আলুথালু পোষাকে সোফার ওপরে হতদ্যম হয়ে বসে তাকিয়ে থাকে দৌড়ে বেরিয়ে যাওয়া সুশান্তর শরীরটা দিকে পৃথা... তখনও যেন ঠিক ধাতস্থ হয়ে উঠে পারে নি সে... কথায় কথায় হটাৎ করে কি ঘটে গেল ব্যাপারটা... এরকমটা তো সে স্বপ্নেও আশা করে নি... আশা করে নি সুশান্তর কাছ থেকে এই ধরণের ব্যবহার... ওর আচার আচরণে সে সন্দিহান ছিলই, কিন্তু তাই বলে ওকে একা পেয়ে এই ভাবে ঝাপিয়ে পড়তে পারে? ওকে যে সত্যি সত্যিই বন্ধু বলেই ভেবেছিল সে... আজ না হয় ওর অর্নব আছে, কিন্তু যদি না থাকতো পাশে? তখন? জীবনে কাউকেই কি বিশ্বাস করা যায় না? ছেলেরা কি কখনই একটা একলা মেয়েকে শুধু মাত্র বন্ধু বলে ভাবতে পারে না? একটু হেসে কথা বললে, একটু ভরসা করে কাছে এগিয়ে গেলেই ভাবে এটা মেয়েদের দুর্বলতা? এক তুষার ঝড়ের রাতে, সুদূর হিমালয়ের কোলে রমেশ ওকে ব্যবহার করেছিল... শুধু মাত্র নিজের যৌন ক্ষুদা নিবৃত্তি করেছিল একলা তাকে টেন্টের মধ্যে পেয়ে... একবারের জন্য ওর প্রতি সহৃদয়তা দেখায় নি... প্রয়োজন মনে করেনি জাগিয়ে তোলা পৃথার যৌনক্ষুধা নিরশনের... আপন ক্ষুধা মিটতেই ছেড়ে উঠে গিয়েছিল জ্বলতে থাকা পৃথার অতৃপ্ত শরীরটা ছেড়ে দিয়ে... আর আজও একান্ত বন্ধু ভাবা সুশান্ত তাকে একা ফ্ল্যাটের মধ্যে পেয়ে দ্বিধা করে নি ঝাপিয়ে পড়তে... কেন? কেন? কেন এমন ঘটে... পুরুষ জাতটাই কি তবে এই রকমই... অপর দিকের মানুষটার মানসিকতা বোঝার এতটুকুও চেষ্টা করে না কখনও? প্রয়োজন বোধ করে না জানার মেয়েটির মনের চাহিদা কি? সেটা যৌনাত্বক নাকি বন্ধুত্বপূর্ণ? কেন এমন হয়? এর পর অফিসে গিয়ে কি করে ও মুখ দেখাবে সুশান্তর কাছে? সুশান্তই বা কি সাহস নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়াবে? কথা বলবে? হাসবে? আর মৌসুমী... একটা প্রাণবন্ত মেয়ে... সে যদি জানতে পারে সুশান্তর এই আচরণের কথা? বিয়ের আগেই কি ভাববে নিজের হবু জীবন সঙ্গীর সম্বন্ধে? যার সাথে সে সারাটা জীবন কাটাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রয়েছে?
দুম্ করে ফ্ল্যাটের দরজাটা বন্ধ হয়ে যেতে চটক ভাঙে পৃথার চিন্তায়... ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় সে সোফা ছেড়ে... তারপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় দরজা লক্ষ করে... মাঝ পথেই তার শরীরের সাথে ধাক্কা লাগে অর্নবের কায়াহীন দেহটার... দুহাত দিয়ে অর্নবকে জড়িয়ে ধরে... মুখটা তুলে তাকায় না দেখা অর্নবের মুখের পানে... একরাশ প্রশ্ন মেখে থাকে যেন তার ছলছল চোখের কোনে... তারপর আস্তে আস্তে নিজের মুখটাকে ডুবিয়ে দেয় অদৃশ্য লোমশ বুকটার মধ্যে... আঁকড়ে ধরে দু হাত দিয়ে প্রাণপনে... পরক্ষনেই বাঁধ ভেঙে যায় তার... অর্নবের বুকের মধ্যে ডুকরে ওঠে পৃথা... ফোঁপাতে থাকে মুখটাকে বারংবার পেশল বুকের ওপর ঘসতে ঘসতে... অব্যক্ত কন্ঠে নানান প্রশ্ন করে চলে সে... তারপর ফোঁপানোর জায়গা করে নেয় বাঁধ ভাঙা কান্না। ওর মাথার চুলের ওপরে হাত বোলায় অর্নব... সেও একটা হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে পৃথাকে, নিজের বুকের মধ্যে... মুখে কিচ্ছু বলে না, কাঁদতে দেয় নিজের প্রিয়াকে মন খুলে... এতেই সে হাল্কা হবে, জানে অর্নব... হাল্কা হওয়ার প্রয়োজন পৃথার... এই মানসিক আঘাত থেকে সেরে উঠতে।
ওই ভাবেই প্রায় মিনিট পাঁচেক ধরে জড়িয়ে ধরে রাখে পৃথাকে নিজের শরীরের মধ্যে অর্নব, একটু একটু করে কান্নার দমক কমে আসে... শেষে আবার ফোঁপানোতে রূপান্তরিত হয়ে শেষ হয় কান্নাটা... তবুও, আরো খানিক সময় নেয় সে... তখন ছাড়ে না তার আদরের তিতিরকে নিজের বুকের ভেতর থেকে... একটা সময় নিজের থেকেই পৃথা বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে চায় উপর পানে, অর্নবের অদৃশ্য মুখ লক্ষ্য করে, ফিসফিসিয়ে বলে, ‘আমি যে সত্যিই ওকে আমার খুব ভালো বন্ধু ভাবতাম গো... বিশ্বাস করো... কেন এমন করলো ও আমার সাথে?’
পৃথার মাথাটাকে ধরে ফের নিজের বুকের মধ্যে চেপে নেয় অর্নব, পৃথাও ছোট্ট আদুরে মেয়ের মত গুঁজে দেয় নিজের নরম শরীরটাকে অর্নবের বিশাল চওড়া দেহের আলিঙ্গনে... নিজের গালটা পৃথার মাথার সাথে ঠেকিয়ে ধীর গলায় বলে অর্নব, ‘কিচ্ছু হয় নি... যেটা ঘটেছে, সেটা সাময়িক, দেখবে কাল সব ঠিক হয়ে যাবে...’
‘সাময়িক?’ অর্নবের বুকের মধ্যে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘হু, সাময়িক, আর কিচ্ছু নয়... আসলে তোমার প্রতি ওর মনের অবচেতন কোনায় একটা মোহ জন্ম নিয়েছিল, এ সেটারই বহিরপ্রকাশ মাত্র... এটা ঘটত না যদি না তোমার জ্বরে ওকে ডাকতে, যে হেতু তুমি প্রণবকে ডেকেছ বলে ও শুনেছে, তাই ওর মধ্যে একটা প্রতিহিংসা তৈরী হয়েছিল... আর তোমাকে যেহেতু প্রথম থেকে ওই গাইড করেছে, তাই আজ নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি, একটা আউট বার্স্ট ঘটে গিয়েছে মাত্র...’ পৃথার মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে অর্নব।
অর্নবের হাতে আদর খেতে খেতে যেন সব কষ্ট কেমন উবে যেতে লাগল তার, দুহাত বাড়িয়ে আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে অর্নবের শরীরটাকে নিজের দুই হাতের মধ্যে... নরম বুকদুটো চেপে বসে অর্নবের পেশল পেটের ওপরে... গালটাকে কাত করে বুকের ওপরে রেখে বলে পৃথা, ভাবে, কি সহজেই না সমস্যাটাকে বিশ্লেষণ করে দিলো মানুষটা... ‘কিন্তু অফিসে গেলে ও যদি কিছু বলে?’
‘বলবে না কিছু... দেখে নিও... হটাৎ আবেগের বশে করে ফেলেছে ঠিকই, কিন্তু অতটা ক্ষতিকারক ছেলে ও নয়... অন্তত আমার এক্সপিরিয়েন্স তাই বলে... আর ওর সে সাহসও নেই কারুর কোন ক্ষতি করার, সেটা করার মতও বুকের পাটার দরকার, সেটা ওর নেই... তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো ওর থেকে...’ পৃথাকে নিজের শরীরের সাথে আরো গভীর ভাবে লেপটে যেতে প্রশ্রয় দিতে দিতে বলে অর্নব...
ভিষন ইচ্ছা করে অর্নবের ঠোটের ওপরে নিজের ঠোটটা চেপে ধরতে, আশা নিয়ে মুখ তোলে পৃথা, গ্রীবা উচু করে তাকায় উপর পানে অর্নবের বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে... নিজের পাতলা ঠোঁটদুখানি মেলে দেয় অর্নবের পানে... ঠোঁটের পাপড়ি দুটো ফাঁক হয়ে যায় সামান্য... ভেতরের ঝকঝকে সাদা সুন্দর সাজানো দাঁতের সারি চোখে পরে...
টিং টং... টিং টং... দরজার ঘন্টিটা বেজে ওঠে তখনই। ভুরু কুঁচকে যায় বিরক্তিতে পৃথার... শরীরটাকে আরো বেশি করে চেপে ধরে অর্নবের অদেখা দেহের সাথে বাচ্ছা মেয়ের মত... ঠোঁট দুটো তখনও মেলে রাখে ওপর পানে করে...
‘বেল বাজছে তো!’ অর্নব ফিসফিসিয়ে মনে করিয়ে দেয়।
‘বাজুক... আগে আমাকে একটা চুমু খাও তারপর দেখবো কে এসেছে...’ আদুরে জেদ দেখায় পৃথা।
টিং টং... টিং টং... ফের দরজার বেল বাজে।
অর্নব বোঝে, একটা চুমু না নিয়ে এ মেয়ে ছাড়বে না তাকে, দরজাও খুলবে না সে... তাই মাথা নামিয়ে চট করে একটা চুমু এঁকে দেয় পৃথার নরম পাতলা ভিজে ঠোঁটের ওপরে... তারপর বলে, ‘হয়েছে? এবার যাও, দেখ কে এসেছে...’
গাল ভারী হয়ে যায় পৃথার... কয়’এক পলক তাকিয়ে থাকে মুখ তুলে, তারপর, ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, ‘আজ রাত্রে তোমার কপালে অনেক দুঃখ আছে... তখন দেখবো কি করে পালাও...’ বলতে বলতে রাতের অভিসারের কল্পনায় মিচকি হেসে ওঠে সে... সদ্য চুমু খাওয়া ঠোঁট দুখানি যেন চকচক করে ওঠে সম্ভাব্য সঙ্গমের আবেশে।
অনিচ্ছা সত্তেও অর্নবকে ছেড়ে এগিয়ে যায় দরজার দিকে, পেছন থেকে অর্নব নির্নিমেশ তাকিয়ে থাকে প্রতি পদক্ষেপে ছলকে উঠতে থাকা গাঢ় রঙের টাইট কুর্তির আড়ালে ঢাকা নরম নিতম্বের দুটো দাবনার দিকে... প্রকারান্তে পৃথার বুঝিয়ে দিয়ে যাওয়া রাতের ঘটনার কথা চিন্তা করে তার রক্তেও যেন কামাগ্নির মাতন লাগে।
.
.
.
Continued in Part 27(খ)
0 Comments