- ডিসিশান যখন নিয়েই ফেলেছেন তাহলে টাইম ওয়েস্ট করে লাভ নাই। কাল ফ্রাইডে, কলেজ বন্ধ। আপনি দশটার দিকে চলে আসুন। দুপরের আগেই ছেড়ে দেব।
- কলেজে?
- অ্যাঁ, হাঁ, আমাকে শহরে বহুলোকে চেনে। একসাথে দেখে ফেললে আপনারো সমস্যা হতে পারে। তার চাইতে কলেজেই চলে আসুন।
- কিন্তু, তবু, আই মিন, অফ ডে তে আমি গেলে কারো সন্দেহ হবেনা?
- না, সেই ভয় নাই। শুধু দাড়োয়ান আছে। গেটে বসে থাকে, সন্ধ্যা হলে তালা মেরে চলে যায়।
- রাতে কেউ থাকেনা?
- নাহ, এলাকার সিকিউরিটি গার্ড আছে, কলেজে আলাদা কেউ থাকেনা।
- সরি, স্যার, বাট রাতে যদি কেউ না থাকে তবে সেই টাইমটা নিলে ভাল হয়
- ওকে, আপনি যা বলেন। এন্ড আর একটা রিকোয়েস্ট।
- জ্বী, বলুন
- আপনি মাঝে মাঝে একসেট ব্লু সালোয়ার কামিজ পড়ে কলেজে আসেন। কাইন্ডলি সেটা পড়ে আসবেন?
- আহ, আচ্ছা, তাই হবে।
- ওকে, রাখুন তাহলে
*********
শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেলে রাখা কাজগুলো করে রাখলেন আফসার সাহেব। সেইসাথে আসন্ন রাতের পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক করে নিলেন নিখুঁতভাবে। দাড়োয়ানকে আকাশ কালো হবার আগেই ছুটি দিয়ে দিলেন। বলে দিলেন, আজ রাতে একটু বেশি সময় কলেজে থাকবেন। ফেলে রাখা কাজ গুলো সেরে ফেলতে হবে।
বিশাল গেটের পেছনে দাঁড়িয়ে উজ্জ্বল ফ্লাডলাইটের আলোয় হাতঘড়ি দেখছেন। চিন্তার ভ্রুকূটিগুলো বেড়ে চলেছে। শিরিন আপার আসার সময় হয়ে গেছে। এখনো কাজটা কোথায় সম্পন্ন করবেন তা-ই ঠিক করতে পারেননি। আজকে কোয়ার্টারে কর্মচারীরা আছে, সেখানে মেয়েমানুষ নিয়ে গেলে ইজ্জ্বত থাকবেনা। ভাবনায় ছেদ পড়ল গাড়ির তীক্ষ্ম হর্ণের শব্দে। বিশাল গেটের মধ্যে ছোট পকেট গেটখানি হাট করে খোলা। সেখান দিয়ে হেডলাইটের আলো কলেজের মাঠে এসে পড়ছে। কয়েক মুহূর্ত পর পাকা বাহির বারান্দায় ঠক ঠক শব্দ শুনতে পেয়ে বোঝা গেল, আগন্তক একজন মহিলা। গাড়ির আলো নিভে যেতেই শব্দ দূরে মিলিয়ে গেল। আফসার সাহেব একটু পিছিয়ে গিয়ে বারান্দায় রাখা প্লাস্টিকের চেয়ারে হাসি হাসি মুখ করে বসে পরলেন।
প্রথমে মনে হল দৃষ্টিভ্রম হয়েছে। বুড়ো চোখদুটোকে বিশ্বাস করতে আজকাল মাঝে মাঝেই কষ্ট হয়। বায় কয়েক পলক ফেলে নিশ্চিত হলেন, মহিলা এসেছেন ঠিকই - তবে একা নয়! সাথে আরো একজন আছে। সেও একজন স্ত্রীলোক। ঘটনাটা খুব অবাক করল প্রিন্সিপাল স্যারকে। অন্ধকার প্যাসেজ বেয়ে বারান্দার কোণে আলোতে আসতেই দুজনকে চোখে পড়ল। বামে ছোটখাট শিরিন আক্তার, পরনে সেই নীল সালোয়ার কামিজ, নীল সুতোর কাজ করা ওড়না দিয়ে মাথায় প্যাচানো। চুলগুলো সিঁথি করে পেছনে বাঁধা। আজ তাকে কালকের চাইতে অনেক বেশি কনফিডেন্ট দেখাচ্ছে। এমনকি চোখের সেই স্টীল রিমড চশমাটাও নেই। সেই চশমার স্থান বদল হয়েছে অপর ললনার সাথে! শিরিনের ছায়া এসে পড়ায় অন্য মহিলাকে ঠিক দেখতে পাচ্ছেন না। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে বিশাল কলেজটা দেখছে। একেবারে সামনে আসতে ভালভাবে দেখতে পেলেন।
মহিলা না বলে মেয়ে বলাই ভাল। উচ্চতায় শিরিন আপার চেয়ে দু ইঞ্চি লম্বা হবে। ফর্সা গোলগাল মুখ, মুখের নার্ভাস ভঙ্গি কাটিয়ে চশমাটা একটা আলাদা গাম্ভীর্য এনে দিয়েছে। প্রতিদিন বিকেলেই মাঠে টি টেবিলে আড্ডা বসে। আজ কাউকে ডাকেননি আফসার সাহেব। এই শুধু তার একার। খালি পড়ে থাকা দুটো চেয়ার নিয়ে দুজনে বসলেন। শিরিনের সাথে হাই হ্যালো করে নীরবতা ভাঙলেন। তিনি বারবার মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছেন, বুঝতে পেরে সে যেন আরো নার্ভাস হয়ে গেল। মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কাটছে ক্রমাগত। অস্বস্তিকর পরিবেশটা হালকা করতে গলা ছাড়লেন শিরিন ম্যাডামই,
- স্যার, এ হচ্ছে আমার মেয়ে -- আনিকা ।। আনিকা, ইনিই প্রিন্সিপাল সাহেব।
- হাও আর ইউ স্যার?
খড়খড়ে গলায় ঘাড় উঁচু করে জিজ্ঞেস করল আনিকা।
- আঁ, ইসেস, আ'ম ডোয়িং ফাইন।
মেয়ের পরিচয় শুনে তব্দা খেয়ে গেছেন আফসার সাহেব। বলে কি! এই মহিলার মেয়ে? আগে তো কখনোই শুনেননি। তাছাড়া এই মেয়ের বয়স ও তো কম হয়নি। আর, হলইবা নিজের মেয়ে, সেক্ষেত্রে এরকম লজ্জ্বাজনক কাজে মেয়েক আবার কে নিয়ে আসে! মহিলার মতলবটা কি? মনে মনে যতটা না অবাক হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছেন। তার মনে অবস্থা বুঝতে পেরেই বোধহয় শিরিন আপা মৃদু শব্দে হেসে বলে উঠলেন,
- আসলে স্যার আপনি বোধহয় আমার মেয়েকে এখানে আশা করেননি?
- আ, হ্যাঁ, তাই। তাছাড়া আপনার মেয়ের কথা কখনো শুনিনি।
- হুম, ও কখনো এই কলেজে পড়েনি, তাই অনেকেই জানেনা।
- আসলে জানেন কি, আপনাকে দেখে মনে হয়না আপনার এরকম বয়েসি একটা চাইল্ড থাকতে পারে।
- রং আইডিয়া, আমার ম্যারেজের এজ বিশ বছর হয়ে যাচ্ছে।
বলে কি! মহিলার বয়স তাহলে কত? অন্তঃত চল্লিশ। নাহ, দেখে তো সেরকম মনে হয়না।
- তা, মামনি তুমি কোন ক্লাসে পড়?
- ইন্টার, ফার্স্ট ইয়ার।
এবারে একটু কমফোর্ট ফিল করছে আনিকা।
- আপনার মনে হয় এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা। আমার বিয়ে হয়ে গেছিল অল্প বয়সে। এক বছর পর ওর জন্ম হয়। শুধু শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সাপোর্ট থাকায় স্টাডি কম্পলিট করতে পেরেছিলাম। যদিও ওনারা আর বেঁচে নেই। আপনার মনে হয় মেয়েকে নিয়ে আসাটা বেখাপ্পা ঠেকছে। আসলে আমরা মা-মেয়ে একে অপরের সাথে খুব ফ্রী। দুঃশ্চিন্তার কিছু নাই। ওর বাবা বছরের পর বছর ঢাকায় আছে, ব্যবসা করছে। টাকা পাঠাচ্ছে। আমরা দুজনেই সবকিছু শেয়ার করি একে অপরের সাথে।
0 Comments