পরভৃত by কামদেব – ৪৩

এবার তোর দায়িত্ব।যাবার আগে লাল কথাটা বলেছিল।কনক মনে মনে কথাটা নাড়াচাড়া করতে থাকে।এই সময় বস থাকলে ভাল হত।লালের মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে নজরে পড়ল ভজার নাম।ওরা হয়তো খবর পায়নি এখনো।সুইচ টিপে কানে লাগালো।ওপাশ হতে সাড়া এল বলো গুরু?
কনক নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা ফুপিয়ে কেদে ফেলল।
–কে ভাবিজী?আপনি কাদছেন কেন?গুরু কোথায়?
কনক চোখের জল মুছে বলল,লালকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল।
কিছুক্ষন চুপচাপ।তারপর সাড়া পাওয়া গেল ভজা বলল,আপনি একদম চিন্তা করবেন না।ঝূট্মুট গুরুকে ফাসিয়েছে।মুন্নার গুলিতে শান্তিদা মারা গেল।একটু পরেই আমি আসছি।
কনক ফোন রেখে দিল।ভজার সঙ্গে কথা বলে মন একটু শান্ত হল।রাতে জড়িয়ে শুয়ে ছিল সেই বাধন যে সকালে আলগা হয়ে যাবে কনক ভাবেনি।
শান্তিবাবু মারা গেছেন কাল রাতেই শুনেছেন ত্রিদিবেশ মাইতি।বিশদে জানেন না।খবর কাগজটা খুটিয়ে পড়তে থাকেন।লোকটা সুবিধের ছিল না কিন্তু কে মারতে পারে?এবার তাহলে বরেন বোসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।শান্তিবাবুর পালটা গুরূপের লোক বরেনবোস।আর যাই হোক বরেনবাবুর মাগীর নেশা নেই।টাকা কামানোয় শান্তিবাবুর প্রায় সমান সমান।ব্যবসাপাতি চালাতে গেলে এদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেই হয়।ম্যাডাম বোঝে না বলেই কাউকে পাত্তা দেয় না।ম্যাডাম সপ্তাহে একদিন মিশনে গিয়ে পড়ে থাকেন।
সৎ এবং চিকিৎসার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস।কিন্তু ব্যবসা বোঝে না। একটা ব্যাপারে ত্রিদিবেশ মাইতি চিরকাল ম্যাডামের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন।সবে চাকরিতে ঢুকেছেন কত আর মাইনে।গ্রাম থেকে দেবলীনাকে পোয়াতি অবস্থায় কলকাতায় নিয়ে এসেছেন।পাকাপাকি ভাবে কলকাতায় থাকবেন তাছাড়া কলকাতায় অনেক সুবিধে।একদিন রাতে ব্যথা উঠল দিশাহারা ত্রিদিবেশ ফোন করলেন ম্যাডামকে।এ্যাম্বুলেন্স চলে এল।দেখেশুনে ম্যাডাম বলল, অপারেশন করতে হবে।ত্রিদিবেশ প্রমাদ গোনেন টাকা কোথায়?ম্যাডাম বলল,ওটীতে নিয়ে যাও।
একটা আয়াকে দিয়ে বাল সাফা করাল তারপর নিজে অপারেশন করল।ছেলের কান্না শুনেও ত্রিদিবেশের মুখে হাসি নেই।কত টাকা বিল হয়েছে জানা দরকার।দেশে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করতে হবে মনে হয়।
ম্যাডাম বেরিয়ে একমুখ হাসল।হাসলে ভারী সুন্দর লাগে চোখ বন্ধ শুভ্র দাত যেন একরাশ যুইফুল ছড়িয়ে পড়ল।ম্যাডাম বলল,মাইতি মম এ্যান্দ বেবি ওকে।
–ম্যাডাম টাকা?
–ইউ ইদিয়ত ইত ইজ নত দা টাইম অফ দিস থিঙ্কিং।
সে রাত ভুললে নরকেও ঠাই হবে না।দেবলীনাও ম্যাডামকে শ্রদ্ধা করে।কাগজে মন দিলেন ত্রিদিবেশ।কেউ ধরা পড়েনি এখনো।অবাক ব্যাপার দিনে দুপুরে খুন হয়ে গেল কেউ জানতেও পারল না?হতে পারে নিজেদের মধ্যে খেয়খেয়ি তাই হয়তো পার্টি গরজ করছে না।
এদিকে কাল রাতে ম্যাডাম রাস্তার থেকে একটা লোককে কুড়িয়ে এনেছে।রোহনের কাছে শুনেছে সব কথা।অবশ্য না আনলে রোহনকে আরও প্যাদাতো।রোহন প্যাদানি খেয়েছে দৃশ্যটা মনে মনে কল্পনা কোরে হাসলেন ত্রিদিবেশ।পকেট্মার ধরা পড়লে বা কেউ চাপা পড়লে ড্রাইভারকে মানুষ এমন ঝাপিয়ে পড়ে প্যাদায় যেন কতকালের পোষা রাগের ঝাল মেটাচ্ছে।অথচ কয়েক মুহূর্তে আগেও কেউ কাউকে চিনতো না।
ডাক্তার ঝা ঋষিকে পরীক্ষা করলেন।কোমর পিঠ বুকের পাজরে চাপ দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,লাগছে?
ঋষি বুকের ডান দিক দেখিয়ে বলল,এখানে ব্যথা।কাশতে গেলে ভয় লাগে ভীষণ যন্ত্রণা হয়।
এ্যাটাচি খুলে প্যাড বের করে জিজ্ঞেস করলেন,কি নাম?
–ঋষভ সোম।
ডাক্তার ঝা সংক্ষেপে লিখলেন আর সোম।তারপর কয়েকটা ওষুধের নাম লিখে কাগজটা পাশে দাঁড়ানো নার্সের হাতে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
নার্স জিজ্ঞেস করল,ওষুধ কেনার টাকা আছে?
ঋষী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।নার্স বলল,ঠিক আছে ঐ টেবিলে গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
আপনার এক্স-রে হবে।
ঋষিকে একবার চিত করে একবার কাত করে ছবি তুলে বলল,হয়ে গেছে নামুন।
নার্স বলল,আমার সঙ্গে আসুন।ঋষিকে বাইরে একটা বেঞ্চে বসিয়ে নার্স ম্যানেজারের ঘরে গেল।নার্সের কাছে সব শুনে মাইতিবাবু ফোন করলেন,ম্যাডাম কালকের এ্যাক্সিডেন্ট কেসের মি সোমকে ডাক্তার ঝা দেখে প্রেসক্রিপশন কোরে দিয়েছেন…হ্যা এক্স-রেও হয়ে গেছে…আচ্ছা-আচ্ছা আমি ওষুধের ব্যবস্থা করছি ..নীচে বসে আছে।রাখছি?
ম্যানেজার বাবু একটা স্লিপ করে নার্সকে দিয়ে বললেন,মেডিক্যাল স্টোর্স থেকে ওষুধ নিয়ে নেও।
ঋষী বসে বসে ভাবছে এখন কি করবে?হাটতে গেলে বুকের ডানদিকে মৃদু ব্যথা অনুভুত হচ্ছে।কোথায় তাকে আনা হয়েছে এখান থেকে কিভাবে হালিশহর যাবে বুঝতে পারেনা।মোবাইল ফোনটা গেছে, থাকলে না হয় কাউকে ফোন করা যেত।এদিক ওদিক দেখছে কোনো দিশা দেখতে পায়না।নার্সটা এসে হাতে ওষুধগুলো দিয়ে বলল,সন্ধ্যেবেলা এক্স-রে রিপোর্ট নিয়ে দেখিয়ে যাবেন।
সন্ধ্যের এখনো অনেক দেরী।সকালে কিছু খাওয়া হয়নি।পকেটে পঞ্চাশ-ষাটটা টাকা ছিল। সেই জামা প্যাণ্টই বা কোথায়?নজরে পড়ল ম্যাডামের সঙ্গে যে নেপালি মেয়েটা থাকে সে আসছে।কাছে আসতে ঋষি বলল,ম্যাডামের সঙ্গে একটু দেখা হবে?
মেয়েটি কিছুক্ষন ঋষিকে দেখে বলল,বসুন বলছি।
উপরে উঠে গেল মেয়েটি।বসে আছে তো বসেই আছে মেয়েটির পাত্তা নেই।মনে পড়ল কাল রাতে কোহিনুরের ওখানে খাওয়ার পর পেটে একটা দানাও পড়েনি।
সফিকে নিয়ে ভজা এল লেবুবাগানে।সোজা কনকের ঘরে ঢুকে গেল।কনক শুয়ে ছিল উঠে বসল।ভজা আর সফি বিছানার একধারে বসে জিজ্ঞেস করল,বস ছিলনা?
–বসকে হালিশহর পাঠিয়ে দিল।এখানে থাকলে বদনাম হবে।
সফি হেসে বলল,বস নাম বদনামের পরোয়া করে না।গুরুকে কখন নিয়ে গেল?
–ঘুমোচ্ছিল পুলিশ এসে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গেল।কি ব্যাপার কেন নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বলল না।কনক আঁচল দিয়ে চোখ মুছল।দাড়াও চা বলছি।
কনক উঠে গিয়ে বংশীকে ডেকে চায়ের কথা বলল।কনক ফিরে আসতে ভজা বলল,আজ কোর্ট বন্ধ।কাল দেখি কি করা যায়।গুরু বাইক নিয়ে এসেছিল বাইক কই?
–পিছনে আছে।টাকা লাগবে না?
ভজা সঙ্কোচের সঙ্গে বলল,গুরু বলেছিল ভাবীর কাছে টাকা চেয়ে নিতে।
বংশি চা বিস্কুট দিয়ে গেল।ওরা চা খেতে থাকে।কনক আলমারি খুলে একটা বাক্স বের কোরে জিজ্ঞেস করল,কত দেবো?
ভজা তর্জনী নাড়তে নাড়তে হিসেব করে বলল,পাচ দিলেই হবে।সফি তুই গুরুর বাইকটা চালাবি।অসুবিধা হলেই আমাকে ফোন করবে।চিন্তার কিছু নেই।
কনক গুনে পাঁচ হাজার টাকা ভজাকে দিল।
ঝিমুনি এসে থাকবে খোচা খেয়ে ঋষি সোজা হয়ে বসে তাকিয়ে দেখল নেপালি মেয়েটা দাড়িয়ে আছে।মেয়েটি হেসে বলল,উপরে চলো।
মেয়েটির সঙ্গে উপরে উঠে একটা ঘরে বসল।সামনে ছোটো টেবিল,টেবিলে চাপা দেওয়া কিছু টাকা।এভাবে কেউ টাকা ফেলে রাখে?দেওয়ালে বিবেকানন্দের ছবি ঝুলছে।ছবিতে রজনী গন্ধার মালা।তাজা সদ্য দেওয়া হয়ে থাকবে।
ছাপা লুঙ্গি গায়ে ছোটো জামা ম্যাডাম ঢুকল।ঋষি উঠে দাড়াতে যাচ্ছিল হাত তুলে বসতে বলে নিজেও সামনের সোফায় বসে জিজ্ঞেস করল,কেমন আছো?
–বুকের ডানদিকে একটু ব্যথা।
–ডক্টর ঝা ওষুধ লিখে দেয়নি?
ঋষি প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিল।ম্যাডাম মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে বলল,তুমি সোম?
তুমি কি পাঞ্জাবি আছো?
–আমি বাঙালী।
–সরি।আমার সঙ্গে পড়ত রাজদীপ পাঞ্জাবি ছেলে এখন বাইরে থাকে।তোমার ফেসটা একদম রাজদীপের মত।ড.ঝায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে।এক সপ্তা রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।ওষুধগুলো নিয়মিত খেতে হবে।এইটা খাওয়ার পর–।তুমি সকালে কিছু খেয়েছো?
আসল কথাই ঋষির বলা হলনা।চুপ করে থাকে।
–ওহ সোম এটা তোমার বাড়ি নয় হাসপাতাল তোমাকে বলতে হবে।কাঞ্চা এদিকে এসো।
নেপালি মেয়েটি আসতে ম্যাডাম বলল,চা আর একটা কিছু খাবার দাও।তারপর লণ্ড্রি থেকে জামা প্যাণ্ট এনে দিও।
ম্যাডাম উঠে দাড়ালো।আসল কথাটা ঋষির বলা হলনা।চলে যেতে গিয়ে টেবিলে রাখা টাকা দেখিয়ে বলল,ওটা নিয়ে নেও তোমার টাকা পকেটে ছিল।
মরীয়া হয়ে ঋষী বলল,এখানে এর কটা দিন থাকা যাবে না?
–হোয়াট?কপালে হাত দিয়ে বসে পড়ল ম্যাডাম।
কাঞ্চা চা আর এক পিস স্যাণ্ডউইচ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।
ম্যাডাম খাবার দেখিয়ে বলল,এটা খেয়ে এক নম্বর ট্যাবলেট একটা খেয়ে নেও।
ঋষি নীরবে খেতে থাকে।ম্যাডাম বলতে থাকে,শোনো সোম তুমি এখন সুস্থ।এটা হাসপাতাল হোটেল নয়।তুমি কোথায় থাকবে?একদিনের বেডভাড়া কত তুমি জানো?
–মেমসাব বাপুর পাশের ঘরে থাকতে পারে।কাঞ্চা বলল।
কাঞ্চার দিকে তাকিয়ে বলল,তোমার সাজেশন চেয়েছি?তোমাকে বললাম না জামা কাপড় নিয়ে আসতে?
কাঞ্চা নীচে নেমে গেল।ম্যাডাম জিজ্ঞেস করল,তোমার কাছে কতটাকা আছে?
ঋষি টেবিলে রাখা টাকা হাতে নিয়ে বলল,ষাট টাকা আর কিছু খুচরো।
ম্যাডাম খিলখিল করে হেসে উঠল।হাসি থামিয়ে বলল,ওহ সোম তুমি কাঞ্চার চেয়েও ছেলেমানুষ।ঐ টাকায় ভাল করে একবেলার মিলও হবে না।ইউ আর ভেরি ইণ্টারেস্টিং।
ম্যাডাম সোফায় পা তুলে হেলান দিয়ে বসল।জংলা রঙ লুঙ্গির ভিতর থেকে বেরিয়ে থাকা উরুযুগল আরও ফর্সা লাগছে।মিতভাষি গম্ভীর ম্যাডামকে এখন অন্যরকম লাগছে।ঋষির মধ্যে আত্ম বিশ্বাস ফিরে আসে।ঋষি বলল,ম্যাডাম এখানে কতলোক কাজ করছে আমাকে একটা কাজ দেওয়া যায় না?
মনে মনে হাসি পায় প্রথমে কদিন থাকতে চাওয়া এখন আবার কাজ?
হাটুতে আঙুল চাপড়াতে চাপড়াতে মাথা নীচু করে বসে থাকা সোমকে লক্ষ্য করে ম্যাডাম।ছেলেটাকে বেশ সহজ সরল বলে মনে হচ্ছে।ছুটির দিন কাজের চাপ কম।ড.এমার পেশেণ্ট ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়না।সোমের সঙ্গে কথা বলতে খারাপ লাগছে না।চোখের দৃষ্টি অন্য পুরুষদের মত নয়।অনাবিল স্বচ্ছ দৃষ্টি।কিছুক্ষন ভেবে বলল,এটা হাসপাতাল তুমি কি কাজ করবে?
–যে কোনো কাজ?
–ঝাড়ু দিতে পারবে?মুখ টিপে হাসে ম্যাডাম।
–হ্যা পারব।ঋষি সঙ্গে সঙ্গে বলল।
–লজ্জা করবে না?
–কাজ করতে লজ্জা কি ম্যাডাম?
কাঞ্চা জামা কাপড় নিয়ে এল।ঋষি দেখে চিনতে পারল তার জামা কাপড়।কাল থেকে এ্যাপ্রন পরে ঘুরছে খেয়াল নেই।ম্যাডাম বলল,ওকে টয়লেট দেখিয়ে দাও।যাও চেঞ্জ করে নেও।
কাঞ্চা ঘরের বাইরে নিয়ে গিয়ে টয়লেট দেখিয়ে দিল।ঋষি জামা কাপড় নিয়ে ঢুকে গেল।
কাঞ্চা ফিরে আসতে ম্যাডাম বলল,ওকে তোমার পছন্দ হয়েছে?
–খারাপ না।
ম্যাডাম একরাশ জুইফুল ছড়িয়ে হেসে উঠল।জিজ্ঞেস করল,সাদি করবে?
লাজুক হেসে কাঞ্চা বলল,উমর অনেক বেশি আছে।
কাঞ্চার কথা শুনে ম্যাদামের হাসি বন্ধ হয়ে গেল।
ঋষি চেঞ্জ করে ফিরে এল।চেহারা একদম বদলে গেছে।ম্যাডাম কাঞ্চাকে বলল,কোথায় ঘর আছে দেখিয়ে দাও।যাও ওর সঙ্গে যাও।
(চলবে)

Post a Comment

0 Comments