গহীনের পথে by riddle Page:- 02



মাস চারেকের আরামদায়ক স্থির সময় কাটানোর পর আবার কষ্টের সময় শুরু হল। আমাজনের ধার ধরে কলম্বিয়া সীমান্ত থেকে ব্রাজিলে ঢুকে পড়লাম। ভাগ্যক্রমে একদিন দেখা হয়ে গেল আমার মত প্রতারণার শিকার দুই যুবকের সঙ্গে। ওদের সঙ্গেই আমি নেমেছিলাম বোগোটার এয়ারপোর্টে।

ব্রাজিলে পৌঁছে তখন আমি কুলি মজুরের কাজ ধরেছি। এক অলস সন্ধ্যা্য় ভাঙা বারে বসে ছাইপাশ গিলছিলাম, সেই সময় করিম আর আকন্দের সাথে দেখা। আমাকে দেখেই হই হই করে উঠল ওরা। দেখলাম দুজনেই খাঁকি ড্রেস পড়া, কাঁধে জং ধরা পুরানো রাইফেল।

ওরা জানাল, আমি ইচ্ছে করলেই বস্তা টানার বাজে কাজ ছেড়ে ওদের সাথে বন রক্ষীর চাকরি করতে পারি। স্থানীয়রা জঙ্গল ভয় পায়। গাইড বাদে প্রায় সবাই বিদেশী রক্ষী। বনের কাঠ চোরাচালান কমানোই আমাদের কাজ। ছোটখাট স্মাগলিং গ্রুপ বা ড্রাগের চালান ধরতে পারলে উপরি পাওনা খারাপ না।

ম্যালেরিয়ার ভয় ছাড়া আর তেমন কোন সমস্যা নেই জঙ্গলের ভেতর। রেইনফরেস্টের এই অংশে সভ্যতার ছোঁয়া খুব একটা লাগেনি। মাঝে মাঝে জঙ্গল সাফ করে জঙলিদের গ্রাম তৈরি করা হয়েছে। জুলু সহ আরো বেশ কয়েক জাতের উপজাতি আছে ব্রাজিলে। এরা অবশ্য মানুষখেকো নয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষিত হয়ে চাকরি-বাকরিও করছে।

আদিবাসি মেয়েদের দেখে কুতুব মিনার দাঁড়িয়ে যাবার কোন কারণই নেই। নিগ্রোদের বডি স্ট্রাকচার আর মুখায়বব আমাদের কাছে মোটেই আকর্ষণীয় মনে হয়না। গোবদা গোবদা শরীরে পোশাক বিশেষ না থাকলেও বহিরাগত পুরুষদের মনে কামনার উদ্রেক করেনা সেসব। তবে স্থানীয় ছেলেরা প্রায়ই “সুন্দরী” মেয়েদের নিয়ে টানাটানি করে রক্তারক্তি কান্ড বাঁধিয়ে দেয়। দেখে শুধু অবাক হই আমরা, সুন্দরের যে কোন সার্বজনীন সঙ্গা নেই তাদের আচরণে সেই কথাটাই বারবার প্রমাণিত হয়।

বাঙালি আর স্থানীয় ছেলেদের সাথে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে খারাপ লাগছিলনা। এমন এক দিন জেনের পরিচারিকা, এরিস নামের আফ্রিকান মেয়েটা এলো খোঁজ নিতে। ওর বাবার কাছ থেকেই জেনেছে জেন, আমি এই জঙ্গলে আছি। জেন তাকে পাঠিয়েছে আমার খবর নেয়ার জন্যে। মিস্টার স্টিফানো সব জেনেও আমার বিরুদ্ধে কোন কিছু করছেন না – এটা ভাল খবর।

আর খারাপ খবর হল তিনি চান না আমি আর কখনো তার র‍্যাঞ্চের আশেপাশে ফিরে যাই।

এরিস এসেছিল সেদিন বিকেলে। আমার ব্রাজিলিয়ান বদ্ধুদের সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম, ওদের সাথেই ছিলাম কয়েক মাস। এরিসকে দেখে আমার কখনো কিছু হয়নি। হাতের কাছে স্বর্ণকেশী সুন্দরী থাকতে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী নিয়ে ভাববার দরকার কোথায়!

তবে বড়লোকের বাড়িতে থেকে নাদুস নুদুস দেহ বানিয়েছে বটে এরিস। মেয়েটাকে দেখে নিগ্রো ছেলেগুলো ঠোঁট চাটাচাটি শুরু করে দিয়েছে লক্ষ্য করে ভয় পেয়ে গেলাম। এমনিতেই দুমাস ধরে দলের কারো হাতে কোন মেয়েমানুষ পড়েনি, উগ্র ছেলেগুলোকে থামিয়ে রাখা অসম্ভব হতে পারে রাতের আঁধারে। তাই সেই সন্ধ্যা বেলাতেই সর্দারকে বলে এরিসকে সমতলের দিকে এগিয়ে দিতে নিয়ে গেলাম।

অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পথ ধরে এগোচ্ছি। বড় কোন শিকারী প্রাণী নেই এই বনে। তাই রাইফেলটা কাঁধে নিয়ে নিজেকে বেশ নিরাপদ মনে হচ্ছিল।

এরিস আমার চেয়ে ভালভাবে রাস্তা চেনে। ওর বাড়ি ব্রাজিলেই। জেনের মা ওকে ছোটবেলায় নিয়ে এসেছিল কলম্বিয়ায়। ওর বাবা আফ্রিকান, মা ইউরোপিয়ান। গায়ের রংয়ের দিক দিয়ে বাবার টানটাই বেশি। তবে দেহের গড়নটা টিপিকাল জুলু আদিবাসীদের মত নয়। সদ্য কৈশোর পার হওয়া মুখে রাজ্যের সরলতা। মুখের গঠনটাও সাদা চামড়ার মেয়েদের মতই। লম্বা কালো চুলগুলো কোঁকড়া নয়, ঘন আর লম্বা। পেছন থেকে আমার হাতে ধরা লন্ঠনের আলোয় সেগুলো চিকচিক করে জ্বলছে।

ওর পরনে জিন্সের একটা মলিন খাট আঁটোসাটো টপ আর নিচে একটা ঢোলা গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট, পুরুষদের।

ভারী দেহের সাথে পাছাটাও দুলে দুলে এগোচ্ছিল, আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই বাম হাত নিজের প্যান্টের সামনের দিকটায় বুলাতে লাগলাম। ছমাস আগে শেষবার জেনের সাথে শারীরিক মিলন হয়েছে, তার পর আর কিছুই হয়নি কারো সাথে। দলের ছেলেরা মাঝে মাঝে শহরে গিয়ে টাকা খরচ করে কাজ সারে, তবে আফ্রিকানদের মধ্যে এইডসের যে ছড়াছড়ি তাতে পতিতাদের উপর মোটেও ভরসা হয়না আমার।

এরিসের দ্রুত বর্ধণশীল দেহ যেন দুমাসে আরো অনেক বেশি আকর্ষণ নিয়ে হাজির হয়েছে।

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সামনে এগিয়ে এলাম। জঙ্গল পেরিয়ে পাহাড়ের ঢালু দিকটায় এসে গেছি। টানা দুঘন্টা হেঁটে এসে দুজনেই ক্লান্ত। এরিসের ঝুড়ি থেকে কিছু নাশপাতি আর একটা ব্র্যান্ডির বোতল বেরোল। দুজনে খোলা আকাশের নিচে বসে খাওয়া শেষ করে গল্প গুজব শুরু করলাম।

জেন কেমন আছে, কি করছে, এরিসের কি খবর, কোন বয়ফ্রেন্ড জুটেছে কিনা সেসব জানতে জানতে রাত অর্ধেক শেষ হয়ে গেল।

Post a Comment

0 Comments