গহীনের পথে by riddle Page:- 01



আধ শুকনো পাতাগুলো গোল অগ্নিকুন্ডে চড়চড় শব্দে পুড়ছে। তেজপাতার মত অদ্ভুত গন্ধ ছড়াচ্ছে ইউক্যালিপটাসের লম্বা পাতাগুলো পুড়তে পুড়তে। মোহনীয় গন্ধটা অনেকটা জেনের কামার্ত গোপনাঙ্গের গন্ধের মত।

মাথা থেকে ময়লা হ্যাটটা খুলে রুক্ষ চুলগুলো ঘাড়ের উপর এলিয়ে দিলাম। রাইফেলটা কাঁধে ফেলে ক্ষয়ে যাওয়া হাতল ধরে জেনের কথা ভাবছিলাম।

নিজের দেশে রাজার হালে থাকলেও বাঙালির স্বভাব হল বিদেশ বিভূঁইয়ে গিয়ে থালা বাসন মাজা। দেশে এসব কাজের কথা শুনলেও যারা নাক সিঁটকায়, তারাও সাদা চামড়ার দেশে এসব অড জব অনায়াসে করছে।

আমিও তেমনি এক দেশত্যাগী প্রবাসী। পড়ালেখা খারাপ করিনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাল চাকরির লোভে বেশ কিছু টাকা খরচ করে দেশ ছেড়েছি। যথারীতি আদম ব্যবসায়ীর পাল্লায় পড়ে ভাল চাকরীর আশা বালের দুরাশায় পরিণত হয়েছে। বিমান থেকে এমন এক জায়গায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে – যা পেরু, বলিভিয়া নাকি ইকুয়েডরে তা বুঝতেই আমাদের ঘন্টাখানেক লেগেছে। প্রতারিত হবার ব্যাপারটা বুঝতে পারার পর সঙ্গীদের অনেকেই ইমিগ্রেশনে বসে হাউমাউ করে কাঁদছিল।

প্রথম ঝটকাটা কেটে যেতেই যে যার দিকে পা বাড়িয়েছি। আমাদের নামিয়ে দেয়া হয়েছিল অপরাধের স্বর্গরাজ্য কলম্বিয়ায়। কোনরকমে সপ্তাহখানেক রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর পর ক্লান্তিতে যখন শরীর নুয়ে পড়ছে তখনই জেনের সাথে দেখা। কিশোরী ভৃত্যকে নিয়ে বাজার থেকে মাখন আর বীন কিনতে এসেছিল জেন। স্বর্ণকেশী ছিপছিপে তরুণীটিকে দেখেই পছন্দ হয়েছিল আমার। মেয়েটিরো হয়ত তেমনই অনূভুতি হয়েছিল। আমার ছেঁড়া ফাটা কাপড় আর ধূলিমলিন মুখ দেখেই অবস্থা আন্দাজ করে নিয়েছিল সে। মালটানা ঘোড়ার গাড়িতে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খেতে দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে।

দিন চারেক পর যখন আমি বেশ সুস্থ, তখন জেনের বাবা মিস্টার স্টিফানো আমার সাথে দেখা করলেন। আমার কাহিনী শুনে বেশ ব্যথিত হলেন তিনি। দুঃখ প্রকাশ করে তার সাথে কাজ করারো প্রস্তাব করলেন।

তখন সব দিক দিয়েই আমার যে অবস্থা তাতে নিজের গালে নিজে জুতা মারার মত কাজ করতেও আমি এক পায়ে খাড়া ছিলাম। তার উপর মি স্টিফানোর কথা অনুযায়ী থাকা খাওয়া তার বাসায়, তার পরেও যে পরিমাণ বেতন দেয়া হবে তাতে দেশে আমার পরিবার রাজার হালে থাকতে পারবে।

পরের দিন থেকেই কাজ শুরু করে দিলাম। কাজটা যে আসলে কি তা বুঝতে আমার সপ্তাখানেক লেগে গেল। পাহাড়ী সরু রাস্তা দিয়ে কোথা কোথা থেকে ফলের বাক্সের ভেতর করে ড্রাগ নিয়ে আসা হয় স্টিফানোর র‍্যাঞ্চে।

এমনিতে এরকম কাজে রাজি হওয়ার কোন সম্ভাবনা না থাকলেও এরকম পরিস্থিতিতে এসব কাজো যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত।

নিগ্রো কুলীদের মধ্যে একমাত্র শিক্ষিত বলে আমাকে দেয়া হল ড্রাগ চালানের হিসাব রাখার কাজ। সপ্তাহে দুদিন শেষরাতে আর দুদিন ভর দুপুরে চালান আসত। বাকি দিন গুলোতে অন্তরঙ্গ সময় কাটত জেনের সান্নিধ্যে।

বাদামী চামড়ার এশিয়ান পুরুষ নাকি ইউরোপীয় মেয়েদের পছন্দের তালিকায় অনেক নিচে। তবে জেন কিন্তু প্রথম থেকেই আমার প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।

রাজধানী বোগোটা থেকে কি করে দেশের পূর্ব প্রান্তে ধুঁকতে ধুঁকতে চলে এলাম জানিনা। দেশের এই প্রান্ত সী লেভেলে অবস্থিত বলে অসহ্য গরম। সমতলের কিছুটা দূরেই উঁচু পাহাড় আর আমাজান রেইন ফরেস্ট অঞ্চল।

সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন থাকতাম জেনদের বাড়িতেই। বাড়ির টুকটাক কাজকর্মে সাহায্য করতাম আর সেই সাথে জেনের সঙ্গে প্রেম করতাম।

জেনের সবসময়কার সঙ্গী ছিল কৃষ্ণাঙ্গ এক কৈশোর পার হওয়া তরুণী। প্রেম যখন গভীর হয়ে উঠল, আমরা প্রায়ই ঘরে বাইরে যৌনমিলন চালিয়ে যেতে লাগলাম। প্রথম প্রথম বেশ অস্বস্তি হত, এরকম মারাত্মক লোকের বাসায় থেকে তার সাথে গাদ্দারি করাটা মোটেই নিরাপদ নয়। তবে সুন্দরী জেনের বাধ ভাঙা যৌবনের ইশারা পেলে আর মাথায় কোন ভয় ডর কাজ করেনা।

তাছাড়া আফ্রিকান মেয়েটা, ওর নাম এরিস – সে সবসময় আমাদের উদ্দাম যৌনলীলার সময়টাতে আড়ালে থেকে পাহাড়া দিত, কেউ যদি আমাদের গোপন অভিসারে বিঘ্ন ঘটাতে চলে আসে তবে আগেই সংকেত দেয়। ঘোড়া রাখার আস্তাবলটা নরম, উষ্ণ আর বেশ নিরাপদ জায়গা ছিল। তবু একদিন ধরা খেয়েই গেলাম।

সেদিন এরিস ঠিকই বসেছিল আস্তাবলের দরজার সামনে। কিন্তু, মিস্টার স্টিফানো পেছনের দরজা দিয়ে হঠাৎ ঢুকে আমাদের দুজনকেই নগ্ন দেহে আবিষ্কার করে ফেললেন।

জেনের বাবা যতটুকু না রেগে গেলেন তার চাইতে বেশি আশাহত হলেন। আমার কাছ থেকে তিনি উপকারের এই রকম প্রতিদান আশা করেননি।

বন্দুকের ফাঁকা গুলির একেকটা আওয়াজ হৃৎপিন্ডে এক হাজার হাতুড়ির বারি মারছিল যেন। এক দৌড়ে চলে এলাম পাহাড়ে। সাথে করে কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। তিন মাসের বেতন তো দূরে থাক, কাপড় চোপড় পড়ার সময় যে মিস্টার স্টিফানো দিয়েছেন, এটাই বেশি।

Post a Comment

0 Comments