কামিনী by রতিপতি (Page-114)


 কামিনী নাইটিটা পরে নিতে নিতে অর্ণবও জামা আর ট্রাউজ়ারটা পরে নিল । বিচির মাল তখন ওর শুকিয়ে গেছে । বাঁড়াটা নেতিয়ে ভেজা বেড়াল হয়ে গেছে । এমন একটা গম্ভীর পরিস্থিতিতে সে কামিনীকে কোনোও মতেই একা ছাড়বে না । কামিনী আর নীলের পেছন পেছন সেও নিচে নেমে এলো । নীচে কমল বাবুর সামনে এসে কামিনী বা অর্ণব কেউই মাথা তুলতে পারছিল না । কমলবাবুর চোখের কোণ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল । কামিনীর দিকে না তাকিয়েই তিনি বলতে লাগলেন -"তোমার উপরে নীল অনেক অন্যায় করেছে মা । আমি সেটা অস্বীকার করব না । একটা সুস্থ দাম্পত্য জীবন তোমার অধিকার । কিন্তু তাই বলে বাড়ির ড্রাইভার বৌমা...! তোমার কি মূল্যবোধ এতটাই নিচে নেমে গেছে...! তোমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে তো আমাকে জ্যান্ত মেরে ফেললে মা...! এই ছেলের কি তোমার উপরে চাপার কোনো যোগ্যতা আছে...! কে ও...? কিই বা ওর পরিচয়...? রায়চৌধুরি পরিবারের একমাত্র বৌমার শরীরের উপরে চাপার কি ওর ন্যূনতম যোগ্যতা আছে...? আমার সামাজিক সম্মানের কথা তুমি একবারও ভাবলে না...!"

নীল অর্ণবের মাথায় সজোরে একটা চড় মেরে বলল -"কি রে শুয়োরের বাচ্চা...! বাবার কথার উত্তর দে...!"

"আমি কিছু বললে আপনারা কেউ শুনতে পারবেন না । সে শক্তি আপনাদের বাবা-ছেলের কারো মধ্যে নেই ।" -অর্ণব তখনও মাথা নীচু করেই বলল ।

কমলবাবু অর্ণবের কথা শুনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না -"কি বলতে চাও তুমি...! কিসের শক্তির কথা বলছো তুমি...?"

অর্ণব কমলবাবুর কথার উত্তর না দিয়ে সোজা নীলের চোখে চোখ রেখে বলল -"আচ্ছা নীলবাবু...! অনুসূয়া হাজরা নামটা আপনি জানেন...?"

অর্ণবের মুখে অনুসূয়া নামটা শুনে কমলবাবু বুকের ভেতরটা ধক্ করে উঠল । তিনি অর্ণবকে ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন -"অনুসূয়া নামটা তুমি জানলে কি করে...?"

অর্ণব এবারেও কমলবাবুর কথার কোনো জবাব না দিয়ে নীলকে আবার জিজ্ঞেস করল -"কি হলো নীলবাবু...! বলুন...! আপনি কি নামটা শুনেছেন কখনও...?"

নীল বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে উঠল -"হু ইজ় দিস অনুসূয়া...?"

"বাহ্...! এসব আপনাদের বড়লোকদেরই শোভা পায় । যে মানুষটা আপনাকে জন্মের পর থেকেই নিজের বুকে আগলে রেখে রাতের পর রাতে জেগে আপনাকে নিজের সন্তানের মত লালন পালন করেছিল, আপনি তার নামটাও মনে রাখেন নি...!"

অর্ণবের মুখে ওর ভালো মা-র কথা শুনে নীল চমকে ওঠল -"ভালো মা....!!!"

"হ্যাঁ, আপনার ভালো মা...! সে হঠাৎ আপনাকে ছেড়ে চলে কেন গেল কখনও আপনার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন...?" -অর্ণবের গলার সুর চড়তে লাগল ।

কমলবাবু এবার একটু স্তম্ভিত সুরে জিজ্ঞেস করলেন -"তুমি অনুসূয়াকে চিনলে কি করে...?"

এবার অর্ণব কমলবাবুর দিকে তাকালো -"আমার পুরো নাম কি সেটা জানতে ইচ্ছে করে না আপনাদের ?"

"কে তুমি...? কি নাম তোমার...?" -কমলবাবুর গলায় ভয় ফুটে উঠল ।

"আমার পূর্ণ নাম অর্ণব রায়চৌধুরি । আর সেই হতভাগী অনুসূয়া হাজরা আমার মা । আমার সেই মা, যে কোনোদিন স্বামী-সুখ পায়নি । যার কোনো দিন বিয়েই হয় নি ।" -কথাগুলো বলতে গিয়ে অর্ণব ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ল ।

কমলবাবুর তলা থেকে যেন বিছানাটা সরে গেল । নীল বলল -"তা ভালো মা যদি তোমার মা-ই হয়ে থাকে তাতে তুমি আমাদের পদবি কেন ব্যবহার করছো...?"

"সেটা আপনি আপনার হরিশচন্দ্র বাবাকে জিজ্ঞেস করুন ।"

কমলবাবু কান্নায় ভেঙে পড়লেন -"আমি তোমাদের উপর অনেক অন্যায় করেছি বাবা । হয়ত তারই শাস্তি ভগবান আমাকে দিয়েছেন যে আমার আজ বিছানা ছেড়ে ওঠার ক্ষমতা নেই ।"

কামিনী এসব শুনে হতবাক হয়ে গেল । পাশে শ্যামলিও বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে । নীল ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করল -"এসব কি বলছো তুমি বাবা...! কি অন্যায় করেছো তুমি...? ও এসব কি বলছে বাবা...!"

অর্ণব কমলবাবুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলতে লাগল -"নিতান্ত দারিদ্রে অসহায় একটা মহিলাকে দিনের পর দিন পাশবিকভাবে ভোগ করে আর গর্ভে সন্তান সঞ্চারিত করে দিয়ে তিনি সেই মহিলাকে বাড়ি থেকে তেড়ে দিয়েছিলেন তার অন্য কাজের লোককে দিয়ে । তাও আবার এই আদেশ দিয়ে যে তোরা যতজনে পারিস ওকে লুটেপুটে খেয়ে পুঁতে দিস কোথাও । সঙ্গে যিনি ছিলেন তাঁর দয়াতেই আমার মা প্রাণে বেঁচেছিল । সে আমাকে নষ্ট করতে চায়নি বলেই শত কষ্ট সহ্য করে হলেও আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিল । তারপর আমার বয়স যখন দশ বছর তখন দুর্বিসহ দারিদ্র আর মারণরোগকে আমার মা আর পরাজিত করতে পারেনি । আমাকে এই বিশাল পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা রেখে দিয়ে চলে গেল । পাড়ার এক মামা আমাকে আমার পিতৃপরিচয়, আমার জন্মের কারণ সব বলে আমাকে এই কোলকাতাতে একটা অনাথ আশ্রমে রেখে দেন । সেখানেই অসহ্য মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করে তিলে তিলে বড় হয়েছি । লেখাপড়া শিখেছি । তারপর একটা ছোট্ট চাকরি নিয়ে এই শহরেই থেকে যাই । একদিন কাকতালীয় ভাবে কামিনীর ফেসবুক প্রোফাইলটা আমার নজরে পড়ে । সেখান থেকে ঘেঁটে সব তথ্য পেয়ে যাই । তার চাইতেও বড় কথা কামিনীকে দেখা মাত্র ওর প্রেমে পড়ে যাই । তারপরই আমি ওকে ফলো করতে লাগি । বাকিটা আজ আপনাদের সামনে ।"

অর্ণবের কথা শুনে প্রচন্ড রেগে গিয়ে কামিনীও এবার গর্জে উঠল।-"হোয়াট্...! তুমি আমাকে ইউজ় করলে...! আমাকে প্রেমের জালে ফেঁদে রায়চৌধুরি বাড়িতে ঢোকার প্ল্যান করছিলে তুমি...! ইউ বাস্টার্ড...!"

"হ্যাঁ মিনি...! আমি বাস্টার্ড... যার অবৈধ পিতা তোমার সনামধন্য শ্বশুর শ্রী কমলাকান্ত রায় চৌধুরি । আজ তুমি যত খুশি আমাকে বাস্টার্ড বলো । কেননা আমি একজন ব্লাডি বাস্টার্ড...! কিন্তু বিশ্বাস করো মিনি, তোমাকে আমি ভালোবাসি... আর আমার ভালোবাসা প্রমাণ করার জন্য তুমি যদি আমাকে তিনতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ মারতে বলো, আমি এক্ষুনি মারতে রাজি । এমনকি তুমি যদি আমার গলায় ছুরিও চালাতে চাও, আমি হাসতে হাসতে গলা পেতে দেব । কিন্তু প্লীজ় আমার ভালোবাসাকে অপমান কোরো না । আমার গায়ে কমলাকান্ত রায়চৌধুরির রক্ত বইলেও আমি কমলাকান্ত নই । তোমাকে আমি ভালোবাসি । আর তুমি চাইলে তোমাকে বিয়েও করতে চাই আমি, যদিও আমার টাকা পয়সা, বাড়ি-গাড়ী কিছুই নেই..."

অর্ণবের কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই থ হয়ে গেলেন । কেমন একটা অদ্ভুত গুমোট সবাইকে গ্রাস করে নিয়েছে । হঠাৎ কমলবাবু মুখ খুললেন -"কে বলল তোমার কিছু নেই...? আমার কোম্পানির তুমিও অর্ধেক মালিক । আমি কালই লইয়ার ডেকে উইল করে তোমাকে তোমার অংশ দিয়ে দেব । তুমি আমার সন্তান । আমার সম্পত্তিতে তোমারও তত খানিকই ভাগ আছে, যতখানিক নীলের আছে । আর মদ খেয়ে খেয়ে নিজেকে আর আমার কোম্পানিকে যে তলানিতে এনে পৌঁছে দিয়েছে ও তাতে তার হাল ফেরাতে তোমাকেই দায়িত্ব নিতে হবে । কিন্তু বাবা.. আমাকে একবার ক্ষমা করে দিয়ে বাবা বলে ডাকো তুমি...! আমার পাপের প্রায়াশ্চিত্ত করার একটা সুযোগ দাও বাবা...! দেখ, আমি বুড়ো হয়ে গেছি, মৃত্যু মুখে আপতিত । যে কোনো দিন আমি মরে যেতে পারি । মরার আগে আমাকে একটা ভালো কাজ করে যেতে দাও বাবা..."

কমলবাবুর কথা শুনে অর্ণবও কান্নায় ভেঙে পড়ল । অর্ণব কমলবাবুকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইল এমন কাজ করার জন্য । কিন্তু কমলবাবু কথা দিলেন -"আমি কালই উকিলকে বলে ওদের ডিভোর্স পেপার রেডি করাব । তারপর তোমাদের বিয়ে দেব ।" তারপর নীলের দিকে তাকিয়ে বললেন -"কামিনীর মত একটা মেয়েকে পাওয়া ওর কাপালে নেই । ও মদ নিয়েই থাকুক । আর তুমি আমার কোম্পানি আর আর আমার বৌমার দেখভাল করবে ।

বছর ঘুরে গেল । কামিনী ফুটফুটে চাঁদের মত একটা পূত্রসন্তানের জন্ম দিল । অর্ণবের মেহনত আর একাগ্রতায় ওদের কোম্পানি আবার গগনচুম্বী হয়ে উঠেছে । নাতিকে পেয়ে কমলবাবুও যারপরনাই খুশি । শুধু একজনই আজও মদের বোতলে নিজের দোষ খুঁজে বেড়ায়, রুগ্ন, মর্মন্তুদ একটা জ্যান্ত লাশ হয়ে যাওয়া নীলকান্ত রায় চৌধুরি....

=সমাপ্ত=


Post a Comment

1 Comments