সেদিন বিকেলে সুজাতা গঙ্গার পারে হাটতে যাবে রান্তার সাথে. তখন সন্তু ওর সাথে কথা বলতে পারবে. কিন্তু সুজাতা থাকবে. একলা একলা হবে না. এই রকম পরিকল্পনা করা হলো. এবং তার বাস্তব রুপায়ন হলো. সন্তু বলল, “কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না. সুজাতা তোমাকে আমার কথা বলেছে. আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি. তোমার উত্তরের ওপর অনেক কিছু অপেক্ষা করছে.”
মাঝে থেকে সুজাতা বলল, “আমি কিছু কিন্তু বলিনি.”
রান্তা সহজভাবে বলল, “তোমার যা যা গুন আছে বা তুমি যেরকম তাতে তুমি যে কোনো মেয়ে পেতে পারো. আমার প্রশ্ন আমাকে কেন? মানে আমার কি দেখে তোমার পছন্দ হলো?”
এত বড় কঠিন প্রশ্ন. ওর সব ভালো লাগে. বিশেষ কিছু না. টোটাল প্যাকেজ. সন্তু বলল, “তোমার সব ভালো লাগে. আমি তোমার জন্যে চাঁদ, তারা এনে দেব বা জগতে সব থেকে সুখী করে রাখব, এই ধরনের কোনো কথা বলতে পারব না. আমার সাথে মিশলে আমায় চিনবে. আশা করি খারাপ লাগবে না.” রান্তা ওর উত্তর শুনে খুব সন্তুষ্ট হলো না.
রান্তা বলল, “আমার আর একটা কথা আছে. যদি তোমার সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে রাজি হই তাহলে আমাকে কোনদিনও ছেড়ে দেবে না তো?”
সন্তু বলল, “দেখো এইসময় এই প্রশ্নের উত্তর কখনো না হয় না. কিন্তু পরে কি হবে সেটা পরে ঠিক করাই ভালো. এইটুকু শুধু বলতে পারি যে আমার ওপর ভরসা করতে পারো আর ভবিষ্যতে যা করব দুইজনে মিলে করব. একা একা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না.”
রান্তা বলল, “আমার আর একটা কথা আছে?”
সন্তু বলল, “আবার কি?”
রান্তা লজ্জা জড়ানো মুখে বলল, “তোমাকেও আমার খুব পছন্দ.”
ব্যাস সন্তুকে আর পায় কে. গোটা দুনিয়া ওর কাছে. সব থেকে সুখী মানুষ. জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন. প্রথম প্রেম. প্রথম প্রেম সেটা আবার সফল. খুব কম ভাগ্যবান ছেলের কপালে এটা জোটে. কিশোরী বয়সী মেয়েদের খুব দেমাক থাকে. রূপসী হলে তারা তো মাটি হাঁটে না. বাতাসে ভেসে বেড়ায়. তাই কোনো ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দিলে কোনো ভাবার আগেই না বলে দেয়. অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে তবে তার মন পাওয়া যায়. সন্তু হয়ত নিজেকে খুব ভালো করে চেনে না. তাই ওর যে গুন, রূপ আছে তার ওপর ভরসা করতে পারে নি.
এরপর সন্তু আবার মিকুনিতে এলো পুজোর ছুটিতে. মাকে সব বলেছে. মাকে সব বলে. তাই রান্তার কথা বলতে কোনো দ্বিধা করে নি. ছেলের পছন্দ মায়ের পছন্দ. মাঝে হোস্টেলের ঠিকানায় রান্তা চিঠি দিত. আর সন্তু চিঠি দিত সুজাতাকে. সেটা সুজাতা সঠিক ঠিকানায় পৌছে দিত. এইভাবে ওদের যোগাযোগ হত. পুজোতে এবার সন্তুর সব থেকে বেশি আনন্দ. তার রান্তা আছে. পুজোতে ওর জন্যে জামা কাপড় আনতে পারে নি. এত বড় আকারের উপহার দেওয়া যায় না. জামা কাপড় দিলেই অনেকের অনেক প্রশ্ন জাগতে পারে. কোথায় কিনলি, কে দিল ইত্যাদি. ওর জন্যে তার পরিবর্তে এনেছে এটা সোনার চেইন. যেটা ওর গলায় থাকবে আর সব সময় সন্তুর কথা মনে পরিয়ে দেবে. সব সময় চেইন নয়, সন্তুই থাকবে ওর সাথে. ওর বুকের মাঝে. পুজোর দিনগুলো সবার জন্যে সত্যি খুব আনন্দের, রঙিন. রান্তা আর সুজাতা এসেছে চঞ্চলদের আম বাগানে. অষ্টমী পুজোর সন্ধ্যা. সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত. আগের পরিকল্পনা মাফিক ওরা দেখা করলো. নতুন জামা কাপড়. উত্সবের রোশনাই, শব্দের কোলাহল থেকে একটু দূরে, একটু নির্জনে. জায়গাটা একটু আবছা মত.
সুজাতা বলল, “বেশি সময় পাবে না. আমি এই পিছন ফিরে তাকালাম. তাড়াতাড়ি প্রেম শেষ কর. আমরা আবার ফিরে যাবে. কেউ জানতে পারলে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে.”
সন্তু বলল, “তুই থাম তো. একেই দেখা পাই তো কথা হয় না…. তার মধ্যে আবার তাড়া দিচ্ছে.”
রান্তা বলল, “ও ঠিকই বলেছে. তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে.”
সন্তু ওর পাঞ্জাবির পকেট থেকে চেইনটা বের করলো. ওকে পরিয়ে দিল. ওকে একটু জড়িয়ে ধরল. মুখটা নামিয়ে একটা চুমু দিল ওর ঠোঁটে. সন্তুর প্রথম চুম্বন. রান্তার প্রথম চুম্বন. কি অসাধারণ অনুভূতি!! নিজের প্রেমিকার প্রথম চুম্বন ওর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকলো. রান্তা বুঝে ওঠার আগেই চুমুটা দিয়ে ফেলল. লজ্জা পেয়ে সন্তুকে সরিয়ে দিল. সন্তু বলল, “এই হারটা তোমাকে দিলাম. আমি হার হয়ে তোমার সাথে থাকব. এই পরিয়ে দিলাম, আর কোনো দিন এটা খুলো না. আমাকে আলাদা কর না.”
রান্তা ওকে জড়িয়ে ধরল. নিজেকে ওর সাথে মিশিয়ে দেবার ইচ্ছা.
সুজাতা তাড়া দিল, “রান্তা চল্.”
রান্তা সন্তুকে বলল, “এই দিনটা জীবনে ভুলব না.”
সন্তু বলল, “আমিও.”
ওরা চলে গেল.
এরপরে ওর সাথে সন্তদের শহরে দেখা হয়েছিল. সুজাতার কি একটা কাজ ছিল, তাই রান্তাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল. সুজাতা সন্তুকে হোস্টেলে ফোনে করে জানিয়ে দিয়েছিল. আসলে যাতে ওদের দেখা হয় সেই জন্যেই রান্তার বাবার সাথে কথা বলে, রাজি করিয়ে এনেছিল. সন্তুদের শহরে যে বিখ্যাত পার্ক ছিল, ‘নেতাজি পার্ক’ সেখানে দেখা করবার বন্দোবস্ত হয়েছিল. রান্তা ভাবতেই পারেনি যে সন্তু ওর মাকে সাথে করে নিয়ে আসবে. আর এসেছিল ওর ছোট ভাই. নাম বলেছিল, ‘অন্তু’. খুব দুষ্টু ছিল. কিন্তু রান্তার খুব পছন্দ হয়েছিল. সন্তুর মাকে দেখে নিজের না থাকা মায়ের অভাব বোধ করছিল. ওর মা থাকলে হয়ত ওনার মতই হত. আলাদা করে রান্তাকে সন্তু মা বলেছিলেন, “রান্তাকে যদি বউ করে ঘরে আনতে পারি সেটা আমার বড় সৌভাগ্য হবে. দেখো বাড়ির সবাই তোমাকে খুব পছন্দ করবে.”
কিন্তু সেই সৌভাগ্য হলো না. রান্তার বাবা ওর বিয়ে অন্য জায়গাতে ঠিক করেছেন. সব জানার পরে সন্তু ওর মাকে জানিয়েছিল. কিন্তু কোনো লাভ হয়নি. সন্তুর মা বাবা রান্তার বাবার সাথে কথা বলেছিলেন. সন্তুর তখন ফাইন্যাল ইয়ার. চাকরি ক্যাম্পাসিং-এ পেয়ে গেছে. পরীক্ষা তারপর ফল বেরোবে. তারপরে ও জয়েন করবে. মাঝে মোটে কয়েকটা দিন. কিন্তু রান্তার বা গো ধরে থাকলেন অব্রাহ্মন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবেন না. সব চেষ্টা বিফল হয়ে যাবার পর সন্তু আবার রান্তার সাথে দেখা করতে পারল. ওই মিকুনিতে গিয়েই. রান্তার ইচ্ছা ছিল পালিয়ে যাবার. কিন্তু সন্তু সেটা চায় নি. বলেছিল যে বিয়ে না হলেও ওদের ভালবাসা অমর হয়ে থাকবে. ওদের মন থেকে কেউ কোনদিন ওদের ভালবাসা মুছে দিতে পারবে না. ওরা পালিয়ে গেলে রান্তার বাবার অসম্মান হবে. ওনার বিশ্বাসে চির ধরবে. তাই সন্তু কিছুতেই রাজি নয়. পালিয়ে গেলে সন্তু দিক থেকে কোনো অসুবিধা নেই. ওরা সন্তুর বাড়িতেই বিয়ে করে উঠতে পারে. সন্তুর বাড়ির কোনো আপত্তি নেই. কিন্তু তাতে ওদের অসম্মান হবে. রান্তা অনেক কেঁদেছিল. কিন্তু সন্তু শোনে নি রান্তার কান্না. রান্তা বলেছিল, মানুষ তার চিহ্ন রেখে যায় তাদের সন্তানের মধ্যে দিয়ে. আমাদের ভালবাসার কি চিহ্ন হবে? সন্তু বলেছিল যে রান্তার গলায় সন্তুর দেওয়া হারটা হবে ভালবাসার প্রতিক. রান্তা একটা আবদার করেছিল সন্তুর কাছে. ওকে একটা সন্তান দিতে. যেটা শুধু সন্তু আর রান্তার হবে. ওটাই হবে ওদের ভালবাসার জীবন্ত নিশান. সন্তু রান্তাকে কথা দিয়েছিল যে ওকে একটা সন্তান দেবে. কিছুদিন বাদে সন্তুর শহরেই রান্তার বিয়ে হয়ে গেল৷ ছেলের সোনার দোকান আছে৷ নাম সুবোধ চক্রবর্তী৷
রমনা এই পর্যন্ত শোনার পরে অতনুকে বলল, “আমি জানি খোকাইয়ের জন্ম বৃত্তান্ত. তুমি নতুন কিছু শোনাও. আমি আজও জানি না সন্তু বা শান্তনু কি করছে? কোথায় আছে? ও শুধু ভালবাসার চিহ্ন দিয়ে চলে গেল. আর কোনো দিন দেখা হয় নি আমার সাথে. তুমি কে? প্লিজ, বোলো না যে তুমি অন্তু? প্লিজ!!”
অতনু বলল, “আমার ডাক নাম অন্তু. সন্তু বা শান্তনুর ভাই. যখন আমাকে প্রথম দেখেছিলে তখন আমি বছর দশেকের বালক ছিলাম.”
রমনা অবাক হলো আবার আগ্রহর সাথে জিজ্ঞাসা করলো, “সন্তু কোথায়? ওর সাথে আমার অনেক দিন কোনো দেখা নেই. কোনো খবর জানি না. আমি সুজাতাকেও অনেক জিজ্ঞাসা করেছি. ওরাও কিছু জানে না. একেবারে ভ্যানিশ হয়ে গেছে. তুমি বল সন্তুর কথা?”
অতনু বলল, “দাদা আর বেঁচে নেই. মারা গেছে.”
দুঃখে রমনার বুক ভেঙ্গে গেল. প্রথম ভালবাসা আর নেই. ওদের ভালবাসার নিশান আছে. খোকাই. জীবন কি অদ্ভুত একটা পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করলো ওকে. অতনু যে ওর জীবন ওলট পালট করে দিয়েছে, যে এখন ওর ভরসা আর ভালবাসার পাত্র সেই দিচ্ছে ওর জীবনে আসা প্রথম পুরুষের মৃত্যু সংবাদ. একই সাথে এক পরম আত্মীয়র বিদায় এবং অন্য এক পরম বন্ধুর প্রবেশ. দুটো ঘটনাই নাড়া দেবার জন্যে যথেস্ট. যে ছোট্ট অন্তুকে প্রথম দেখেছিল ওর মা দাদার সাথে সেই যে অতনু তাতেই কেমন একটা ফিলিং হচ্ছে. সেদিনের কথা মনের মধ্যে ভেসে উঠলে ও লজ্জা পেল. তখন ও পূর্ণ যুবতী. আর অতনু নেহাতই বালক. অথচ সেই ছোট্ট ছেলেটি ওর জীবন একেবারে অন্য খাতে এনে ফেলল. দুঃখ সামলে রমনা আবার অতনুকে জিজ্ঞাসা করলো, “কি হয়েছিল?”
অতনু বলল, ” এডস হয়েছিল?”
রমনার অবাক হবার পালা মনে হয় অতনু শেষ হতে দেবে না. প্রথম থেকে ওকে অবাক করে এসেছে, এখনো করে চলেছে.
রমনা আশ্চর্য্য হয়ে বলল, “এডস?”
অতনু বলল, “হ্যাঁ, এডস?”
রমনা বলল, “কি ভাবে হয়েছিল এডস?” ওর ধারণা যে সন্তু কোনো বাজে কাজ করতে পারে না. এডস এমন একটা রোগ যা শুনলে যে কারোর ভ্রু কুঁচকাবে. মনে মনে একটা ঘেন্না. শালা দুঃশ্চরিত্র কোথাকার. বেশ হয়েছে. মর গে যা. অবাধ চোদাচুদি ছাড়াও যে এডস হয়ে পারে সেটা রমনার অজানা নয়. তার বিশ্বাস সন্তুর এটা বাদ দিয়ে অন্য কোনো ভাবে এডস হয়েছিল.
অতনু বলল, “বৌদির এডস ছিল. দাদার সাথে বিয়ে হবার আগে সে বেশ্যা ছিল. পেশার সূত্রে বৌদি এডস পেয়েছিল.”
রমনার সব গুলিয়ে গেল. সন্তুর এডস ওর বৌয়ের কাছে থেকে পাওয়া!!! ও বিয়ে করলো আর রমনা জানতে পারল না!! অন্তত সুজাতা তো ওকে বলতোই.
রমনা বলল, “আমাকে সব গুছিয়ে বল কি ভাবে কি হয়েছিল? সব ডিটেইলসে.”
অতনু বলতে শুরু করলো, “তুমি দাদার কাছে থেকে একটা সন্তান চেয়েছিলে. দাদা সেটা দেবেও বলেছিল. তার আগের কিছু ঘটনা বলি. আমরা অনেক পয়সাওয়ালা লোক ছিলাম. ঠাকুরদার ব্যবসা বাবা অনেক বাড়িয়েছিলেন. এগুলোর মধ্যে অন্তত দুটো তুমি চেন, অন্তত নামে চেন. অলকা রেস্টুরেন্ট আর সন্তুর গ্যারাজ. তার মধ্যে একটা দিক ছিল সোনার গয়নার দোকান. সেখানে অনেক কর্মচারী ছিল. সব থেকে বিশ্বস্ত ছিল জগৎবাবু বলে একজন. অসাধারণ গয়না বানাতেন. কিন্তু ওনার ছেলের গয়নার কাজ শেখার ধৈর্য্য ছিল না. সে হতে চায় দোকানের মালিক. বাবা জগৎ বাবুর ছেলেকে দোকানের কাজ দিয়েছিলেন. ওই ম্যানেজার মত ছিল. বাবা সব করতেন. আর জগৎবাবুর ছেলেকে ব্যবসার কাজ শেখাতেন. সোনা কেনা, গয়না বিক্রি করা, কি দামে বিক্রি করলে কতটা লাভ থাকে, কিরকম লাভ করা উচিত….এইসব. আস্তে আস্তে সে অনেক কিছু জানলো. একদিন সে মনে করলো যে অনেক শিখে গেছে. নিজেই সে ব্যবসা চালাতে পারবে. কিন্তু সে দোকানের কর্মচারী মাত্র. তার ওপর আমার বাবার নজরদারি থাকত. ধীরে ধীরে কমে গেছিল. ওর ওপর বিশ্বাস জন্মেছিল. কম হলেও থাকত. সেটা ওর সহ্য হয় না. তাই প্ল্যান করতে শুরু করলো কিভাবে দোকানটা একান্তভাবেই ওর হবে. সেবারে বাবা মা দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন কয়েক দিনের জন্যে. আমি দার্জিলিং-এ স্কুলে পড়তাম. আমাকে দার্জিলিং স্কুলে ভর্তি করে কেন দিয়েছিল সেটা তখন ভালো করে জানতাম না. তখন অনেক কান্না করতাম. কিন্তু বাবা সেসব না শুনে আমাকে ওখানেই ভর্তি করে দিয়েছ্লেন. পরে দাদা বলেছিল যে বাবা ওখানের ছাত্র ছিলেন, বাবার ওখানে এত ভালো লেগেছিল যে ওনার প্রবল ইচ্ছা ছিল দুই ছেলেই ওখানে পড়ুক. কিন্তু দাদাকে মা কোনো মতেই পাঠাতে দেন. কিন্তু আমার বেলায় বাবা কিছু শোনেন নি. যাই হোক, ওদের উদ্দেশ্য ছিল আমার সাথে দেখা হবে আর একটু বেড়ানোও হবে. মায়ের জন্যে বেশি করে যেতে হয়েছিল বাবাকে. তখন বেশি দিন আমি ভর্তি হই নি. দাদা ছিল হোস্টেলে. ওদের নিয়ে দার্জিলিং গিয়েছিল জগৎ বাবুর ছেলে আর আমাদের ড্রাইভার নিতাই. এক রকম জোর করে নিয়ে গিয়েছিল. আমার সাথে দেখা করে দুইচার দিন কাটিয়ে ওদের ফেরার কথা ছিল. কিন্তু মা বাবা আর জীবন্ত ফেরে আসেন নি. গাড়ি খাদের নিচে পরে গিয়ে ওরা মারা গিয়েছেলেন. নিতাই ফিরেছিল জখম হয়ে. হাসপাতালে ওকে অনেক দিন কাটাতে হয়েছিল. জগৎবাবুর ছেলে ফিরেছিল ট্রেইনে করে. ওই ঘটনার পর আমি কলকাতায় আবার ফিরে এলাম. তখন বেশি বিষয় সম্পত্তি নিয়ে ভাবতে হত না. ভাবতামও না. শুনলাম যে, যে সোনার দোকানে জগৎবাবুর ছেলে কাজ করত সেটা নাকি ওর হয়ে গেছে. ফেরার আগে বাবা নাকি ওটা সুবোধ চক্রবর্তীর নামে লিখে দিয়ে গেছেন. তখন তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল সুবোধের সাথে. ঠাকুরদা আর দাদা পরিস্কার করে বুঝতে পারল যে ওই দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে আর সেটা কেন ঘটানো হয়েছে তার কারণও. কিন্তু হাতে সেইরকম কিছু প্রমান নেই. তাছাড়া দাদা সুবোধের নামে মামলা করতে কিছুতেই রাজি হয় নি. তোমার যে সুবোধের সাথে বিয়ে হয়েছে সেটাই ছিল প্রধান কারণ. তুমি হয়ত আর্থিক দুরাবস্থা পড়বে বা স্বামী ছাড়া থাকবে সেই সব কথা ভেবেই. আমার কি মনে হয় জানো দাদা পড়াশুনায় যতই ভালো হোক, যতই ভালো মানুষ হোক… ও হয়ত খুব ভিতু ছিল. নাহলে তোমাকে ওর বিয়ে না করার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না. তুমি রাজি যেখানে তোমার বাপের বাড়ি ছাড়তে রাজি, আমার বাড়ি থেকে কোনো আপত্তি নেই, তারপরও কেন যে তোমায় বিয়ে করলো না!!!! তোমাদের বিয়ে হলে জীবন কত অন্যরকম হত.”
রমনা বলল, “অতনু তুমি ওকে বুঝবে না. ও নিজের কথা বা শুধু নিজেদের কথা ভাবত. তার বাইরে গিয়ে ভাবত. যে কাজটা করলে কেউ যদি প্রবলভাবে আঘাত পায় সে কাজ ও কোনো দিন করবে না.”
অতনু বলল, “ওর সাথে যে তোমার বিয়ে হলো না তাতে তুমি আঘাত পাও নি? আর সেটা কত বড় সেটা তো আর কাউকে বলে দিতে হবে না.”
রমনা বলল, “আমার থেকেও ও আমার বাবার কথা ভেবেছিল আগে. ওর সাথে আমার ভালবাসা কয়েক দিনের, কয়েকটা বছরের আর বাবার সাথে সেই জন্ম থেকে. মা মারা যাবার পর থেকে আমার বাবাই আমার সব ছিল. সে যতই গোঁড়া হোক, তবুও তো বাবা. আমিও এভাবে ভাবতাম না. সন্তুই আমাকে বুঝিয়ে ছিল. ওকে ভিতু বল না. তারপরে কি হলো বল.”
অতনুও বলতে শুরু করলো, “ঠাকুর্দাও বাবা মায়ের শোকে শরীর খারাপ করে ফেলেছিলেন. ব্যবসায় বুদ্ধি খাটানোর মত অবস্থায় ছিলেন না. একেবারে বিছানায় পড়ে গেলেন. ঠাকুরমা কোনো মতে সংসার চালাতে লাগলেন.
দাদা ওই অবস্থাতেও পড়া চালিয়ে গেল. তোমাকে দেওয়া কথা তাকে পূরণ করতে হবে. সেটা ওর মাথায় আছে. সেই মত তোমার বাড়ি গিয়েও ছিল. তোমরা বোধ হয় ফোন করেই সময় ঠিক করেছিল. কপাল দাদার এমন খারাপ যে তোমার সাথে ওর ভালবাসা শেয়ার করার সময় সুবোধ তোমাদের দেখে ফেলে. তোমরা নিজেতে এমন মগ্ন ছিলে যে টেরটিও পেলে না কি সর্বনাশ ঘটে গেল. তোমাদের ঘটনা কেউ জানলো না সুবোধ ছাড়া. তুমি ভেবে ছিলে তোমাকে আর আমাকে সুবোধ প্রথম দেখেছিল. না. ওটা ওর দ্বিতীয়বার. প্রথমবার দেখে ও রাগে অন্ধ হয়ে গেল. কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দিল না. বাবা মার ব্যাপারে যেমন নিঃশব্দে প্ল্যান কষেছিল, এবারে তাই. বেশি লোক জড়ালে ওর সম্মান নষ্ট হতে পারে. দাদা যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ত সেখানে গেল সুবোধ আর নিতাই. ওর সাথে দরকারী কথা আছে বলে এপয়েন্টমেন্ট নিল. দাদার চরিত্রের বড় দোষ সবাইকে চট করে বিশ্বাস করে. সুবোধের নামে বাবা মা খুনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দেখা করতে রাজি হলো. কেন রাজি হয়েছিল আমাকে কোনো দিন স্পষ্ট করে জানায় নি. হয়ত ও তোমার বর ছিল সেই জন্যেই. কলকাতাতে দাদার ইউনিভার্সিটি ছিল শহরের দক্ষিন প্রান্তে. আর দাদাকে দেখা করে জরুরি কথা বলার জন্যে জায়গা ঠিক করলো শহরে বাইরে দক্ষিন প্রান্তে. ফলে দাদার যেতে কোনো অসুবিধা হলো না. কিন্তু গিয়ে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো তা সে কল্পনাতেও আনতে পারে নি. ওকে বন্দী করে রাখল একটা ঘরে. এবং সেখানে ওর সাথে জোর জবরদস্তি একটা একজন যৌনকর্মীর সাথে সেক্স করানো হলো. দাদা জানতে পারে যে ওর এডস আছে. সেটা জানার পরেই সুবোধ ওই মেয়েটির সাথে দাদার সেক্স করে কোনো রকম প্রটেকশন ছাড়াই. দাদার এডস হওয়া নিশ্চিন্ত করতে আরও কয়েকবার জোর করে ওই কাজটি করানো হয়. কেন দাদাকে এইরকম করতে হলো সেগুলো সুবোধ সব বলেছিল. এটা যে ওর শাস্তি তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল. তুমি ভাগ্যবান যে দাদার সাথে তোমার প্রথম এবং শেষ মিলনের ফলে খোকাই জন্মেছে. সেবার না হলেও দাদা আর কোনো দিন তোমার কাছে আসতে পারত না.”
(চলবে)
0 Comments