বজ্রাঘাত পর্ব ১৫ (collected)



হটাৎ করেই উঠে দাঁড়ায় পৃথা, দ্রুত পায়ে গিয়ে ঢোকে বেডরুমে, বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা ছবিটাকে হাতে তুলে নিয়ে একবার দেখে, তারপর সেটা হাতে নিয়ে ফিরে আসে ড্রইংরুমে, সোফার ওপরে বসে ছবিটাকে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে এগিয়ে দেয় প্রণববাবুর দিকে, বলে, ‘আচ্ছা, এই ছবিটা কাদের? এরা কারা? আমি এখানে আসার পর ছবিটাকে বেডরুমে দেখতে পাই, কিন্তু আর কোথাও এদের ছবি পাইনি... ইনিই কি...?’

পৃথার প্রশ্নের ফাঁকেই ছবিটাকে হাতে তুলে নিয়ে দেখতে শুরু করেছিলেন প্রণববাবু, তাই পৃথার কথা শেষ হবার আগেই বলে ওঠেন, ‘হু... এটাই অর্নব, আর ওর পাশে ওর স্ত্রী, লিন্ডা... এটা ওদের হানিমুনে গিয়ে তোলা ছবি... সম্ভবত অন্য কাউকে দিয়ে তুলিয়েছিল।’

কেন জানে না পৃথা, ওর বুকের মধ্যেটায় কেমন একটা ঝড় ওঠে... বুকের মধ্যে যেন হৃদপিন্ডটা অকারণেই কেমন ধক ধক করে বাজতে থাকে... গলার মধ্যেটায় কি কারনে যে শুকিয়ে ওঠে, বোঝে না সে... গলাটা একবার খেকারি দিয়ে ঝেড়ে নিয়ে বলে, ‘ও’... তারপর একটু চুপ থেকে ফের বলে ওঠে, ‘তা, এখন এনারা কোথায়?’

খানিক স্থির দৃষ্টিতে পৃথার পানে তাকিয়ে থাকেন প্রণববাবু, তারপর মাথা নেড়ে ধীর কন্ঠে বলেন, ‘সেটা এই ভাবে বলা সম্ভব নয়... সেটা বলার জন্য সময়ের প্রয়োজন... অনেকটা পিছিয়ে যেতে হবে আপনার এই উত্তরটা দেবার জন্য।’

প্রণববাবুর কথায় একটু বিস্মিত হয় পৃথা, ‘ঠিক বুঝলাম না... এনারা কোথায়, সেটা বলতে এতটা অসুবিধার কি রয়েছে এর মধ্যে?’

‘না, ঠিক অসুবিধা নয়, কিন্তু সেটা এক কথায় উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়... এই আর কি।’

‘আপনার যদি বলতে কোন দ্বিধা থাকে, তাহলে আপনাকে জোর করবো না, থাক তবে... আমারও যে খুব জানার প্রয়োজন তা নয়, জাস্ট কিউরিওসিটি বলতে পারেন... ঠিক আছে, অসুবিধা থাকলে বলতে হবে না... অবস্য আমার জিজ্ঞাসা করাটাই সম্ভবত একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেছে... আসলে অনেক দিন ধরেই আপনার এই অর্নববাবুর ছবিটা আমার বেডরুমে রয়েছে তো, প্রায় সবসময়ই চোখে পড়ে, তাই আর কি জিজ্ঞাসা করছিলাম, ঠিক আছে, নো প্রবলেম, আপনাকে কোন অসুবিধায় ফেলতে চাইনা আমি...’ বলে সোফায় হেলান দিয়ে ফিরে বসে পৃথা। মনে মনে বেশ নিরাশই হয়, কিন্তু মুখে সেই ভাবের প্রকাশ করে না।

আরো কিছুক্ষন চুপ করে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর আসতে আসতে সেটা নামিয়ে রাখে সেন্টার টেবিলটার ওপরে প্রণববাবু, ছবিটার সামনেটা ঘুরিয়ে দেয় পৃথার দিকে... পৃথারও চোখ গিয়ে পড়ে ছবির মধ্যের ছেলেটি, মানে অর্নবের ওপরে। তার মনে হয় যেন ছবির মধ্যে থেকেই তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে অর্নব, তাকেই যেন দেখছে... ঠোঁটের কোনে কি স্মিত একটা হাসি? না, না, ওটা নিশ্চয়ই ওরই মনের ভুল। ছবির দুজনকেই আরো ভালো করে একবার দেখে নেয় পৃথা, তারপর চোখ তুলে তাকায় প্রণববাবুর দিকে।

ততক্ষনে প্রণববাবু পকেট থেকে সিগারেটএর প্যাকেটটা বার করে নিয়েছেন হাতে, পৃথার সাথে চোখাচুখি হতে প্যাকেটটা খুলে এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি দেখলাম আপনিও গোল্ড ফ্লেকই খান, তবে আপনারটা লাইট আর এটা রেগুলার কিংস, নেবেন নাকি?’

না বলে না পৃথা, সামনে ঝুঁকে এসে হাত বাড়িয়ে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট টেনে বের করে নেয়... তারপর ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে লাইটার জ্বালায়... তারপর ফের পিছিয়ে হেলান দিয়ে বসে সোফায়, পায়ের ওপরে পা’টাকে ক্রস করে তুলে রেখে... হাল্কা ধোঁয়া ছাড়ে মুখ থেকে।

প্রণববাবুও নিজের ধরানো সিগারেটএ একটা টান দিয়ে ভালো করে বসেন সোফাতে, তারপর বলতে শুরু করেন, ‘অর্নবের কথা বলতে গেলে আমাকে একটু পিছিয়ে যেতে হবে বেশ কিছু বছর। অর্নবের সাথে আমার বন্ধুত্ব এক বা দুই দিনের নয়, সেই ছোট বেলা থেকে। আমরা একই সাথে বড় হয়েছি। আমরা দুজনেই কিন্তু কেউই কোলকাতার ছেলে নই, আমাদের বাড়ি রায়পুর, ছত্তিসগড়ে, অবস্য এখন সেটা ছত্তিসগড়, আগে ছিল না। আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হলেও, অর্নবের বাবা কিন্তু যথেষ্ট বিত্তবান। রায়পুরে ওদের বিশাল বাড়ি রয়েছে। ওর বাবা একটা বিরাট ইস্পাত কারখানার মালিক, তাই ও কোনদিনই অভাব কি জিনিস, জানতো না। কিন্তু বড় লোকের ছেলে বলে যে বখে যাওয়া, তা কিন্তু নয়। বরং বলবো ও একেবারেই ওর বাবার স্বভাবের বিপরীত। হয়তো মায়ের মতই হয়ে থাকবে। খুব ছোটবেলায় মাকে হারায়। বাবা বিয়ে করেন আবার। অর্নবের সৎমা কিন্তু ওকে নিজের করেই টেনে নিয়েছিলেন, মায়ের অভাব কোনদিন বুঝতে দেন নি। অথচ বাবার কাছ থেকে ও সেই অর্থে ভালোবাসা বা স্নেহ পায় নি বললেই হবে। অর্নবের বাবা ছিলেন বরাবরই একটু অন্য স্বভাবের, ব্যবসা, অর্থ, প্রতিপত্তি... এই সবই বেশি ভালোবাসতেন কাকাবাবু, মানে অর্নবের বাবা। আমরা ওনাকে কাকাবাবুই বলতাম। ভিষন রাশভারী ছিলেন ভদ্রলোক। তাঁর কথাই শেষ কথা ছিল সর্বদাই। নিজের ব্যবসা নিয়েই থাকতেন সবসময়, সংসারের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা ওই টাকা দিয়েই খালাস হয়ে যেত।

আমরা বড়লোক না হলেও আমার বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে সেই সময়ের শহরের সবচেয়ে ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। অর্নবের সাথে আমার আলাপ স্কুলে, একই ক্লাসে পড়তাম আমরা। খুব চৌখস ছেলে ছিল অর্নব... কি লেখাপড়ায়, আর কি খেলাধুলায়। কোনদিন সেকেন্ড হয় নি কোন পরীক্ষাতেই। মনে আছে, বোর্ড এক্স্যামেও ফার্স্ট হয়েছিল ও, ছবি বেরিয়েছিল কাগজে। কিন্তু তাতে ওর থেকে যেন আমরা মানে ওর বন্ধবন্ধবেরা বেশি গর্ব অনুভব করেছিলাম সেই ঘটনায়। ওকে নিয়ে অনেকদিন ধরে আমরা সবাই মিলে প্রায় উৎসবে মেতে উঠেছিলাম। খেলাধূলাতেও ও ছিল আমাদের ক্যাপ্টেন। কত ইন্টারস্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে যে জিতিয়েছে আমাদের স্কুলকে তার ইয়ত্তা নেই। তাই ও শুধু মাত্র আমাদের বন্ধুদের মধ্যেই নয়, ও ছিল আমাদের স্কুলের শিক্ষকদের কাছেও অতি প্রিয়।

ধীরে ধীরে ক্লাস টুলেভ পাশ করলাম। যথারীতি খুব ভালো রেসাল্ট করল এবারের পরীক্ষাতেও। মনে আছে, স্কুলে থাকতে মেয়েদের মধ্যেও ও ছিল হিরো। ওর কাছাকাছি আসার জন্য মেয়েদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগীতা চলতো। আমরা দেখতাম আর মজা করতাম এই সব নিয়ে খুব। আসলে ওর চেহারাটা ভিষন সুন্দর ছিল, যত বয়স বেড়েছে, ততই যেন রাজপুত্রের মত দেখতে হয়ে উঠেছিল। যেমন লম্বা, তেমনি গায়েগতরে। ওই বয়সেই হাইট ছিল প্রায় ছয়ের ওপরে, সেই সাথে একেবারে পেটানো বেয়াম করা চেহারা। টকটক করছে গায়ের রং, তেমনি সুন্দর দেখতে, চোখ নাক মুখ কাটা কাটা... সত্যিই যেন রাজপুত্র। ওকে দেখলে মনে হত যেন পূর্ন যুবক। অথচ মনের মধ্যে কোন অহঙ্কার ছিল না কোন কিছু নিয়েই... এত যে বড়লোকের ঘরের ছেলে, কে বলবে দেখলে, আমাদের বাড়িই পড়ে থাকত নির্দিধায়... কতদিন হয়েছে দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার পথে, চলে এসেছে আমাদের বাড়ি, মায়ের কাছ থেকে অক্লেশে ভাত চেয়ে খেয়ে গিয়েছে। আমারই এক এক সময় খারাপ লাগতো আমাদের বাড়ির সাধারণ খাবার ওকে খেতে দিচ্ছি ভেবে, কিন্তু ওর মধ্যে তা নিয়ে কোন হোলদোল ছিল না। ওই রকম সাধারণ খাবার, তাই একেবারে চেটেপুটে খেয়ে উঠে যেত। উল্টে মায়ের কাছে আমাকেই বরং মাঝে মধ্যে কথা শুনতে হতো যদি কোনদিন খাবার নিয়ে অশান্তি করেছি তো, অর্নবের দৃষ্টান্ত টেনে মা বলতো, ‘ওকে দেখে কিছু তো শিখতে পারিস...’। সত্যিই, ওকে দেখে অনেক কিছুই শেখার ছিল আমাদের। সেই সাথে ওর নির্ভিক মানসিকতা। ভাবতে পারবেন না, কি অক্লেশে ঝাপিয়ে পড়তে পারতো যদি কেউ কখনও কোন বিপদে পড়েছে শুনেছে। একবার আমাদের এক বন্ধু ফিরছিল কোচিং করে। বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। তখন বোধহয় ক্লাস টুয়েল্ভে উঠেছি... হ্যা, তাই হবে। তা, সেই বন্ধুটি তখন সদ্য প্রেমে পড়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে ওদের সেই প্রেম পর্ব। আমরা, মানে বন্ধুরা ওদের এই ব্যাপারটা সবাই প্রায় জানতাম। বেশ উৎসাহও দিতাম ওকে এই নিয়ে। বুঝতেই পারছেন, তখন সদ্য কৈশোরে পা রেখেছি, তাই কাছের কেউ প্রেম করছে, সেটা জানার পর আমাদের অ্যাড্রেনিলের পরিমানও যেন বেড়ে থাকতো। ও মেয়েটির সাথে দেখা করে ফিরলেই আমারা প্রশ্নবানে জর্জরিত করে তুলতাম, জানার জন্য, কি বলল, কি করল, এই সব আর কি।’

বলতে বলতে প্রণববাবু থামেন একটু। পৃথার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলেন, ‘বোর করছি না তো? আসলে কি বলুন তো, এই সব কথাগুলো জমে ছিল বুকের মধ্যে। হটাৎ করে আপনার প্রশ্নে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।’

পৃথাও প্রত্যুত্তরে হাসে। ‘না, না... বোর হবো কেন, শুনতে ভালোই লাগছে। আমিই তো জিজ্ঞাসাটা করেছিলাম। বলুন আপনি...’

‘একটু জল হবে?’ পৃথাকে অনুরোধ করেন ভদ্রলোক।

‘হ্যা, হ্যা, নিশ্চয়... দাড়ান, আনছি এক্ষুনি...’ বলে উঠে দাড়ায় পৃথা। ‘ঠান্ডা দিই?’

কিচেন থেকে একটা গ্লাস এনে ফ্রিজ খুলে জল বের করে ঢেলে বোতলটাকে ফিরিয়ে ঢুকিয়ে রাখে আবার। ফিরে এসে প্রণববাবুর হাতে গ্লাসটা এগিয়ে দেয় পৃথা।

‘থ্যাঙ্কস্‌, আসলে কথায় কথায় তেষ্টা পেয়ে গিয়েছিল...’ হাসি মুখে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

উত্তরে শুধু স্মিত হাসে পৃথা, মুখ তুলে তাকায় দেওয়াল ঘড়িটার পানে, প্রায় দেড়’টা বাজে, বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। দুপুর বেলায় তার বাড়িতে অতিথি এসেছে, সেখানে না খাইয়ে ছাড়ে কি করে সে? মনে মনে ভাবে পৃথা। কিন্তু এখন রান্না করা সম্ভব নয়, ভদ্রলোককে এই ভাবে বসিয়ে রেখে, তার চেয়ে বরং কিছু অর্ডার করে দিলেই হয়। নিজের সিদ্ধান্তে নিজেই খুশি হয় পৃথা। প্রণববাবুর দিকে ফিরে বলে সে, ‘মিঃ কর্মকার, বেলা তো অনেক হলো, তাই বলছিলাম যে আজকে কিন্তু আপনি আমার এখানেই লাঞ্চ করে যাবেন।’

শুনে শশব্যস্ত হয়ে ওঠেন ভদ্রলোক, ‘এ বাবা, না, না, তা কি করে হয়? আমি তো শুধু মাত্র এগ্রিমেন্টাতে সই করাতেই এসেছিলাম। ছি ছি, দেখুন তো, কি অন্যায়, আমার জন্য আপনার বোধহয় অসুবিধা হয়ে গেল। সত্যিই তো, অনেক বেলা হয়ে গেছে। না, না। আজ বরং আমি উঠি। সই তো হয়েই গিয়েছে। আর একদিন না হয় আমি আসব’খন। তখন না হয় বাকি কথা হবে, কেমন?’ বলে উঠে দাঁড়াতে উদ্যত হন প্রণববাবু।

ওনাকে উঠতে দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে পৃথা, ‘না, না... উঠছেন কেন? আমি আমার জন্য বলিনি এ ভাবে। আর তাছাড়া এই দুপুর বেলায় আপনাকে না খাইয়ে ছাড়িই বা কি করে বলুন, যতই হোক, বাঙালী তো আমরা, নাকি? আমার মা শুনলে তো আমাকে এক হাত নিয়ে নেবে যদি আপনি এই ভাবে দুপুর বেলায় না খেয়ে চলে যান।’

ততক্ষনে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ভদ্রলোক, ‘আপনি শুধু শুধু কুন্ঠিত হচ্ছেন মিস মুখার্জি, কোন অসুবিধা নেই এতে। আর তাছাড়া আজ দেখুন রবিবার, বাড়িতেও আমার ফ্যামিলি অপেক্ষা করছে আমার জন্য, সেখানে আমিই বা কি করে এখানে লাঞ্চ করে ফিরি বলুন। প্লিজ মিস মুখার্জি, অন্য আর একদিন না হয় খাওয়া যাবে’খন। আজকে বরং থাক।’

‘আমি বুঝতে পারছি যে আপনার ফ্যামিলি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, হয়তো ফিরে গিয়েই ওনাদের সাথে আপনি লাঞ্চ করবেন বলেই ঠিক করেছিলেন, কিন্তু এ ভাবে আপনি যদি না খেয়ে আমার বাড়ি থেকে চলে যান, তাহলে আমারও তো ভালো লাগবে না, বলুন। প্লিজ, একটু আমাকে টাইম দিন, আমি এক্ষুনি কিছু অর্ডার করে দিচ্ছি। বেশি সময় লাগবে না, বিশ্বাস করুন।’ বলে ওঠে পৃথা।

‘না, না, আপনি ভুল বুঝছেন আমায়। আসলে সত্যিই আমার এখন যাবার দরকার। আমি বললাম তো, আমি আর একদিন না হয় আসব’খন। আগে থাকেতেই না হয় সেদিন ঠিক করে আসবো। প্লিজ, আজকে আর এটা নিয়ে জোরাজুরি করবেন না। সত্যিই, অনেকটাই বেলা হয়ে গিয়েছে কথায় কথায়।’

পৃথা বুঝতে পারে, আজ যদি প্রণববাবু ফিরে যান, তার অনেক কথাই না জানা থেকে যাবে, যেটা সে কিছুতেই হতে দিতে পারে না। তাকে জানতেই হবে এই অর্নব সম্বন্ধে সমস্ত না জানা কথা। জানতেই হবে। এবারে প্রায় হাত জোড় করেই দাড়িয়ে পড়ে সে প্রণববাবুর সামনে, ‘প্লিজ মিঃ কর্মকার, প্লিজ, ট্রাই টু আন্ডার্স্ট্যান্ড... আজ আমার জানার খুব প্রয়োজন এই অর্নববাবুর সম্বন্ধে... আই ওয়ান্ট টু নো এভরি ডিটেলস অ্যাবাউট হিম... তাই আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, এক্ষুনি যাবেন না আপনি, প্লিজ ফিনিশ ইয়োর স্টোরি... প্লিজ...’

এবার যেন একটু চুপ করে যান ভদ্রলোক। এক দৃষ্টিতে খানিক তাকিয়ে থাকেন পৃথার পানে, তারপর ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করেন, ‘কিন্তু কেন মিস মুখার্জি, হোয়াই ডু ইয়ু ওয়ান্ট টু নো অ্যাবাউট অর্নব? এই যে একটু আগেই বলছিলেন যে ইয়ু আর নট ইন্টারেস্টেড টু নো এনিথিং... দেন?’

প্রণববাবুর প্রশ্নে একটু অপ্রস্তুত হয় পৃথা, মাথা নিচু করে বলে, ‘সেটা আপনাকে আমি ঠিক বোঝাতে পারবো না, বাট ইটস ট্রু, দ্যাট আই ওয়ান্ট টু নো হিম, প্লিজ মিঃ কর্মকার, আপনি বসুন, টেল মি অ্যাাবাউট অর্নব।’

খানিক চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রণববাবু, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন, ‘বেশ, আপনি যখন অর্নবের ব্যাপারে এতটাই ইন্টারেস্টেড, দেন... ওকে... আমি বরং একটা আমার বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিই... কি বলেন।’

ভদ্রলোকের কথায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে পৃথার মুখটা... তাড়াতাড়ি ঘাড় হেলিয়ে বলে ওঠে, ‘হ্যা, হ্যা মিঃ কর্মকার, সেই ভালো... আপনি বরং জানিয়ে দিন, আমিও দেখি কিছু অর্ডার করে দিই... আপনি চাইনিজ খান তো?’

হেসে ফেলেন ভদ্রলোক, ‘রবিবারের দুপুরের মাংস ভাত ছেড়ে চাইনিজ... বেশ... তাই হোক... হয়তো এটাই ছিল আজকে আমার কপালে...’ বলে হা হা করে হেসে ওঠেন।

পৃথাও প্রণববাবুর হাসিতে হেসে ফেলে।
(চলবে)

Post a Comment

0 Comments