বুঝতে পারলাম লুৎফার কথা বলছেন। ছুঁড়ি থেকে বুড়ি সবার দিকে নজর থাকে ভাইদের। এলাকায় নতুন সুন্দরী এসেছে, সে খবর তো আর চাপা থাকবেনা!
"হ! হ! আমার লগে পড়ে তো..."
আমি উৎসাহী হয়ে বলতে যাচ্ছিলাম, ভাই থামিয়ে দিলেন।
"হ, আমরা ঐ খবর জানি। অত লাফাইওনা। কামের বেলায় তুমি হইলা টিউব লাইট।"
"কি হইছে ভাই? আমিই তো তকদির ভাইরে কইলাম কোন সময় রেলগেইটের মোড়ে খাড়াইলে দেখা যাইব.."
তকদির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি বাচ্চাদের মত আনমনে পুরীতে ঘনঘন কামড় দিচ্ছেন। লুৎফার মুখদর্শনের কথায় কেমন চুপসে গেছেন।
"হুঁ, শুনছি... সেই কথা পরে কই। আগে কওতো, ঐ ছেড়ি টাকলাটার কি লাগে?"
"বইন।"
সঙ্গে সঙ্গে বললাম।
"তোমার বাল!"
রোমেল ভাই খেকিয়ে উঠলেন। আমি বেশ অবাক হলাম। তকদির ভাই বাদে অন্যরা ফিক করে হাসল। আমার সন্দেহ হবার খুব ভাল কারণ আছে, কিন্তু উনি কেন ভাই-বোনের সহজ সরল সম্পর্কটা নিয়ে সন্দিহান তা মাথায় ধরছেনা।
"কেন ভাই? আমরা তো এইটাই জানি।"
রোমেল ভাই হতাশ হলেন। কি বলবেন বলবেন বলে মনে হচ্ছে। বলা উচিত কিনা স্থির করতে পারছেন না। শেষে মাথা নিচু করে গলা নামিয়ে বলতে শুরু করলেন।
"তুই একটা কাম কইরা দিবি।"
"কি কাম?"
পুরী ফেলে সামনে ঝুঁকে এলাম।
"ময়নাদির আসর কই বসে জানস না?"
"হুঁ। এইটা জিগানোর কি আছে!"
"গতমাসে দীঘির পাড়ে খেইলা টাকা পাইছিলাম বেশ কিছু। ময়নাদিরে বললাম স্পেশাল মাল থাকলে খবর দিতে। সোমবার দশটার দিকে ফোন দিয়া কয়, অস্থির জিনিস আছে, খাইতে চাইলে জলদি আসতে হইব। আমি তো গিয়া ব্যাক্কল হইয়া গেছি। মাইয়াটার নাম কি জানি, ডলি না?"
"লুৎফা।"
খসখসে গলায় বললাম।
"হু.. মাগীগো একশোটা নাম থাকে... তকদিরের কথা ভাইবা মনে হইল বাইর হইয়া যাই। কিন্তু দিদি কইছিল, এইটারে সব সময় পাওয়া যায়না। তাছাড়া মাগী মুগীর লগে পীরিত করার শখ নাই, তাই পয়সা উসুল কইরা নিলাম।"
তকদির ভাই খাওয়া বাদ দিয়ে থম মেরে বসে আছে। লুৎফারা এলাকায় প্রথম আসার পর আমিই ওনাকে খবরাখবর এনে দিয়েছিলাম। তখন অবশ্য খুব বেশি কিছু জানতাম না।
"তো, ঘর থেইকা বাইর হইয়া দেখি টাকলা বারান্দায় বইসা বিড়ি খাইতেছে। হাত খরচ চালানোর জন্য মাইয়াগো ভাড়া খাটার কালচার নতুন কিছু না, কিন্তু ভাই ঘরের বাইরে আর বইন ঘরে কাস্টমার নিয়া বিছানায়, এইটা কেমন জিনিস! হু?"
চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন রোমেল ভাই। আমি গায়েবীভাবে সব রহস্যের সমাধান করে ফেলতে পারব, ভাবটা এমন।
"টাকলাই ছিল তো, আপনে শিওর?"
"হুঁ। এর পরে আরো দুইদিন গেছি, খালি ঘটনাটা কি সেইটা বোঝার জন্য। সপ্তাহে দুইদিন সকালের দিকে তোগ ইসকুলের ড্রেস পড়াইয়া ময়নাদির ঐখানে নিয়া আসে। তারপর কাপড় পাল্টাইয়া অন্যকিছু পিন্দায়। ঘন্টা তিনেক পরে আবার ড্রেস পিন্দাইয়া ব্যাক টু হোম।"
"ঘাপলা আছে। বুঝলি, বিচ্ছু?"
পেছন থেকে এক ভাই বলল।
"আমাগো ধারণা ব্যাটা একটা মাগীর দালাল। এইটা ওর বইন টইন কিছুনা। এখন তোর কাম হইল ঐ ফ্যামিলির ঘটনাটা কি সেইটা বাইর করা।"
"আমি... ক্যামনে?... আমি তো মাইয়ার লগে কথাই কইনা..."
"তো কি হইছে? বাসায় যাবি, গিয়া পড়ালেখা হাবিজাবি নিয়া কথা কইয়া খাতির জমাবি। টাকলার বৌয়ের লগে কথাবার্তা কবি। মাইয়া ঐ ফ্যামিলির কেউ, নাকি সাবলেটে ভাড়া খাটে, জানতে হবে।"
জেনে কি হবে সেকথা জিজ্ঞেস করলাম না। উদ্দেশ্য হয়তো স্রেফ কৌতুহল নিবারণ। ছোট থাকতে ভাইদের জন্যে মেয়েদের পিছে পিছে ঘুরে ঠিকানা, ফোন নম্বর, কোন রাস্তা দিয়ে কখন যায় এসব জোগাড় করেছি। তাই আমাকেই গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
0 Comments