‘ওহ্ মা...’ চোখ বন্ধ অবস্থাতেই গুঙিয়ে ওঠে পৃথা... মাথার ওপরে ঠান্ডা জলের ধারা খারাপ লাগে না... কানে আসে চুল থেকে বালতির মধ্যে ঝরে পড়া জলের শব্দ... চোখটা খুলে দেখার চেষ্টা করে... কিন্তু পারে না... অসম্ভব ভারী হয়ে রয়েছে চোখের পাতাদুটো... ইচ্ছা করলেও খুলতে পারে না সে দুটোকে... আর সেই সাথে ঘরের মধ্যে জ্বলতে থাকা আলোটাও বড্ড চোখে লাগে তার... চোখ বন্ধ করে থাকাটাই বেশি ভালো লাগে... ঠোটদুটোও শুকিয়ে উঠেছে... জিভটা বের করে চেটে ঠোটটাকে ভিজিয়ে নেবার চেষ্টা করে সে... ‘আহ্... উম্...’ ফের গোঙায় পৃথা... মাথাটা মনে হচ্ছে যেন যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে একেবারে...
চোখ বন্ধ থাকলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না সেই এই মুহুর্তে বিছানায় আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে রয়েছে... পা থেকে গলা অবধি একটা চাঁদর টানা... মাথাটা ঝুলছে বিছানা থেকে বাইরের দিকে... আর কেউ একজন তার মাথাটাকে নিজের হাতের তেলোর মধ্যে পরম মমতায় ধরে রেখে তপ্ত কপালের ওপর দিয়ে ঠান্ডা জল ঢেলে চলেছে এক ভাবে... ঘাড়ের নীচে একটা তোয়ালে গোঁজা... হয়তো বিছানাটা যাতে না ভিজে যায়, সেই প্রয়াশে...
জলের ধারা বন্ধ হয় একটু পরে... যেই তার মাথাটা ধরে থাকুক, খুব সাবধানে নিজের কোলের ওপরে তুলে নিয়ে ঘাড়ের নিচ থেকে তোয়ালেটা টেনে বের করে মাথার জল মুছিয়ে দিতে থাকে পরম মমতায়... পৃথা মুখে কিছু না বলে চুপ করে চোখ বন্ধ করেই শুয়ে থাকে ওই ভাবে। মাথা মোছানো শেষ হলে সাবধানে আবার বিছানায় সোজা করে বালিশের ওপরে মাথাটা ফিরিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয় তাকে... ভিজে তোয়ালে দিয়ে তার ঘাড়, মুখ আলতো হাতে মুছিয়ে দিতে থাকে আগুন্তুক... কে... কে সেবা করছে তার? মনে মনে ভাবার চেষ্টা করে পৃথা... কিন্তু মাথার মধ্যে এতই যন্ত্রনা হচ্ছে যে ইচ্ছা করে না সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে... চুপচাপ নিজের তপ্ত অসুস্থ শরীরটাকে সমর্পন করে দেয় আগুন্তুকের হাতে। ফ্যানের হাওয়াটা ভেজা চুলের ওপরে লেগে বেশ ভালো লাগে। চোখ বন্ধ করেই খেয়াল করে ধীরে ধীরে তার গায়ের থেকে চাঁদরটা কেউ সরিয়ে কোমর থেকে গায়ের টি-শার্টটা গুটিয়ে খানিকটা ওপর দিকে গুটিয়ে তুলে দিলো... মানে এখন তার উর্ধঙ্গ সম্পূর্ন উন্মুক্ত আগুন্তুকের সামনে... চুপচাপ অপেক্ষা করে সে পরবর্তি কি পদক্ষেপ নেয় সেটা দেখার... আদুল গায়ের ওপরে ভেজা তোয়ালের ছোঁয়া পায়... খুব আলতো হাতে তার সারা গা মুছিয়ে দিতে থাকে আগুন্তুক... নগ্ন নরম অথচ সুগঠিত বুকের ওপর দিয়ে তোয়ালের পরশটা বয়ে যায়... আনমনেই বোঁটাদুটো কেমন অসভ্যের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় বুকের ওপরে, আগুন্তুকের চোখের সামনে... কেমন যেন লজ্জা লাগে তার হটাৎ... লজ্জা লাগে কিন্তু তার সাথে অদ্ভুত একটা ভালো লাগাও মিশে থাকে... বাধা দেয় না... চুপ করে শুয়ে উপভোগ করে আরামের রেশটুকু... ‘উম্... আহ্’ ফের গুঙিয়ে ওঠে সে... মাথার মধ্যেটায় এখনও যেন যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে...
তোয়ালের ছোঁয়া সরে যায় শরীর থেকে... গায়ের টি-শার্টটা ফের নেমে দেহটাকে ঢেকে দেয় কোমর অবধি... চাদর ফিরে আসে গায়ের ওপরে গলা কাছটায়... এবার কপালের ওপরে এক টুকরো ভেজা কাপড়ের উপস্থিতি অনুভব করে পৃথা... একটা হাত... এলোমেলো হয়ে থাকা চুলের মধ্যে দিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগে... বিলি কেটে দিতে থাকে খুব ধীরে, আলতো হাতের ছোয়ায়... দূর থেকে যেন ভেসে আসে একটা স্বর... ‘তিতির... তিতির?’
‘উম্?’ চোখ বন্ধ করেই সাড়া দেয় পৃথা।
‘কষ্ট হচ্ছে, খুব?’ কানে আসে গাঢ় স্বরে করা প্রশ্ন।
‘মাথাটা... মাথাটায় ভিষন যন্ত্রনা করছে... আহ্...’ থেমে থেমে উত্তর দেয় পৃথা।
কপালের ওপরে কাপড়ের টুকরো পালটায়... ফের আর একটা নতুন জলে ভেজা টুকরো এসে লেপটে যায় তপ্ত কপালের ওপরে...
‘এই তো... আর একটু পরেই সকাল হয়ে যাবে... তখন সব ঠিক হয়ে যাবে...’ আশ্বাস দেয় অচেনা গলার স্বর... শুনে আর কিছু বলে না পৃথা... চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে... কপালের পাশের রগের ওপরে চাপ পড়ে শক্ত আঙুলের... ‘আহ্... হুম্...’ ভালো লাগে এই ভাবে কপালের রগে টিপ দেওয়াতে...
একটু চুপ থেকে বলে ওঠে পৃথা... ‘খুব জ্বালাচ্ছি... না?’
এবারে কিন্তু আর কোন উত্তর আসে না... যদিও তখনও পৃথার কপালের ওপরে আগুন্তুকের হাতের ছোয়া লেগে রয়েছে... তাই জ্বরের মধ্যেও স্মিত হাসি খেলে যায় পৃথার ঠোঁটের ওপরে... ‘কি? উত্তর দেবে না?’ অত কষ্টের মধ্যেও শান্ত গলায় ফের প্রশ্ন করে সে।
কোন উত্তর আসে না... কিন্তু কপালের ওপর থেকে ভেজা কাপড়ের টুকরো বদলায়... মাথার চুলে অচেনা আঙুল বিলি কাটে... হাল্কা হাতের মুঠোয় চেপে চেপে ধরে চুলগুলো... টান দেয় অল্প অল্প... পৃথার আরাম হয় খুব এতে... চোখ বন্ধ করেই হাসি মুখে সেই আরাম উপভোগ করতে থাকে চুপটি করে শুয়ে... বোঝে, এখন আর কোন উত্তর সে পাবে না... কিন্তু তার যা বোঝার আজ সব বোঝা হয়ে গিয়েছে... পরম নিশ্চিন্তে আবার ঢলে পড়ে ঘুমের কোলে।
ক্রমশ...
0 Comments