জীবনের সুখের জন্য - পর্ব ৪৬ (Jiboner Sukher Jonno - Part 46)

ভোর সকালে ঘুম ভাঙল বেলের আওয়াজে। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে এলাম। দেখি গেটের বাইরে মিতা দাঁড়িয়ে আছে। আমি চাবি নিয়ে তালা খুলতে খুলতে ভাবছি এই সেই আমার ঘরের বউ মিতা যার কিনা কাল সিডিতে বলতে শুনেছি, ‘অ্যাই ওয়ান্ট টু টেস্ট ইউ।‘

আমি দরজা খুলতেই মিতা ঘরে ঢুকে জড়িয়ে ধরল আমায়। আমিও টাইট করে ওকে জড়ালাম। না আমার কোন বিকার হচ্ছে না মিতাকে জরাতে।আমি সব কিছু জানি, দেখেছি। তবু ও আমার বউ। আমি বিদিশার কাছ থেকে ঘুরে এসে এই ভাবে জড়িয়ে ছিলাম মিতাকে। মিতা মনে হয় ঘুণাক্ষরে ভাবে নি ওর স্বামী গৌতম অন্য কোন মেয়ের সাথে ফুর্তি করে এসেছে। ভাগ্যক্রমে ওর সিডিটা আমার হাতে এসেছিলো আমি দেখতে পেয়েছি। নাহলে মিতা বাইরে থেকে ঘুরে এসেছে এটাই তো আমার কাছে খবর থাকতো।
আমি বললাম, ‘বাবা, চেহারা তো একদম বিধ্বস্ত। ট্রেনে সফর করে ফিরেছ না। তাই। নাও কাপড় চোপর ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি চা বানাই।‘
মিতা পায়ের থেকে চটি খুলতে খুলতে বলল, ‘আগে এক কাপ গরম চা দাও। খুব পায়খানা পেয়েছে।‘
আমি চা বসালাম। মিতা ঘরে ওর ব্যাগ রেখে কাপড় ছাড়তে থাকলো। চা বানাবার আগেই মিতা অন্য ঘরগুলো ঘুরে দেখে নিয়েছে। আমি শুনছি মিতা চিৎকার করছে, ‘বাবারে বাবা, চারিদিকে কি ধুলো। ঘরদোর ঝাঁটমাট কিছু দাও নি নাকি। না ফেলে রেখেছিলে আমার জন্য যে আমি তো আসবই আমিই ঝাঁট দেবো।‘
আমি উত্তর করতে গেলাম, ‘কেন অনির সাথে ঘুরে এই কথাগুলো ভাবতে নাকি?’ থেমে গেলাম অনি অব্দি বলে। সর্বনাশ করেছিলাম, একটু হলেই বেরিয়ে গেছিল মুখ থেকে।
কিন্তু যে শোনার সে তো শুনেই ফেলেছে। তেড়ে এলো রান্নাঘরে। বলে উঠলো, ‘কি কি বললে, অনি না কি?’
আমি ঘুড়িয়ে বললাম, ‘আরে আমি বলছিলাম তুমি অনিবার্যভাবে নিশ্চই এই কথাগুলোই ভাবতে ট্যুরে গিয়ে।‘
ও হেসে ফেলল। বলল, ‘নাগো ধুলো দেখলে আমার মাথার ঠিক থাকে না। তাই চেঁচিয়ে ফেলেছিলাম। প্লিস মনে কিছু করো না।‘
খুব সামলেছি নিজেকে। ঠিক সময় কথা ঘোরাতে পেরেছি। মিতাকে চা দিয়ে আমিও এক কাপ নিলাম। মিতা ডিশে ঢেলে চা খাচ্ছিল। আমি তাকাতে বলল, ‘খুব পেয়ে গেছে। ট্রেনটা খুব নোংরা তাই করা হয়ে ওঠেনি।‘
মিতা চা খেয়ে কাপ রেখে দৌড়ে বাথরুমে গেল। আমি ভাবতে থাকলাম এই হোল মিতা। ট্যুরে এক চেহারা ঘরে আরেক। কিন্তু চেহারার মধ্যে বেশ এনার্জি দেখা যাচ্ছে। হবে না কেন, সেক্স ইস দা বেষ্ট মেডিসিন টু স্টে ইওং।
মিতা বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে। লেগে গেল সাফ সাফাইয়ে ওই সকালবেলা। সব মেয়েরাই কি এরকম ঘরে অন্য চেহারা নিয়ে জীবন কাটায়।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার ট্যুর কেমন হোল?’ এটা একটা কথার কথা। আমি জানি ট্যুর কেমন হয়েছে। কেরালা সিডি তার প্রমান। কয়েকদিন বাদে গোয়া সিডি আসবে।
ঝারতে ঝারতে মিতা বলল, ‘অফ, সে এক মজাদার ট্যুর। খুব মজা পেয়েছি। কোন বাঁধা নেই, রোজগারের মতো জীবন নেই। যখন যা ইচ্ছে করো। তোমাকে এখন বললে শেষ হবে না তাই তুমি অফিস থেকে আসলে বলব আমার বিকিনি কেলেঙ্কারির কথা। শুনলে তুমি না হেসে পারবে না।‘
আমি ভাবলাম আর কোন কেলেঙ্কারি বলবে আমি কেরালা দেখেছি। আমি জানি। মুখে বললাম, ‘সেটাই ঠিক হবে।‘
অফিসে চলে গেলাম। প্রথমেই নেট খুলে ট্যুরের জন্য চারজনের ই টিকিট কেটে নিলাম ১ম এসিতে। আমি, বিদিশা, রিয়া সেন আর চিত্ত। তারপর বসকে বললাম আমার প্রোগ্রামের কথা। বস রাজি হোল। অফিসে একাউন্টসে ২৫০০০ হাজার টাকার রিকুইজিশন দিয়ে রাখলাম। তারপর বসে বিদিশাকে ফোন করলাম।
বিদিশা ফোন ধরে বলল, ‘চুমু খেলে মিতাকে? কখন ফিরল?’
আমি হেসে বললাম, ‘আর চুমু। এসেই ঘরে কেন ধুলো এতো জমেছে তার উত্তর চাই। আমি কি ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম? এইসব প্রশ্ন।‘
বিদিশা সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘ও ঠিক প্রশ্নই করেছে জানো গৌতম। আকচুয়ালি আমরা ঘর সাজাই আর চাই সেগুলো সব ঠিকঠাক থাকুক। বাইরের লোক এলে যেন বলে বাহ, কি সুন্দর ঘর সাজানো। একটুও ধুলো নেই, ঝুল নেই। আমি জানি তুমি কিছু মাইন্ড করো নি ওর প্রশ্নে।‘
আমি জবাব দিলাম, ‘না না মাইন্ড করার কি আছে। ঘরটা তো ওরই সাজানো। ও তো বলতেই পারে। হ্যাঁ, ও আজ ভোরেই ফিরেছে।‘
বিদিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘কেমন এঞ্জয় করলো বলল কিছু?’
আমি জবাব দিলাম, ‘সে বলার মতো সময় যদিও ছিল না, কিন্তু বলছিল ওর এক কি
বিকিনি কেলেঙ্কারি হয়েছিলো, সেটা বলবে অফিস থেকে ফিরে গেলে।‘
বিদিশা হেসে উঠলো, ‘বিকিনি কেলেঙ্কারি? নতুন শব্দ আমার কাছে। চুরি হয়েছিলো না কি?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘কে জানে। হয়তো সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে খুলে মুলে গেছিল।‘
বিদিশা বলে উঠলো, ‘কি অসভ্য তুমি। এটা আবার হয় নাকি?’
আমি মনে মনে ভাবলাম তুমি আর কি জানো। ও তো নিজেই আমাকে বলেছিল সে ঘটনা ফোনে। তারপর কতো কেলেঙ্কারি নায়িকা সে সিডি দেখে তো বুঝেছি। আমি কোনদিন মিতার এই ট্যুরের ব্যাপারে বা সিডির ব্যাপারে বিদিশাকে কিছু বলি নি। ঘরের ব্যাপার ঘরেই থাকা ভালো।
বিদিশা আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘হ্যাঁ, ফোন কেন করেছিলে বললে না তো?’
আমি বললাম, ‘ফোন করেছিলাম আমি টিকিট করে ফেলেছি। এই মাসের ১৭ তারিখে। চারজনের টিকিট। সুতরাং তৈরি হয়ে নিও। আর এবার আমি জানি না কতদিন থাকতে হবে কারন কাজটা একটু ডিফিকাল্ট সময় লাগতে পারে।‘
বিদিশা বলল, ‘যাক ভালো করেছো আগেভাগে বলে। হাতে এখনো ১০ দিনের মতো সময় আছে। আমার আর চিত্তর ব্যাপার তো কিছু না। যখন বলবে তখন বেরিয়ে পড়ব। প্রব্লেম হোল রিয়াকে নিয়ে। ও কাজ করে। ওকে তো ছুটি নিতে হবে। আমি এখনই বলে দিচ্ছি। তোমাকে ওর সাথে কথা বলে জানাব।‘
ফোনটা কেটে আমি আমার ট্যুরের ব্যাপারে তৈরি হতে থাকলাম। পেপারগুলো সব আগেভাগে দেখে রাখলাম। যদি কোন প্রব্লেম থাকে তাহলে বসকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া যাবে। আমি নিজেই একবার ক্লায়েন্ট হলাম আবার নিজেই কোম্পানি। ক্লায়েন্ট হয়ে যে প্রশ্ন আসার কথা সেটা করলাম আর কোম্পানির হয়ে যেটা জবাব সেটা দিলাম।
মোটামুটি নোট করে নিলাম কি কি প্রশ্ন করতে পারে ওরা আর আমার জবাব কি কি হতে পারে। নোট তৈরি করে বসকে দেখাতে গেলাম। বস দেখে সব ঠিক আছে বলল আরও কিছু নোট দিলো। আমি একবার চোখ বুলিয়ে বুঝলাম বস কেন আমার বস আর আমি কেন ওর আন্ডারে কাজ করছি। উচিত ছিল আমার এইসব আগে চিন্তা করার।
হাতে বেশ কিছুদিন সময় আছে। আরও কিছু পরে দেখে নেবো। সময় করে আমার ফেভারিট সাইট EXBII খুলে দেখে নিলাম কি কি নতুন পোস্ট হয়েছে। কিছু নগ্ন অ্যান্টি আর বৌদির ছবি দেখলাম। ভালো লাগলো।
ফিরে এলাম বাড়িতে। মিতার কাছে ওর কেলেঙ্কারির গল্প শুনলাম। ও নাকি ওর বন্ধুদের সাথে (মনে মনে ভাবলাম মিথ্যা কথা, বন্ধু না অনির্বাণের সাথে) সমুদ্রে স্নান করছিলো প্যান্টি আর ব্রা পরে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘গোয়াতে অতো লোকের সামনে ব্রা আর প্যান্টি পরে চান করতে তোমার লজ্জা করলো না?’
মিতা জবাব দিলো, ‘প্রথমে করছিলো ঠিকই। কিন্তু অনেকেই ব্রা আর প্যান্টি পরে স্নান করছিলো। তাই লজ্জাটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। তাছাড়া মনে মনে ভেবেছিলাম এখানে কে আমাকে চিনবে বা মনে রাখবে। এখান থেকে চলে যাবো তো সব আবার অজানা।‘
আমি ভাবলাম ও ঠিকই বলেছে। অনির্বাণ ভাল ব্রেনওয়াশ করেছে মিতার এই কথাটায়। বললাম, ‘তারপর?’
মিতা হেসে উঠলো, ‘একটা ঢেউ সব গড়বড় করে দিলো। এমন ঢেউ না পারলাম নিজেকে ঠিক রাখতে না পারলাম প্যান্টিটা কোমরে ধরে রাখতে। সামনের দিকটা যদিও ঠিক ছিল আমার পাছা একদম ওপেন হয়ে গেছিল। ওখানে যারা যারা ছিল সেকি হাসি ওদের সেটা দেখে। আর আশ্চর্য কি জানো এইসব অপ্রস্তুতের ব্যাপার যখন হয় তখন টাকে ঠিক মতো ঠিক করে যায় না। আমারও তাই হয়েছিলো। কিছুতেই ভেজা প্যান্টিটাকে তুলে পাছা ঢাকতে পারছিলাম না। কোমরের দিকটা রোল হয়ে কেমন যেন আটকে গেছিল থাইয়ে। যাহোক কোনরকমে তুলতে পেরেছিলাম। কিরকম বোকা বোকা ব্যাপার বলতো?’
আমি বললাম, ‘ঠিক। এই অবস্থায় কিছুই ঠিক হয়ে ওঠে না। তোমার ভাগ্য ভালো যে সামনের দিকটা খুলে যায় নি। নাহলে সবাই তোমার কামানো যোনী দেখে নিতে পারত।‘ আমি ইচ্ছে করে বললাম কামানোর কথাটা ও কিভাবে নেয় সেটা দেখার জন্য।
মিতা প্রথমে খেয়াল করে নি আমার কথা তাই ও উত্তর দিলো, ‘একদম ঠিক বলেছ, সামনের দিকটা খুলে গেলে মুখ দেখান যেত না।‘ তারপর বোধহয় মনে এলো যে আমি পরে কি বলেছি তাই আবার যোগ করলো, ‘নাগো কামানো যোনী হলে তো কথা ছিল না কারন সবাই এখন কামিয়ে থাকে আমার যতদূর মনে হয়। কিন্তু এখন আমি কামানো বন্ধ করেছি, যোনীটা এখন চুলে ভরা। সেটা আরও লজ্জার হতো।‘
আমি আর ও নিয়ে প্রশ্ন করলাম না কেন ও আবার রেখেছে যখন ওরই অপছন্দ ছিল। কিন্তু ব্যাপারটা ও খুব ভালোভাবে ম্যানেজ করছে। মেয়েরা ম্যানেজ করতে ভালই পারে আবার একবার প্রমান হোল আমার কাছে। বাকিরা হয়তো জানে আমি একমাত্র পুরুষ যে বারেবারে জানে।
ট্যুরের ৩ দিন আগে আমি মিতাকে খবর দিলাম আমার ট্যুরের কথা। ফিরতে দেরি হতে পারে সেটাও বললাম, বললাম কেন দেরি হতে পারে সেটাও। মিতা কিছু বলল না প্রথমে, তারপর বলল, ‘আমি না থাকাতে তোমার ট্যুর হয় নি?’
মিথ্যা বললাম ওকে, ‘ঠিক হয়েছিলো কিন্তু বারন করে দিয়েছিলাম। কে আবার বাড়ি খালি রেখে যায়। তার উপর তুমি আবার খ্যাচখ্যাচ করবে যে তুমি ট্যুরে গেছ আবার আমিও যাচ্ছি।‘
(চলবে)

Post a Comment

0 Comments