জীবনের সুখের জন্য - পর্ব ০১ (Jiboner Sukher Jonno - Part 01)

আমি চেয়ারে বসে সকালের খবরের কাগজ পড়ছিলাম। মিতা এক কাপ গরম চা আমার সামনে টেবিলের ওপর রেখে গেছে। আজকে আমার অফিস কি কারনে যেন বন্ধ আর আমার হাতে প্রচুর সময় আছে। তাই আমি সময় নিয়ে পেপারটা পড়ছি। আমি জানি মিতা ওর সংসারের কাজে লেগে যাবে এবং নিশ্চিত ভাবে ও আমার সাহায্য চাইবে না। এখন আমরা আমাদের নিজেদের পৃথিবীতে সময় কাটাই। মিতা সব সময় চাইত আমি যেন চাকরি ছেড়ে দিই আর জীবনের বাকি সময় সংসারের জন্য ব্যয় করি। কিন্তু সকলেই জানে সেটা কত অসম্ভব ব্যাপার। কোন কাজ না করে দিন কাটানো মোটেই সম্ভব নয়।

আমার এখন বয়স ৫০। চাকরির এখন ১০ বছর বাকি আছে। যদি এখন চাকরি ছেড়ে দিই তবে আমি জানি বাকি জীবন আমার কিভাবে কাটবে। মিতার বয়স এখন প্রায় ৪৫। ও এখনো হাসি মজা নিয়ে থাকতে ভালবাসে। কিন্তু জীবনের ধর্ম আর ব্যাস্ততা আমাদেরকে পরস্পরের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আমরা এখন ব্যাস্ত থাকি নিজেদের ভুল খুঁজে বার করতে। তবুও আমরা এখনো স্বামী আর স্ত্রী। আমি প্রায় ভুলেই গেছি শেষ কবে আমি মিতাকে আন্তরিকভাবে ছুঁয়েছি। যদিও এখন আমরা ঘুমোই নিজেদেরকে ছুঁয়ে বা জড়িয়ে।
আমি কখনো পিছনের দিকে তাকাই নি এটা বুঝতে যে সত্যিকরে কার দোষ। এখন এটা সত্যি বুঝে ওঠা মুশকিল যে আমার দোষ ছিল না মিতার দোষ। আমাদেরকে মনে হত আমরা যেন দুনিয়ার দুই প্রান্তের মানুষ। মাঝে মাঝে এটা ভেবে আমার অবাক লাগতো যে কিভাবে আমরা দুজনকে বিয়ে করেছিলাম। এটা কিন্তু সত্যি যে প্রথম দেখাতে আমরা প্রেমে পরেছিলাম আর দ্বিতীয় দেখাতে বিয়ে। বিয়ের বেশ কয়েক বছর আমরা সত্যি দুজনের জন্য চিন্তা করতাম এবং খেয়াল রাখতাম দুজনের প্রতি, দুজনের সমস্যার প্রতি। আমাদের যৌন লাইফ ছিল উন্মাদের মত। যখন ইচ্ছে হতো মেতে উঠতাম সেক্সের খেলাতে। মিতা রান্না করতো নগ্ন হয়ে আর আমি হেল্প করতাম নগ্ন হয়ে। কে আসবে কে আসবে না সে সব চিন্তা থাকতো না মাথাতে। সে সব দিন গেছে এখন আর ভাল করে মনে পরে না। জানতেই পারি নি কবে ২৬/২৭ বছর কেটে গেছে আর বছরগুলো আমাদের আস্তে আস্তে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। আর এটাও জানতে পারি নি কি কারনে আমরা দুজনে দূরে সরে গেছি।
তবে এটা ঠিক নয় যে আমরা কেউ কারো জন্য চিন্তা করি না। এইতোসেদিনকে আমি স্নান করতে গেছি। বাথরুমে ঢুকে গায়ে জল ঢালবো হঠাৎ মিতার চিৎকার। ওর চিৎকার শুনে আমি এতো ভয় পেয়ে গেছিলাম যে যেমন অবস্থাতে ছিলাম বেরিয়ে এসেছিলাম বাথরুম থেকে। মানে নগ্ন অবস্থাতে। ওর কাছে যেতে ওকে দেখি মিতা মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুব ভয় পেয়ে গেলে যেমন হয় আরকি।
আমি কাছে যেতে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কি হোল। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলে কেন?’
ও সম্বিত ফিরে পেয়ে আমার দিকে তাকাল আর হেসে উঠলো। বলল, ‘একটা বিড়াল। ওই জানালা দিয়ে এসে প্লাটফর্মের উপর লাফ দিয়ে বেরিয়ে গেল।‘
আমি খুব রেগে গেলাম। এর জন্য কেউ এমন চিৎকার করে? আমি বললাম, ‘বাবা, এর জন্য এতো চিৎকার কেউ করে নাকি?’
মিতা তখনো হাসছিল। ও বলে উটলো, ‘তোমাকে কে মাথার দিব্যি দিয়েছিল যে তুমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলে? তাও এই আবস্থাতে?’
আমি তখনো খুব নার্ভাস। আমার বুকটা হাপরের মত ধকপক করছে। আমি বললাম, ‘যে ভাবে তুমি চিৎকার করে উঠেছিলে, আমি ভেবেছিলাম বুঝি তুমি পরে গেছ। মাথার ঠিক ছিল না কি পরে আছি।‘
মিতা কাছে এসে একটা আঙ্গুল দিয়ে আমার শিথিল লিঙ্গটাকে টোকা দিয়ে বলল, ‘এটার না জান আছে না লজ্জা।‘
সে আবার তার ঘর সংসারে বাস্ত হয়ে গেল আর আমি স্নান করতে চলে গেলাম।
আমাকে মাঝে মধ্যে অফিসের কাজে বাইরে যেতে হয়। যখন আমি বাইরে থাকি মিতা সবসময় আমার খেয়াল রাখে। আমি ঠিক পৌঁছেছি কিনা, রাস্তাতে আমার কোন আসুবিধা হয়েছে কিনা, ঠিক মত আমি খাবার খেয়েছি কিনা আর অনেক কিছু। যতক্ষণ আমি বাড়ি ফিরে না আসব ওর দুশ্চিন্তা যাবে না। এইভাবে আমরা আমাদের প্রেম ভালবাসা বাঁচিয়ে রেখেছি আর এইভাবেই আমরা আমাদের জীবনকে টেনে নিয়ে চলেছি। আমাদের মধ্যে কেউ বলতে পারবে না যে কেউ কারো জন্য খারাপ আছি।
সত্যি মনে হয় জীবন আমাদের জন্য সুখের আর কিছু বাকি রেখেছে কিনা। মনে হয় এইভাবে বাকি জীবনটা পার করে দিতে পারলেই যেন ল্যাটা চুকে গেল। এটা ঠিক যে প্রতিবেশিরা এখনো মনে করে আমরা একে অন্যের জন্য।
আমি খবরের কাগজ পরতে পরতে বিজ্ঞাপনের পাতায়ে চলে আসি। সময় নষ্ট করার জন্য সব কিছু দেখতে দেখতে পত্রমিতালির জায়গাতে আমার চোখ আটকে গেল। অনেক গুলো অ্যাড আছে। কোনটাতে লেখা যদি সময় কাটাতে চান মনের মতো বন্ধুর সাথে কথা বলুন। কিছু মোবাইল নাম্বার দিয়েছে। আরেকটাতে লেখা সম্পূর্ণ সাঁটিসফাক্সন। আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য, ইত্যাদি। অ্যাড গুলো দেখে আমি ভাবতে থাকি, কি এসব। কি মনে হতে পার্সোনাল ডায়েরি বার করে কিছু নাম্বার নোট করে নি। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি প্রায় সারে দশটা বেজে গাছে। আমি উঠে পরি আর ঘরে গিয়ে ড্রেস করে নি। বাইরে বেরোবার জন্য। মিতাকে হাঁক পারি, ‘শুনছ, আমি বেরলাম। কিছু আনবার আছে কি?’ বলে আমি রান্নাঘরের দিকে যাবো যাবো করছি মিতা এসে ঘরে ঢুকল। ওর এক হাতে ঝাঁটা। বোধহয় ঝাঁট দিচ্ছিল।
আমাকে এক পলক দেখে বলল, ‘ফিরতে দেরি হবে?’
আমি জবাব দিলাম, ‘কোথায় আর যাবো। মোড়ের দিকে গিয়ে একটু দেখি। ভাল না লাগলে চলে আসব।‘
মিতা শুধু বলল, ‘দেরি কর না। আমার রান্না হয়ে গেছে। ঘরগুলো ঝেড়ে চানে যাবো।তখন আসলে দরজা খুলতে পারব না।‘
আমি উত্তর দিলাম, ‘না, অত দেরি হবে না।‘
আমি ঘরের থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। হাঁটতে হাঁটতে মোড়ের দিকে আসলাম। সেক্টর অফিস বন্ধ। তার মানে কেউ আসে নি। কার সাথে গল্প করব ভাবতে ভাবতে হাঁটা শুরু করলাম উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে। হটাৎ মনে পরল অ্যাডগুলোর কথা। ডাইরির পাতাটা বার করে মোবাইলটা বার করলাম পকেট থেকে। একটা নাম্বার মিলিয়ে কল করলাম। ফোনটা কিছুক্ষণ বাজার পর একটা মেয়ের গলার আওয়াজ পেলাম, ‘হ্যালো?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘আজ পেপারে আপনাদের অ্যাড দেখে ফোন করছি।‘
ওপার থেকে মেয়েটা বলে উটলো, ‘বলুন কি জানতে চান?
আমি একটু থেমে বললাম, ‘না, মানে আমি ব্যাপারটা জানতে চাইছি।‘
মেয়েটি একটু হেসে উত্তর দিলো, ‘দেখুন স্যার, আমরা একটা ফ্রেন্ডশিপ ক্লাব খুলেছি। যারা কথা বলবার বা সময় কাটাবার সাথী চান তারা এই ক্লাবে জয়েন করে। আমরা তাদেরকে সাথী পাইয়ে দিতে সাহায্য করি।‘
আমি ঠিক বুঝলাম না ব্যাপারটা। আমি বললাম, ‘যদি আর একটু ভেঙে বলেন।‘
ভেবেছিলাম মেয়েটা রাগ করবে। কিন্তু মেয়েটা আবার একটু হেসে জবাব দিলো, ‘আপনাকে উদাহরন দিয়ে বলি কেমন। ধরুন আপনার কেউ নেই অথচ আপনি সময় কাটাতে চান তখন আমরা আপনাকে মেয়ে বন্ধুর সন্ধান দোবো যাতে আপনি ওর সাথে কথা বলে সময় কাটাতে পারেন।‘
আমি বলে উঠলাম, ‘মানে এমনি এমনি আপনারা মেয়ে বন্ধু খুঁজে দেবেন?’
মেয়েটি তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, ‘না স্যার, এর জন্য আপনাকে আমাদের ক্লাবে মেম্বারশিপ নিতে হবে।‘
এবার আমি একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম। মেম্বারশিপ মানে কি বলতে চায় মেয়েটা। আমি প্রশ্ন করলাম, ‘মেম্বারশিপ মানে? একটু যদি বুঝিয়ে বলেন।‘
মেয়েটি একটুও না রেগে হেসে জবাব দিলো, ‘স্যার, এই ক্লাবে মেম্বার হতে গেলে আপনাকে ১০৪০ টাকা আর ৫ টাকা আরও দিতে হবে ব্যাংক চারজেসের জন্য। মানে আপনি যদি ১০৪৫ টাকা দেন তাহলে আপনি ক্লাব মেম্বারশিপ পাবেন। বদলে আপনাকে আমরা সপ্তাহে তিনটি করে মেয়ের ফোন নাম্বার দেব আপনি ওদের সাথে কথা বলতে পারেন।‘
আমি সন্দেহ প্রকাশ করলাম, ‘টাকা দেবার পড় কি গ্যারান্টি আছে যে আপনারা পালটী খাবেন না।‘ আমার একটু আস্বত্তি লাগলো পালটী শব্দটা বলতে। যতই হক একটা মেয়ের সাথে কথা বলছি।
কিন্তু মেয়েটাকে ভাল লাগলো কারন ও একটুও রাগল না বরঞ্ছ বলল, ‘আপনার সন্দেহ স্বাভাবিক। বাট আমরা একটা রেজিস্টারড ক্লাব। আমরা যদি চিট করি তাহলে কি আর এটা চালাতে পারবো? আজ ৫ বছর ধরে আপনাদের আমরা বন্ধু দিয়ে আসছি। ’
আমি মনে মনে বললাম একদম ঠিক কথা। মুখে বললাম, ‘আচ্ছা, এটা তো গেল ছেলেদের ব্যাপার। মেয়েরা কি করে?
মেয়েটা মনে হল হাসল। ও বলল, ‘এটা যদিও উত্তর না দেয়া ঠিক তবুও আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগলো বলে বলছি আমরা মেয়েদের রেজিস্টার করাতে কোন টাকা চাই না। দে আর ফ্রী টু রেজিস্টার।‘
আমার মনে হোল জিজ্ঞাসা করা উচিত সেটা কেন। কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে বলে চুপ মেরে গেলাম।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পড় মেয়েটা বলল, ‘তাহলে স্যার কি ঠিক করলেন, জয়েন করবেন।‘
আমি একটু চিন্তা ভাবনা করে বললাম, ‘ইচ্ছে তো ছিল। কিন্তু মনটা মানছে না যে।
মেয়েটা বলল, ‘কেন কোন প্রব্লেম আছে স্যার?’
আমি একটু তুতলিয়ে বললাম, ‘না প্রব্লেম কিছু না। ভাবছি আবার সেই আপনাদের অফিসে যেতে হবে টাকা দিতে।‘
মেয়েটি বলে উঠল, ‘না স্যার, সে কষ্ট আপনি কেন করবেন। আপনি শুধু বলুন রাজি আছেন। যদি থাকেন তো আমি এসএমএস করে কোন আকাউন্তে টাকা ভরবেন আমি পাঠিয়ে দোবো। আপনি শুধু ব্যাংক গিয়ে টাকাটা জমা দিয়ে দেবেন। বাকি কাজ আমি করে নেব।
আমি বললাম, ‘আমাকে একটু ভাবার সময় দিন। আমি আপনাকে জানাচ্ছি।‘
মেয়েটা বলল, ‘ওকে স্যার, নো প্রব্লেম। আপনি সময় নিন। আমার নাম নিকিতা। এটা আমার নাম্বার। আপনি ঠিক করে আমাকে জানাবেন কেমন? ছাড়ি তাহলে স্যার?’
ফোনটা কেটে দেবার পর আমি ভাবতে লাগলাম ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে কিনা বা উচিত কিনা। তারপর ভাবলাম কে দেখতে যাচ্ছে আমি কি করছি। বেগতিক দেখলে আমি কিছু জানি না এমন ভাব করব। তাছাড়া কতো টাকা তো কতো দিকে যাচ্ছে। একটু না হয় এক্সপেরিমেন্ট করলাম। প্রায় ৫ মিনিট পর আমি
আবার নিকিতাকে ফোন করলাম। ও বোধহয় আমার নাম্বারটা মনে রেখেছে। ফোনটা উঠিয়েই বলল, বলুন স্যার, মন স্থির করেছেন?’
আমি বেশি কিছু বললাম না, ‘নিকিতা, আপনি আমাকে এসএমএস করুন।‘
নিকিতা বলল, ‘ঠিক আছে স্যার, আমি এক্ষুনি করে দিচ্ছি। আপনি টাকাটা ভরে আমাকে কল করবেন। আর স্যার আরেকটা কথা, ডোন্ট ওরি স্যার, আমি আছি।‘
আমি ব্যাঙ্কের দিকে পা বাড়াতেই হটাৎ কাঁধের উপর হাত পরল কারো। আমি একটু চমকে উঠেছিলাম। পেছন ঘুরে দেখি স্বপনদা।
উনি আমার চমকানো দেখে বললেন, ‘কিগো চমকে উঠলে কেন? কিছু ভাবছিলে?’
আমি সুযোগটা নিয়ে বললাম, ‘আসলে মিতা যেন কি একটা আনতে বলছিল। ঠিক খেয়াল করতে পারছিনা। তা কোথায় চললেন?’
উনি উত্তর দিলেন, ‘কোথায় আবার। সেক্টরে কাউকে না দেখে ভাবলাম যাই একটু চা খেয়ে আসি। তারপরে দেখি তুমি।‘
আমি বললাম, ‘সেই ভাল। চলুন চাই খাওয়া যাক।‘
দুজনে মিলে হাঁটতে হাঁটতে চায়ের দোকানে গেলাম। দু কাপ অর্ডার দিয়ে একথা অকথা বলতে থাকলাম তারপর চা শেষ হয়ে যাবার পর সিগারেট ধরিয়ে স্বপনদাকে কাটাবার জন্য বলে উঠলাম, ‘হ্যাঁ, এইবার মনে পড়েছে মিতা কি আনতে বলেছিল। স্বপনদা আপনি সেক্টরে যান আমি কাজটা করেই ফিরছি।‘
ওকে কাটিয়ে দিয়ে আমি ব্যাঙ্কে এলাম আর ১০০০ টাকা এটিএম থেকে তুলে যেই পকেটে রাখতে যাবো ফোনে যেন এসএমএস এলো মনে হোল। আমি ফোনটা দেখে এসএমএসটা বার করে দেখি নিকিতার এসএমএস। ও অ্যাকাউনট নাম্বার আর যার নামে টাকা পাঠাতে হবে সেটা পাঠিয়েছে। আমি সেই মতো টাকা ভরে ব্যাঙ্কের বাইরে এসে নিকিতাকে ফোন করলাম।
ও ঠিক আমার নাম্বার মনে রেখেছে। ও ওপার থেকে বলল, ‘বলুন স্যার, টাকাটা পাঠিয়েছেন?’
আমি জবাব দিলাম, ‘হ্যাঁ, এইমাত্র পাঠালাম।‘
নিকিতা উত্তর দিলো, ‘ঠিক আছে স্যার, আমি চেক করে আপনাকে কল করছি।‘
কি করি কি করি করতে করতে ব্যাঙ্কের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি, একটা সিগারেট কিনে সবে ধারিয়েছি এমন সময় ফোন বেজে উটলো। বার করে দেখি নিকিতার ফোন। আমি হ্যালো বলতেই নিকিতার গলা ভেসে এলো, ‘স্যার, আমি নিকিতা বলছি।‘
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ বলুন, শুনতে পাচ্ছি।‘
নিকিতা সুন্দর গলায় উত্তর দিলো, ‘স্যার আপনার টাকাটা আমাদের ব্যাঙ্কে এসে গেছে। কিছুক্ষণ পড়ে আমাদের কাস্টমার কেয়ার এক্সেকিউটিভ আপনাকে ফোন করবে। উনি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবেন তারপরে আপনাকে কিছু নাম্বার দেবেন। আপনি পছন্দ মতন মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারেন।‘ নিকিতা খিলখিল করে হেসে উটলো।
আমি বোকার মতো প্রশ্ন করলাম, ‘ওই মেয়েগুলো আমার সাথে কথা বলতে যাবে কেন? তারা না আমাকে চেনে না আমাকে জানে।‘
নিকিতা আবার হেসে বলল, ‘যদি নাই কথা বলবে তাহলে ওরা নাম্বার দিলো কেন বলুন স্যার?’
আমি ঠিক নিশ্চিত না হয়ে বললাম, ‘ঠিকই তো। কিন্তু……।‘ আমি আমার ভাবনা হাওয়াতে ভাসিয়ে দিলাম।
নিকিতা সাহস দিলো, ‘স্যার, কিছু ভাববেন না। আমি তো আছি। কোন অসুবিধে হলে আমাকে ফোন করবেন।‘
আমি সাহস করে বলে উটলাম, ‘সে তো বটেই। যদি কিছু না হয় তাহলে তো আপনি আছেন। আপনাকেই বন্ধু করে নেবো।‘
নিকিতা আবার খিলখিল করে হেসে আমাকে বলল, ‘আরে স্যার সে তো আমি আপনার বন্ধু হয়েই গেলাম। এখন থেকে আমি আর আপনি বন্ধু। বাট ওরা যে ধরনের বন্ধু হবে সে রকম বন্ধু আমি হতে পারবো না। সরি স্যার।‘
আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। এ আবার কি কথাবার্তা। সে রকম ধরনের বন্ধু হতে পারবে না মানে কি বলতে চায় নিকিতা। আমি কনফিউস হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমি ঠিক বুঝলাম না নিকিতা। একটু বোঝাবেন দয়া করে অবশ্য যদি আপনার সময় থাকে।‘
নিকিতা বলে উটলো, ‘না স্যার আমি এখন একদম ফ্রী।‘ আমার মনে হোল নিকিতার গলা দিয়ে যেন কোকিলের স্বর বের হচ্ছে। এতো ভাল লাগছে ওর গলাটা। আমি শুনতে পেলাম নিকিতা বলছে, ‘এখন যখন আপনি আমাদের মেম্বার হয়ে গেছেন তখন আপনাকে আমি বলতে পারি। আপনি বলুন স্যার কখন আপনি একজন অচেনা অজানাকে আপনার নিজের করে নেবেন। তখন যখন আপনার আর হারাবার কিছু নেই। এই মেয়েগুলো মানে যাদের নাম্বার আপনি পাবেন আমাদের কাছ থেকে তারা সব মেম্বারশিপ নিয়েছে কোন পয়সা না দিয়ে। মানে এদের সব ফ্রী মেম্বারশিপ। আবার মেম্বার হবার সময় আমাদের ওদের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে দিয়েছে। কার কতো বয়সের বন্ধু দরকার, কি ধরনের বন্ধু দরকার আরও কতো কি। ওদের ইচ্ছে শুনলে আপনি ভাববেন এ আবার কি।‘ আমি অনেক্ক্ষণ চুপ আছি দেখে নিকিতা বলে উটলো, ‘স্যার আপনি শুনছেন তো?’
আমি হরবরি করে বললাম, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি শুনছি, আপনি বলুন।‘
ও বলতে থাকল, ‘ওদের সাথে কথা বলে দেখবেন স্যার ওদের চাহিদা কতো ধরনের।‘
আমি ঘাবড়ে গেলাম, ‘মানে, মানে ওরা টাকা পয়সা চাইবে নাকি?’
নিকিতা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, ‘আরে না না স্যার, ওসব কিছু ওদের চাহিদা নেই।‘
আমি তখনো কনফিউসড। আমি সরল ভাবে বললাম, ‘তো?’
(চলবে)

Post a Comment

0 Comments