জীবনের সুখের জন্য - পর্ব ৪৮ (Jiboner Sukher Jonno - Part 48)

পিছন ফিরে দেখলাম মিতা দাঁড়িয়ে আছে। ও দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষণ না আমি হারিয়ে যাই ওর চোখের থেকে। হাত তুলে দেখালাম ওকে। ও হাত তুলে দেখাল। মিতার জন্য মনটা কেমন খারাপ লাগছে। মিতারও খারাপ লাগছে নিশ্চয়ই।
মোড়ের থেকে একটা ট্যাক্সি ধরে নিলাম। কিছুটা পথ চলার পর মনের বিষাদ কাটতে থাকলো, ভাসতে থাকলো এক অপরিচিতর সাথে দেখার ইচ্ছে। আমি একটা সিগারেট ধরালাম। ড্রেসটা ইম্প্রেসিভ পরেছি। একটা ক্যসুয়াল আর সাথে একটা স্ট্রাইপ টি শার্ট। আমাকে খুব একটা খারাপ দেখতে না মিতা বলে সেটা। ড্রেস ম্রেস একটু ভালো করলে স্মার্ট দেখায় আমাকে আমি জানি সেটা। এগুলো সব পড়া বিদিশার রিয়া সেনের জন্য। হাসি পেল মনে মনে। শেষ কবে নিজেকে স্মার্ট দেখাতে ড্রেস করেছিলাম মনে পরে না। আজ করেছি। মনের সুখে সিগারেটে টান দিলাম। হাওড়া যত কাছে আসতে লাগলো উত্তেজনা বাড়তে থাকলো। ঘড়িতে দেখলাম ৮/২৫। আর ৫ মিনিটে স্টেশনে পৌঁছে যাবো। বুকটা যেন ধকধক করছে। আমার নিজের একটু অবাক লাগছে। বিদিশার সাথে দেখা করার সময় এমন হয় নি। তবে কেন এখন? নিজেকে স্মার্ট লাগছে, ভাল ড্রেস করেছি তবে কেন এই ভাব, জানি না।
মাঝে ট্যাক্সি থামিয়ে আমি একটা ভদকা কিনে নিলাম আমার জন্য। ট্রেনে খাব বলে। জানি না খেতে পারবো কিনা। তবু কিনে রাখলাম। স্টেশন এসে গেছে। ট্যাক্সি থেমে গেছে। পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করে ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। ব্যাগ রোল করতে করতে স্টেশনে ঢুকলাম। চলে এলাম ফুড প্লাজায়। কেউ নেই। মানে দুটো মেয়ে একটা ছোট ছেলে তারা নেই। বাকিরা আছে। মনে হোল এটাই ঠিক। ওরা এসে অপেক্ষা করার চাইতে আমি অপেক্ষা করবো এটাই ভালো। দুরের থেকে দেখে সাহসটা আনতে পারবো মনে। এলিডিতে লেখা ট্রেনের ইনফরমেশন দেখতে লাগলাম। হঠাৎ পাশের থেকে ‘হাই’ আওয়াজ।
চমকে উঠলাম। গাটা শিরশির করে উঠলো। ঘুরে দেখলাম বিদিশাকে। তারপর দেখলাম চিত্তকে। দুজন। আরেকজন? সে কোথায়? চোখ ঘুরে গেল চারপাশে। পেলাম না দেখা।
বিদিশাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কখন এসেছ তোমরা?’
বিদিশাকে দারুন লাগছে। টাইট লেগিসের উপর একটা ছোট শর্ট টপ পড়েছে। টপটা জাস্ট পাছার উপর শেষ হয়েছে। পাছার গোলাকার চেহারা দেখা যাচ্ছে। এককথায় দারুন।
বিদিশা জবাব দিলো, ‘প্রায় ১৫ মিনিট আগে।‘
আমি ঘড়ি দেখলাম। আমার থেকে আগে এসেছে। বললাম, ‘তার মানে আমার অনেক আগে এসেছ। কোথায় ছিলে?’
বিদিশা প্লাজার দিকে ইশারা করে বলল, ‘এইতো প্লাজায়। কফি খাচ্ছিলাম।‘
নজর গেল চিত্তর দিকে। ওহ হো, কেয়া লাগ রাহা। দারুন দেখতে হয়েছে। একে তো সুন্দর ছিল আরও সুন্দর হয়েছে। দেখলেই বোঝা যায় বিদিশার কাছে খুব যত্নে থাকে। আর ড্রেস? দেখার মতো। দেখে কে বলবে ছেলেটা বাড়িতে কাজ করে। সুন্দর টি শার্ট আর একটা দারুন দামি প্যান্ট। চিত্তকে বললাম, ‘কিরে ব্যাটা, হেভি লাগছে তো দেখতে। বৌদির আদর খেয়ে খুব গোলমাটোল হয়েছিস। বাহ খুব ভাল লাগলো তোকে দেখে। আর হ্যাঁ বিদিশা ইউ লুক ডাশিং। আমি ফিকে পরে গেছি।‘
বিদিশা হেসে বলল, ‘থ্যাংকস ফর দা কমপ্লিমেন্ট। বাট হ্যাঁ, ইউ লুক লাইফ টাইম স্মার্ট। প্রেমে পরে যেতে ইচ্ছে করছে। সো ইওং, সো এনারজেটিক মনে হচ্ছে। কিছু নিচ্ছ নাকি মেডিসিন?’
আমার চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। সে কই? এরা কি শুধু দুজন? কি করে বলব এই স্মার্টনেস, এই সুন্দর ড্রেস সব নতুন অতিথির জন্য, ওকে ইমপ্রেস করার জন্য।
বিদিশাকে লোকাবার উপায় নেই। ও আমাকে দেখে বলল, ‘কাউকে খুজছ?’
লুকিয়ে লাভ নেই বিদিশার কাছে। ও বুঝতে পেরে গেছে আমি কাউকে খুঁজছি। বললাম, ‘তোমার সেই রিয়া সেন কই? দেখছি না তো কোথাও।‘
বিদিশা চিত্তকে বলল, ‘কি বলেছিলাম চিত্ত। তোর দাদা দেখবি ওকেই খুঁজবে।‘
চিত্ত হেসে উঠলো, বলল, ‘দাদা ধরা পরে গেলে তো।‘
আমি চোখ পাকিয়ে চিত্তকে বললাম, ‘খবরদার চিত্ত পাকামো না। আমি কাউকে খুঁজছি না।‘
বিদিশা বলল, ‘খুঁজছ নাতো চোখ গোল করে চারিদিক ঘোরাচ্ছ কেন বাবা। আসছে ও কফির দাম দিচ্ছে। দাঁড়াও এতো তো দেরি হবার কথা নয়, দেখি।‘
বিদিশা প্লাজার দিকে এগিয়ে যেতেই চিত্ত আমার হাত টেনে বলল, ‘দেখলে তোমার মাথা ঘুরে যাবে।‘
আমি ওকে চিমটি কেটে বললাম, ‘আবার পাকামো।‘
বিদিশা একটা মেয়ের সাথে আসছে। বয়স ২৯/৩০ হবে মনে হয়। এই তাহলে রিয়া। বাট ইয়েস শি ইস রাভিশিং। যেমন সুন্দর তেমনি গোলগাল। সবকিছু যেন ঠিক মতো। একটা জিন্স আর টি শার্ট পড়া। একদম টাইট। স্তনগুলো ফেটে বেরোচ্ছে যেন। থাইয়ের সাইজ জিন্সের উপর দিয়ে একদম মন হু হু করা। পাছা দেখতে পাচ্ছি না। হাঁটার তালে তালে স্তনগুলো নাচছে। কাঁধ পর্যন্ত চুল। রিয়া সেন যদি এটা হয় তাহলে আমার হয়ে গেছে। আমি একটা বোকা গাধা হয়ে যাবো।
বিদিশা ওকে জিজ্ঞেস করছে, ‘এতো দেরি হোল তোর?’
মেয়েটা বলল, ‘আরে কি করবো। চেঞ্জ নেই ওদের কাছে। ওটার জন্য দেরি।‘ আমাদের কাছে এসে আমাকে দেখে বলল, ‘হাই গৌতম। মিট মি, অ্যাই আম রিয়া।‘
ম্যায় তো গায়া। আমি কোনরকমে বললাম, ‘হ্যালো, নাইস টু মিট ইউ।‘
বিদিশা আমাকে বলল, ‘বলেছিলাম না এই আমার সারপ্রাইস তোমাকে।‘
আমার গলাটা খুব যেন চেনা মনে হোল। খুব পরিচিত। অনেক অনেকবার শুনেছি লাগছে। কিন্তু কোথায়? বোকা মনে হোল নিজেকে, মেয়েটাকে চিনি না ওকে শুনব কি করে?
বিদিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘গৌতম কটায় ট্রেন?’
আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, রিয়া অন্যদিকে। আমি বিদিশার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ওই তো ৯/২৫।‘
বিদিশাটা একটা যাতা, বলে বসল, ‘আরে রিয়া আমাদের সাথেই যাচ্ছে। দেখবে আরও ভালো করে। এখন ওইভাবে দুবে যেও না। আমি আছি এখানে।‘
আমার যেন মুখ দেখাবার জায়গা রইল না। ওইরকমভাবে বলে নাকি কেউ, তাও জাস্ট যার সাথে পরিচয় হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, ‘কি বলছ কি তুমি? আমি বলতেই যাচ্ছিলাম চলো যাওয়া যাক। ট্রেন লেগে গেছে।‘
সবাই এগিয়ে চললাম। বিদিশা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো ঠোঁটে মুচকি একটা হাসি রেখে। আমার হাসা ছাড়া আর কোন কিছু করার নেই তাই আমি চললাম ওদের সাথে। ওরা সামনে আমি পিছনে। এবার আমি আরও পরিস্কার বিদিশা আর রিয়ার পাছার অবয়ব দেখতে পেলাম। রিয়ার পাছা জিন্সের উপর দিয়ে একদম গোলাকার, দেহ থেকে ঠেলে বেরিয়ে আছে। টাইট জিন্স যেন ফেটে যাবে। আর বিদিশার পাছা টপের নিচ দিয়ে যতটা দেখা যাচ্ছে তাতে হৃদয়ে তরঙ্গ তুলছে। চিত্ত আমার সাথে হাঁটছে।
একসময় আমরা ট্রেনের কাছে চলে এলাম। ১ম এসি বগিতে ঢুকলাম। আটেন্ডান্ট দাঁড়িয়ে ছিল। জিজ্ঞেস করাতে বলে দিলো আমাদের কোন কুপে পড়েছে। সি কুপে ঢুকলাম। চিত্ত বলে উঠলো, ‘অ্যাই লা, কি ঠাণ্ডা গো এইখানটা।‘
রিয়া বলল, ‘এসি চলছে না। তাই।‘
আমি আমার ব্যাগ, ওদের ব্যাগ সব জায়গায় রেখে দিলাম। ওরা দাঁড়িয়ে রইল যতক্ষণ না আমার ঠিকভাবে রাখা হয়। উবু হতে গিয়ে কারো সাথে আমার পাছা ঠেকল, আমি পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখি রিয়া সরে যাচ্ছে, ওর সাথেই লেগেছে। আমি ‘সরি’ বলে আবার ব্যাগগুলো রাখতে লাগলাম। সব রাখা হয়ে গেলে সোজা হয়ে বললাম, ‘নাও এবার বস।‘
বিদিশা একটা জানলার ধারে বসতে চিত্ত গিয়ে টুক করে বিদিশার পাশে বসে পড়লো। আমি সেটা দেখে বললাম, ‘এখানেও তোর বৌদির সাথে চিপকে থাকবি নাকি?’
চিত্ত জানলা দিয়ে তাকাতে তাকাতে বলল, ‘কেন তুমি বসতে নাকি?’
বিদিশা হেসে বলল, ‘উহু বাবা ও কথাতেও খুব চালাক হয়েছে। ভেবে শুনে কথা বোলো।‘
আমি বললাম, ‘হবে না কেন তোমারি তো চেলা।‘ আমি সরে গিয়ে রিয়াকে আরেকটা জানলা দিয়ে আমি ওর পাশে বসলাম। রিয়া বসে আমাকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ জানালো।
আমার দিকে তাকাতে আমি জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, ‘তো রিয়া আপনি চাকরি করেন?’
রিয়া কিছু বলার আগে বিদিশা বলে উঠলো, ‘আপনি কিগো, তুমি বোলো। ও আমার থেকে ছোট আর তোমার থেকে তো অনেক।‘
আমি বোকা হেসে বললাম, ‘আরে প্রথম আলাপে তুমি বলা যায় নাকি?’
রিয়া বলল, ‘গৌতম প্লিস নো ফর্মালিটি। আমরা বন্ধু। তুমিটাই চলে ভালো বন্ধুদের সাথে।‘ বলে রিয়া আমার থাইয়ে হাত রাখল।
মেয়েগুলো যেন আমাকে অপ্রস্তুতে ফেলার জন্য লেগে রয়েছে। আমি বিদিশাকে বললাম, ‘হ্যাঁ তুমি তখন বললে যে রিয়া তোমার সারপ্রাইস। রিয়া আসাই কি এক সারপ্রাইস?’
বিদিশা কিছু বলল না জাস্ট হাসল। কিন্তু মনে হোল ওই হাসির আড়ালে কোন রহস্য আছে। কি সেটা, কখন জানা যাবে। অপেক্ষা তো করতেই হবে।
রিয়া বলল, ‘আমি দিদির কাছে তোমার সব কথা শুনেছি। তুমি ওর খুব ভাল বন্ধু, ওর জন্য তুমি অনেক খেয়াল করো। তোমার নিজের বউ আছে। বউদিও এখন বন্ধু যোগার করে নিয়েছে।‘
আমি হেসে বললাম, ‘বাবা, আমাকে তো একদম খুলে দিয়েছ রিয়ার কাছে বিদিশা। আর বেশি কিছু বলোনি তো।‘
রিয়া আর বিদিশা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো। আমি আর চিত্ত ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। আমার হঠাৎ মনে হোল খাবার আনা হয়নি। আমি বিদিশাকে বললাম, এইরে খুব ভুল হয়ে গেল একটা যে।‘
বিদিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘কি হোল? কিছু ভুলে গেছ নাকি?’
আমি জবাব দিলাম, ‘হ্যাঁ, খাবারের কথা মনে নেই। খাবার যে আনা হয় নি।‘
রিয়া বলল, ‘আরে ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমরা মেয়েরা আছি। প্লাজা থেকে কিনে নিয়েছি। খাবার জল সব।‘
যাক বাবা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। ইতিমধ্যে চেকার এসে আমাদের টিকিট চেক করে গেল। যাবার সময় রিয়ার দিকে খুব গভীর নজর দিয়ে গেল খাস করে ওর বুকের দিকে। বলে গেল, ‘আপনারা প্লিস দরজা দিয়ে রাখবেন। যদি কিছু দরকার হয় তাহলে বেল টিপবেন।‘
আমি বললাম, ‘চোখ দিয়ে যেন গিলছিল। কি নজর ব্যাটার।‘
রিয়া হেসে উঠলো, বলল, ‘আরে আমি এই ড্রেস পরে আছি ও একটু দেখবে না। ওতেই তো ওর আনন্দ। ভাবতে থাকবে মেয়েটার বুক সত্যি দেখার মতো।‘
বাপরে ভীষণ খোলা কথাবার্তা তো মেয়েটার। খুশি হলাম ট্যুরটা ভালই হবে।
বিদিশা প্রশ্ন করলো, ‘গৌতম কখন আমরা পৌঁছবো?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘এটা পৌঁছাবার টাইম সকাল ৭/৩০। কিন্তু এটা পৌঁছতে প্রায় সকাল ১০, ১০/৩০ করে দেয়। কোনদিন ঠিক সময়ে যায় নি এই ট্রেন। কারন আছে ওড়িশায় ঢুকে এটা সিঙ্গেল লাইন হয়ে যায় তাই।‘
রিয়া বলে উঠলো, ‘বাপরে ১০ ১০/৩০ হলে এইগুলো পরে বসে থাকার কোন মানে হয় না। দিদি কি বোলো ড্রেসগুলো ছেড়ে নিলেই তো হয়।‘
বিদিশা বলল, ‘হ্যাঁ আমিও তাই বলতে যাচ্ছিলাম। ড্রেসগুলো ছেড়ে নিই কি বোলো গৌতম?’
আমি জবাব দিলাম, ‘তোমরা যদি আনকমফরট ফিল করো তাহলে তাই করো।‘
রিয়া বলল, ‘দিদি তুই বার করবি না আমি?’
বিদিশা বলল, ‘আমিই করি। তুই পারবি না। কোথায় কি রেখেছি তুই জানবি না। গৌতম ওই নীল ব্যাগটা একটু বার করে দাও না।‘
(চলবে)

Post a Comment

0 Comments