নিকিতা একটু থেমে বলল, ‘ওরা যেটা চায় সেটা হোল দেহ। আসলে ওরা কেউ স্বামীহারা, কারো বা স্বামী চলে গেছে ছেড়ে অন্য মেয়ের সাথে, কেউ বা ডিভোরসি, কেউ এখনো বিয়ে করে নি। বাট দেহের ইচ্ছে তো আছে নাকি বলুন স্যার।‘
আমি বোকার মতো সায় দিলাম, ‘সে তো বটেই।‘
নিকিতা বলল, ‘ঠিক তাই। ওরা আপনার কাছে সুখ চাইবে। দেহের সুখ।‘
আমি প্রশ্ন করলাম, ‘আর বন্দুত্ব?’
ও বলে উটলো, ‘চুলোয়ে গেছে বন্ধুত্ব। কতদিন হোল ওরা সম্ভোগ করে নি। দেহ কি আর মানে?’
নিকিতা এমন ভাবে বলছে যেন সে খুব অভ্যস্ত। যেন সে কতো জনের সাথে সম্ভোগ করেছে। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কিন্তু আপনি জানেন আমার বয়স কতো?’
নিকিতা খুব স্বাভাবিক গলাতে বলল, ‘কতো হবে… আপনার গলা শুনে মনে হচ্ছে ৫০ এর মাঝামাঝি।‘
আমি অবাক হলাম তার চিন্তাশক্তি দেখে। প্রায় ঠিক বলে দিয়েছিল। আমি ৫০। ৫৫ তে কি ডিফারেন্স আছে। তো আমি জবাব দিলাম, ‘আপনি প্রায় ঠিক বলেছেন। আমার ৫০।‘
নিকিতা হেসে বলল, ‘আর আপনি সেক্সুয়ালি নিশ্চয় একটিভ? দেবেন ওদের মজা দেবেন।‘ আবার কোকিল গলায় খিলখিল করে হেসে উঠলো।
আমার মনে হোল ও বুঝি আমার সাথে মজা করছে। কিন্তু এই কথাবার্তায়ে আমিও মজা পাচ্ছি ঠিক। আমি শুনতে পেলাম নিকিতা বলছে, ‘স্যার কি মাইন্ড করলেন আমার কথায়?’
আমি বলে উঠলাম, ‘না না এমা ছিঃ। মাইন্ড করব কেন? আমি ভাবছি। যদি সে রকম হয় তাহলে আমি কতোটা সাকসেসফুল হবো?’
নিকিতা প্রশ্ন করল, ‘কেন স্যার আপনার স্ত্রী নেই?’
আমি বললাম। ‘হ্যাঁ, আছে তো বটে।‘
নিকিতা ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘তাহলে স্যার?’
আমি বললাম, ‘না, আপনি যা ভাবছেন সেরকম কিছু নয়। অতোটা আর মাতামাতি হয় না।‘
নিকিতা আবার হেসে উঠল শ্বব্দ করে, ‘মাতামাতি তো হয় স্যার।‘
আমি মিথ্যা বলে উঠলাম, ‘ওই ধরুন মাসে একবার হয়তো।‘ লজ্জা লাগছিল একটা মেয়েকে এইভাবে বলতে। কিন্তু প্রশ্ন তো ও করেছে।
মেয়েটি উত্তর দিলো, ‘ওসব নিয়ে ভাববেন না স্যার। সম্ভোগ মানে যা বোঝায় সে রকম ওদের দরকার পড়ে না। ওরাও জানে কতোটা কি করা উচিত। আমি একটা মেয়ে হিসেবে ওদের সাথে কথা বলে যতটা বুঝেছি সেটা হোল ওরা শুধু দৈহিক সুখ চায়। এবং সেটা যতটা বিপদ থেকে বেঁচে পাওয়া যায়। মানে সঙ্গম নয় অন্য কিছু। ওরা ওরাল সেক্সে খুব বিশ্বাস করে। আশা করি স্যার জানেন আমি কি বলতে চাইছি।‘
স্যার জানে মানে খুব ভাল ভাবে জানে। আমি মনে মনে ভাবলাম। যাহোক নিকিতাকে আর ডিস্টার্ব না করে ফোনটা কেটে দিলাম। এখন শুধু অপেক্ষা কলের আশায় বসে থাকা।
ঘরে ফিরে দেখি মিতা স্নান করবার জন্য প্রায় তৈরি। একটা গামছা দিয়ে পুরো শরীরকে ঢেকে রেখেছে। এমনিতে মিতার শরীরের গঠন খুব ভাল। স্তন দুটো এই ৪৫ বছরে এখনো সুডৌল। গামছার ভেতর দিয়ে স্তনবৃন্ত দুটো পরিস্কার ঠেলে বেড়িয়ে আছে। পেটটা বয়স আন্দাজে এখনো শিথিল হয় নি। ও আমাকে দেখে বলে উঠলো, ‘ভালই হয়েছে তুমি চলে এসেছ। আমি জাস্ট স্নান করতে যাচ্ছিলাম।‘
বলেই ও পেছন ফিরে বাথরুমের দিকে চলতে লাগলো। আর আমি পেছন থেকে ওর ভরাট পাছা দুটোর ওঠানামা দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলাম যেটা করছি ঠিক করছি কিনা।
বেশ কিছুক্ষণ পড়ে মিতা স্নান সেরে বেড়িয়ে এলো। ও এখন পুজো করতে বসবে। আমি স্নানে গেলাম। দরজা বন্ধ করে গামছা খুলে দিলাম। সামনের বড় আয়নাতে নিজেকে দেখলাম। ৫০ এ স্বাস্থ্য আমার খারাপ না। এমনিতে আমার চেহারা বরাবরের ভালই। ছোটবেলাতে ভালই খেলাধুলা করতাম। তাই স্বাস্থ্য এখনো ভালই। তবে যেটা আমার খারাপ সেটা হোল আমার লিঙ্গ। দেহের আনুপাতে সাইজটা ছোট। আয়নাতে দেখলাম নিজেকে। শিথিল আবস্থাতে খুবই ছোট আর শক্ত হলে বড়জোর সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি হবে। মিতা অবশ্য কোনদিন কমপ্লেন করে নি। যখন সঙ্গম করতাম ওর মুখ চোখ দেখে মনে হত ও আরামই পাচ্ছে।
যা হোক এখন এ সব ভেবে কোন লাভ নেই। কারন এখন সঙ্গম তো দূর অস্ত। স্নান সেরে বেড়িয়ে খাবার খেয়ে ঘুমোতে গেলাম আর মিতা বসে বসে টিভি দেখতে লাগলো। মোবাইলটা আমিসাথেই রাখলাম বলা যায় না কখন নিকিতা ফোনে করে বসে।
বিকালে মিতা ওর বোনের বাড়িতে ঘুরতে যায়। প্রায় দু ঘণ্টা গল্প করে তারপর আসে। নিয়ম করে আজ বেড়িয়ে গেল ও দিদির বাড়ি। আমি একটু টিভিতে খবর দেখছিলাম হঠাৎ ফোনের রিং বেজে উঠলো। আমি ফোনটা তুলে দেখলাম নিকিতা। কি ভাগ্যিস মিতা বেড়িয়ে গেছে। ও থাকতে ফোনটা এলে কি করতাম কে জানে। আমি গেটের সামনে এসে দাঁড়ালাম পাছে মিতা এসে পড়ে তাহলে সাবধান হওয়া যাবে। আমি হ্যালো বলতেই নিকিতা বলে উঠলো, ‘স্যার, গুড ইভিনিং। নিকিতা বলছি। ভুলে জাননি তো? ভাবছেন বুঝি মেয়েটা সত্যি ধোঁকা দিলো। আর ফোনে করল না।‘
আমি হা হা করে বলে উঠলাম, ‘একি বলছেন আপনি নিকিতা! আমি সে রকম কিছু দেখিয়েছি নাকি?’
নিকিতা খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, ‘না স্যার, আসলে কি জানেন স্যার, আমি খুব ইমপ্রেসড আপনার উপর। আমাদের অনেক কাস্টমার নিয়ে ডিল করতে হয় বাট তারা কেউ আপনার মতো না। তাই আমি স্পেশাল ইন্টারেস্ট নিয়েছি আপনার বান্ধবী খোঁজবার। স্যার, একটা কথা বলবেন আপনার কোন বয়সের মেয়ে হলে ভাল হয়? আমার কাছে ২০ থেকে ৬০ পর্যন্ত আছে। আপনার পছন্দটা জানলেই আমি কাজে নেবে পড়ব। তবে আপনার বন্ধু হয়ে একটা উপদেশ দোবো, ৪৫ এর উপর যাবেন না।‘
আমার একটু আশ্চর্য লাগলো। কেন ৪৫ এর উপর না? আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন বলুন তো ৪৫এর উপর নয়?’
নিকিতা হেসে বলল, ‘আমাকে বলতে বাধ্য করাবেন?’
আমি একটু রহস্য আছে বুঝতে পেরে বললাম, ‘প্লিজ বলুন না।‘
নিকিতা একটু রাগার ভঙ্গিমা করে বলল, ‘স্যার, আপনার সত্যি এজ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। না হলে এতো ভেঙে বলতে হয়।‘
আমার একটু লজ্জা লাগলো ওকে এ ভাবে বলতে শুনে। আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম, ‘ঠিক আছে, বলতে হবে না। বোধহয় আমি বুঝতে পেরেছি।‘
নিকিতা ততোধিক ভনিতা করে বলল, ‘আপনি ছাই বুঝেছেন। শুনুন, আপনাকে বলছি ৪৫এর উপর যারা মেয়েরা থাকে তাদের শরীরে আর কিছু থাকে না। সব কিছু দেখবেন নষ্ট হয়ে গেছে। আরও পরিস্কার করে বলি, ওদের স্তন, পাছা সব দেখবেন ঝুলে গাছে। ও হ্যাঁ, বউদির বয়স কতো হবে স্যার?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘কতো হবে ৪৫ই হবে।‘
ও বলল, ‘বউদিকে ভাল করে দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেন। যাই হোক আমি আপনার জন্য ৪৫এর মধ্যে ঠিক করছি কেমন?’ বলেই ফোনটা কেটে দিলো। আর আমি বোকার মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখীদের উড়ে যাওয়া দেখতে থাকলাম।
প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর ফোনে এসএমএস এর শব্দ শুনতে পেলাম। মেসেজ বক্স খুলে দেখলাম একটা মেসেজ। খুলতে দেখি তিনটে নাম আর ফোন নাম্বার। একটা চন্দনা, একজন শেফালি আরেকজন বিদিশা। আমি ঠিক করলাম ঘরের থেকে ফোনে করলে ভুল হতে পারে। তাই চটজলদি জামাপ্যান্ট পড়ে দরজায় চাবি দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। মিতার কাছে গিয়ে চাবি দিয়ে বললাম, ‘আমি একটু ঘুরে আসি।‘ মিতা তখন ওর দিদির সাথে গল্প করছিলো। আমি একটু দিদির সাথে কথা বলে বেড়িয়ে পড়লাম যেন ইভিনিং ওয়াক করতে যাচ্ছি। আমি জানি গল্প শেষে মিতা ঘরে ফিরে যাবে।
হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরে চলে এসেছি। এখন নিশ্চিন্তে ফোনটা করতে পারি। ফাঁকা জায়গা দেখে বসলাম আর একটা সিগারেট ধরিয়ে নাম্বারগুলো আবার দেখলাম। আবার ফোনটা বেজে উঠলো আর যথারীতি নিকিতা। আমি হ্যালো বলাতেই ও বলে উঠলো, ‘নাম আর নাম্বার পেয়ে গেছেন স্যার?’
আমি জবাব দিলাম, ‘থ্যাঙ্ক ইয়ু নিকিতা। আমি ওদেরকে ফোন করব।‘
নিকিতা হেসে উত্তর দিলো, ‘শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য। তবে হড়বড় করবেন না স্যার, সময় নিয়ে যা করার করবেন। এই ছোট বন্ধুর উপদেশ। দেখবেন ওরা আপনি যা চাইবেন দিয়ে দেবে, দেহ পর্যন্ত। সময় ভাল করে কাতান। আর হ্যাঁ, আবার আমি আগামি শনিবার আপনার সাথে কথা বলব। তবে এর মধ্যে যদি হেল্পের দরকার হয় আমাকে ফোন করতে ভুলবেন না, কেমন?’ ও ফোনটা কেটে দিলো।
আমি চন্দনার নাম্বারে ফোন লাগালাম। কিছুক্ষণ ফোনটা বাজতে লাগলো আর আমার বুকের ধুকপুকানিও বেড়ে চলল। ও প্রান্ত থেকে হ্যালো ভেসে আসতেই আমিও হ্যালো বললাম।
ও প্রান্তের মহিলা বলল, ‘ইয়েস, কে বলছেন?’
গলার আওয়াজ শুনে মনে হোল খুব খারুশ মহিলা। আমি উত্তর দিলাম, ‘একটা সংস্থা আপনার নাম্বারটা দিয়েছে বন্ধুত্ব করার জন্য।‘
মহিলা বলে উঠলো, ‘তো, তার জন্য আমি কি করতে পারি?’
ওনার গলা শুনে মনে হচ্ছে উনি স্বাভাবিক নন, কেমন যেন গা ছাড়া গা ছাড়া ভাব। এমন জনের সাথে আর অন্য কিছু হলেও বন্ধুত্ব হয় না। আমি হাল ছেড়ে বললাম, ‘আপনি একটাই কাজ করতে পারেন ফোনটা রাখতে পারেন।‘ বলে আমি ফোনটা কেটে দিলাম। ধুত্তোর মুডটা অফ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর ভাবলাম অন্য আরেকজনকে চেষ্টা করা যাক।
শেফালির ফোন লাগালাম। দুবার রিং বাজতেই একটা মেয়ের গলা শোনা গেল। ‘হ্যালো, কাকে চাই?’
আমি ধীরে ধীরে বললাম, ‘শেফালি বলছেন?’
ওপার থেকে উত্তর এলো, ‘হ্যাঁ, আমি শেফালি বলছি। আপনি?’
আমি জবাব দিলাম, ‘এই মুহূর্তে আপনি আমাকে চিনতে পারবেন না। আসলে আপনার নাম্বারটা একটা ফ্রেন্ড ক্লাব থেকে আমাকে দিয়েছে। আপনিকি কথা বলতে ইচ্ছুক আমার সাথে?’
ভদ্রমহিলা জবাব দিলেন, ‘আপনার পরিচয়টা দিলে দেখতাম।‘
আমি পরিচয়টা দিলাম, ‘আমার নাম গৌতম। চাকরি করি একটা এমএনসি কোম্পানিতে। বয়স ৫০। বন্ধুত্ব করার জন্য ফোন করা।‘
শেফালি বলে উঠলো, ‘কতো বয়স বললেন?’
আমি উত্তর করলাম, ‘৫০।‘
শেফালি তুরন্ত জবাব দিলো, ‘সরি গৌতমবাবু, আমি একটু কম বয়সের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই, এই ধরুন ৩৫ কিম্বা ৩৬। কিছু মনে করবেন না।‘
আমি বললাম, ‘আরে না না, এতে মনে করার কি আছে। আপনার যেরকম পছন্দ সেটা তো চাইবেনই। ওকে, ধন্যবাদ, এইটুকু টাইম দেবার জন্য।‘ আমি ফোনটা কেটে দিলাম। একটা সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে চাইলাম দেখলাম একটা নিঃসঙ্গ পাখি ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে। ভাবলাম ওরও বোধহয় আমার মতো কোন সাথী নেই। কিন্তু মেয়েটা বলল ওর নাকি ৩৫-৩৬ বয়সের সাথে বন্ধুত্ব করার ইচ্ছে। ওর বয়স কতো তাহলে? ওর কি ৩০/৩২? কিন্তু গলা শুনে তাতো মনে হোল না। নিকিতাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। একটা কেমন খুঁতখুঁত রয়ে গেল ভিতরে। বয়সটা নিয়ে।
লাস্টজনকে চেষ্টা করব? দুটো ফেল হোল। আর ফেলের হার বাড়াবো কি? দেখাই যাক না। কি হারাবো আর, আগামি শনিবার নিকিতাতো আবার নাম্বার দেবে। দোনামোনা করতে করতে কখন যেন ডায়াল করে ফেলেছি, সম্বিত ফিরল ‘হ্যালো’ শুনে। ওপার থেকে কেউ যেন ‘হ্যালো’ বলছে। আমি হ্যালো বলতেই মেয়ের গলা, ‘কে বলছেন?’
আমি জবাব দিলাম, ‘বিদিশা বলছেন? আপনার নাম্বারটা আমাকে একটা ফ্রেন্ডক্লাব দিয়েছে। আর ইউ ইন্টারেস্টেড ফ্রেন্ধশিপের জন্য?’
বিদিশা বলে উঠলো, ‘ইয়েস, আমি বিদিশা। আর আমি ইন্টারেস্টেড বলেই তো আমার নামটা দাখিল করিয়েছি। আপনি কি আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক?’
উলটো প্রশ্ন একেবারে। আমি ঠিক তৈরি ছিলাম না এর জন্য। আসলে দুটো নেগেটিভ উত্তর পেয়ে আর কিছু ঠিক করতে পারি নি। আমি উত্তর দিলাম, ‘নাহলে ফোন করা কেন? বন্ধুত্ব করব বলেই তো। আসলে আপনার প্রশ্নের জন্য ঠিক তৈরি ছিলাম না। আপনি একটা মেয়ে হয়ে আমাকে প্রশ্ন করছেন আমি আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে রাজি কিনা। আমি তো একটু চমকাবোই।‘
তারপরের উক্তিটা একেবারে বাউন্সার। বিদিশা বলে উঠলো, ‘ও আচ্ছা, মানে এটাই বলতে চান আপনারা ছেলেরা নিজের ইচ্ছেমতন যা পারেন তাই বলতে পারেন আমরা মেয়েরা নয়, তাই তো?’
কি জবাব দোবো এটার। যা মাথাতে এলো বলে দিলাম, ‘না না, একদম সেটা নয়। বরঞ্চ মেয়েরা আজকের যুগে অনেক অ্যাডভান্স। ছেলেরা একটু ব্যাকওয়ার্ড হয়েছে ওদের তুলনায়।‘
বিদিশা আর কথা বাড়াল না। ও অন্য প্রশ্ন শুরু করল, জিজ্ঞেস করল, ‘আশা করব আপনার স্ত্রী আছে?’
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম, ‘হ্যাঁ, আছে।‘
বিদিশা- ‘তাহলে আপনি বন্ধু খুঁজছেন কেন? স্তী কি যথেষ্ট নয়?’
আমি- কি হিসাবে? বন্ধু না সঙ্গী হিসাবে?
বিদিশা- বন্ধু বা সঙ্গী যাই বলুন।
আমি- সাংসারিক সঙ্গী ঠিক আছে। বন্ধু বোধহয় নয়।
বিদিশা- একটা স্ত্রী সবসময়ের বন্ধু, সঙ্গী।
আমি- বিদিশাদেবী, আপনিও তো সংসার করেন। আপনারও তো স্বামী আছে। আপনি কি মনে করেন স্বামী সবসময়ের বন্ধু?
বিদিশা- দুর্ভাগ্য, আমার স্বামী আজ থেকে ৫ বছর আগে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
কিছু সময় আমরা দুজনে চুপ। একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আমি একটু শকড। এই উত্তর আশা করিনি। নিকিতার কথা মনে পড়লো। যাদের স্বামী নেই তারাই বন্ধুত্তের খাতায় নাম লেখায়। আমার হয়তো উচিত ছিল না প্রশ্নটা করার। কিন্তু বলে ফেলেছি, ফেরাবার তো আর উপায় নেই।
বিদিশার গলা শুনতে পেলাম, ‘কি হোল, আপনি কি লাইনে আছেন?’
আমি- না, আমার মনে হয় প্রশ্নটা করা আমার ঠিক হয় নি। আই অ্যাম সরি।
বিদিশা- ওহ, নো প্রব্লেম। বন্ধুত্ব করবেন অথচ প্রশ্ন করবেন না, তাকি হয় নাকি। এনি ওয়ে আপনি জিজ্ঞেস না করলেও আমি বলতাম। আমি এখন সংসার করি আমার ছেলের জন্য।
আমি- ক বছর আপনার বিয়ে হয়ে ছিল?
বিদিশা- আমি আমার বিয়ের ১২ বছর পর আমার স্বামী হারিয়েছি। আমি বিয়ে করেছিলাম ২৪ বছর বয়সে।
আমি ভাবলাম স্মার্ট গার্ল। বয়সটা ঘুরিয়ে বলল। ওর বয়স এখন তাহলে ৩৬। আমার মনে হয় আমার বয়সটা বলে দেওয়া উচিত। আমি বললাম, ‘আমার বয়স আন্দাজ করুন তো কতো হবে?’
বিদিশা বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে বলে দিলো, ‘৫০।‘
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। একদম ঠিক কি করে বলে দিলো। অন্তর্যামী নাকিরে বাবা। আবার
বিদিশার গলা শুনতে পেলাম, ‘কি হল মশাই বোলতি বন্ধ হয়ে গেল নাকি বয়সটা ঠিক বলাতে?’
আমার মনে হল আমাকে মেয়েটি মুরগী করছে। কেমন পিন করছে দেখ। আমি বললাম, ‘না না, বোলতি বন্ধ হবে কেন। আমি আশ্চর্য হচ্ছি একদম সঠিক বললেন কি করে?’
বিদিশা- খুব সোজা। নিকিতা আমাকে ফোনে করে আপনার ব্যাপারে বলেছে।
আমি- নিকিতা? হঠাৎ ও আমার ব্যাপারে আপনাকে বলতে যাবে কেন?
বিদিশা- সে আমি জানি না। তবে আপনাকে দেখলাম ও খুব পছন্দ করে। ইন ফ্যাক্ট আমি কিন্তু আপনার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলাম।
আমি- সৌভাগ্য আমার। শুনে খুব ভাল লাগলো।
বিদিশা- বললেন না তো বউ থাকা সত্ত্বেও আপনি মেয়ে বন্ধু পেতে ইচ্ছুক কেন?
আমি- জানেন বিদিশাদেবী……
বিদিশা আমাকে মধ্যপথে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘কি বিদিশাদেবী বিদিশাদেবী লাগিয়ে রেখেছেন তখন থেকে।
পুরনো যুগের মতো। যথেষ্ট ব্যাকডেটেড আপনি।‘
আমি ভাবলাম শালা আজকে মেয়েটার কাছে প্রচুর ঝাড় খাচ্ছি দেখছি।
আমি চমকে উঠলাম ওর গলা শুনে। ও বলছে, ‘হ্যাঁ বলুন কি বলছিলেন। ও হ্যাঁ আপনারতো নামই জানিনি।‘
আমি- আমার নাম গৌতম।
বিদিশা- আর আমি বিদিশা। হ্যাঁ বলুন গৌতম কি বলছিলেন।
আমি তুতলিয়ে বললাম, ‘বিয়ের অনেক বছর পড়ে স্ত্রী আর স্বামীর রিলেশান শুধু কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাতে থাকে শুধু তুমি ভাল আছ কিনা, শরীর ঠিক আছে কিনা, সংসারে কি কম আছে কি আনতে হবে। কোন নতুনত্ব কিছু নেই। সেই উদ্দাম যৌবন, সেই চোখের লুকোচুরি খেলা, একে অন্যকে ছোঁওয়ার পাগলামো সব সংসারের সমুদ্রে হারিয়ে গেছে। তাই একটু মন খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করে। তাই বন্ধু খোঁজা।‘
বিদিশা বলল, ‘গৌতম আপনার বন্ধু হতে আমার আপত্তি নেই। যদি আপনি চান। আই অ্যাম গ্ল্যাড টু বি উর ফ্রেন্ড।‘
আমি- আই অ্যাম ওনারড টু গেট ইয়ু অ্যাজ এ ফ্রেন্ড।
বিদিশা- যেহেতু আপনার স্ত্রী আপনার সাথে থাকে আমি আপনাকে ফোন করব না। আপনি আমাকে ফোন করবেন। আমি সবসময় আভেলেবল।
আমি- খুব ভাল সময় কাটল বিদিশাদেবী……সরি সরি বিদিশা। আর নিকিতাকেও থ্যাঙ্ক ফর হেল্পিং টু গেট অ্যা ফ্রেন্ড লাইক ইয়ু।
বিদিশা- তো শুভরাত্রি। অপেক্ষা করে রইলাম আপনার ফোনের জন্য।
বিদিশা আর কথা বলার সুযোগ দিলো না, ফোনটা কেটে দিলো। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে উঠে পড়লাম বাড়ীর দিকে যাবার জন্য। দিনটা ভালই গেল।
আমি বাড়ি পৌঁছে দেখি মিতা বসে টিভি দেখছে। আমি ঢুকতেই জিজ্ঞেস করল, ‘চা খাবে?’
আমি বললাম, ‘তুমি চা খাওনি?’
ও মাথা নাড়াতে আমি বললাম, ‘ঠিক আছে তুমি টিভি দেখ আমি চা বানিয়ে আনছি।‘ বলে আমি রান্নাঘরে চলে গেলাম। চা বসিয়ে মুড়ির টিনটা বার করলাম আর পেঁয়াজ তেল দিয়ে ভাল করে মুড়ি মেখে চা বানিয়ে নিয়ে গেলাম। আমি আর মিতা চা খেলাম আর কিছুটা সময় ওর সাথে টিভি দেখলাম। ওকে দেখি খুব মনোযোগ দিয়ে ওর ফেভারিট সিরিয়াল দেখছে। আমি ওকে ডিস্টার্ব না করে একটা সিগারেট খেতে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। সিগারেটের ধোঁয়া গিলতে গিলতে বিদিশার কথা ভাবছি। মনে হচ্ছে বন্ধুত্বটা ভালই হবে। ওকে মনে হল খুব মিশুকে। বন্ধুত্ব করতে জানে। দেখা যাক কালকে কি কথা হয়।
তারপরের দিন অফিসে বসে কাজ করছি এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখি নিকিতা। হ্যালো বলতে নিকিতা বলল, ‘স্যার, কাল কথা হোল বিদিশার সাথে? কেমন লাগলো?’
আমি ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, ‘থ্যাঙ্ক উ নিকিতা বিদিশার নাম্বারটা দেবার জন্য। মনে হোল ওর সাথে বন্ধুত্বটা জমবে।‘
নিকিতা জবাবে বলল, ‘উ আর ওয়েলকাম স্যার। আপনার ভাল লাগলে আমারও খুব ভাল লাগবে। চালিয়ে যান আর যদি কোন প্রব্লেম হয় আমাকে ফোন করবেন কেমন? ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা, আপনি তো আপনার বন্ধু পেয়ে গেলেন, বৌদির কি হবে?’
(চলবে)
0 Comments