সাময়িক সমাধান by riddle Page:- 02



- শালী তো আধা বৌ, মাইনষে কয়। এইহানি কিন্তু আফাদতো তোমার ফুল বৌ.. লাজ শরম কইরোনা, ভালামত থাইহো। দুয়া করি আল্লায় জানি ভালা রাহে।

পান খাওয়া দাঁতে মুখ ভরে হেসে শ্বাশুড়ির কথাগুলো মনে পড়লে গা কেমন শিরশির করে। আমার শ্বশুড়বাড়ি যে একটু অদ্ভুত হবে তা জানতাম। কিন্ত কিছু ব্যাপার বেশ বিপাকে ফেলে দেয়।

বিয়ের কথা দুবাড়ির মধ্যে পাকা হতে হুমা বলেছিল গ্রামে গিয়ে অদ্ভুত লাগলে অবাক না হতে। বিয়ে করতে গিয়ে অবাক তো হয়েছি আসলে জায়গাটা কত দূরে তা বুঝতে পেরে। আর কি প্রকৃতি, সব আনকোরা সৌন্দর্যের সম্ভার।

আমার ফ্যামিলির সঙ্গে বিয়ের কথাও বলেছে ঢাকায় এসে ওর ভাই-মা। আমাদের যাওয়া হয়েছিল প্রথম বিয়ের সময়ই। আর পরে তো শুধু আমিই গিয়েছি। শেষবার দুমাস আগে যখন গেলাম, সঙ্গে মনিকে নিয়ে এলাম, সেবার এত পথ ঠেলে যাবার ইচ্ছে ছিলনা। তার ওপর হুমার পাচ মাস চলছে। তবে সেজন্যেই যেতে হল।

- এখুনি রেখে আসতে হবে তোমাকে? কদিন পরে যাও?

আমি বলেছিলাম।

- না, থাকার জন্যে না। এমনি রিচুয়াল টিচুয়াল আছে। তার সঙ্গে কাজে হেল্প-টেল্প করার জন্য একটা লোক দেবে আম্মা।

পাহাড়ি অঞ্চল, অনেকটা বিচ্ছিন্ন এলাকা। কিভাবে সেখানে বিদেশি ধর্মটর্ম ছড়াল তা জানা নেই। তবে আরবীয় বিশ্বাসের সঙ্গে লোকাল প্রাচীন রিচুয়ালও তারা একেবারে ঝেড়ে ফেলেনি। বিয়ের সময়ও একটু সনাতনী কায়দায় হ্যানত্যান আচার দেখে বরযাত্রীরা একটু অবাক হয়েছিল।




পেট ভাসতে শুরু করা বৌকে নিয়ে এত পথ ঠেলে যাবার পর এবার ওকে দেখতে গ্রামের মহিলারা এল বেশ ভীড় করে। সবার আগ্রহ দেখে কেমন একটা বিশাল পরিবারের অনুভূতি হয়। দুদিন থেকে চলে আসার কথা। যেদিন সন্ধ্যার ট্রেন ধরব, সেদিন বিকেলে মনিকে উপস্থাপন করা হয় প্রথমবার। ট্রেন ধরব বলাও চাট্টিখানি কথা নয়। বাড়ি থেকে দুপুরের দিকে বেরিয়ে, রিকশা টিকশা করে নৌকা টেম্পু করে বিকেলে স্টেশনে পৌঁছে তারপর ট্রেন।

মেয়েটাকে আগে দেখেছিলাম কিনা মনে করতে চেষ্টা করলাম। পরিচিত মনে হলনা। ফর্সা, চিকন দেহ, লম্বাটে মুখ, হুমার চেয়ে একটু খাট। গা শুকনো বলে ভরা কৈশোর বুকের ওপর ফেলা ওড়না ছাপিয়ে তেমন চোখে লাগেনা।

- কেমুন আছেন ভাইজান?

মেয়েটা মিষ্টি গলায় জিজ্ঞেস করে।

- ভাল, তুমি ভাল?

মেয়েটা মাথা নাড়ে।

- এইটা হইল মনি, আমাগো ভোলার মাইয়া। ওয় যাইবো তোমাগ লগে। আগের বার যহন হুমারে দিয়া যাইবা, ওর কামকাইজ সব করব নে তোমার, দেহাশুনা সেবাযত্ন করব। বুঝছ?

- জ্বী।

আস্তে বলি। বুঝছ কথাটার ওপর জোর। অনেক আগে একবার কথাচ্ছলে এ ব্যাপারে বলেছিল হুমা। তখন মনে হয়েছে ওর গাঁয়ের গেঁয়োমি নিয়ে মশকরা করছে। সেটা ওর বড় ভাইয়ের ওয়াইফের প্রেগনেন্সির নিউজ আসার সময়ের কথা।




- জানো, আমাদের ওখানে মেয়েরা প্রেগনেন্ট হলে বাপের বাড়ি থেকে কাজের মেয়ে পাঠায়, মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে।

হুমা বলেছিল।

- হাহা.. কেন? তোমাদের তো সব বড় ফ্যামিলি। বৌ প্রেগনেন্ট হলে কি অন্যরা বাড়ির কাজ করতে পারেনা?

- তা পারে.. কিন্ত ওরা তো অন্য লোক। নিজের গ্রাম থেকে যে যায় সে কেয়ার করেনা বেশি? পাঠায় তো পার্সোনালি যেন কেয়ার করে প্রেগনেন্ট মেয়ের, সেজন্য।

- হুমম, সেটা ঠিক আছে।

আমি বলি।

- আরো একটা ডিউটি থাকে ওর, যতদিন প্রেগনেন্সির কারণে হাজবেন্ডের সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশন করতে পারেনা বৌ - ততদিন জামাইটাকে হ্যাপি রাখা।

হুমা কথাটা একটানে এমনভাবে বলে ফেলে, যে অবিশ্বাসের হাসি দেয়াটাও সম্ভব হয়না।

- হোয়াট? শাটাপ!

- শাটাপ কেন? তুমিতো জানোই আমাদের ওখানে মানুষ একটু অন্যরকম।

হুমা হেসে বলে। মনে হয় কথাটা সিরিয়াসলিই বলেছে একটু আগে।

- রিয়েলি? এটা সেক্সুয়াল এবিউজের পর্যায় পড়ে যায়না?

আমিও একটু সিরিয়াস হয়ে বলি। আশঙ্কা হয় হঠাৎ হুমা আলোচনা থামিয়ে হো হো করে হেসে ফেলবে আবি বিশ্বাস করে ফেলেছি দাবি করে।

- না, জোর করে তো কিছুনা.. এটা ট্রাডিশান। যার বাচ্চা হবে তার ফ্যামিলি থেকেই এরেঞ্জ করা হয়। একটু গরিব ঘরের মেয়েদের পাঠায় বাপ-মা, টাকা-পয়সা দেয়।

- তোমাদের বেশ কনজার্ভেটিভ সোহাইটি না? এভাবে দেয় কেউ মেয়েদের?

- আমাদেরটা আমাদের মত করে কনজারভেটিভ।

এটুকুই বলে হুমা।

- পরে বিয়ে করে কেউ এই মেয়েদের?

- হ্যাঁ, করবেনা কেন? ভাল যৌতুক দিয়েই বিয়ে হয়।

অবাক চোখে প্রশ্ন করে বৌ। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করিনা। ওদের সমাজে ভার্জিনিটির গুরুত্ব কতটুকু তা জানা নেই। তবে জিনিসটা নিয়ে হুমা যেমন স্বাভাবিকভাবে বলল, মনে হচ্ছে আসলেই কোন সমস্যা নেই।

Post a Comment

0 Comments