ঘুম ভাঙে বেশ বেলা করে পৃথার... খানিকক্ষন চুপ করে শুয়ে থাকে বিছানায়... মাথাটা এখনও বেশ ভার হয়ে রয়েছে... কালকে একটু বেশিই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল ওয়াইনটা... চুপ করে শুয়ে ভাবতে থাকে... ‘নাঃ... উঠি... শুয়ে থাকলে হবে?’ ভাবলেও, আরো খানিকক্ষন শুয়েই থাকে বিছানায়... মাথা তুলে দেওয়ালের ঘড়িটা দিকে তাকায়... প্রায় সাড়ে দশটা... ইচ্ছা না করলেও প্রায় জোর করেই শরীরটাকে টেনে তুলে বসে... নামতে যায় বিছানার থেকে... ‘আরে? মশারী আবার কখন খাটালাম?’ অবাক হয় তার চারপাশে মশারী টাঙানো দেখে... মনে করতে পারে না কখন সে মশারী টাঙিয়েছে বলে... থ’ হয়ে খানিক বসে থাকে মশারীর দিকে তাকিয়ে... কিছুতেই মনে করতে পারে না সে কখন টাঙালো মশারীটা... তারপর কাঁধ শ্রাগ করে... ‘নাঃ... সত্যিই বড্ড নেশা হয়ে গিয়েছিল কাল রাত্রে... নিজেই কখন মশারী টাঙিয়েছি খেয়াল করতে পারছি না...’ ভাবতে ভাবতে মশারীর কোনটা তুলে বেরিয়ে আসে... দেওয়ালের কোনায় বাঁধা দড়ির ফাঁস টান দিয়ে খুলে দেয়। হাঁটা লাগায় বাথরুমের দিকে।
একটা গোল গলার সবুজ রঙের ঢোলা ব্যাগী টি-শার্ট চাপিয়ে নেয় আদুর গায়ের ওপরে... টি-শার্টটা এতই বড় যে সেটা তার পুরো শরীরটাই ঢেকে দেয় কাঁধ থেকে প্রায় থাইয়ের মাঝামাঝি অবধি... মনে হয় হেমের থেকে যেন গড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে ফর্সা দুটো গোল পুরুষ্টু পা... টুথ ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ফিরে আসে ঘরের মধ্যে... দরজার ছিটকিনিটা খুলে গিয়ে দাঁড়ায় বেডরুমের সাথে লাগোয়া ছোট্ট বারান্দাটায়... বাইরের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে ছেড়া ছেড়া মেঘের দল... মেঘের আড়ালে রোদের লুকোচুরি... বেশ সুন্দর লাগছে বাইরেটা... একটা ঠান্ডা ভেজা হাওয়া বইছে... জোলো হাওয়াটা খোলা বারান্দায় দাঁড়ানো পৃথার সদ্য ঘুম ভাঙা চোখে মুখে যেন একটা নির্মল প্রলেপ বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে... দাঁত মাজতে মাজতে তাকিয়ে থাকে বারান্দার ঠিক সামনেই থাকা ঝাঁকড়া গাছটার পানে... ডালের ওপরে বসে দুটো শালিক কি রকম খুনসুটি করছে নিজেদের মধ্যে... তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে ও।
শালিকদুটো যেন ওকে দেখতে পেয়েই লজ্জায় ফুড়ুৎ করে উড়ে পালিয়ে গেল কোথাও... ঘাড় তুলে বারান্দার গ্রীলটা ধরে একটু ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করে পৃথা... শালিক দুটো কোথায় গেল, যদি দেখা যায়... পায় না দেখতে... বাড়ীর দেওয়ালটা তার দৃষ্টিটাকে আড়াল করে দিয়েছে... আর বার দুয়েক খোঁজার চেষ্টা করে সে, তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে বারান্দা থেকে সরে এসে ফের ফিরে যায় বাথরুমে... ফেনা ভরা মুখটা ধুতে।
গুন গুন করে গান করতে করতে গিয়ে ঢোকে কিচেনে... চায়ের জলটা গ্যাস জ্বেলে চাপিয়ে দেয়... কিচেনের স্ল্যাবের ওপরে পেড়ে রাখে চায়ের কাপ, ছাঁকনি, চায়ের কৌটটা... অপেক্ষা করে চায়ের জলটা ফুটে ওঠার। গুন গুন করে গান করা ছেড়ে হটাৎই গলা তুলে গাইতে শুরু করে সে...
বিকশিত, প্রীতি কুসুম হে
পুলকিত চিত কাননে ।।
‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রানেশ হে,
আনন্দ বসন্ত সমাগমে ।।
জীবনলতা অবনতা তব চরণে ।
হরষীত উচ্ছসিত হে
কিরণমগন গগনে ।।
গানটা পৃথা বরাবরই বেশ ভালই গায়... আগে স্কুল কলেজে পড়ার সময় অনেক ফাংশানও করেছে... মায়ের মতই গানের গলা পেয়েছে ... মায়ের কাছেই তালিম নেওয়া... বাইরে কোথাও অবস্য কারুর কাছে যেতে হয়নি... রোজ সকালে মায়ের সাথে তানপুরাটা নিয়ে বসতো দুজনে... ভোরটা শুরু হতো ওদের দুজনের গানে... বাবা খুব পছন্দ করতো ওদের সকালবেলায় রেওয়াজ করাটা... উৎসাহ দিত সবসময় ওকে। পাড়ার লোক অবাক হয়ে যেত ওর এই রকম ছেলে মার্কা স্বভাব চরিত্রের মাঝে এমন মিষ্টি গানের গলা শুনে... বলতো, ‘সত্যিই তিতির, তোর গান না শুনলে তোকে দেখে কেউ ভাবতেও পারতো না যে এত সুন্দর তোর গানের গলা’। আসলে একটা অদ্ভুত দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলে পৃথা... একাধারে সে যেমন কোমল নমনীয় আবার প্রয়োজনে অসম্ভব দৃঢ়চেতা, নিজের ওপরে অটল আত্মবিশ্বাসী... জীবনের প্রতিটা ছন্দের সাথে পা মিলিয়ে চলতে ভালোবাসে সে... একাধারে সে অত্যাধুনিক আবার অপর দিকে মূল্যবোধ হারায়নি কোন ভাবেই। তাই চট করে সবাই ওকে ঠিক মেলাতে পারেনা আর পাঁচটা সাধারণ মেয়েদের সাথে... আর সেটা দেখে মনে মনে বেশ উপভোগও করে সে লোকের এই রকম দ্বিধাগ্রস্থ মানসিকতাটার।
গানের মাঝেই খেয়াল করে চায়ের জল ফুটে উঠেছে... চা পাতা দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়... গ্যাসটা নিভিয়ে রান্নাঘরের তাকের দিকে চোখ ফেরায় সে... ‘ইশ্, কি অবস্থা কিচেনের তাকগুলো... সময়ও পাচ্ছি না যে একটু ঘর দোর গুলো ঝাঁড় পোঁচ করবো...’ ভাবতে থাকে পৃথা। ‘একটা লোক দেখতেই হবে... না হলে বাড়ির সব কাজ একার দ্বারা সম্ভব নয়... কিন্তু পাবো কোথায়? বিশ্বাসী লোক ছাড়া আমার চলবে না... কারণ যেই কাজ করুক না কেন তার হাতেই থাকবে সংসারটা... আমাকে তো বেরুতেই হবে... আর যদি বিশ্বাসী না হয়... তাহলে আমার অ্যাবসেন্সএ ঝেড়ে ফাঁক করে দিয়ে চলে যাবে... না বাবা... ও রিস্ক নেওয়া যাবে না... তার থেকে কাজের লোক না থাকে তাও ভি আচ্ছা... দেখি, একবার সুশান্তকে বলে... না, না, সুশান্তকে বলাটা ঠিক হবে না... ও অনেক করেছে আমার জন্য... এবার যদি ওকে কাজের লোক খুঁজে দিতে বলি... ওটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে... তাছাড়া ওই বা কি করে অত দূরের থেকে কাজের লোক এখানকার জন্য পাবে... আরে বাবা, রিয়েলিটি বলেও তো একটা কথা আছে, না কি?’ আপন মনেই ভেবে চলে পৃথা।
চায়ের মাগটা নিয়ে ড্রইংরুমের সোফার ওপরে এসে বসে পৃথা... সকাল বেলায় ও বরাবরই চা’টা খায় একটা বড় মাগ’এ... এরপর একটা সিগারেট... এটা না হলে নাকি ওর পটি ঠিক মত হয় না... আর সেটা না হলে তো পুরো দিনটাই মাটি... পা দুটোকে সেন্টার টেবিলটার ওপরে তুলে দিয়ে ক্রশ করে রাখে... টি-শার্টটা হড়কে উঠে আসে উপরে দিকে... সুঠাম পুরুষ্টু থাইয়ের প্রায় পুরোটাই উন্মুক্ত হয়ে মেলে থাকে... সে দিকে কোন হুস থাকে না পৃথার... আর থাকবেই বা কেন... একা ফ্ল্যাটে কেই বা দেখতে যাচ্ছে ওকে, যে ও কি ভাবে রয়েছে... ঢেকে না খুলে? অর্ধেক সময় তো কিছু না পড়েই ঘুরে বেড়ায় ঘরের মধ্যে... এখন তাও তো গায়ে একটা কিছু চাপিয়েছে... এই না যথেষ্ট...
গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে পৃথা... ‘আচ্ছা... সত্যিই তো... আমার যত দূর মনে পড়ছে কাল আমি ঘুমিয়ে পড়ার সময় কই মশারী তো টাঙাইনি... তাহলে... না, না... নিশ্চয়ই টাঙিয়ে ছিলাম... হ্যা... সেটাই হবে... এখানে যা মশা... কাল এসি চালাই নি রাত্রে... তাই হয়তো এক সময় মশারী টাঙিয়েই শুয়ে পড়েছিলাম আবার... তা না হলে এতক্ষনে হয়তো আমাকে টেনেই নিয়ে চলে যেত মশা... জানলাটাও তো খোলা ছিল, না?... তবে?... আমিই টাঙিয়েছি... এখন মনে পড়ছে না... আর পড়বেটাই বা কি করে... কাল বেশ ভালই টেনে ছিলাম... কে জানে, বোতলে আর কিছু পড়ে আছে কি না... না থাকলে একটা এনে রাখতে হবে... অন্য দিন ফেরার পথে মেট্রো থেকে নেমেই যে দোকানটা আছে, সেখান থেকে কিনে আনি... কিন্তু এখানে কোথায় পাবো কে জানে.. আচ্ছা... একটা কাজ করলে হয় না... হেব্বি মজা হবে কিন্তু... অলোকবাবুকে জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয় যে এখানে আশে পাশে কোথায় এফ-এল শপ আছে... আমি মদের দোকান খুজছি শুনলে নিশ্চয়ই আক্কেল গুড়ুম হয়ে যাবে ভদ্রলোকের... মুখটা কি রকম হবে?’ ভাবতে ভাবতেই হো হো করে হেসে ওঠে পৃথা। তার প্রানখোলা হাসিটা যেন পুরো ফ্ল্যাটের আনাচে কানাচে একটা মুক্ত বাতাসের মত ঘুরে বেড়াতে থাকে... ঘরের প্রতিটা কোনায় ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হতে থাকে হাসির আওয়াজ।
চা খেতে খেতেই উঠে দাঁড়ায়... আধ-খাওয়া কাপটা সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে দরজার দিকে এগিয়ে যায়... লকটা খুলে সামান্য ফাঁক করে দরজার পাল্লাটা... পুরো খোলা সম্ভব নয়... দরজার আড়ালে যে ভাবেই থাকুক না কেন সে, কিন্তু এই পোষাকে বাইরে বেরোয় কি করে, কেউ যদি সেই মুহুর্তে সিড়ি দিয়ে ওঠে বা নামে? তখন? বা, অলোকবাবুও তো বেরুতে পারে তার ফ্ল্যাট থেকে... ভাবতে ভাবতে উঁকি মারে দরজার ওপাশে... মাটিতে সেদিনকার কাগজটা পড়ে থাকতে দেখে একটু সাবধানে নীচু হয়... তারপর হাত বাড়িয়ে কাগজটাকে নিয়ে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। ফিরে এসে আবার পুরানো জায়গায় বসে, পা দুটোকে সেন্টার টেবিলের ওপরে তুলে দিয়ে। চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিয়ে খেতে খেতে চোখ বোলায় খবরের কাগজের হেডলাইনগুলো ওপরে... কয়এক’টা পাতা ওল্টাবার পর ‘নাঃ, সেই একই খবরের কচকচানি...’ মনে মনে বলে কাগজটাকে রেখে দেয় পৃথা, টেবিলের ওপরে। চায়ের কাপটা হাতে রেখেই দেহটাকে এলিয়ে দেয় সোফার ওপরে আড়াআড়ি ভাবে... চোখ দুটোকে বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকে চায়ের কাপে ছোট ছোট সিপ করতে করতে।
শোবার ঘর থেকে মোবাইল বাজার আওয়াজ ভেসে আসে... রিংটোনের আওয়াজে চোখ মেলে তাকায়... ভুরু কুঁচকায়... ‘এখন আবার কে ফোন করছে?’ ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপটা সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে উঠে দাঁড়ায়... শরীর বেঁকিয়ে হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙে... মোবাইলটা বেজেই চলে একটানা... এবার একটু ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে যায় বেডরুমের দিকে... ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়ে বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা ছবিটার ওপরে... স্বগক্তির মতই বলে ওঠে, ‘মোবাইলটা বাজছে, ধরতে পারোনি? আমাকে উঠে আসতে হল সেই... যত্ত ফাঁকিবাজ... একটাও যদি কিছু আমাকে হেল্প করে... খালি চুপ করে থাকলে হবে?’ বলতে বলতে টেবিলের ওপরে ছবিটার পাশ থেকে মোবাইলটা তুলে নেয় হাতে... স্ক্রিনের ওপরে নামটা দেখবার আগেই কেটে যায় ফোনটা... ‘দূর বাবা... ফোনটা আবার কেটে গেল...’ ব্যাজার মুখে মিসড কলটা দেখার জন্য বোতাম টেপে... দেখে একটা অচেনা নাম্বার... ভুরুটা আরো কুঁচকে যায়... একবার ভাবে কল ব্যাক করবে, পরক্ষনেই সিদ্ধান্ত বদলায়... মোবাইলটাকে ফের রেখে দিয়ে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই ফের বেজে ওঠে মোবাইল... তাড়াতাড়ি করে তুলে কানে লাগায়... ‘হ্যালো...’।
ও প্রান্ত থেকে ভরাট পুরুষ কন্ঠস্বর ভেসে আসে... ‘হ্যালো, ইস দিস মিস মুখার্জি...’।
‘ইয়েস... পৃথা হেয়ার... মে আই নো হু ইজ অন দ্য লাইন প্লিজ...’
‘ওহ... হাই, মিস মুখার্জি... গুড মর্নিং... দিস ইজ প্রনব... প্রনব কর্মকার...’
‘সরি, মিঃ কর্মকার... আই কান্ট রেকগনাইজ ইয়ু... কুড ইয়ু প্লিজ লেট মী নো হাউ কাম ইয়ু...’
পৃথার কথা শেষ করার আগেই ও প্রান্ত থেকে প্রনব নামে ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘ইয়া, ইয়া, মিস মুখার্জি... আকচুয়ালি আই লুক আফটার দ্য ফ্ল্যাট হুইচ ইয়ু হ্যাভ টেকেন অন রেন্ট... সো...’
এবার পৃথার মনে পড়ে যায়, আরে, ঠিকই তো, এই ভদ্রলোকের কাছ থেকেই তো ও ফ্ল্যাটটা নিয়েছে ভাড়া... তাই তাড়াতাড়ি সে বলে ওঠে, ‘ও হ্যা, হ্যা, মিস্টার কর্মকার, সরি, মনে পড়েছে, ইশ, অ্যাই অ্যাম রিয়ালি সরি... আসলে হটাৎ করে ফোনটা পেতে ঠিক রিকল করতে পারিনি... আই অ্যাম এক্সট্রীমলি সরি, মিঃ কর্মকার...’
‘না, না, এ ভাবে বলবেন না... আপনিই বা কি করে মনে রাখবেন... আসলে আমার অন্য নাম্বারটা হয়তো আপনার কাছে সেভ করা আছে, এটা আর একটা নাম্বার থেকে ফোন করছি, আমারই অন্যায় হয়েছে একটা আননোন নাম্বার থেকে আপনাকে ফোন করা...’
‘ঠিক আছে, মিঃ কর্মকার, আমি না হয় এই নাম্বারটাও সেভ করে রেখে দেব’খন... তা...’ একটু থামে পৃথা... তারপর বলে, ‘তা... কিছু যদি না মনে করেন... হটাৎ করে আমাকে ফোন করছেন কেন, জানতে পারি?’
‘আসলে আমার আজকে সন্ধ্যেবেলায় আপনার ওখানে আসার কথা ছিল, কিন্তু বিশেষ কারণে সন্ধ্যেবেলায় হবে না, তাই যদি আজ, একটু পরেই আসি, তাহলে কি আপনার খুব অসুবিধা হবে, সেটা জানার জন্যই আমার ফোন করা... অবস্য আপনার অসুবিধা থাকলে না হয় অন্য দিন আসব’খন...’
‘ওয়েট ওয়েট মিঃ কর্মকার... জাস্ট আ সেকেন্ড... আমি ঠিক বুঝলাম না... আপনার আজকে সন্ধ্যেবেলায় আসার ছিল, মানে...?’ ভুরু কোঁচকায় পৃথা কথার মাঝে।
‘স্ট্রেঞ্জ... আমি আপনার ওখানে যাবো, সেটা আপনি জানেন না? কিন্তু আমার সাথে তো বেশ কিছুদিন আগেই সুশান্তবাবুর কথা হয়ে গিয়েছে যে, যে ডকুমেন্টএ আপনার কয়’একটা সিগনেচার করা বাকি আছে সেটা আমি গিয়ে করিয়ে নিয়ে আসবো... সরি মিস মুখার্জি... আমি জানতাম না যে ইয়ু আর নট অ্যাওয়াড় অফ ইট...’ বলে থামেন ভদ্রলোক।
এবার পৃথার অপ্রস্তুত হবার পালা, ‘ওহ হো, সরি মিঃ কর্মকার... সম্ভবত সুশান্ত বোধহয় ভুলে গিয়ে থাকবে আমাকে জানাতে... আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি ফর...’
‘ওহ নো মিস মুখার্জি, হোয়াই ইয়ু আর ফিলিং ব্যাড আবাউট ইট... আই থিঙ্ক ইটস আ মিয়ার মিস কমুউনিকেশন... ওকে... নো প্রবলেম... আই শ্যাল মেক ইট অন সাম ওদার ডে... হোয়েন এভার ইয়ুল বি ফ্রী... হাউজ দ্যাট, মিস মুখার্জি?’
‘না, না, মিঃ কর্মকার, ইটস ওকে... ইয়ু ক্যান কাম ডাউন টুডে ইটসেলফ... আই অ্যাম ফ্রী... আপনি কখন আসতে চান বলুন... আই’ল বি দেয়ার...’ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে পৃথা।
‘কিন্তু দেখুন মিস মুখার্জি... আমি চাইনা এ ভাবে এসে আপনাকে অপ্রস্তুতে ফেলতে... আসলে ডকুমেন্টটাতে আপনার সই না হলে রেন্ট এগ্রিমেন্টটা কমপ্লিট হচ্ছে না, তাই আসতে চাইছিলাম, বাট ইফ ইয়ু ডোন্ট লাইক মি টু কাম টু ইয়োর প্লেস... দেন আই ক্যান কাম ডাউন টু ইয়োর অফিস ওলসো... ইফ ইয়ু সে সো...’
‘না, না, মিঃ কর্মকার... একি বলছেন... আপনি আমার ল্যান্ডলর্ড... আপনি আসতে চাইছেন, সেখানে আমি আপনাকে বারণ করি কোন ধৃষ্টতায়... প্লিজ, মিঃ কর্মকার, সত্যি বলছি, আমি জানতাম না আপনার আসার কথা, তা না হলে ওই ভাবে আপনাকে প্রশ্ন করতাম না... আপনি আসুন না, আই অ্যাম টোটালি ফ্রী টুডে... আমার কোথাও বেরুবার নেই... আমিও চাই ডকুমেন্টেশন যদি কিছু বাকি থেকে থাকে সেটা কমপ্লিট করে নিতে... অ্যাজ আই ডোন্ট নো হোয়েদার ইয়ু নো অর নট, বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লুজ ইয়ুর প্লেস... সো...’
‘আরে দাড়ান দাড়ান মিস মুখার্জি... দ্য ফ্যাক্ট ইজ, আই অ্যাম নট ইয়োর ল্যান্ডলর্ড... আমি জাস্ট অর্নবের হয়ে ওর প্রপার্টিগুলোর দেখভাল করি, ব্যস, নাথিং এলস্... তাই, প্লিজ ডোন্ট কল মি ল্যান্ডলর্ড... ইটস টোটালি রং...’
ভুরু কোঁচকায় পৃথা, ‘ঠিক বুঝলাম না মিঃ কর্মকার... ইয়ু আর নট মাই ল্যান্ডলর্ড... মিন্স্? অর্নবের প্রপার্টি... মানে? ইয়ু ডোন্ট ওন দিস প্লেস?’
‘আপনি ঠিকই শুনেছেন মিস মুখার্জি... আপনি যে ফ্ল্যাটে রয়েছেন সেটা যদিও আমি আপনাকে ভাড়া দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু ওটার মালিক আমি নই, ওটার মালিক অর্নব, অর্নব বাসু... আমি ওর হয়ে একটু দেখাশোনা করি ওর সমস্ত প্রপার্টিগুলো, ব্যস, এই আর কি... বাই দ্য ওয়ে... আপনি যখন বলছেন যে আজ এলে আপনার অসুবিধা নেই, তখন এক কাজ করি বরং, আমি আর একটু পর না হয় আপনার ওখানে চলেই আসি... সাক্ষাতেই সমস্ত কথা হবে’খন? কি বলেন মিস মুখার্জি? কোন অসুবিধা নেই তো?’
একটু আনমনা হয়ে পড়ে পৃথা, ঘাড় ঘুরিয়ে বেড সাইডের টেবিলের ওপরে থাকা ছবিটার লোকটিকে একবার দেখে নেয়, ‘অ্যা? হ্যা... ন্...না না, ঠিক আছে মিঃ কর্মকার... সেই ভালো... আপনি চলেই আসুন বরং... আমারও কিছু ব্যাপারে একটু ক্লারিফিকেশনএর প্রয়োজন আছে, সেটা আপনার কাছেই মনে হচ্ছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে... বেশ, আপনি চলেই আসুন বরঞ্চ, আই’ল বি ওয়েটিং ফর ইয়ু...’
‘ওকে দেন, মিস মুখার্জি... থ্যাঙ্কস... আই’ল বি অ্যাট ইয়োর প্লেস উইদিন অ্যান আওয়ার... টিল দেন...’
‘উ... হু... ওকে... ঠিক আছে... রাখছি।’ ছবির মধ্যের লোকটির চোখে চোখ রেখে কলটা কেটে দেয় আনমনে। কথায় কথায় অনেক জিজ্ঞাস্য তার মাথার মধ্যে ভিড় করে আসছে। আজ মনে হচ্ছে অনেক কিছুর উত্তর সে পেয়ে যাবে... হ্যা... পেতেই হবে তাকে... এই সমস্ত উত্তরের থেকে তার অনেক কিছু নির্ভর করছে, যেটা তার থেকে ভালো আর কে জানে?
(চলবে)
0 Comments