এই কথোপকথোন প্রায় ভুলেই গেছিলাম, সেদিন বৌকে নিয়ে বাড়ি যাবার সময় ট্রেনে বসে সে-ই তুলে কথাাটা।
- এ্যই, তোমাকে বলেছিলাম একবার। মনে আছে, কাজের মেয়েদের ডিউটির কথা?
- ওহ, ওটা.. হাহাহহহ..
আমার হাসি দেখে হুমার ঠোঁট একটা চওড়া হয়, কিন্ত হাসেনা।
- কি?
ওর স্থির চোখ দেখে জিজ্ঞেস করি।
- হ্যাঁ, এমন হাসিখুশি যেন থাকতে পার, তাই আনব আমরা একজন।
হুমার কথাটা শুনে মুখ চুপসে গেল। প্রেগনেন্সির সিম্পটম্প দেখা দেয়ার পর থেকে আমার চিন্তা বেড়ে গেছে। নতুন অতিথি আসবে, নতুন ফ্লাট দরকার। সেভিংস বাড়ানো লাগে, স্যালারি বাড়ানোর আবদার করতে হয়, হুমার স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা.. হাসিঠাট্টা জিনিসটা বেশ কমে গেছে আমাদের জীবনে।
- শাট আপ!
হালকা করে বলে হুমার হাত ধরি। এ ব্যাপারে আর কথা হয়না।
- মনি, তুই কাজটাজ করতে পারিস তো সব? আমাদের কিন্ত তেমন কাজ নেই, শুধু রান্নাবান্না আর গোছগাছ। আমি যতদিন আছি তোকে হেল্প করব।
সাদা দাঁত বের করে হাসে মনি। নাকে একটা ছোট্ট ফুল চিকচিক করে। পরে বলেছে, এটা আর কানের একজোড় দুল সেই আলি কাকার মেয়ের জামাই দিয়েছে। দুলজোড়া সঙ্গে আছে, কিন্ত ট্রেনে পড়েনি। সোনার জিনিস টান মেরে কেউ কান ছিড়ে নিয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কায় ওর মা বলেছে পুটলিতে বেধে নিয়ে যেতে, বাসায় পৌঁছে পড়তে।
- মনি, তুমি পড়ালেখা কর?
ট্রেনে ওকে আমার প্রথম প্রশ্ন।
- জ্বে, কেলাস এইটে।
- এইযে আমাদের সঙ্গে যাচ্ছ, পড়ালেখা তো হবেনা অনেকদিন।
জবাবে মুখ টিপে হাসে মনি। পড়ালেখায় নিশ্চই নিয়মিত না। নইলে এইটে আটকে থাকার কথা নয় এখনো। হুমাদের এলাকায় মেয়েদের শিক্ষার হার এখনো খুব কম।
- মনি, আমাদের ওখানে কিন্ত ফ্ল্যাট বাসা। পাশের বাসায় ওদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। সময় পেলে গিয়ে গল্প করতে পারবি, বিকেলে বাচ্চাদের সঙ্গে নিচে খেলতে টেলতে পারবি।
- এহন কি দৌড়াদৌড়ি করনের বয়স আছে?
মনি হেসে বলে।
- তা না করিস, সময় কাটবে অন্যদের সঙ্গে কথাটথা বললে।
হুমা বলে।
- জ্বে, আচ্ছা।
- আর একটা কথা, ওখানে কিন্ত আমাদের গ্রামের মত না। যদি কেউ জিজ্ঞেস করে তোর কাজ কি, বলবি বাসার কাজটাজ যেগুলো ওগুলো.. আমি কি বলছি বুঝতে পারছিস তো? বাড়িয়ে বলবিনা কিছু!
হুমা বেশ ভাল করে মনিকে কাছে টেনে বলে। ট্রেন তখন প্রায় কমলাপুর চলে এসেছে।
- জ্বে আপা। আমি বুঝছি।
কিশোরিও তেমনি ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়। ব্যাগ ট্যাগ নামিয়ে হাতের কাছে এনে রাখতে রাখতে ওদের এই কথোপকথোনটাই আমার সন্দেহের দোটানা দূর করে দেয়। রিকশা করে বাসায় ফেরা পর্যন্ত চিন্তাটা মাথায় জেঁকে বসে থাকে।
- প্যান্ট ভাঁজ করে রাখ, নইলে সকালে আবার ইস্ত্রি করতে টাইম নষ্ট হবে।
হুমার কথা মেনে কালো প্যান্ট উল্টিয়ে এক ভাঁজ করে খাটের স্টান্ডে রাখে মনি। শুধু আন্ডারওয়্যার আর স্যান্ডো গেঞ্জিতে গা জুড়িয়ে যাবার কথা, কিন্ত বুকের ধকধকানিতে রোমকূপ উপচে ঘাম ঘরছে যেন।
হুমার মুখভঙ্গির কোন পরিবর্তন নেই। হাসিহাসি মুখ নিয়ে বিছানার কিনারে বসে গলার ওড়নাটা সাইডে রেখে দিল।
- ভাইয়ের শইল্লে খালি রুম্বা গো!
পায়ের লোমে আলতো করে হাত চালিয়ে বলে মনি। আচমকা ছোঁয়া পেয়ে পা কেঁপে ওঠে।
আমার সব শঙ্কা-দ্বিধা কেটে চোখ আরামে মুদে আসে মনি মাসাজ শুরু করতে। পায়ের গোড়াটা ধরে টিপে টিপে মালিশ শুরু করতে মনে হয় যেন পা নতুন করে গজাচ্ছে। পুরনো, সারাদিনে ক্ষয় হওয়া গোড়ালি কিশোরি ফেলে দিয়েছে।
- ভাল লাগছে?
হুমা জিজ্ঞেস করে। চুপচাপ চোখ বুজে মাসাজ নেয়াটা খেয়াল করছে।
- মনি, তুমি খুব ভাল মাসাজ দাও তো..
আমি বলি। জবাবে কাফের মাংসে মুঠ করে চাপ বাড়ায় মনিহার।
0 Comments