শুক্রবার দুপুরে দুটো মাইক্রোবাস করে বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হল। আধা ঘন্টার মধ্যেই বিয়েবাড়িতে পৌঁছে গেলাম। প্রথমেই চাচার শালীরা গেট ধরল। ডজনখানেক উঠতি বয়সী মেয়ে কতগুলো পোলাপান সঙ্গে নিয়ে জামাইয়ের কাছ থেকে কত আদায় করা যায় সেই চেষ্টা করছে। ঝকঝক দাঁত বের করে খিলখিলিয়ে হাসছে আর আমাদের ছেলেদের সঙ্গে তর্ক করছে। আমি পেছনে দাঁড়িয়ে মজা করে তা দেখছি। মিনিট দশেক দর কষাকষির পর ভেতরে ঢোকা গেল। বরযাত্রী হিসেবে আসা পাড়া-প্রতিবেশীরা হুড়মুড় করে খেতে বসে পড়ল। আমরা কয়েকজন চাচার সঙ্গে স্টেজে গিয়ে বসলাম। সোহেল ভাই খুব হাসাচ্ছেন সবাইকে। গেট ধরা মেয়েগুলোও এখানে আছে। হলদে শাড়ী পড়া কিশোরি সোহেল ভাইয়ের কৌতুক শুনতে শুনতে তার উপর গড়িয়ে পড়ছিল। কয়েকবার এমন হবার পর উনি মেয়েটিকে নিজের দিকে টেনে নিলেন।
- বিয়াইন আপনে তো পইড়া যাইতাছেন, আমার কোলে আইসা বসেন!
- ইহ! শখ কত..
হাত মুচড়ে খিকখিকিয়ে হেসে মেয়েটি বলল।
- পাঁচ হাজার খাইছ, বিয়াইয়ের কোলে তো অন্তত বসাই লাগে, হুঁ?
জবাবের অপেক্ষা না করেই উরুর উপর থেকে পাঞ্জাবি সরিয়ে সেখানে বসিয়ে দিলেন। মেকআপ মাখা গাল লজ্জায় একটু লাল হল, তবে কোন প্রতিবাদ করলনা। আমরা চার পাঁচজন ছিলাম। সবাই বিয়াইনদের সঙ্গে কম বেশি হাতাহাতি করলাম। তবে সোহেল ভাই সব সময়ই এক কাঠি বাড়া। মুরুব্বিরা ঘচঘচিয়ে পান খেতে খেতে জামাইয়ের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে যাচ্ছে। এর মধ্যেই উনি মেয়েদের ব্লাউজের উপর থেকে শাড়ীর আঁচল ফেলে এখানে ওখানে হাত দিচ্ছেন। মেয়েগুলো অশ্লীল রসিকতায় এতটাই মজা পাচ্ছে, এসব দিকে তেমন নজর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছেনা।
বিকেলে কাজী এলে ভেতরের ঘরে কনের কাছে গেলাম। বাঙালি মেয়েদের বিয়ের দিন দেখে চিনতে পারা অসম্ভব। কালো সাদা নেই, সবাইকে ময়দায় মুড়িয়ে পেত্মীর রুপ না দিলে যেন চলেই না। কাজী বিয়ে পড়াচ্ছে , লোকজন ওখানে দাঁড়িয়েই মেয়ে সুন্দরী কিনা, চরিত্র কেমন এসব হাবিজাবি ফিসফাস করছে।
- মাম্মা, কাকায় আজকে খাইব রেহ... ইশহ!
খোকন আমার কানের কাছে চাপা আফসোস নিয়ে বলে উঠল। বারো থেকে বাষট্টি, সবার চোখেই যেন খোকনের মুখের ভাষা চকচক করছে বলে খেয়াল করলাম। রাতে এদের কারো ঘুম হবেনা। কল্পনায় আরেক জনের নতুন বউ নিয়ে নানা কায়দায় খেলে শুধু অস্থিরতা বাড়বে।
- বৌ নাকি আসলেই সুপার সেক্সি!
বাড়ি থেকে বেরিয়ে বললেন সোহেল ভাই।
- এলাকার পোলাপান বলতেছে। ফ্রেন্ডের আমার চয়েজ ভাল।
আমি একটু হাসলাম।
- রবিন, আমার একটা ইচ্ছা ছিল, বুঝলা? নিউলি ম্যারেড বৌকে জামাইয়ের আগে লাগাবো।
- হেহে, টাফ উইশ। পূরণ হইছে কখনো?
- হুঁ, একবার। কিন্তু... জামাইটা আমিই ছিলাম!
উঠোনের এক ধার ধরে হাঁটতে হাঁটতে হাসছি দুজনে।
- হু। নতুন বৌ খালি নিজের টাই পাওয়া যায় মনে হচ্ছে।
মুখ শুকনো করার ভান করে বললাম।
- বিয়েবাড়ির বৌ নিয়ে বিছানায় যাওয়া না গেলেও বিয়েবাড়ির মেয়ে নিয়ে খেলতে তো বাধা নাই, কি বলো?
সেই রহস্যময় চোখ টিপুনি দিয়ে আমার দিকে তাকালেন। উনার ইশারা লক্ষ্য করে দেখলাম গেট ধরা চার পাঁচটা মেয়ে আমাদের আশেপাশেই ঘোরাঘোরি করছে। অচেনা জায়গায় এসে মাথায় মাল উঠিয়ে ফেললে শেষে কোন বিপদ হয় ঠিক নেই। ভাইকে নিরস্ত করার চেষ্টা করলাম। তবে তার দৃঢ়তায় ভাটা পড়ল না।
- ভাই, এগুলারে ঐ টাইপের মনে হইতেছেনা। কেমন শাই শাই। বয়সও বেশী না।
- চিন্তা কইরোনা তো। আমার এক্সপেরিয়েন্স আছে। ঐ টাইপের দুই একটার সাথে এগুলারেও কারেন্ট জালে আটকানো যাবে। তুমি খালি সাথে থাইকো।
0 Comments