বজ্রাঘাত পর্বঃ ৩৭ (collected)

কাজল থাকতেই তাড়াতাড়ি করে স্নান সেরে নিয়েছিল পৃথা, অর্নব আজকে আর ঠান্ডা জলে স্নান করতে দেয়নি ওকে, বারবার করে গিজারের জলে স্নান করতে বলে দিয়েছিল, করেও ছিল ও, অন্যথা করেনি অর্নবের কথার, শুনেছিল... আর শুনবে নাই বা কেন... আজ সকালটা যে বড়ই মধুর করে শুরু হয়েছে তার... ঘুম ভেঙেছে নববধূর মত সারা শরীরে আদর মেখে...

কাজল বেরিয়ে যেতেই আর সময় নষ্ট করে নি পৃথা, তৈরী হতে থেকেছে অফিস যাবার জন্য... আয়নার সামনে দাড়িয়ে তম্বী দেহের ওপরে শাড়ীর প্লিটটাকে ঠিক করতে অর্নবের উদ্দেশ্যে মুখ না তুলেই বলে ওঠে, ‘এই, আমার ফোনটা একটু অন করে দাও না গো... সেই কাল আসার সময় বন্ধ করে দিয়েছিলাম, তারপর ভুলেই গিয়েছি অন করতে, চার্জেও বসাই নি, কে জানে চার্জ আছে কি না...’

অর্নব এক মনে চুপ করে বিছানায় বসে পৃথার শাড়ী পরা দেখছিল... সুঠাম শরীরটায় কি অদ্ভুত ভাবে পেঁচিয়ে ধরেছে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ীটা... ফর্সা দেহে গাঢ় সবুজ রঙটা খুব ভালো মানিয়েছে... তারিয়ে তারিয়ে পৃথার তারুণ্যে ভরা শরীরটাকে চোখ দিয়ে উপভোগ করছিল অর্নব... মনে পড়ে যাচ্ছিল এই কিছু ঘন্টা আগেও ওই নরম শরীরটাকে নিজের দেহের নীচে নিয়ে নিষ্পেশিত করেছে মনের সুখে... শাড়ী পরার সময় পৃথা কখনো পাশের দিকে ফিরে দাঁড়াচ্ছে, আবার কখনও পেছন ফিরে, অথবা সাজের প্রয়োজনে তারই সামনে... তাই বিছানায় বসেই সে পৃথার দেহের প্রতিটা ভঙ্গিমার রূপ মনের ফ্রেমে আটকিয়ে নিচ্ছিল অপলক চোখে...

হিলহিলে চেহারাটাকে শাড়ীটা সাপের মত পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে যেন... আর ওই ভাবে টাইট করে শাড়ী পরার কারণে শাড়ীর ওপর দিয়েই দেহের প্রতিটা চড়াই উৎরাই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে... কল্পনার কোন অবকাশই রাখে নি কোথাও... স্ফিত উত্তল নিতম্ব, সঠিক পরিমাপের বুক, আর সেই সাথে গাঢ় রঙের সাথে ফর্সা চামড়ার অদ্ভুত কন্ট্রাস্ট... চোখ সরানোই যেন সম্ভব নয় এই দেহের ওপর থেকে... শাড়ীর কুঁচিটা নাভীর ঠিক নীচে, দুই পাশ থেকে শাড়ীর পাড়টা একটু তেরচা হয়ে কোনাকুনি হারিয়ে গিয়েছে সেই গভীর নাভীর তলা দিয়ে, শাড়ীর কুঁচির মধ্যে... প্লিট করে রাখা আঁচলের তলা থেকে উঁকি দিচ্ছে ব্লাউজের মধ্যে আবধ্য সুগোল একটা স্তনের পার্শদিক... ব্লাউজটার পীঠের দিকে খুব বেশী কাটা না হলেও, পীঠের তিলটা এমন জায়গায় পড়েছে, যে ওটার ফলে যেন আরো বেশি করে লোভনীয় হয়ে উঠেছে ফর্সা মসৃণ গোটা পীঠটাই...

‘কোই... মোবাইলটা অন করলে? নাকি হাঁ করে আমাকেই শুধু গিলে যাবে?’ ট্যারা চোখে অর্নব যেখানটায় বসে থাকতে পারে, সেই দিকটার দিকে আন্দাজ করে তাকিয়ে বলে পৃথা...

‘অ্যা... হ্যা... এই তো... দিচ্ছি অন করে...’ পৃথার তাড়া খেয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানার থেকে নেমে দাঁড়ায় অর্নব... ‘কোথায় রেখেছ তোমার মোবাইলটা?’ প্রশ্ন করে সে...

শাড়ীর আঁচলটাকে কোমর থেকে পেঁচিয়ে ঘুরিয়ে গুঁজে দেয় কোমরের মধ্যে... আয়নায় শেষ বারের মত ভালো করে নিজের সাজটা দেখে নিতে নিতে বলে, ‘দেখই না... মনে হয় ব্যাগের মধ্যেই রয়েছে, কালকে তো আর ফেরার পরে বেরও করি নি...’

‘তোমার ব্যাগের মধ্যে?... হাত দেবো?’ ইতস্থত করে অর্নব।

কথাটা শুনে মুখ তোলে পৃথা... বক্র ভুরুতে কপট রাগ ফুটিয়ে বলে ওঠে, ‘বাব্বা, আমার ব্যাগে হাত দেবে, তাতেও বাবুর এত কুন্ঠা... অন্য কোন পেত্নীর ব্যাগ বললে এক্ষুনি ছুটে গিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিতো...’

কাঁচুমাচু মুখ করে জবাব দেয় অর্নব, ‘মেয়েদের ব্যাগ বলেই ইতস্থত করছিলাম... এখানে অন্যের ব্যাগের কথা কোথা থেকে এলো?’

‘জানি জানি... সুযোগ পেলেই আর একটা পেত্নীকে চাইবে তখন... চিনি না আবার?’ ছদ্ম রাগ সরায় না মুখ থেকে পৃথা... মজা লাগে অর্নবের পেছনে লাগতে...

‘মোটেই না... আমাকে কি সেই রকম মনে হয় নাকি তোমার?’ অর্নবের গলার স্বরটা ভেসে আসে ড্রইংরুমের থেকে...

সেটা শুনে গলা তুলে পৃথা বলে ওঠে, ‘সেটা তো আমি এসে পড়েছি বলে আর হলো না, নয়তো কোন পেত্নীকে ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিতে, আর তারপর তার ঘাড়ে চেপে বসতে...’

এবার আর কোন জবাব আসে না ও ঘর থেকে... তাতে পৃথা এবার সত্যিই ক্ষেঁপে যায়, উত্তর না পেয়ে... ‘কি হলো? মনের মত কথা বললাম বলে কি চুপ করে গেলে?’ বলে ওঠে সে।

তাও কোন উত্তর নেই... তা দেখে এবার নিজেই এগিয়ে যায় ড্রইংরুমের দিকে... দরজা পেরোতেই চোখে পড়ে ঘরের মাঝে তার ফোনটাকে শূণ্যে ভাসতে... অন্য কেউ হলে নির্ঘাত আঁতকে উঠতো... ভাবতেই ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা, ভেতরে জমা বিরক্তিটা উধাও হয়ে যায় সেই সাথে...

পৃথাকে বেডরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে বলে ওঠে অর্নব, ‘তুমি একবার বাড়িতে ফোন করো তো!’

হটাৎ করে অর্নবের গলার স্বর সিরিয়াস হয়ে যেতে ভুরু কুঁচকে যায় পৃথার, উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করে, ‘কেন গো? এনিথিং রং?’

‘বুঝতে পারছি না... প্রায় গোটা চল্লিশেক মিসড্‌ কল... তোমার বাপীর... একবার ফোন করো তো...’ ফোনটা পৃথার দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলে অর্নব।

তাড়াতাড়ি করে ফোনটা হাতে তুলে নেয় পৃথা, কল লিস্টএ দেখে সত্যিই চল্লিশটা মিসড্‌ কল দেখাচ্ছে... ভয় পেয়ে যায় সে... ত্রস্ত চোখে তাকায় অর্নবের পানে... ভীত গলায় জিজ্ঞাসা করে, ‘এতবার ফোন করেছে বাপী... কোন বিপদ হলো না তো?’

‘সেই জন্যই তো বলছি, আগে টেনশন না করে ফোনটা করো... দেখো কেন এত বার ফোন করেছে...’ আস্বস্থ করার চেষ্টা করে অর্নব পৃথাকে।

‘বড্ডো ভুল হয়ে গেছে গো... আমি সাধারণতঃ ফোন কখনো বন্ধ করি না, কালকেই বন্ধ করে দিয়েছিলাম... কি হলো বলো তো...’ বাবার নাম্বার ডায়াল করতে করতে বলে পৃথা, গলার স্বরে উদ্বেগ মিশে থাকে...

ফোনের মধ্যে বীপ...বীপ... শব্দ শোনা যায়, কল লাগে না কিছুতেই... আরো টেনশনে পড়ে যায় পৃথা... বার বার করে ট্রাই করে ফোন লাগাবার... যত সময় গড়ায়, ততই যেন মলিন হয়ে ওঠে তার মুখ।

হটাৎ করেই কল লেগে যায়... রিং হয় ফোনের ওই প্রান্তে... তাড়াতাড়ি করে পৃথা বলে ওঠে, ‘হ্যালো বাপী?’

ওপাশ থেকে উত্তর আসে, ‘নারে... আমি ছোটকা বলছি...’

‘ও তুমি? আমি আসলে বাপীর মিসড্‌ কল দেখে রিং ব্যাক করলাম... কেমন আছো ছোটকা? তোমার সাথে কতদিন কথা হয়নি... ভালো আছো তো? তাও তো বাপী মায়ের সাথে রোজ কথা হয় আমার, তোমার সাথে তো কথাই হয় না... করতে পারো তো ফোন মাঝে মাঝে... ইশ... ভুলেই গেছ তিতিরকে, না?’ অভিমান ঝরে পৃথার গলার স্বরে।

‘না রে... সেটা নয়... আসলে বুঝিস তো, আমি একটু অন্য ধরণের মানুষ, ওই সব লোকলৌকিকতা ঠিক আসে না আমার... যাক, তোর শরীর কেমন আছে... বৌদির কাছে শুনেছিলাম তোর নাকি জ্বর হয়েছিল... এখন ভালো আছিস তো?’ প্রশ্ন করেন পৃথার ছোট কাকা।

‘হ্যা গো... এক দম ফিট এখন... এই তো অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিলাম...’ উত্তর দেয় পৃথা, মনে মনে বলে তোমার জামাই আমাকে এত যত্নে রেখেছে, সেখানে আমি ফিট না থেকে পারি? ভাবতেই হাসি খেলে যায় ঠোঁটে, লালের আভা লাগে গালের ওপরে... মনে পড়ে যায় ভোরের আদর...

ভাবতে ভাবতেই ফিরে মনে পড়ে যায় পৃথার... ঠোঁটের ওপর থেকে লেগে থাকা স্মিত হাসিটা মুছে যায় তার... ‘আচ্ছা ছোটকা, তোমার কাছে বাপীর ফোনটা কেন? আর বাপীই বা এতবার ফোন করেছিল কেন গো?’ উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করে সে।

‘হ্যা... মানে তোকে বলার জন্যই ফোন করেছিলাম... আসলে কি হয়েছে জানিস...’ বলতে বলতে চুপ করে যান পৃথার ছোট কাকা...

তাকে এই ভাবে কথার মাঝে চুপ করে যেতে মনের মধ্যে একটা শঙ্কা চেপে বসে যেন... বুকের মধ্যেটায় ধকধক করে ওঠে তার... হাতের মুঠোয় মোবাইলটাকে আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞাসা করে, ‘কি হয়েছে ছোটকা... চুপ করে গেলে কেন?’

সাথে সাথে উত্তর আসে না কোন... বোঝাই যায় একটু ইতস্তত করছে পৃথার কাকা উত্তর দিতে গিয়ে... তারপর ধীর কন্ঠে বলেন, ‘আসলে ফোনটা কাল আমিই তোকে করেছিলাম... বড়দাকে গতকাল রাতে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয়েছে...’

কথাটা শুনেই শেষ করতে দেয় না পৃথা, চেঁচিয়ে ওঠে প্রায় ফোনের মধ্যেই... ‘কী? বা... বাপীর কি হয়েছে বললে? নার্সিংহোম... কেন?’ থরথর করে কেঁপে ওঠে পৃথার শরীরটা অজানা ভয়ে...

‘না, না, এত ব্যস্ত হোস না... এখন ঠিক আছে... আসলে...’ বোঝাতে যান উনি।

প্রায় ছিনিয়ে নেয় কথাটা কাকার মুখ থেকে পৃথা... কাঁদো কাঁদো গলায় বলে সে, ‘কি হয়েছে আমার বাপীর... বলো না গো ছোটকা... আমার বাপী কি নেই?...’ বলতে বলতে হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে সে...

পৃথাকে এই ভাবে ভেঙে পড়তে দেখে তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে অর্নব... টেনে নেয় তাকে নিজের বুকের মধ্যে... হাত রাখে পীঠের ওপরে... পৃথা মুখ তুলে তাকায় অর্নবের না দেখা মুখের পানে... চোখ ভর্তি জল টলটল করে তার... অর্নবের বুকের মধ্যে ফোঁপায় সে...

কানে আসে তার ছোটকাকার কন্ঠস্বর... ‘দূর বোকা মেয়ে... এত ভেঙে পড়ছিস কেন? আমি কি তাই বললাম... আগে থাকতে বাজে বাজে কথা ভেবে বসিস... আরে এখন তো আর বিপদ নেই... ঠিক আছে বড়দা...’

এক হাত দিয়ে মোবাইলটাকে কানে ধরে অন্য হাত দিয়ে খামচে ধরে অর্নবের হাত... ভাঙা গলায় প্রশ্ন করে পৃথা, ‘ঠিক বলছো ছোটকা... বাপী ঠিক আছে... কিচ্ছু হয় নি তো বাপীর... তুমি ঠিক বলছো তো?’ প্রশ্ন করার ফাঁকে মুখ তুলে তাকায় সে, যেন মনের মানুষটার কাছ থেকেও আস্বস্থ হতে চাইছে... যেন ওই মানুষটাই ঠিক বলতে পারবে যে ভয়টা তার অমূলক কিনা...

‘হ্যা রে তিতির, বললাম তো... তোর বাপী এখন ঠিক আছে... তবে হ্যা, এখনও ICCUতে আছে, তবে আগের বিপদটা আর নেই...’ আস্বস্থ করার চেষ্টা করেন ভদ্রলোক।

‘কি... কি হয়েছিল বাপীর?’ অর্নবের হাত ছেড়ে চোখ মুছতে মুছতে প্রশ্ন করে পৃথা, প্রথম দিকের ঝটকাটা খানিকটা সে কাটিয়ে ওঠে বাপী ভালো আছে শুনে...

‘একটা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট মত হয়েছিল কাল রাতে... আমরা সাথে সাথেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে বড়দাকে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাই এই যাত্রায় তেমন কোন খারাপ কিছু ঘটে যায় নি...’ বলেন পৃথার ছোটকাকা... তারপর একটু থেমে প্রশ্ন করেন উনি, ‘তুই কি একবার আসতে পারবি? না, না, তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই... জানি এক্ষুনি আসা সম্ভবও নয়, টিকিটই বা পাবি কি করে, তবে পারলে দেখ যদি আসতে পারিস... তোর কথা বলছিল খুব...’

তার কথা বলছিল শুনে ফের বুকের ভেতরটা টনটন করে ওঠে পৃথার... বলে সে, ‘আমি দেখছি ছোটকা... দেখছি আমি... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আসছি... তুমি বাপীর সাথে থেকো, হ্যা... দেখো বাপী কে... আমি আসছি...’ তারপরই হটাৎ করে মনে পড়ে যেতে জিজ্ঞাসা করে, ‘ছোটকা, মা... মা কেমন আছে গো... মা ঠিক আছে তো?’

‘হ্যা রে মা, বৌদি ঠিক আছে... বাড়িতেই আছে, আর তাছাড়া তোর কাম্মাও তো রয়েছে বৌদির সাথে, তুই ভাবিস না কিছু...’ আস্বস্থ করেন ফের পৃথাকে... ‘তাহলে ছাড়ি তিতির... তুই সাবধানে আসিস... আর আসার ঠিক হলে একবার আমাকে ফোন করে দিস, কেমন?’

‘আ...আচ্ছা ছোটকা... আমি দেখছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আসছি... তুমি একটু বাপীকে দেখো, কেমন?’ বলতে বলতে চিন্তায় পাংশুটে হয়ে যায় তার মুখ... শোনে ওপাশ থেকে তার ছোটকাকার ফোন কেটে দেবার আওয়াজ।

ফোনটাকে হাতের মুঠোয় ধরে রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে অর্নবের বুকের মধ্যে মাথা রেখে... চোখ দিয়ে সরু ধারায় জল গড়ায়... অন্য হাতে খামচে ধরে রাখে অর্নবের হাতটাকে... অর্নব হাতের আলিঙ্গনে ধরে রাখে পৃথাকে নিজের বুকের সাথে সাঁটিয়ে... যেন তার ভেতরের প্রাণশক্তিটাকে ঢেলে দেবার চেষ্টা করে পৃথার বুকের মধ্যে...

‘হ্যা গো... বাপী ঠিক আছে... তাই না গো?’ ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা, প্রশ্নের মধ্যেও যেন একটা অজানা আশঙ্কা মিশে থাকে তার...

‘কিচ্ছু হবে না তোমার বাপীর... দেখো... একদম ভালো আছেন উনি... তুমি কিচ্ছুটি চিন্তা করো না...’ আশ্বাস দেয় অর্নব পৃথার মাথার চুলে চুমু খেয়ে... তারপর পৃথাকে ধরে সোফার ওপরে বসিয়ে দিয়ে বলে, ‘তুমি অফিসে একটা ফোন করো... বলো আজই তুমি বাড়ি যাচ্ছ... তোমার বাপীর ব্যাপারটা খুলে বলো... বলে ছুটি নাও বেশ কয়’একদিনের...’

ভেজা চোখে মুখ তুলে তাকায় পৃথা... ‘কি করে? কি করে যাবো আমি?’ অসহায়এর মত প্রশ্ন করে সে...

পৃথার মাথাটা টেনে নেয় নেয় অর্নব নিজের কোলের ওপরে... বলে, ‘আমি আছি তো... চিন্তা করছো কেন... তুমি অফিসে ফোন করে বলে দাও শুধু যে আজকেই তুমি বাড়ি চলে যাচ্ছ...’

‘কিন্তু কি করে অর্নব? আমি যে সেই রকম কিছু জানি না এখানকার... কোথায় টিকিট কাটবো, কিসে যাবো...’ হতাশ গলায় বলে পৃথা।

‘আমি আছি তো!’ পৃথার কাঁধে হাতের চাপ দিয়ে ভরসা দেয় অর্নব, ‘তুমি অফিসে শুধু ফোনটা করো, আমি এদিকটা দেখছি... এত ভেঙে পড়ো না...’

‘অর্নব...’ ধরা গলায় ডাক দেয় পৃথা...

‘বলো না সোনা... কি হয়েছে?’ হাত রাখে মাথার ওপরে পৃথার...

‘বাপী...’ আর কিছু বলতে পারে না সে, গলা বুজে যায় আবেগে...

পৃথার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে অর্নব... দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘কেন এখনই এই সব আজে বাজে চিন্তা করছো বলো তো... তোমার বাপীর কিছু হতেই পারে না... গিয়ে দেখবে সব ঠিক আছে...’

‘তুমি যাবে না আমার সাথে?’ শূন্যের পানে হাত বাড়ায় পৃথা... খামচে ধরে অর্নবের কাঁধটাকে...

‘তোমার আগে যাবার ব্যবস্থাটা করি, তারপর আমার কথা...’ বলতে বলতে ফের উঠে দাঁড়ায় সে... ‘তুমি ফোনটা করো, আমি আসছি...’

‘আমায় ছেড়ে যেও না গো... আমার কাছেই থাকো না...’ কাতর মুখে তাকায় পৃথা... খানিক আগের করা মুখের সব মেকাপ ততক্ষনে একেবারে ঘেঁটে গিয়েছে চোখের জলে... চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে এই কয়’এক মুহুর্তেই উদ্বিগ্নতায়...

‘আমি আছি তো সোনা... আমি আছি... ঘরেই আছি...’ আস্বস্থ করে অর্নব তার প্রিয়াকে...

আর কথা বাড়ায় না পৃথা, মোবাইলটা তুলে ডায়াল করতে থাকে অফিসের নাম্বারে... অর্নবও ওর থেকে সরে গিয়ে এগিয়ে যায় টেবিলের দিকে, যেখানে ওর মোবাইলটা রাখা আছে, ডায়াল করে প্রণবকে...

ক্রমশ...

Post a Comment

0 Comments