বজ্রাঘাত অতঃকিম (collected)



‘এই, জানো... রাই না, ভিষন অভিমানী হয়ে উঠেছে দেখছি... ভাবতে পারো? ও কাজলর সাথে কথাই বলছিল না... ওই টুকু একটা মেয়ে... কি? না কাজল একটু জোর গলায় রাইকে বলেছিল দুধটা তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নিতে... বলো... এখন থেকেই ওই রকম অভিমানী হয়ে উঠেছে মেয়ে তোমার... বকা ঝকা তো দূর, এতটুকুও জোরে কথা বলা যায় না ওর সাথে...’ অর্নবের সাথে গাড়িতে যেতে যেতে বলে পৃথা...

‘হুম... এ আর আশ্চর্যের কি? মেয়ের মা কে দেখতে হবে তো... তাই না?’ স্টিয়ারিংএ হাত রেখে সামনের পানে তাকিয়ে ছুঁড়ে দেয় কথাটা অর্নব পৃথার দিকে...

পাশের সিটে বসা পৃথা সাথে সাথে ঘাড় ফেরায় লক্কা পায়রার মত... চোখ পাকিয়ে বলে ওঠে... ‘কি? আমার মেয়ে বলে এমন হয়েছে? মেয়ের মত আমিও অভিমানী?’

আড় চোখে একবার নিজের সুন্দরী স্ত্রীর পানে তাকিয়ে মিচকি হেসে, ফের সামনের দিকে তাকিয়ে বলে অর্নব... ‘না, না... ভুল বললাম, আমার বউটা একটুও অভিমানী নয়... শুধু যা মাঝে মধ্যেই গালটা ভারী হয়ে যায়... তখন না আদর করলে এই মিষ্টি মেয়েটার গালটা কিছুতেই আগের মত হয়ে ওঠে না... তাই না? ঠিক আমাদের ছোট্ট রাইয়ের মত...’

‘ভালো হবে না কিন্তু... এই ভাবে যদি আমার লেগ পুল করো তাহলে আমি তোমার সাথে যাবো না বলে দিচ্ছি...’ অভিমানী গলায় বলে ওঠে পৃথা...

‘আচ্ছা বাবা, আচ্ছা... আমারই বোঝা ভুল হয়ে গেছে... বউটা আমার একদম অভিমানী নয়... একটু যা বেশিই আদুরে... তাই তো? এবার ঠিক বললাম তো?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব...

চোখের কোলে ভালোবাসা চিকচিক করে পৃথার... ‘বেশ করি আদর খাই... আরো... আরো... আরো বেশি বেশি করে আদর খাবো আমি... দেখি আমায় আদর না করে বাবু কেমন থাকতে পারে...’ গোলা পায়রার মত ঘাড় বেঁকিয়ে বলে ওঠে সে...

আর কথা বাড়ায় না অর্নব, একবার চোখ ফিরিয়ে আপাদমস্তক দেখে নেয় পাশে বসা নিজের স্ত্রীকে... লাল শাড়ীটায় অপূর্ব লাগছে পৃথাকে... গায়ে ম্যাচিং ব্লাউজ... চুলগুলো ঝাকড়া বলে সেগুলো বেশ সাজিয়ে একটা খোঁপা করেছে মাথার ওপরে... কি ভাবে ম্যানেজ করেছে কে জানে... অবস্য সেটা জানার বিশয়ও নয় অর্নবের... ও ব্যাপারে সে একটু অজ্ঞই বলা যেতে পারে... চুলের সিঁথিতে ছোট্ট করে টানা দেওয়া সিঁদুরের দাগটা পৃথার মুখের ঔজ্জল্য যেন শতগুন বাড়িয়ে দিয়েছে... পাতলা ঠোঁট দুটো বেশ গাঢ় রঙের লিপস্টিকে রাঙানো... দুই হাতে বেশ অনেকগুলো সোনার চুড়ি পরেছে আজ... অন্য সময় এতটা সাজে না ও... কিন্তু আজ খুব মন দিয়ে সেজেছে... একেবারেই অন্য রকম লাগছে আর পাঁচটা দিনের থেকে... সেই আট বছর আগের বিয়ের দিনের পৃথা হয়ে গিয়েছে যেন... একেবারে নববধূর মত বসে রয়েছে তার পাশটিতে... বাড়িতে এখন শ্বশুর শাশুড়ি এসে রয়েছে বলে বেরুবার সময় কিছু বদমাইশি করার চেষ্টা করে নি অর্নব, যদি ওনারা না থাকতো... ভাবতেই মনে মনে হেসে ওঠে সে...

‘এই, গাড়ি চালাতে চালাতে ওই রকম হাসছ কেন গো?’ অর্নবকে মিচকি হাসতে দেখে প্রশ্ন করে পৃথা...

‘না... কিছু না...’ বলে ওঠে অর্নব...

‘উহু... নিশ্চয়ই কিছু... আমায় বলছ না... বলো না কেন হাসলে...’ এর জিজ্ঞাস করে পৃথা...

‘না... ভাবছিলাম আজ বাড়িতে তোমার বাপি, মা না থাকলে আমাদের বেরুতে অনেক দেরী হয়ে যেত... তোমাকে আবার নতুন করে সাজতে হতো...’ গলার স্বরে যতটা সম্ভব গাম্ভীর্য ফিটিয়ে তোলার চেষ্টা করে অর্নব...

‘আমাকে আবার সাজতে হতো? কেন?’ অবাক গলায় প্রশ্ন করে পৃথা...

‘বাহ!... নতুন করে সাজতে হতো না? আমার বউটাকে এত সুন্দরী লাগছে, সেখানে আমি তাকে বিছানায় তুলে না নিয়ে গিয়ে কি ছাড়তাম নাকি?’ ফের আড় চোখে একবার তাকিয়ে নিয়ে উত্তর দেয় অর্নব...

‘ওরে বুড়ো... মাথায় খালি ওই জিনিসটা ঘুরে বেড়ায়, না?’ চোখ পাকায় পৃথা...

‘ও... আমি এখন বুড়ো হলাম? কই... অন্য সময় তো বুড়ো বলো না? তখন তো আর পারছি না... আর পারছি না করে ছটফট করো...’ হাসে অর্নব...

‘যাহ!... তুমি না...’ লাল হয়ে ওঠে পৃথার ফর্সা গাল... হাত বাড়িয়ে স্টিয়ারিং ধরা অর্নবের হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, ‘তবে সত্যিই অর্নব... তোমার যা দম... না পেলে বুঝতাম না... আচ্ছা আচ্ছা যোয়ানকেও হার মানিয়ে দেবে...’ বলে খিলখিল করে হেসে ওঠে সে... ‘নাও... মনে হচ্ছে এসে গেছি... ওই বাড়িটাই না?’

আজ পৃথা আর অর্নব এসেছে সুশান্তর পঞ্চম বিবাহবার্ষিকির নিমন্ত্রন রক্ষার্থে... তারা আজ সুখি দম্পতি... বিয়ে করে নিয়েছে প্রায় বছর আষ্টেক হয়ে গেল... একটি রাজকন্যার জন্ম দিয়েছে পৃথা... ফ্ল্যাটে আর থাকে না... ছোট্ট এক কামরার ফ্ল্যাটটা ভাড়ায় দিয়ে উঠে এসেছে একটা বাড়ি কিনে নিয়ে, যেখানে তাদের সংসার আনন্দে সুখে ভরে থাকে সবসময়... প্রণবকে অনুরোধ করেছিল স্ত্রী পুত্র নিয়ে তাদের কাছেই চলে আসতে, কিন্তু প্রণব তাতে রাজি হয় নি, হেসে বলেছে, সে নাকি কাবাব মে হাড্ডি হতে চায় না... আর জোরও করে নি তারা... মাঝে মধ্যে শিলিগুড়ি থেকে পৃথার বাপী আর মা এসে থাকেন... তাদের ছোট্ট রাই সঙ্গ পায় নিজের দাদান দিম্মার... একটু একটু করে বড়ো হয়ে উঠছে সেও... দেখতে নাকি একেবারে পৃথার মত হয়েছে...

‘এই... কি দেখছ ওই ভাবে?’ ভুরু তুলে প্রশ্ন করে পৃথা... সুশান্তের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে... ওই তিক্ষ্ণ চোখ জোড়াকে তার শাড়ির আঁচলের ফাঁকে ঘুরে বেড়াতে বুঝে... এখন অর্নব যেন ওই ছবির থেকেও আরো অনেক বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে... চেহারের মধ্যে একটা বেশ ভারিক্কি ভাব এসেছে... সুঠাম জিম করা চেহারায় আরো বেশি করে সেক্সি মনে হয় দেখলেই... এই এত বছর ধরে ওর সাথে ঘর করলেও, আজও যেন ওর দিকে তাকালে সিরসির করে ওঠে শরীরটা পৃথার... বুকের মধ্যে ঝড় ওঠে... কি অদ্ভুত আমেজ ছড়িয়ে পড়ে দেহে অর্নবের চোখে চোখ রাখলেই... ভুরুর কাটা দাগটা যেন আরো বেশি করে টানে ওকে, যত দিন যাচ্ছে ততই...

‘তোমায়...’ ছোট্ট করে উত্তর দেয় অর্নব...

‘ধ্যাৎ... আমাকে আবার নতুন করে কি দেখবে?’ মুখে বলে ঠিকই, কিন্তু স্বামীর কথায় যেন ভালো লাগায় গলে যায় সে...

‘তোমার শরীরটা কিন্তু আগের থেকে আরো ভরাট হয়ে উঠেছে...’ গাঢ় গলায় বলে অর্নব...

‘তাই বুঝি?’ গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা...

‘হুম... আগের থেকেও বেশ ভরাট হয়ে উঠেছে বুকগুলো... এখন শাড়ীর আঁচলও পুরো ঢেকে রাখতে পারে না... দেখলেই কেমন মুখ ডুবিয়ে দিতে ইচ্ছা করে দুটো বুকের খাঁজে...’ চাপা স্বরে বলে অর্নব...

‘যাহ! অসভ্য বুড়ো... শখ কত... এখন রাস্তাঘাটেও আমাকে ওই ভাবে দেখে... ইশশশ... লজ্জা করে না আমার?’ লাল হয়ে ওঠে কান দুটো অর্নবের কথা শুনে... বুকের মধ্যে রিনরিনে সুখ ঘোরে...

‘আমার কি দোষ? তোমায় দেখলেই যদি আদর করতে ইচ্ছা করে আমার...’ বলে ওঠে অর্নব...

‘যাহ!... দুষ্টূ... বেলটা টিপবে? নাকি দরজার এপারে দাঁড়িয়ে শুধু বউকেই দেখে যাবে? হুম? রাতে যা অসভ্যতামী করার কোরো... বুঝেছ? এখন বেলটা টেপো...’ বলে ওঠে পৃথা... কানের লতী গরম ঠেকে... গালদুটো কি লাল হয়ে উঠেছে?

- সমাপ্ত -


উপসংহার

গল্পটার থীমটা নিয়ে একটা পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে গিয়েছিলাম... মনে হয় না এই থীমের ওপরে আগে কখনও ইরো গল্প লেখা হয়েছে বলে... হলেও আমার জ্ঞাতার্থে নেই... চেষ্টা করেছি গল্পের ছন্দ বজায় রেখে গল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার... বাকিটা পাঠকদের মতামতের ওপর... হয়তো অনেক প্রশ্ন থেকে গিয়েছে... অনেক অবাস্তবতা রাখতে হয়েছে গল্পের খাতিরে... কিন্তু গল্পটাকে গল্পের মত করেই লিখতে চেয়েছি... আশা রাখবো পাঠকরা এই ছোট খাটো ত্রুটিগুলির জন্য আমাকে ক্ষমা করে দেবে...

ধন্যবাদান্তে...

Post a Comment

0 Comments