারি আর ক্লান্ত।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘মিতা তোমার কি শরীর খারাপ?’
মিতা জবাব দিলো, ‘ঠিক বুঝছি না জানো। কাল রাত থেকে খাওয়ার ইচ্ছে চলে গেছে। কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। মাথাটা ঘুরছে কেমন জানি। দাঁড়ালেই মনে হচ্ছে পড়ে যাবো।‘
আমি খুব একটা গুরুত্ব দিলাম না। বললাম, ‘কাল রাতে খাও নি। পেতে গ্যাস হয়েছে। পায়খানায় গেছিলে।‘
মিতা বলল, ‘গেছিলাম। কিন্তু ক্লিয়ার হয় নি।‘
আমি বললাম, ‘আমি তো পরশু ফিরছি। আজ রাতে তুমি একটা পারগেটিভ নিয়ে নাও। কাল সকালে পেট পরিস্কার হয়ে যাবে। আছে তো ঘরে?’
ও বলল, ‘আছে মনে হয়। একবার আনিয়েছিলে তো। খুঁজে দেখতে হবে।‘
আমি উত্তর করলাম, ‘দ্যাখো একটু খুঁজে। আর পেলে এক্সপায়ারি ডেট দেখে নিও। আমার মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে।‘
মিতা কথা শেষ করলো, ‘ভালো থেকো আর আমার জন্যও চিন্তা করো না। আমি ঠিক ভালো থাকবো।‘
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিতা ফোন বন্ধ করে দিলো। আমি অবশ্য একটু নিশ্চিন্ত থাকলাম কারন মিতার শরীরে কোন গণ্ডগোল হলে ও একটু বেশি বিচলিত হয়ে পড়ে। তারপর আমার কথা মতো ওষুধ খেয়ে আবার ঠিক হয়ে যায়। মিতার এটাই একটা বড় বদ অভ্যাস। একবার ওর শরীর খারাপ হয়েছিলো। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরচ্ছিল না। আমি তখন ট্যুরে ছিলাম। ওর দিদিকে বলেছিলাম মিতাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে। পড়ে ওর দিদি ফোন করে বলেছিল যে মিতা নাকি ডাক্তারের কাছে যাবে না আমাকে ছাড়া। আমার তখন খুব রাগ হয়েছিলো। মেয়েটা কি একটুও বোঝে না কোন পরিস্থিতির গুরুত্ব কতোটা হতে পারে। আমি ছাড়া ডাক্তারের কাছে যাবে না এটা আবার কোন কথা হোল। আমি ওর সাথে এরপরে আর কোন কথা বলিনি।
(চলবে)

Post a Comment

0 Comments