বিছানার একটু ভেতর দিক করে সরে শোয় পৃথা... ‘আমি জানতাম তুমি আসবে... তুমি অশরীরি কি অশরীরি নও... সে কন্ট্রোভারসারির মধ্যে আমি যেতে চাই না... শুধু জানি তুমি আছো... এবং ভিষন ভাবেই আছো... আমি প্রতিটা মুহুর্তে তোমায় অনুভব করতে পারি... তাই তুমি আমার ডাক অস্বীকার করতেই পারো না... সে ব্যাপারে আমি একশ শতাংশ সুনিশ্চিত...’ পাশের খালি জায়গাটায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘অত দূরে বসেছ কেন... এখানটায় এসে বসো...’
বিছানার চাঁদরে কোন ভাঁজ পড়ে না সে বলার পরও, ‘কই, এখানটায় এসো...’ বালিশ থেকে মাথাটা একটু তুলে আবার ডাক দেয় পৃথা।
এবার বিছানার পায়ের কাছের জায়গাটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে... দেবে যায় তার পাশের জায়গাটা। হাসি ছড়িয়ে পড়ে পৃথার মুখে... বালিশে মাথাটা ফের রেখে দিয়ে ডান হাতটাকে শূন্যে তুলে ধরে বলে, ‘আমার হাতটাকে ধর...’
ওই ভাবে শূণ্যেই থাকে পৃথার হাত, কেউ ধরে না এগিয়ে এসে। ‘কই... ধরবে না? আমি কিন্তু এতক্ষন হাতটা তুলে ধরে রাখতে পারছি না... এখনও দূর্বল আমি...’ গলার স্বরে আদর মিশে থাকে তার।
এবার পৃথার হাতের তালুটা একটা নিরাকার সবল পুরুষালী হাতের মুঠোয় ধরা পড়ে... পৃথার সারা শরীরে একটা শিহরণ খেলে যায় যেন... মনে হয় হাত নয়, সে ভুল করে খোলা কোন বিদ্যুতের তারে হাত ছুঁইয়ে কারেন্ট খেল... মাথার মধ্যেটায় কেমন বোঁ বোঁ করতে শুরু করে দেয়... পেটের মধ্যে মনে হয় হাজারটা প্রজাপতি ছটফট করছে... বুকের মধ্যে হৃদপিন্ডটার গতি নিশ্চয় চার কি পাঁচ গুন বেড়ে গিয়েছে... গলার মধ্যেটা কেমন শুকিয়ে আসে... নাকের পাটা ফুলে বড় বড় নিঃশ্বাস পড়তে শুরু করে... বুকটা হাপড়ের মত ওঠে, নামে... কপালের ওপরে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে... একি হচ্ছে ওর মধ্যে? এরকম কেন হচ্ছে তার? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে মনে মনে... নাকি সেটা করতেও ভুলে গিয়েছে ওই পরশের আবেশে? সাধারনতঃ মেয়েদের যে লজ্জা শরম এসে এই সময় ভীড় করা উচিত, কই, সেই রকম কোন অনুভূতি তো তার মধ্যে আসছে না, আসার কথাও নয়, কারণ ওই ধরণের মেয়েলী আচার আচরণ সে কোনদিনই করে উঠতে পারে নি, কিন্তু তাই বলে এখন কি হলো তার? কেমন যেন ওর সারা শরীরটায় থরথর করে কাঁপন ধরে। খানিক আগের ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাসিটাও কোথায় উধাও হয়ে যায়... একি স্বপ্ন? নাকি বাস্তব? এত দিন... এত দিন ধরে যেটা ও মনের গভীরে নিয়ে নাড়াচাড়া করে এসেছে প্রতি নিয়ত... সেটা সত্যিই... সত্যিই আজ তার হাতটা অর্নবের হাতের মুঠোয়... উফ্... এবার নিশ্চয় ও পাগল হয়ে যাবে আনন্দে... বাঁ হাতটা তুলে রাখে তার ডান হাতটাকে মুঠো করে ধরে রাখা নিরাকার হাতটার ওপরে... আহঃ... এই তো... কর্কশ একটা পুরুষালী হাত... এটা আঙুলগুলো... এটা হাতের পীঠ... কবজি... বুড়ো আঙুল... বাঁ হাতটাকে ওই না দেখতে পাওয়া অদৃশ্য হাতটার ওপরে বুলিয়ে বুলিয়ে অনুভব করতে থাকে পৃথা। হাতটাকে ছুয়ে দেখার সময় কিছুতেই নিজের হাতদুটোকে স্থির রাখতে পারে না সে... থরথর করে কেঁপেই চলেছে তার হাতদুটো... এটা কি জ্বরের দুর্বলতায়? নাকি মানসিক অস্থিরতায়? কেমন সমস্ত কিছু গোলমাল হয়ে যাচ্ছে আজ পৃথার... কাঁপা হাতেই অদৃশ্য হাতটাকে ধরে টেনে রাখে নিজের গালের ওপরে... চোখ বন্ধ হয়ে আসে আপনা থেকেই... গালের ওপরে হাতটাকে নিয়ে বুলিয়ে অনুভব করতে থাকে সেটার স্পর্শ নিজের ত্বকের ওপরে... আহ্... একি অপার্থিব অনুভুতি... আগে তো কতজনের ছোয়াই না সে পেয়েছে নিজের মুখের ওপরে... বাবা, মা, বন্ধু, বান্ধব... কিন্তু কই... এই রকম তো অনুভূতি কখনও হয়নি তার... এই রকম কাঁপুনি তো কেউ ধরাতে পারে নি তার শরীরে... তবে আজ কেন এমন হচ্ছে? কেন কিছুতেই নিজেকে নিজের বশে ধরে রাখতে পারছে না সে? তবে কি... তবে কি... আর ভাবতে পারে না... তার সমস্ত বোধ বুদ্ধি কেমন হারিয়ে যাচ্ছে... গালের ওপর থেকে হাতটাকে তুলে খুলে, মেলে ধরে আন্দাজ করে, তারপর সেই খোলা হাতের তালুটার মধ্যে নিজের মুখটাকে গুঁজে দেয়... আহঃ... কি প্রশান্তি... জোরে শ্বাস টেনে গন্ধ নেয় সেই না দেখা হাতের... হাতের তালুটাকে চেপে ধরে নিজের তপ্ত ঠোঁট দিয়ে... পাগলের মত চুমু খেতে থাকে একের পর এক... খেয়েই চলে... প্রান ভরে... নিজের মুখেরই লালা লেগে, মেখে যায় হাতের তালুর মধ্যে... লাগুক... ভিজে যাক তার লালায় হাতটা... যা খুশি সে করতে পারে... সম্পূর্ণ অধিকার আছে তার যা খুশি করার... এ শুধু তার... শুধু তার... মনে মনে ভাবে পৃথা... লালায় ভিজে ওঠা হাতটাকে নিয়ে নিজের সারা মুখে মাখিয়ে দিতে থাকে বুলিয়ে বুলিয়ে... আজ বোধহয় পাগলই হয়ে যাবে সে।
ধীরে ধীরে ওই ভাবেই হাতটাকে নিজের দুই হাতের মুঠোয় ধরে রেখে আস্তে আস্তে নামায় নীচের পানে... নাক, ঠোঁট, চিবুক, গলা হয়ে হাতটাকে নামিয়ে নিয়ে আসে নরম বুকের ওপরে... চেপে ধরে দুটো কোমল গোল মাংসপিন্ডের মাঝে। এবার কেঁপে ওঠার পালা বোধহয় অদৃশ্য হাতের... নরম স্তনের স্পর্শ পেতেই গুটিয়ে, সরে যাবার চেষ্টা করে নিরাকার হাতটা... সরে যাবার চেষ্টা করে পৃথার মুঠো ছাড়িয়ে নিয়ে সসংকোচে... কিন্তু পৃথা মুঠো আলগা করে না... সরাতেও দেয়না হাতটাকে নিজের বুকের ওপর থেকে... জোর করে চেপে রাখে... টি_শার্টের ওপর দিয়েই ছুইয়ে রাখে নিজের নরম স্তনদুটোতে... পৃথার অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন অনুভূত হয় হাতের ওপরে... হাতটাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে চোখ খুলে তাকায় পৃথা... শূন্যের পানে... চোখের মধ্যে তখন একরাশ ভালোবাসা উপচে পড়ছে... আর চোখ থেকে চুইয়ে বেরিয়ে এসে সেই সৃষ্টিছাড়া ভালোবাসাটা মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে সারা মুখমন্ডলে।
একটা ভরাট গলার স্বর ফিসফিসিয়ে বলে পৃথার খুব কাছ থেকে... ‘হাতটা ছাড়ো তিতির...’
‘না... ছাড়বো না...’ জেদি গলায় উত্তর দেয় পৃথা... মুঠোয় ধরে থাকা অদৃশ্য হাতটাকে আরো বেশি করে চেপে ধরে নিজের বুকের ওপরে... একটা স্তন দেবে যায় হাতের চাপে।
‘এ রকম পাগলামী করতে নেই... ছাড়ো এবার...’ আবার অনুরোধ করে অশরীরি।
‘না বললাম তো...’ হাতটাকে ধরে রগড়ায় নিজের নরম বুকের ওপরে... উত্তেজনায় শক্ত নুড়ি পাথরের মত হয়ে ওঠা বোঁটাটা যেন বিঁধে যেতে থাকে সেই অদৃশ্য হাতের তালুতে।
‘কি চাও?’ প্রশ্ন করে নিরাকার গলার স্বর।
‘তোমায়...’ ছোট্ট উত্তর দেয় পৃথা।
‘কিন্তু এ যে হয় না... এ হতে পারে না... সেটা বোঝার চেষ্টা করো... তুমি যা চাইছো... সেটা কোনদিনই সম্ভব হবে না...’ বোঝাবার ভঙ্গিতে ফের বলে ওঠে স্বরধ্বনি।
‘কেন হবে না? কিসের অসুবিধা? তুমি তো এখন বিবাহিতও আর নও... তাহলে কেন তুমি আমার হবে না?’ চোখ সরু করে প্রশ্ন করে পৃথা।
‘সেটা কথা নয় তিতির... বিবাহিত হওয়া না হওয়াটাই শেষ কথা নয়...’ উত্তর দেয় না দেখা অর্নব।
‘তবে? আমি কি দেখতে কুৎসিত?’ অভিমান ভীড় করে আসে পৃথার গলায়।
‘তুমি আমার দেখা সব থেকে মিষ্টি একটা মেয়ে... কে বলে তুমি কুৎসিত? তোমার থেকে এত সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়?’ শান্ত গলায় বলে অর্নব।
‘লিন্ডার থেকেও সুন্দর?’ প্রশ্নটা বেরিয়ে আসে পৃথার মুখ থেকে।
একটু চুপ করে থাকে সেই অশরীরি খানিক, তারপর গাঢ় স্বরে বলে, ‘লিন্ডা বিদেশী ছিল... ও এখন আর বেঁচেও নেই, তাই ওর ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাই না... আর তা ছাড়া ওর সৌন্দর্য আর তোমার সৌন্দর্যের মধ্যে অনেক ফারাক... বলতে আমার দ্বিধা নেই, ও ছিল সত্যিই প্রকৃত সুন্দরী... কিন্তু সৌন্দর্যের সাথে যখন অসম্ভব মিষ্টতা আর নিষ্পাপতার মিশেল ঘটে, তখন আর সেটা শুধু সুন্দরের সঙ্গায় পড়ে থাকে না... তুমি তাই...’
‘তাহলে হাতটা টেনে নিতে চাইছ কেন?’ গলা নামিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা, গালের ওপরে লালীমার আভা খেলা করে।
‘তুমি যা চাইছ, সেটা হবার নয় বলেই হাতটা টেনে নিতে চাইছি... এটা তোমাকেও বুঝতে হবে...’ ফের বোঝাবার চেষ্টা করে অশরীরি।
‘আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না... আমি যা চাই, তুমি সেটা কি বুঝেছ?’ একটু গলার স্বর তোলে পৃথা।
কোন উত্তর দেয় না অশরীরি... চুপ করে থাকাই বোধহয় শ্রেয় বিবেচনা করে।
‘কি হলো? কিছু বলছো না যে? শোনো... আমি শুধু তোমাকে চাই... শুধু তোমায়... আমি চাই শুধু তোমার হতে... একেবারে... সারা জীবনের জন্য... শুধু তো-মা-র...’ শেষের কথাটা বেশ জোরের সাথে টেনে টেনে বলে পৃথা।
এরপরও কোন উত্তর আসে না অশরীরির থেকে। অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে পৃথা... হাতের মুঠোয় ধরা অদৃশ্য হাতটাকে ধরে ঝাঁকিয়ে বলে ওঠে... ‘কি হোলো... বলো কিছু... এই ভাবে তুমি চুপ করে থাকতে পারো না...’ বলতে বলতে হাঁফাতে থাকে উত্তেজনায়।
‘দেখো... তুমি অসুস্থ... এখনো অনেক দুর্বল... সবে তোমার জ্বরটা ছেড়েছে... এখন এই ভাবে উত্তেজনা তোমার পক্ষে ঠিক নয়... আমরা পরে না হয় এই নিয়ে কথা বলবো...’ শান্ত গলায় বোঝায় শরীরহীন স্বর।
‘না... পরে নয়... আজ... এক্ষুনি...’ জেদি গলায় বলে ওঠে পৃথা... অর্নবের না দেখা হাতটা তুলে গালের ওপরে ছোয়ায়... নিজের ত্বকের ওপরে অর্নবের স্পর্শে এক অপরিসিম ভালো লাগায় ভরে ওঠে মনটা।
এবার আর হাতটা টেনে নেবার প্রয়াশ করে না অশরীরি... একটুক্ষন চুপ থেকে ফের বোঝানোর সুরে বলে, ‘তুমি যা চাইছ, সেটা হয় না তিতির... আমি... আমি...’ বলতে বলতে থেমে যায়।
‘কি আমি? বলো...’ অধৈর্য পৃথা তাড়া দেয়।
‘দেখো তিতির... আজ আমি যদি একটা সাধারণ স্বাভাবিক আর পাঁচটা লোকের মত হতাম, তাহলে অন্য কথা ছিল... কিন্তু আমি যে থেকেও নেই... বুঝতে পারছ, আমি কি বলতে চাইছি?’ শেষের কথাটা বলার সময় গলাটা ধরে আসে কায়াহীনের।
‘এই তো তুমি আছো... আমার পাশে... আমায় ছুঁয়ে... তবে কেন বলছো তুমি নেই?’ বাচ্ছা মেয়ের মত অবুঝ গলায় প্রশ্ন করে পৃথা।
‘আমার এ থাকা যে না থাকার থেকেও কতটা নির্মম, তুমি বুঝবে না তিতির... এ যে কত কষ্টের সেটা কি করে বোঝাই তোমায়...’ ধরা গলায় বলে ওঠে না দেখা শরীরের স্বর।
তাড়াতাড়ি অর্নবের হাতটাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে পৃথা... শূন্যে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাতড়ায়... হাত ঠেকে একটা লোমশ প্রশস্ত বুকের ওপরে... হাত বোলায় হাতের নাগালে পাওয়া অদৃশ বুকটায়... অনুভব করতে থাকে সেই না দেখতে পাওয়া শরীরটাকে... পেশিবহুল লোমশ বুক, হাত, কাঁধ, গলা... হাতে ঠেঁকে ঝুলতে থাকা মোলায়েম বড় বড় দাঁড়ির গোছায়... দুহাত তুলে আঁচলা করে ধরে মুখটাকে... তারপর আবার ডান হাতের তালু ঘসতে থাকে সেই মুখটার ওপরে... দাঁড়ি, ঠোঁট, গোঁফ, নাক, চোখ, ভুরু, কপাল, চুল... নিজের চোখটাকে বন্ধ করে ছবিতে দেখা অর্নবের মুখটাকে ভাসিয়ে রাখে চোখের সন্মুখে... আহ্... এই তো আমার অর্নব... এই তো... দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের নিরাররণ শরীরটাকে... মুখটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখে তার সেই প্রশস্ত বুকের ওপরে... ‘আহহহহ... কি শান্তি... আমার অর্নব... উম্ম্... শুধু আমার...’ জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলে ওঠে পৃথা... নিজের মুখটা ঘসতে থাকে ওই লোমশ বুকটায়... ‘মন খারাপ করো না গো... আর কোন কষ্ট তোমায় পেতে দেবো না... আমি তো আছি... আমি তোমাকে আর মন খারাপ করার সুযোগ দেবো না... দেখে নিও.. শুধু তুমি আমাকে নাও... আমাকে তোমার করে নাও অর্নব... আমি যে আর তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না...’ বলতে বলতে আরো এগিয়ে বসে পৃথা, নিজের শরীরটাকে প্রায় ঢুকিয়ে দেয় সেই অশরীরির শরীরের মধ্যে... নিজের বুকের ওপরের ব্রা-হীন নরম গোল সুগঠিত মাংসপিন্ডদুটো একেবারে চেপে বসে যায় বিদেহী পুরুষালী নগ্ন পেটের ওপরে।
এই ভাবে ওকে জড়িয়ে ধরার ফলে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না অশরীরি... চেষ্টা করে নিজের শরীরটাকে পৃথার আলিঙ্গন থেকে পেছিয়ে নিতে, কিন্তু যে ভাবে পৃথা ওকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে, তাতে ওর পক্ষে সম্ভব হয়না নিজেকে বাঁচাতে... খুব কুন্ঠিত গলায় বলে, ‘এই রকম পাগলামী করে না তিতির... ছাড় আমায়... তুমি এখনও অসুস্থ... শুয়ে পড়ো...’
‘না ছাড়বো না... আমার অর্নবকে আমি পেয়ে গিয়েছি... আর ছাড়বো না কোনদিন...’ লোমশ বুকের মধ্যে মুখটাকে গুঁজে বলে ওঠে পৃথা... শ্বাস টেনে ঘ্রাণ নেয় নিজের কাছে পাওয়া প্রিয়তমের শরীরের।
‘কিন্তু এই রকম ভাবে কি একটা সম্পর্ক তৈরী হতে পারে? তুমিই বলো?’ বলে অর্নব।
‘পারে... নিশ্চয়ই পারে...’ জেদি গলায় বলে ওঠে পৃথা... মুখটাকে ঘসে বুকের লোমে... আজ তার মনে হয় যেন পৃথিবীটাই পুরো পেয়ে গিয়েছে এই বুকটার মধ্যে।
‘না... পারে না...’ এবার একটু দৃঢ় কন্ঠেই বলে অশরীরি... ‘এটা হয় না... বোঝো তুমি... আমার কোন শরীর নেই... আমি শুধুই শূণ্য... সেখানে তুমি এই নিরাকারের সাথে জীবনটাকে জড়াতে পারো না... এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যত নেই তিতির...’ বলে এবার পৃথার বাহুদুটোকে হাতের মুঠোয় ধরে প্রায় জোর করেই নিজের শরীর থেকে টেনে আলাদা করে দেয়...
জলে ভরে ওঠে পৃথার চোখদুটো... শুধু একবার চোখ তুলে শূন্যের পানে তাকিয়ে মুখটা নামিয়ে নেয়।
‘তুমি কাঁদছ?’ শশব্যস্ত হয়ে ওঠে অশরীরি... ‘প্লিজ কেঁদো না...’
মুখে কিছু বলে না পৃথা, চুপ করে মাথা নামিয়ে বসে থাকে সে, গাল বেয়ে টসটস করে গড়িয়ে পড়ে জলের ফোঁটা।
‘আছা পাগল মেয়ে তো...’ বলে নিজেই আবার পৃথার বাহু ধরে টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে... বাঁধ ভেঙে যায় যেন... অশরীরির বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে এবার হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করে পৃথা... কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে তার শরীর।
মাথায় হাত রেখে চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিতে দিতে স্বর বলে ওঠে, ‘লক্ষ্মীটি... কাঁদছো কেন তিতির... আমি কি বলেছি যে তাতে এত দুঃখ পেলে?’
ফোঁপাতে ফোঁপাতে কান্না জড়ানো গলায় পৃথা বলে ওঠে, ‘আমাকে তোমার থেকে সরিয়ে দিলে কেন?’ বলে ফের হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করে দেয়।
‘আরে আমি তো...’ বলতে গিয়ে চুপ করে যায় অশরীরি... তারপর একটু থেমে বলে, ‘আচ্ছা, অন্যায় হয়ে গেছে... এবার থামো... এই তো... তুমি আমার বুকের মধ্যেই আছো... আর কেঁদো না তাহলে...’ বলে আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরে পৃথাকে নিজের শরীরের সাথে... পৃথাও দুহাতের বেড়ে আঁকড়ে ধরে অদৃশ্য শরীরটাকে, নতুন করে মুখটাকে গুঁজে দেয় লোমশ বুকের মধ্যে... বেগ থামলেও, তখনো মাঝে মধ্যে শরীরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে কান্নার ধমকে... ‘তুমিই আমার অর্নব? তাই না?’ ফোঁপানোর মাঝেই প্রশ্ন করে পৃথা।
‘কেন? সন্দেহ হচ্ছে?’ এবার অশরীরির গলায় কৌতুকের মিশেল।
‘না... আমার কোন সন্দেহ নেই... তবুও তোমার মুখ থেকে একবার অন্তত শুনতে ইচ্ছা করছে... বলো না... তুমিই অর্নব... তাই না?’ আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়ে আসে পৃথার গলার স্বর।
‘আমি তো মিথ্যাও বলতে পারি... নিজেকে অর্নব বলে চালিয়ে দিতে পারি... তুমি সত্যিটা বুঝবে কি করে?’ প্রশ্ন করে অশরীরি।
‘সেটা আমার ওপরেই ছেড়ে দাও না... আমি তো ইতিমধ্যেই সুনিশ্চিত হয়েই গিয়েছি... তাও... তোমার মুখ থেকে একবার শুনতে ইচ্ছা করছে আমার...’ আরো গভীর হয় পৃথার গলার স্বর।
‘হুম... আমিই তোমার সেই অর্নব... যাকে তুমি এতদিন ওই ছবিটাতেই দেখেছ... সেই আমি...’ খানিক চুপ থাকার পর গাঢ় স্বরে উত্তর দেয় অশরীরি।
হটাৎ কানে আসে বাইরের দরজায় চাবি খোলার আওয়াজ... দুজনেই দুজনকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে... ‘কাজল ফিরে এসেছে মনে হচ্ছে...’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে কায়াহীন অর্নব। পৃথা হাতড়ে অর্নবের হাতটাকে ধরে নিজের হাতের মধ্যে... তারপর তাড়াতাড়ি করে ফিরে যায় বালিশের দিকে, হাতটাকে সাথে টেনে নিয়ে গিয়ে।
‘আমার হাতটা ছাড়ো এখন...’ ফের ফিসফিস করে বলে ওঠে অর্নব।
‘নাঃ... নাঃ... তুমি যাবে না... তুমি এখানেই থাকবে... আমার পাশে... আমাকে ছুয়ে থাকবে...’ বলতে বলতে টান দেয় অর্নবের হাতে পৃথা।
অর্নব প্রায় বাধ্য হয়েই এগিয়ে যায় পৃথার দিকে... ‘আমি তো আছিই... এবার ছাড়ো...’
‘তুমি আমার বিছানার ওই দিকটায় চলে এসো চট করে... এসো...’ তাড়া দেয় পৃথা।
নিরুপায় অর্নব পৃথার শরীর টপকে বিছানার ভিতর দিকে গিয়ে বসে।
পৃথা আন্দাজ করে সরে যায় অর্নবের পানে... ওর অদৃশ্য বুকের ওপরে নিজের কাঁধটাকে ছুঁইয়ে রাখে।
ঘরে ঢোকে কাজল, আর ওর পেছন পেছন ঢোকেন প্রণববাবুও... ‘এই নাও দিদিমনি... তোমার টাকার ফেরত... ছ’টাকা ফিরেচে... আমি কিন্তু মুর্গির মাংস, পাঁউরুটি, গাজর, পেঁপে আর বিন্ নিয়ে এয়েচি।’ বলে ওঠে পৃথাকে লক্ষ্য করে... তারপর পৃথার দিকে একটু অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, ‘এই রকম বেঁকে বসেচো কেন দিদিমনি? বালিসটা ঠিক করে দেব?’
‘না, না, ঠিক আছি আমি... তোকে কিছু করতে হবে না...’ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে পৃথা। নিজেও একটু সরে ভালো করে শোয় বালিশের ওপরে... কিন্তু এমন ভাবে থাকে যাতে একটু হলেও অর্নবের ছোঁয়া লেগে থাকে তার শরীরের সাথে। প্রণববাবুর সামনে রয়েছে বলে গায়ের ওপরে চাঁদরটাকে গলা অবধি টেনে দেয়, যতই হোক, টি-শার্টের ভেতরে ব্রা পরে নেই সে, বুকগুলো বিশদৃশ্য দেখাচ্ছে হয়তো।
‘এই যে মিস মুখার্জি... আপনার অসুধ... এই টেবিলের ওপরেই রাখলাম... প্যাকেটটার ভেতরে প্রেসক্রিপশনটাও আছে, আমি কাজলকে বরং বুঝিয়ে দিচ্ছি কখন কোন অসুধটা দিতে হবে।’
‘আরে আপনি এত ব্যস্ত হবেন না মিঃ কর্মকার... আমি দেখে নেব’খন... আর আপনি কেন শুধু শুধু আবার ওপরে উঠলেন, কাজলের হাত দিয়েই তো পাঠিয়ে দিতে পারতেন...’ বলে পৃথা।
‘পারতাম হয়তো, তবুও... আসতেই হলো...’ পৃথার মনে হলো কথাটা তাকে নয়, অন্য কাউকে খোঁচা মেরে বললেন প্রণববাবু। শুনে বুঝতে অসুবিধা হয় না পৃথার, কার উদ্দেশ্যে কথাটা ভদ্রলোক বললেন, তাই ফিক করে হেসে ফেলে।
‘হাসছেন যে?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন ভদ্রলোক।
‘না, আপনার অবস্থা দেখে...’ এবার হাসি আরো ছড়ায় মুখের ওপরে।
ব্যাপারটা না বুঝে মাথা চুলকান ভদ্রলোক।
পৃথা কাজলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তা হ্যারে, একটু মিঃ কর্মকারকে চা করে দিবিনা?’
‘এ বাব্বা, হ্যা তো...’ বলে একটা এত্ত বড় জিভ কাটে কাজল, ‘আমি এক্কুনি করে আনচি...’ বলে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
‘আমার জন্য আপনার ওপর দিয়ে খুব ঝড় গেলে যাহোক... অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে...’ কৃতজ্ঞ চোখে তাকায় ভদ্রলোকের পানে পৃথা।
‘না না, এ আর কি... আপনি একা থাকেন, সেখানে এতো আমার কর্তব্য...’ বলেন প্রণববাবু।
‘শুধুই কর্তব্য?’ প্রশ্ন করে পৃথা।
ভুরু কুঁচকে তাকান পৃথার দিকে ভদ্রলোক, ‘মানে? বুঝলাম না ঠিক...’
‘না বলছি শুধুই কর্তব্যের খাতিরে করলেন, নাকি...’ বলে থামে পৃথা।
‘না, মানে, এটা আর কি... আপনি অসুস্থ হলে...’
‘হ্যা, সেটাই তো বলছি, আমি অসুস্থ হলে আর সেই ইন্সট্রাক্সনটা যদি বন্ধুর কাছ থেকে যায়, তাহলে তো করতেই হবে... তাই না?’ হেসে বলে পৃথা।
‘মানে?...’ এবার থতমত খাবার পালা ভদ্রলোকের।
‘অবাক হবার কিছু নেই মিঃ কর্মকার... আপনি যার ইন্সট্রাক্সনে আমার এত উপকার করছেন, উনি এই মুহুর্তে আমার পাশেই বসে রয়েছে...’ মুচকি হেসে বলে পৃথা।
‘অ্যাঁ?...’ এদিক ওদিক তাকান প্রণববাবু... তারপর নজর রাখেন পৃথার পেছন দিকে।
‘হ্যা... ঠিক দিকেই তাকিয়েছেন... আমি জানি আপনি জানেন অর্নব এখন কোথায়... তাই না মিঃ কর্মকার...’
‘না, মানে...’ মুখটা কাঁচুমাচু করে তাকায় পৃথার দিকে প্রণববাবু।
‘মানে আপনার বন্ধু আমার কাছে ধরা পড়ে গেছে মিঃ কর্মকার... সে আমার হাতে বন্দি হয়ে গেছে... আর তার পালাবার পথ নেই...’ হাসতে হাসতে উত্তর দেয় পৃথা।
কথাটা শুনে একটু খানি চুপ করে থাকেন ভদ্রলোক, তারপর হাঃ হাঃ করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন... ‘জানতাম... আমি জানতাম... ও আপনার কাছেই ফাঁসবে... বেশ করেছেন মিস মুখার্জি... সারা জীবন বন্দি করে রেখে দিন আমার বন্ধুটাকে... আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না এতে... উফ্, একটা কাজের মত কাজ করেছেন ব্যাটার জন্য... অনেক ভুগিয়েছে আমায়... এবার আপনার কাছেই বন্দি হয়ে থাকুক একেবারে...’
পৃথার ঠিক পেছন থেকে চাপা স্বরে বলে ওঠে অর্নব, ‘হ্যা, তুই তো খুশি হবিই... হবি না... বন্ধুর সর্বনাশেই তো বন্ধু খুশি হয়... ব্যাটা স্বার্থপর...’
‘আরে ভাই, এই খুশিটার জন্য কতদিন অপেক্ষা করেছি বল তো...’ বলে ওঠে প্রণববাবু।
‘আরে মাকাল, আস্তে কথা বল, কাজল রয়েছে, ও শুনলে ভিমরি খাবে... ভাববে তোরা ভুতের সাথে কথা বলছিস...’ ফের চাপা গলায় ধমকায় অশরীরি অর্নব।
‘না, সেটা ঠিক বলেছিস... সরি রে ভাই...’ এবার প্রণববাবুও গলা নামান।
তারপর পৃথার দিকে ঘুরে হাতটাকে বাড়িয়ে দিয়ে ওর হাতটাকে নিজের হাতের মধ্যে ধরে বলে ওঠেন, ‘থ্যাঙ্কস্ মিস মুখার্জি... অসংখ্য ধন্যবাদ... আমার এই বন্ধুটার ভিষন দরকার ছিল একটা কাঁধের... বড্ড অভাগা ও... অনেক কষ্ট পেয়েছে... ওর পাশে থাকার জন্য আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার সীমা রইল না...’
স্মিত হাসে পৃথা, বলে, ‘চিন্তা করবেন না মিঃ কর্মকার, আজ থেকে আপনার বন্ধুর পাশে আমি সর্বদা থাকবো... কথা দিলাম।’
পেছন থেকে অদৃশ্য অর্নব বলে ওঠে, ‘হ্যাঃ, নিজেই রুগী, ও দেখবে আমাকে...’
কপট রাগ দেখিয়ে চোখ পাকায় ঘাড় ফিরিয়ে পৃথা, তারপর হেসে ফেলে বলে, ‘দেখো... দেখি কি না...’
ঘরের বাইরে কাজলের পায়ের শব্দ শোনা যায়।
টেবিলের ওপরে প্রণববাবুর জন্য চা আর বিস্কুটের ট্রে নামিয়ে প্রণববাবুর উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, ‘প্রণবদাদাবাবু, দেকো তো, সেই আগের মতই চা করেচি কি না... ঠিক আপনি যেমনটি খেতেন, চিনি কম দিয়ে, সেই রকমই করেচি... একটুও কিচু ভুলি নি, হ্যা...’
ট্রে’এর ওপর থেকে চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে চুমুক দিয়ে মুখ তোলেন ভদ্রলোক, ‘নাঃ, সত্যিই, এখনও ভুলিসনি দেখছি...’ তারপর আরো একটা চুমুক দিয়ে বলেন, ‘তা একদিনেই তো দেখছি দিদিমনির সংসারটা ধরে নিয়েছিস...’
‘নেবো না? আরে এটা দাদাবাবুর ফ্ল্যালাট, দাদাবাবু একোন নেই তো কি হয়েচে... দেকবেন, কেমন গুচিয়ে রাকি সংসারটাকে... কাজল এসে গেচে... দিদিমনির আর কোন চিন্তা নেই...’ বলেই ফেরে পৃথার পানে, ‘দিদিমনি, একন একটু চিকেন সুপ করে দিই?... আর সাথে পাঁউরুটির সেঁকা... খেয়ে তাপ্পর অসুদ খেও... বুজেচ... আর দুপুরে চিকেন ইস্টু করে রেকে দিয়ে যাবো, সেই জন্য গাজর, বিন, নিয়ে এয়েচি’ বলে আর দাঁড়ায় না, বাইরের দিকে যাবার জন্য পা বাড়ায়।
‘হ্যারে কাজল, প্রণবদাদাবাবুর জন্য কিছু ব্রেকফাস্ট করবি না? উনিও সেই সকাল থেকে না খেয়েই রয়েছেন...’ পেছন থেকে বলে ওঠে পৃথা।
কাজল উত্তর দেওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি করে প্রণববাবু আধখাওয়া চায়ের কাপটা ট্রে’এর মধ্যে রাখতে রাখতে উঠে দাঁড়ান, ‘না, না, মিস মুখার্জি... আমার এখন আর দাঁড়াবার সময় নেই, আমি ফিরেই স্নান করে অফিস বেরুবো... ব্যাটা সব দ্বায়ীত্ব তো আমার ঘাড়েই দিয়ে রেখেছে, না?’
‘তাও, ব্রেকফাস্টটা অন্তত করে যান... বেলা অনেক হয়ে গেল আমার জন্য...’ পৃথা অনুরোধ করে।
‘হবে না মিস মুখার্জি, ওদিকে গিন্নি রেডি হয়ে রয়েছে আমার ব্রেকফাস্ট নিয়ে, এখন আমি যদি এখান থেকে ব্রেকফাস্ট সেরে যাই তাহলে যুদ্ধের দামামা বাজবে... তার থেকে এখন আমি পালাই...’
প্রণববাবুর বলার ধরণে হেসে ফেলে পৃথা আর কাজল দুজনেই। হাসতে হাসতেই পকেট থেকে সিগারেটএর প্যাকেটটা বের করে খুলে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোনে রেখে জ্বালাবার জন্য লাইটার বের করে, কিন্তু তারপরই থমকে যান, ‘নাঃ, রুগির ঘরে সিগারেট ধরানো ঠিক হবে না, থাক, পরে খাবো’খন... বলে ফের প্যাকেটের মধ্যে সিগারেটটা ঢুকিয়ে রেখে নিজের পকেটে চালান করে দেন।
‘একটা কথা বলবো মিঃ কর্মকার, এবার অন্তত ওই ফর্মাল সম্বোধনটা ছাড়ুন, আমাকে পৃথা বলে ডাকলেই বেশি খুশি হবো...’ স্মিত হেসে বলে পৃথা।
‘হু, বলতে পারি, যদি আমাকে মিঃ কর্মকার থেকে প্রণবদায়ে নামাতে পারেন, তবেই’ হাসতে হাসতে উত্তর দেন ভদ্রলোক।
‘তাহলে তো আমিও বলতে পারি ছোট বোনকে কেউ আপনি আঁজ্ঞে করে?’ ঘুরিয়ে বলে ওঠে পৃথা।
মাথা নাড়েন ভদ্রলোক, ‘ঠিক, ঠিক, সেটাও একেবারে ঠিক কথা বলেছেন... থুড়ি... বলেছ... বেশ... আর আপনি আজ্ঞে নয়... একেবারে তুমি... ঠিক আছে? কিন্তু উল্টো দিকে তোমাকেও তাহলে ওই আপনি আঁজ্ঞেটা ছাড়তে হবে কিন্তু...’
‘আচ্ছা, আচ্ছা, তাই হবে, আর আপনাকে...’ বলেই জিভ কাটে পৃথা... ‘তোমাকে আর আটকাবো না... তবে একদিন কিন্তু বৌদিকে নিয়ে আসতে হবে... বৌদির সাথে আলাপ করাবে না?’
‘আরে তুমি কি বলছো? তোমার বৌদি যদি শোনে আজকের ঘটনাটা, ওকে আর আসতে বলতে হবে না, দেখ না, আজ সন্ধ্যেবেলাতেই না নাচতে নাচতে চলে আসে... তোমাকে আর নতুন করে ইনভিটেশন পাঠাবার দেখবে দরকার পড়বে না...’ বলে হা হা করে হেসে ওঠেন প্রণববাবু।
কাজল কিছু না বুঝেই সেও হাসতে থাকে প্রণববাবুর হাসিতে।
‘তুই কেন হাসছিস রে ব্যাটা?’ ওর দিকে কপট চোখ পাকিয়ে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।
‘ও মা, তুমি হাসচো, তাই তো হাসলাম... আমি আবার কি দোস করলাম?’ বলে বেরিয়ে যেতে যায় ঘর থেকে।
‘ওরে শোন শোন...’ পেছনে ফের ডাকে পৃথা। পৃথার ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়ায় কাজল।
‘স্যুপ কতটা করবি?’
‘কেন? তুমি একা খাবে, এক বাটিই করবো... আর সেই সাতে দু পিস পাঁউরুটি সেকে দেবো...’ সহজ গলায় বলে কাজল।
‘এক বাটি না, তুই বরং তিন বাটি করিস... একটা তোর জন্য আর বাকি দু বাটি আমাকে এখানে দিয়ে যাস... আর তার সাথে ছ’পিস ব্রেড টোস্ট করিস...’ বলে আড় চোখে প্রণববাবুর দিকে তাকায় পৃথা।
‘দু বাটি?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে কাজল।
‘না, মানে...’ কি বলবে ঠিক করে উঠতে পারে না পৃথা।
‘আসলে দিদিমনি কাল রাত থেকে কিছু খায়নি তো, তাই এখন একটু বেশি করে খেতে হবে, আর অত অসুধ খাবে তো, সেই জন্য... তোকে বলছে যখন তুই করে দে না, এত প্রশ্নের কি আছে রে বাবা?’ বলে পরিস্থিতি সামলায় প্রণববাবু।
‘হ্যা, সেটাও ঠিক... কাল রাত থেকে খায় নি দিদিমনি, না? তবে আমি ও’সব সুপটুপ খাবো না, ও সব আমার সয়ে না, আমি বরং ক’টা পাঁউরুটিই খেয়ে নেব’খন, ও তোমায় ভাবতে হবে না।’ বলে মাথা নাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ঘরের মধ্যে দুজনেই হেসে ওঠে।
পৃথার পেছন থেকে ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে অর্নব, ‘তুমি একাই দু বোউল স্যুপই খাবে? পারবে?’
ওর কথায় দুজনে আরো জোরে হেসে ওঠে... পৃথা ঘাড় ঘুরিয়ে অর্নবের মত করে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘না, মশাই, শুধু আমার খাবার কথা চিন্তা করলে তো হবে না, আমার আর একজন আছে, যার সকাল থেকে তার তিতিরের জন্য পেটে কিচ্ছুটি পড়ে নি, তাই তার জন্যও স্যুপের অর্ডারটা দিয়ে দিলাম, বোঝা গেল? প্রণবদা বুঝে গেলো, আর এই লোকটা বুঝলো না... ইশ... এই নাকি ও আমাকে সামলাবে...’
অর্নব কিছু বলার আগেই প্রণববাবু বলে ওঠেন, ‘আপনারা দুজন দুজনকে সামলাও, আমি পালালাম, পরে দেখা হবে...’ তারপর পৃথার পেছনদিকে শূন্যতার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এই মর্কট, পরে আমাকে ফোন করিস, বুঝলি...’
পৃথার পেছন থেকে ভেসে আসে গম্ভীর স্বরে... ‘হুম’।
ক্রমশ...
0 Comments