খেলোয়াড় by riddle Page:- 04



ক্লান্ত দেহে সিঁড়ি বেয়ে চারতলায় উঠলাম, লিফট কোন কারণে আজ বন্ধ। ড্রইং রুমে ফুল স্পীডে ফ্যান ঘুরছে। ঢুলুঢুলু চোখে সোফার সামনে কার্পেটে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম। সোফায় খসখস শব্দ শুনে বুঝলাম আপু এসে বসেছে। এখন প্যাঁচাল শুরু হবে।

- কিরে আকাশ, খিদা লাগেনাই?

- হু..

- ফ্রীজে খিচুরি আছে, গরম করে নে।

- এইসব খামুনা এখন।

পাশ ফিরে সোফার দিকে মুখ করে বললাম। আপুর ফর্সা পায়ের পাতা আমার চোখের সামনে, ক্রস করে রেখেছে। সবুজ ট্রাউজারের প্রান্ত গোড়ালি ঢেকে রেখেছে।

- সবজী খিচুরি, সমস্যা হবেনা। যা গরম করে নিয়া আয়।

- তুমি খাবা?

- না, আমি কিছু খাবনা!

গম্ভীর গলায় বলল আপু।

- তাহইলে থাক।

- না খাইলে নাই..

ব্যঙ্গের সুরে বলে পা দুটো আমার কোমরের উপর তুলে দিলেন। আপুর কথা না শুনলে এরকম আচরণ সহ্য করতে হয়। গাঁইগুঁই না করে একটা গড়ানি দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। শব্দ শুনে বুঝলাম আপু সোফা ছেড়ে উঠে গেছে। বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে ভেবে শান্তিতে ঘুমানোর প্রস্ততি নিচ্ছিলাম এমন সময় আবার পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। টী টেবিলে ভারী কিছু ঠক করে রাখার আওয়াজ এল। দু মিনিট পরেই বাজে একটা গন্ধ নাকে ধাক্কা দিল। ব্যাপারটা কি তা বুঝতে ঝট করে ঘাড় উঁচিয়ে সোফায় বসা রীমা আপুর দিকে তাকালাম। বরাবরের মত পদ্মাসনে বসে আছে, হাতে কাচের গ্লাস। তাতে লালচে রঙয়ের তরল, উপরে দুটুকরো বরফ ভাসছে। ঘোলা চোখ সামনের দেয়ালে একটা পেইন্টিংয়ে নিবদ্ধ। আপুর এই রুপ দেখে অবাক হলাম। বিয়ের পর থেকে মাঝেসাঝে লাল পানি খাওয়ার খবর আমাদের অজানা নয়। তবে আজ এমন কি হল যে...

- বাংলাদেশ আজকে খারাপ খেলছে..

হতাশাটা খেলা নিয়ে কিনা তা জানতে এই প্রসঙ্গ উঠানোর চেষ্টা করলাম। আপু ঝট করে আমার দিকে তাকালেন।

- তুই ঘুমাস নাই?

- উঁহু... অত আপসেট হওয়ার কি আছে... এমন হয়..

সান্তনামূলক দুয়েকটা বাক্য আওড়ালাম। আপু কিছু বলল না। মুখভঙ্গি দেখে মনে হলোনা খেলার ফলাফল নিয়ে সে চিন্তিত।

- ঘুমা!

আমাকে থামিয়ে ডান পা দিয়ে ঘাড়ে ধাক্কা দিল। কার্পেটে শুয়ে পড়তে পায়ের পাতায় ঠেলে ঠেলে আমাকে উপুড় করে দিল। এমনিতে তার প্যানপ্যান শুনে আমাদের মেজাজ খারাপ হয়, আজ আমার কথাই আপুর ভাল লাগছেনা। উষ্ণ পায়ের পাতার ছোঁয়া লাগছে পিঠে। আপু আলতো করে সারা পিঠ জুড়ে আনমনে পা বুলিয়ে দিচ্ছে। আপু সব্যসাচী মানুষ, হাত পা সমান চলে। তবে এরকম আগে হয়েছে বলে মনে পড়েনা। আজ কি হল তা ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত দুচোখ ঘুমে জড়িয়ে এল।




আলো জ্বালানো থাকলে আমি ঘুমাতে পারিনা। তাছাড়া শক্ত মেঝেয় পাতা কার্পেটে কিছুক্ষণ শুলে মাংসপেশীগুলো জমে যায়। উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায়ই চোখ খুলে গেল। ডান থেকে বামে ঘাড় ঘুরিয়ে শুকনো গলা একদম খটখটে হয়ে এল। একটু ঢুলুঢুলু ভাব এসে পড়েছিল, স্বপ্ন দেখছি কিনা বুঝতে মিনিটখানেক সময় লাগল। চোখের সামনে গ্লাস হাতে বসা রীমা আপু দৃষ্টি নামিয়ে সোজা আমার দিকে তাকাল।

- ঘুমাস নাই.. এখনো?

একটু জড়ানো গলা এখন। ভেজা লাল ঠোঁট থেকে দৃষ্টি নেমে এল। প্রশ্নের জবাব না দিয়ে থ মেরে আপুর ফর্সা গলার নিচে তাকিয়ে রইলাম। ডানহাতে উঁচু করে ধরা গ্লাস, বাঁ হাত কার্পেটে চেপে একপাশে শরীরের ভর চেপে রেখেছে। হাতের তালু আর কার্পেটের মাঝে দলামোচড়া অবস্থায় লাল সবুজ জার্সিটি আবদ্ধ। দীর্ঘ গভীর বুকের খাঁজ গভীরতর করেছে কালো ব্রেসিয়ার। পেটের হালকা মেদে নাভীটি চ্যাপ্টা হয়ে আছে।

- কিরে, কি দেখিস?

মাথায় চাটি পড়ল। হাঁ করা মুখ নিয়ে ঘাড় উঁচু করলাম। আধো জাগরিত রীমা আপুর ঠোঁটে বাঁকা হাসি।

- পানি খাব।

ঘোলা চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম।

- নে!

বলে হাতে ধরা গ্লাসটা আমার নাকের সামনে নামিয়ে আনল। কড়া গন্ধে নাক ভরে উঠল। ডানে বাঁয়ে ঘাড় নেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। ডাইনিং টেবিলে রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ঘুরে দাঁড়াতেই প্রশস্ত ফর্সা পিঠ ভেসে উঠল। ছেড়ে রাখা লম্বা চুলে ঘাড় ঢেকে আছে। ধনুকের মত বাঁকা মেরুদন্ডের মাঝ বরাবর ব্রেসিয়ারের চিকন ফিতা। সেদিকে তাকিয়ে ঢকঢকিয়ে দুগ্লাস পানি গিলে ফেললাম। মাতাল হলে মানুষ একটু আধটু পাগলামি করে। পাগলামি আরো বেড়ে যাবার আগেই কেটে পড়া উচিত।

Post a Comment

0 Comments