জীবনের সুখের জন্য - পর্ব ৭১ (Jiboner Sukher Jonno - Part 71)

নিকিতা চারদিক ঘুরে তাকিয়ে বলল, ‘বেড়ে জায়গা। গৌতম তোমার একটা ব্যাপার আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে তোমার হোটেল বাছার টেস্ট আছে। আমার খুব খুব ভালো লেগেছে এই হোটেলটা। বিয়ে হলে এখানে হনিমুন করতে আসবো। একদম রাইট প্লেস হনিমুনের জন্য।‘
আমি বললাম, ‘আরে না না বিয়ে করতে হবে না আর।‘
বিদিশা উত্তর দিলো, ‘সেকি বিয়ে কেন করবে না ও? বিয়ের বয়স চলে গেছে নাকি ওর?’
আমি বুঝিয়ে বললাম, ‘আরে বিয়ের বয়স যায় নি। তুমি বুঝছ না। বিয়ে করলে ওকে আর পাবো কোথায়? ও তো ওর বরের সাথে ঘুরবে।‘
বিদিশা বলল, ‘বুড়োর কথা শোন। ওকে পাবে না বলে নিকি বিয়ে করবে না।‘
নিকিতা বলল, ‘ঘাবড়িয়ো না গৌতম। আমি কথা দিলাম বিয়ের পরেও তোমার সাথে সম্পর্ক থাকবে। তোমার মতো বন্ধু মেলা ভার এই যুগে।‘
আমি বললাম, ‘এইরে সেন্টু টাইপের কথা বলছ যে। আরে আমার মতো খুজলে অনেককে পাবে তুমি।‘
নিকিতা বলল, ‘আমি জানি ভাই। আমি তো ফ্রেন্ডস ক্লাবে আছি। কে কিরকম বন্ধু আমার সব জানা। কতো যে আমার কাছে কমপ্লেন আসে। কোন ছেলে কোন মেয়েকে উপভোগ করে তারপর আর সম্পর্ক রাখে নি। যত বলি বন্ধু পাইয়ে দেওয়া আমাদের কাজ, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাটা ওদের কাজ সেটা বোঝানো যায় না। তাছাড়া আমার কি জানা নেই দিদির জন্য তুমি কতোটা সময় দিয়েছ। কি করেছো ওর একাকীত্ব কাটাবার জন্য।‘
আমি বললাম, ‘এই দ্যাখো আবার সেই সেন্টু। আরে তোমার দিদির ভাগ্যে ছিল এইসব কিছু পাওয়ার। শুধু সময়। সময় এলে ঠিক সবকিছু পাওয়া যায়। কেউ কাউকে পাইয়ে দেয় না। কপালের তিন লকির। এর মধ্যে তোমার সব কিছু লেখা। যা পাবার এতেই লেখা আর যা না পাবার আবার ওতেই লেখা। ওর স্বামী ভাগ্য ছিল না ওটাও ওতে লেখা ছিল আবার ওর সাথে আমার দেখা হবে এটাও ওতে লেখা ছিল। তুমি আমি তো এই সংসারে পুতুল মাত্র। উপরওয়ালা যাকে যেভাবে চালাবে টাকে সেইভাবে চলতে হবে যে।‘
নিকিতা বলল, ‘সেটা তুমি একদম ঠিক বলেছ। তবে যাই হোক আমি বিয়ে করলেও তুমি আমার সবসময়ের বন্ধু থাকবে।‘
আমি প্রশ্ন করলাম, ‘আর তোমার বর? জানতে পারলে তোমাকে তো দেবে আচ্ছা করে।‘
নিকিতা জবাব দিলো, ‘কেন মিতা বৌদি থাকতেও তো তুমি আমাদের বন্ধু আছো। মিতা বৌদি জানতে পেরেছে না তুমি মিতা বৌদিকে ভুলে গেছ আমাদের পেয়ে? তুমি যদি পারো তাহলে আমি নয় কেন?’
বিদিশা অনেকক্ষণ পরে বলল, ‘আমি এতক্ষণ কথা বলি নি যে আমার তোমাদের মতো অবস্থা নয়। কারন আমার স্বামী নেই। কিন্তু আমি বলি নিকি যা বলেছে সেটা একদম ঠিক।‘
আমি উত্তর করলাম, ‘আমি কোথায় অস্বীকার করলাম? ওটা তো আমি মজা করলাম। যার যার জীবনের সুখ যার যার কাছে। কে কার কাছে কিভাবে সুখ পাচ্ছে সেটা যে পাচ্ছে সেই ঠিক বুঝবে। সুখ কেউ কারো জন্য ঠিক করে দেয় না। নিজেকেই করে নিতে হয়।‘
বিদিশা বলল, ‘ঠিক বলেছ।‘
আমরা কথা থামালাম কারন ওয়েটার সার্ভ করতে এসেছে।
ওয়েটার আমাদের ড্রিংকস সার্ভ করে স্নাক্স দিয়ে গেল। বলে গেল, ‘স্যার আপনারা তো ডিনার এখানেই নেবেন? আমি পরে এসে অর্ডার নিয়ে যাবো।‘
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। গ্লাস তুলে চিয়ার্স করে যে যার গ্লাসে চুমুক দিলাম। আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম, ‘তাহলে নিকিতা তোমার বিয়ের পর আমার সাথে বন্ধুত্ব রাখতে তোমার কোন আপত্তি নেই।‘
নিকিতা আবার সিপ দিয়ে বলল, ‘নট অফকোর্স।‘
আমি বললাম, ‘গুড। এবার তাহলে আমরা কালকের ব্যাপার নিয়ে কথা বলি। কাল আমার কোন কাজ নেই। ভাবছি চলো একটু পুরী ঘুরে আসি। যাবে?’
বিদিশা খুশীতে ঝলমল করে উঠলো। ও বলল, ‘খুব ভালো হয়। সেই কবে ছোটবেলায় পুরী দেখেছিলাম। এখন কিছুই মনে নেই। চলো গৌতম ঘুরে আসি।‘ পরে অবশ্য ও বুঝতে পারলো এতটা খুশির ঝলক দেখানো ঠিক হয় নি কারন আমি কতোটা ব্যস্ত থাকবো সেটা সে জানে নি। তাই আবার পরে যোগ করলো, ‘যদি তোমার কাজ তোমাকে পারমিট করে।‘
আমি বললাম, ‘আরে আগেই তো বললাম যে কাল থেকে আমি ফ্রি। রাদার আজ থেকেই।‘
নিকিতা বলে উঠলো, ‘বাপরে এতো বিশাল এলাহি ব্যাপার। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। আমি এক কথায় রাজি।‘
চিত্ত হাত তুলে বলল, ‘আমিও।‘
আমি চিত্তর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তোর কথায় কে পাত্তা দিচ্ছে?’
চিত্ত বলল, ‘ও পাত্তা দিচ্ছ না তো। ঠিক আছে আমি যাবো না।‘
আমি হেসে বললাম, ‘যাবি না তো থাক এখানে একা।‘
চিত্ত বলল, ‘একা কেন? বৌদি তো থাকবে?’
বিদিশা উত্তর দিলো, ‘হু, তোর জন্য এখানে থাকবে? ছাই। তুই একা থাক।‘
চিত্ত ঠোঁট উলটে বলল, ‘ঠিক একাই থাকবো।‘
আমি বললাম, ‘হোটেলের বিল তোকে দিতে হবে কিন্তু। পারবি তো?’
চিত্ত নির্বিকার হয়ে বলল, ‘ও তুমি দিয়ে দেবে।‘
আমি জবাব দিলাম, ‘হোটেল তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেবে আমি না থাকলে।‘
চিত্ত বলল, ‘কই বাত নেহি। আমি যাবো তোমাদের সাথে।‘
আমরা হেসে উঠলাম। আমি বললাম, তাহলে পাক্কা আমরা কাল পুরী ঘুরতে যাচ্ছি।‘
ড্রিংকস আমাদের শেষ। এবার খাওয়ার পালা। পাশের টেবিল থেকে তিনটে ছেলে আমাদের অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিদিশা আর নিকিতাকে। ছেলেগুলোও ড্রিংক করছে। ওয়েটার আসার পর আমরা খাবার অর্ডার দিলাম। চিকেন বিরিয়ানি সাথে চিকেন কসা।
ওয়েটার চলে যাবার পর আমি শুনতে পেলাম একটা ছেলে উড়িয়া ভাষায় বলল, ‘শালা একাই বানচোদ মাগিগুলোর সাথে মস্তি করছে।‘
আমি উড়িষ্যায় বেশ কয়েকবছর থাকার দৌলতে উড়িয়া ভাষা বুঝি। বলতে পারি না। আমার কানটা লাল হয়ে গেল। বিদিশা বুঝেছে ছেলেগুলো আমাদের নিয়ে কিছু কমেন্ট মেরেছে। ও জিজ্ঞেস করলো, ‘ছেলেগুলো কিছু বলল না?’
আমি ঘোরাবার জন্য বললাম, ‘আরে না না, ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।‘
বিদিশা আমাকে বলল, ‘তাহলে তোমার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল কেন?’
আমি জানি ধরা পরে গেছি, তাই উত্তর দিলাম, ‘ওই তোমরা খুব সুন্দর দেখতে লাগছ কিনা তাই বলেছে।‘
আবার একটা ছেলে এবার হিন্দিতে বলল, ‘কেয়া মাল হায় ভাই। মাম্মে দেখ কেয়া সলিড।‘
এবার আমার আর কিছু করার নেই। হিন্দি সবাই বোঝে। আর ছেলেগুলো বোঝাবার জন্যই বলছে। আমি চুপ করে রইলাম।
নিকিতা একটু জোরে বলে উঠলো, ‘নোংরা জানোয়ার কোথাকার। কোনখানে কি বলতে হয় জানে না। বাড়িতে মা বোন নেই মনে হয়।‘
এই কথা শুনে ছেলেগুলো বুঝেছে কি বোঝে নি জানি না, একটা ছেলে বলল, ‘হায় মেরি জান কেয়া বাত হায়। বাতও মে দম হায় গুরু।‘
আরেকটা ছেলে বলল, ‘আভি অগর এইসে তেজ হায় তো আসলি জগহ মে কেয়া হগি মেরি ভাই।‘
তৃতীয় ছেলেটা বলল, ‘আও না মেরি জান মেরা গোদ মে আ যাও। মেরা পাশ এক মজবুত খিলোনা হায়। মস্ত লাগেগি।‘
আমার দ্বারা আর চুপ থাকা সম্ভব হোল না। আমি বললাম একটু চেঁচিয়ে যাতে সবাই শুনতে পায়, ‘কেয়া উলটা সিধা বলতে হো। চুপ করকে খা নেহি সকতে হো?’
একটা ছেলে বলল, ‘আরে ওস্তাদ দাদাকা গুসসা আ গায়া। ক্যা করু?’
অন্য ছেলে উত্তর দিলো, ‘থোরা সবক শিখা দো।‘
আমার পৌরুষে লাগলো বেজায়। এইবার আমার কিছু বলা উচিত মনে হয়। আমি উঠলাম, এগোলাম ওদের দিকে। বিদিশা আর নিকিতা সাথে চিত্ত দেখতে থাকলো আমাকে। আমি ছেলেগুলোর টেবিলে এসে যে ছেলেটা সবক শেখানোর কথা বলেছিল তাকে বললাম, ‘হাঁ জী কেয়া সবক শিখায় গা যারা মুঝে বাতাও।‘
ওরা ভেবেছিল আমরা বুঝি আঁতিপাঁতি একটা পার্টি। ওরা ভাবতেই পারে নি আমি এভাবে ওদেরকে সম্বোধন করবো। একটা ছেলে তোতলাতে থাকলো, কোনরকমে বলল, ‘হাম তো আপকো কুছ বোলা নেহি।‘
আমি ছেলেটার দিকে আঙুল তুলে বললাম, ‘মুঝে কুছ বোলা নেহি হায় কেয়া? ফির কিসকো বাতায়া থা দাদাকা গুসসা আ গায়া, কিসকো বাতায়া থা জারা সবক শিখায়ে? লো মায়নে সামনে খাঁড়া হায় সবক তো শিখাও।‘
অন্য একটা ছেলের মনে হয় একটু জশ এসেছে বিদিশা আর নিকিতাকে দেখে। ও উঠে দাঁড়ালো চেয়ার ছেড়ে, বলল সিনা টান করে, ‘কেয়া লেড়কীও কা সামনে হিরোগিরি দিখা রাহা হায় কেয়া? বাতাও কেয়া কর লওগে?’
আমি ধীরে বললাম, ‘মুঝে কুছ করনা নেহি। মুঝে তো সবক শিখনা হায়। শিখাও ভাই। নেহি তো মজবুরন মুঝে কুছ দিখানা পারেগা।‘
ছেলেটা বলল, ‘দিখাও না। কোন রোকা তুমহে?’
আমি আবার বললাম, ‘কই নেহি। স্রিফ শারাফাত। নেহি তো তুমহারা আউকাত কেয়া হায় মুঝসে লড়নে কি?’
ছেলেটা বলল সাথে আরেকজনকে নিয়ে, ‘এ ভাই আউকাত লেকে বাত মত করো। হামলোগ ইহা কি রহেনেওালা হায়। জারা শোচনা।‘
এবার নিকিতা এগিয়ে এলো, ‘শোচনা কেয়া? ঘর মে মা বহিন নেহি হায় যে এইসে মজাক করতে হো? জারা উঙ্কে বারে মে তো সোচো। আগর কই আপলোগোকি মা বহিনকে সাথ এইসে মজাক করতা তো?’
ওয়েটার আর ম্যানেজার দেখলাম এগিয়ে এলো। ম্যানেজার বলল, ‘কি হোল স্যার, কোন প্রব্লেম?’
আমি হেসে বললাম, ‘না না কোন প্রব্লেম নেই। ছেলেগুলো একটু বিগড়ে গেছিল, বললাম কিভাবে ব্যবহার করতে হয় লোকের সাথে।‘
ম্যানেজার এবাআর ছেলেগুলোকে বলল, ‘ভাই আপ চলো বাহার। বহুত হো গায়া ইধর।‘
একটা ছেলে বলল, ‘আরে আভি তো খানা বাকি হায়?’
ম্যানেজার বলল, ‘কই বাত নেহি। ঘর মে যাকে খা লেনা। আউর আহিন্দা ইধর খানাকে লিয়ে আনা ভি মত। ঘুসনে নেহি দেঙ্গে আনেসে, ঠিক হায় না?’
ছেলেগুলো উঠতে উঠতে বলল, ‘ঠিক হায় ঠিক হায়, মুঝে ভি এইসে ঘাঁটিয়া হোটেলমে খানা নেহি। চল রে ভাই চল কহি আউর খা লেঙ্গে।‘
ছেলেগুলো উঠতে উঠতে আমার আর বিদিশাদের দিকে তাকাতে আমি বললাম, ‘আরে ভাই সবক তো শিখায়া নেহি। কাঁহা যানা হায় বাতা তো দো।‘
ছেলেগুলো আর কিছু বলল না। আমি একটু এগিয়ে গেলাম, সবার কান বাঁচিয়ে বললাম, ‘শুন, লেড়কীয়ও কা মাম্মে কি বাত কর রহে থে না অগর ঠিক সে পেশ আতে তো শায়দ মিল যাতা মাম্মে চুসনে কা।‘ আমি হেসে ফিরে এলাম আমার টেবিলে। দেখলাম খাবার দেওয়া হয়ে গেছে।
আমি বসতে বিদিশা বলল, ‘বাবা, বুড়োর কি হিরোগিরি দেখলাম। আমাদের জন্য তোমার কি বেশি জোশ এসে গেছিল গৌতম?’
আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘আরে ছাড়ো তো। এরা সব উঠতি মস্তান। একটু জোর দেখাও কেঁচো হয়ে যাবে ব্যাটারা।‘
নিকিতা বলল, ‘বেশ সলমন খান হয়েছিলে বাবা। সত্যি সাহস আছে তোমার। কিন্তু লাস্টে ওদেরকে কি বললে?’
আমি আবার হেসে বললাম, ‘বললাম যদি ভালো ব্যবহার করতো তাহলে হয়তো মাইতে মুখ দিতে পারত।‘
নিকিতা বলল, ‘যাহ্* এটা বলেছ?’
আমি ওকে উত্তর না দিয়ে চিত্তকে বললাম, ‘কিরে দাদাগিরি কেমন দেখলি?’
চিত্ত চোখ নাচিয়ে বলল, ‘আরে ব্বাস, কি খেল দেখালে দাদা। দারুন। একদম মিথুন চক্রবর্তী।‘
(চলবে)

Post a Comment

0 Comments